রাবাংলা

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত হাজার ফুট উঁচুতে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন৷ স্বপ্নের মতো শোনালেও রাবাংলায় (Ravangla) পাড়ি দিলেই এ দৃশ্য বাস্তবে রূপান্তরিত হবে৷ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে সযত্নে বহন করে নিয়ে চলেছে সাউথ সিকিম (South Sikkim) এর রাবাংলা৷ সিকিম এর সবকটি শহরের মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় শহর এই রাবাংলা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় এই ছোট্ট মেঘে ঢাকা পাহাড়িয়া শহরটি, যেখানে দিনের আলোয় হঠাৎ হঠাৎ অন্ধকার ঢুকে যায়। পান্ডিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা,কাব্রু , হিমালয়ের এই বরফে ঢাকা পর্বত শিখর গুলি এই শহরটার প্রতিবেশী। শহরের ভিড়-ভাট্টা শব্দদূষণ থেকে বহুদূরে প্রকৃতির শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসার আদর্শ স্থান হল রাবাংলা৷

রূপে-গুণে অপূর্ব এক জায়গা রাবাংলা৷ দক্ষিণ সিকিমের এক ছোট্ট পাহাড়ি শহর৷ খুব বেশি বাড়িঘর নেই৷ বড়োজোর শ’খানেক৷ তার মধ্যে আবার অনেকগুলোই হোটেল৷ রাবাংলা যেন হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন সংস্কৃতির এক মিলন মেলা৷ নেপালি, ভুটিয়া, তিব্বতিরা তো বটেই, এমনকী প্রচুর বাঙালিও পাওয়া যাবে, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করেছেন এই শহরে৷

দেখার জায়গা বলতে কাছাকাছির মধ্যেই আছে বুদ্ধ পার্ক এবং তথাগত ট্যাসেল৷ বুদ্ধ পার্কে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়৷ দূরত্ব মোটে পাঁচ কিলোমিটার তাই শরীর সঙ্গ দিলে হেঁটেই যাওয়া উচিত৷ চলার পথে গায়ে এসে লাগবে ঠাণ্ডা স্নিগ্ধ হাওয়া৷ তেমনই পথের সঙ্গী হবে দূরের সমান্তরাল পাহাড়ের ঢেউ৷ দুইয়ে মিলে এই পাঁচ কিলোমিটার যেন স্বর্গীয় এক পথ৷ গাড়িতে গেলে যে আনন্দের অনেকটাই মাটি৷ আকাশ পরিষ্কার থাকলে গোটা পথ দেখা যেতে পারে দূরে নেপালের পর্বতশৃঙ্গগুলো৷ দেখা যেতে পারে সিকিমের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গও৷

পাঁচ কিলোমিটার শেষে বুদ্ধ পার্ক অপেক্ষায় রয়েছে আপনার৷ পার্কের এক অংশ দেখা শেষ হলে, অন্য অংশে দেখার জন্য রয়েছে তথাগত ট্যাসেল৷ তবে শুধু এই দর্শনীয় স্থানের স্থাপত্য বা সৌন্দর্য দেখাই নয়, আপনি এখানে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন শিশু সন্ন্যাসীদের শিক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি৷ অগস্ট মাসের শেষে এই জায়গাটি স্থানীয় উত্‍সবের জন্য সুন্দরভাবে সেজে ওঠে৷ তখন এখানে এলে অতিরিক্ত আকর্ষণ থাকবে৷

এছাড়া প্রথমদিনই ঘুরে নিতে পারেন তেমি চা বাগান (Temi Tea Estate)৷ রাবাংলা থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চা বাগান৷ সেখানে খানিকক্ষণ সময় কাটানোর পর চলে আসুন রালাং হট স্প্রিং দেখতে৷ রালাং হট স্প্রিংয়ের কাছেই অবস্থিত রালাং মঠ৷ গৌতম বুদ্ধের অনেক গোপন কথা গচ্ছিত রয়েছে এই মঠে৷ ১৭৬৮ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে তৈরি এই মঠটিতে প্রতি বছরই নানা উৎসব হয়ে থাকে৷ অসুস্থ ব্যক্তিরা সুস্থ হতে পাড়ি দেন বোরং এ৷ তাহলে বুঝতেই পারছেন এই এলাকার আবহাওয়া কতটা মনোরম৷ যাঁরা ট্রেকিং করতে যান, তাঁদের কাছেও এই এলাকা দারুণ পছন্দের৷

রালাং থেকে গাড়িতে সাত কিলোমিটার পথ গিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট হাঁটলে পৌঁছবেন বোরোংয়ে৷ তবে রঙ্গিত নদী থেকে বেরিয়ে আসা গরম জলের স্রোত দেখতে হলে আপনাকে সেখানে যেতে হবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে৷

রাবাংলার অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হল কেউজিং গ্রাম৷ সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাংব্রু গোম্পা ভিউ পয়েন্ট থেকে হিমালয়ের শোভা দেখার মজাই আলাদা৷ রাবাংলা থেকে গাড়িতে ১২ কিলোমিটার গেলে পৌঁছবেন মেনামে৷ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে এখানে ভিড় জমান পর্যটকরা৷

রাবাংলা থেকেই অনেকে পেলিং (৫৫ কিলোমিটার), ইয়ুকসম (৯০ কিলোমিটার) ও নামচি (৪০ কিলোমিটার) ঘুরে নেন৷

কিভাবে যাবেন

শিয়ালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী ট্রেনে চেপে পড়ুন৷ সেখানে নেমে গাড়িতে ১১০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করলেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন৷ আকাশপথে যেতে হলে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামতে হবে৷ সেখান থেকে গাড়িতে ঘণ্টা চারেকের পথ হল রাবাংলা৷

কোথায় থাকবেন

প্রায় সারা বছরই এখানে পর্যটকরা ভিড় জমান৷ তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে৷ সেই সময় গেলে আগে থেকে হোটেল বা রিসর্ট বুক করে রাখুন৷ শহরের কেন্দ্রে সমস্ত সুবিধাযুক্ত ছোট বড় বহু হোটেল পেয়ে যাবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ indiaravanglaSikkimsouth sikkim