সিকিম মানেই গ্যাংটক, গুরুদংমার, সিল্করুট আর পশ্চিম সিকিম মানেই পেলিং। যাবতীয় সিকিম ট্যুরিজম, পর্যটকদের আকর্ষণ ঐদিকেই কিন্তু নিরিবিলি, শান্ত, অফবিট সিকিম যারা ভালো বাসেন তাদের জন্য পশ্চিম সিকিমের রিনচেনপং, কালুক, ছায়াতাল, উত্তরে সার্কিট সেরা। গ্যাংটক, পেলিং এর মতো অতো ভিড়ভাট্টা নেই ঠিকই কিন্তু প্রকৃতি আছে, আছে অনেক ট্যুরিস্ট স্পটও। সবচেয়ে বড়ো কথা পেলিং এর মতো এই অঞ্চলগুলোতে ঘরে, হোটেল রুমে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাবেন। শীতের সময়ে পশ্চিম সিকিমে পূর্ব সিকিম বা উত্তর সিকিম এর মতো বরফ পরে না। ২০১৮ এর ২৮ ডিসেম্বর বহুবছর পর কিছু এরিয়াতে পড়েছিল। এখানকার দিনের তাপমাত্রা ১০℃-১২℃ আর রাতে ৩℃-৪℃। তাই বাচ্চা, বয়স্কদের নিয়ে শীতে ভ্রমণের আদর্শ সার্কিট এই দিকটা।
তবে আসুন এবার আমরা রিনচেনপংকে বেইস ধরে অফবিট পশ্চিম সিকিমকে ঘোরার একটা প্ল্যান আলোচনা করি।
প্রথম দিন – নিউ জলপাইগুড়ি / শিলিগুড়ি থেকে গাড়ী নিয়ে রিনচেনপং। ঘন্টাপাঁচেকের ভ্রমণ। জোড়থাং হয়ে যেতে হবে। অবশিষ্ট সময় পায়ে পায়ে হেঁটে রিনচেনপং এর সাথে আলাপ। ভ্রমণ তোলা থাক পরের দিনের জন্য।
দ্বিতীয় দিন – আজ রিনচেনপং লোকাল সাইটসিন।
তৃতীয় দিন – এদিন বেরিয়ে পড়ুন গাড়ী নিয়ে কালুক, বার্মিক হয়ে ছায়াতাল, হি-পাতাল, ডেন্টাম, উত্তরে গ্রামে।
উত্তরে হলো পশ্চিম সিকিমের শেষ গ্রাম ভারত-নেপাল বর্ডারের আগে। এরপর ট্রেকিং পথ। ট্রেকিং করে মেইনবাস জলপ্রপাতও যাওয়া যায় হাতে একদিন অতিরিক্ত সময় থাকলে। ইচ্ছে করলে একদিন উত্তরে তেও থাকতে পারেন।
চতুর্থ দিন – আজকে পেলিং ভ্রমণ। অবশ্যই দেখবেন সাঙ্গাচোলিং এ নতুন চালু হওয়া (অক্টোবর, ২০১৮ থেকে) স্কাই ওয়ার্ক এবং চেনরেজিগ ট্যুরিজম স্পট।
পঞ্চম দিন – আজ সকাল সকাল রিনচেনপংকে বিদায় জানিয়ে রাবাংলা এবং নামচি সাইটসিন করে (দক্ষিণ সিকিম ভ্রমণ করে) নিচে শিলিগুড়ি ফিরে আসুন।
যদি মার্চ এপ্রিলে এই অঞ্চলে যান তবে আর একদিন যোগ করে ঘুরে নিন ওখড়ে এবং হিলে ভার্সে। লাল রডডেনড্রোন ফুলের সিজন টাইম তখন। সারা জীবন মনে রাখার মত একটা ভ্রমণ হবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
উল্লেখ্য রিনচেনপং- কালুক প্রায় ৫৫০০ ফুট উপরে, সেখানে ছায়াতাল ৭০০০ ফুট উপরে। তাই ঠান্ডা এখানে তুলনামূলক বেশী।
