দেবতাখুম, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান ভ্রমণ

জীবনে প্রথম বান্দরবান গেলাম আর ঘোরাটা শুরু করলাম দেবতাখুম দিয়ে। মেঘনা ব্রিজের কল্যানে ৬ঘন্টা জ্যাম খেয়ে সর্বোমোট ১৫ ঘন্টার ম্যারাথন জার্নি শেষ করে বান্দরবান গিয়ে নামলাম রাত ১০.৪০ এ। নেমে বিপদেই পড়লাম। আমার রুম তো ঠিক করা রোয়াংছড়ি তে। আর ওই দিন (২১/০২/১৯) তো কোথাও কোন সিট ফাঁকা নেই। ভাগ্য ভালো ছিল তাই রুমের সাথে প্রচুর ফ্রি ছারপোকা সহ মুরগির খোপ টাইপের একটা রুম পেলাম হোটেল আল আমিনে।

কোন রকমে রাত টা পার করে সকাল ৭টার পরে নাস্তা করেই সিএনজি নিয়ে রওনা দিলাম রোয়াংছড়ির উদ্দেশ্যে। এক ঘন্টার ভিতরে পৌছিয়ে গেলাম। আগে হতে ঠিক করে রাখা গাইড পলাশ দাদা অপেক্ষা করছিলেন আমাদের জন্য। উনি আমাদের রুমে নিয়ে গেলেন। অল্প সময়ের ভিতরে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসে আবারো নাস্তা করলাম। নির্ধারিত ফর্ম পূরন করে (আইডি কার্ডের ফটোকপি সহ) থানায় গেলাম এন্ট্রি করতে। এন্ট্রি করে রওনা দিলাম কচ্ছপতলীর (লিরাগাঁও) এর পথে। ৪০-৪৫ মিনিটে পৌছিয়ে গেলাম। এখানে আবার বিজিবি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করা লাগে। সেটা শেষ করে তারপর দেবতাখুম এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু হবে। পথে পড়বে শীলবাঁধা পাড়া। লোক আর পেট বুঝে খাবার আর পর্যাপ্ত পরিমান পানি এখান হতেই কিনে নিবেন। পরে শীলবাঁধা পাড়াতে ছোট দোকান পাবেন একটা কিন্তু দাম একটু বেশি।

শীলবাঁধা পাড়াতে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করবেন। শীলবাঁধা হতে দেবতাখুম পর্যন্ত ট্রেকিং এর পথ টা আপনার চোখে ভাসবে অনেক দিন আমি বাজি ধরে বলতে পারি। অসাধারন ঝিরিপথ, দুই পাশে পাহাড়, ঝিরি পার হওয়া…….এই পথ যদি আপনার চোখে ভাসে অনেকদিন তাহলে দেবতাখুম আপনি কোন দিনও ভুলবেন না, ট্রাস্ট মি অন দিস। খুমের বরফশীতল পানি, পিনপতন নীরবতা, ঝিঁ ঝিঁ পোকার বিরতিহীন ডাক, কল কল শব্দে বয়ে চলা পানি, খুমের ভিতরে আলো ছায়ার খেলা……….পুরাপুরি মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে (আক্ষরিক অর্থেই কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক পায় না)। খুম এর শুরু হতে শেষ পর্যন্ত যাবেন…….আর অবাক চোখে দুই পাশ দেখবেন…..এতো সুন্দর…..এতো সুন্দর……..নীরবতাও যে এতো সুন্দর হতে পারে সেটা এই খুমে গেলেই বুঝবেন।

আমি আর আমার বউ গিয়েছিলাম। পুরা খুমে আমরা দুইজন ছিলাম (পরে চারজন এসেছিল)। আমার বউ এর লাইফে এটা ছিল প্রথম ট্রেকিং। কোন রকমের সমস্যা ছাড়াই ও ট্রেকিং করেছে সে জন্য ওকে আমি ধন্যবাদ দিবো না। কারন এই রকমের ট্রেকিং ওর লাইফে আরও আসছে……..তাই এক সাথে পরে দিয়ে দিবো 😀

খরচাপাতি

  • ঢাকা – বান্দরবান – ৬২০ (ননএসি বাস)
  • বান্দরবান – রোয়াংছড়ি – ৬০ (লোকাল বাস) আর রিজার্ভ সিএনজি – ৫০০
  • রোয়াংছড়ি – কচ্ছপতলী – ৬০ (সিএনজি) আর রিজার্ভ সিএনজি – ৩০০
  • খুমে ভেলাতে জনপ্রতি ভাড়া ১০০ করে
  • রোয়াংছড়িতে হোটেল ভাড়া – ৫০০ (এক রুমে ৭/৮ জন অনায়েসে থাকতে পারবেন)
  • গাইড ভাড়া – ১০০০ টাকা

গাইড

পলাশ দাদা – 01838717735

কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

  • যাদের ট্রেকিং এর অভ্যাস নেই এই ট্রেক তাদের ভালোই পরীক্ষা নিবে। বেশ কঠিন মনে হবে, কষ্ট হবে। তাই সেভাবে প্রিপারেশন নিয়ে যাবেন।
  • সাঁতার না জানাদের জন্য খুমে লাইফ জ্যাকেট ফরজ।
  • স্থানীয়ভাবে (থানায়) লিস্টেড গাইড নিবেন।
  • এন আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে যাবেন কয়েক কপি।
  • রোয়াংছড়ি হতে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে শেষ বাস ছাড়ে বিকাল ৫টায়।
  • রোয়াংছড়ি তে রবি আর টেলিটক ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির নেটওয়ার্ক পায় না।
  • খুমে ভেলাতে বসলে আপনার নিচের দিকে ভিজে যাবে। তাই মোবাইল, ক্যামেরা সাবধানে রাখবেন।
  • ভালো ট্রেকিং সু পরে যাবেন।

এই ট্রেকিং পথ আর খুমটা এখনো পরিস্কার আছে। যদিও বেশ কিছু পানির বোতল আর হাঁড়ি ফেলানো দেখলাম। তারপরও বলবো, আসুন আরো পরিস্কার রাখি আমরা। আমাদের ময়লাগুলা সাথে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গাতে ফেলি। হ্যাপী ট্রাভেলিং!

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Bandarbandebotakhumrowangchhari