এছাড়াও পেমিয়াংসি মনাসট্রি (সিকিম দ্বিতীয় পুরানো মনাসট্রি), রাবদেনসেই ধ্বংসাবশেষ (সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন রাজধানী), ইয়াকসাম ইত্যাদি আছে। সেগুলো দেখতে একদিন পেলিং এ রাতে থাকতে হবে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন অথবা শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে ঘন্টা পাঁচেকের জার্নি রিনচেনপং। সেভক হয়ে মেল্লি চেক পোস্ট পেরিয়ে সোজা জোড়থাং। জোড়থাং থেকে জুম, সোরেন হয়ে প্রথমে কালুক। কালুক থেকে তিন কিমি গিয়ে রিনচেনপঙ।
নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি থেকে রিজার্ভ গাড়ী অথবা জোড়থাং পর্যন্ত শেয়ার গাড়ীতে এসে জোড়থাং থেকে আরেকটি শেয়ার গাড়িতে রিনচেনপং, কালুক, ছায়াতাল, উত্তরে পৌঁছানো যায়। পশ্চিম সিকিমের যাওয়ার প্রধান পথই হলো জোড়থাং। জোড়থাং থেকে পশ্চিম সিকিমের সমস্ত জায়গার শেয়ার গাড়ী মেলে।
রিনচেনপং > কালুক > বার্মিওক > লোয়ার হি > বামদিকে ছায়াতাল (আপার হি) > লোয়ার হি এর পরে ডেন্টাম ভ্যালী > তারপর রাস্তা দুভাগ হয়ে যাচ্ছে। বামদিকের রাস্তা সিংসোর ব্রীজ হয়ে উত্তরে। ডেন্টাম থেকে ডানদিকের রাস্তা ছাঙ্গে ফলস হয়ে পেলিং। তারপর রিম্বিক ফলস, রক গার্ডেন হয়ে রাস্তা দুভাগ হয়েছে। বামদিকে যাচ্ছে খেছিপেড়ি লেক আর ডানদিকে (সোজা) কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস। আরো সামনে এগোলে ইয়কসাম।
রিনচেনপং থেকে পিছন দিকে আরো একটা রাস্তা (২০ কিমি+) ধরে লেগশিপ যাওয়া যায়। যদিও রাস্তা না বলে পাথুরে এবড়ো খেবড়ো পথ বলাই ভালো। সেখান থেকে গেজিং হয়ে সোজা পেলিং যাওয়া যায়।
গাড়ীর দাম পুরোপুরি দরদাম এবং সিজন, তেলের উপর নির্ভরশীল। ডিসেম্বর, ২০১৮ তে বোলেরো রিজার্ভ গাড়ির রেট নিম্নরূপ –
রিনচেনপং এবং কালুকে গোটা সাত আটেক হোটেল, হোম স্টে আছে। সব হোটেল থেকেই খুব ভালো কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পাওয়া যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা কালুকের হোটেল একটু বেশী খরচাবহুল। সেই তুলনায় রিনচেনপং এর হোটেল অনেক সস্তা। গুগল সার্চ করলেই রিনচেনপং, কালুকের হোটেলের ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে।
আমরা ছিলাম রিনচেনপং তে হোটেল রিনচেনপং নেস্ট তে। রিনচেনপং চোলিং মনাসট্রির ঠিক পাশেই। অসাধারন কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ রুম এবং ডিলাক্স ক্যাটেগরির রুম। গিজার আছে সব সময়। এবং রান্না একদম ঘরের। টি বি যোগী এবং তার ছেলে সন্দীপ যোগী এই হোটেলের মালিক। আতিথেয়তা, রুম, রান্না যেকোনো স্টার হোটেল কে হার মানাবে। ডিলাক্স ভিউ রুম ১৫০০ টাকা। নন ভিউ রুম ১২০০ টাকা। যোগাযোগ : ৭৪৩২০২১৫০৯/৮৩৪৮১৩৭৯১৫
Leave a Comment