থাইল্যান্ডে আমার একসপ্তাহ – তারেক আহমদ

বরাবরের মতোই আমি বাজেট ট্রাভেলার, এই পোস্টটি আমার ঔ সকল বাজেট ট্রাভেলার বন্ধুদের জন্য যারা কম খরচে ঘুরতে চান। আমি শুধু পাতায়া ও ব্যাংকক ঘুরেছি এবং তা আপনাদের কাছে বিস্তারিত শেয়ার করার চেষ্টা করবো এখানে। জীবনে প্রথমবার গিয়েছি তাই হয়ত একাধিকবার যাওয়াদের সাথে নাও মিলতে পারে সবকিছু।

ভিসা

আমার সময় কম এবং ঝামেলা এড়াতে এজেন্সী দিয়ে করিয়েছি ভিসা, খরচ লেগেছে ৪০০০/- টাকা, নিজে করলে মনে হয় ৩০০০/- টাকাতে করতে পারবেন।

ফ্লাইট / যাওয়া

চট্টগ্রাম থাকি তাই এখান থেকে ডাইরেক্ট ফ্লাইট শুধু রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, ভাড়া ২৭০০৩/- টাকা রিটার্ন, ঢাকা থেকে ২৩৫০০/-++, এরা খাবার ভালই দেয়।

সূবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট

এটি থাই এয়ারপোর্ট। ইমিগ্রেশন ফরমালিটি শেষ হতে ২-৩ মিনিট লেগেছে। তারপর exit দেখে একসিড়ি নিচে নামুন। এখান থেকে মোবাইল সীম কার্ড কিনুন। আমি Dtac happy tourist sim কিনেছি, দাম ২৯৯/- বাথ, সাতদিন মেয়াদ, ১০০/- বাথ টক টাইম, আনলিমিটেট ইন্টারনেট, মোবাইল এ অবশ্যই google map update করে নিবেন, এটাই আপনার সবচেয়ে বড় সংগী হিসেবে আপনাকে সাহায্য করবে 🙂 তারপর আরেক সিড়ি নামলে পাতায়া ভলবো বাস কাউন্টার। ভাড়া ১২০/- বাথ। সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা পাতায়া যেতে। বাসটি অনেক আরামদায়ক, ভিতরে টয়লেটও আছে।

★ পাতায়া

আমি আগেই বলেছি এটা বাজেট ট্যুর, তাই আগে থেকে হোটেল বুকিং দেইনি। তবে নেট থেকে সব চেক করে রেখেছিলাম। হেটে বিচ রোডে গিয়ে কয়েকটি হোটেলে চেক করে একটি পেয়ে গেলাম। PO post office guesthouse এটির নাম, ভাড়া ৪০০/- বাথ (ডাবল বেড, ফ্রিজ, এসি, ব্যালকনি, বাথরুমে গরম পানি, free wifi)। আমার বাজেট ছিল ৬০০-৭০০/- এর মতো, কিন্তু পেয়ে গেলাম ৪০০/- তে 🙂 আমার হোটেল থেকে বিচ ১মিনিট, walking street ৫ মিনিট।

walking street সম্মন্ধে কিছু বলার নাই, এটা যে যায় মতো এনজয় করে, তবে পাতায়া নাইট লাইফ কিন্তু এই ওয়াকিং স্ট্রিট ও বিচ রোডই 😉

খাবারের একটু সমস্যা হতে পারে। চারিদিকে এতো পোকামাকড় ফ্রাই চোখে পরবে যে রুচী নাও আসতে পারে। বিচ রোডে একটি বাংলাদেশী হোটেল পেলাম নাম নুরজাহান, খাবারের দাম একটু বেশি।

ট্যুর করতে গেলে প্রচুর হাটতে হয়, তাই প্রতি কদমে কদমে ম্যাসাজের দোকান। বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজের চার্ট নিয়ে রমনীরা / লেডিবয়রা দোকানের সামনে আপনাকে অফার করবে, অন্য কিছু না করলেও ফুট ম্যাসাজটা করে নিয়েন, ভাল লাগবে, ১৬০-২০০/-বাথ নেয় প্রতি ঘন্টা।

কোরাল বিচ(KohLarn)

প্যাকেজ ট্যুর করে ৫০০-৬০০/- বাথে স্পীডবোড, লাঞ্চ, ২ ঘন্টা বিচে ঘুরবেন। তবে আমি গিয়েছি অন্যভাবে। ওয়াকিং স্ট্রীট যেখানে শেষ ওখানেই ফেরি ঘাট। এখান থেকেই জাহাজ ছাড়ে কোরাল দ্বীপে যায়। ভাড়া ৩০/-বাথ। প্রতি ২ঘন্টা পরপর ছাড়ে আবার কোরাল থেকেও ২ঘন্টা পরপর পাতায়া ফিরে আসে। আপনি যতক্ষন খুশি কোরালে কাটাতে পারবেন। শুধু ফেরার জাহাজ সময় সূচীটা আগে থেকে যেনে নিবেন। এভাবে গেলে আপনার খরচ হচ্ছে ৩০+৩০=৬০/- বাথ মাত্র। লাঞ্চ আপনি আপনার মতোই করে নিবেন। প্রচুর খাবার হোটেল আছে ওখানে। কোরালে ২-৩ টা বিচ আছে। চাইলে আপনি ২০-৩০ বাথ দিয়ে বাইকে করে ঘুরে আসতে পারবেন। জাহাজ নিরাপদ বেশি, জাহাজে সময় নেয় ৪০ মিনিট, স্পীডবোডে ৩০মিনিট। তবে নৌভ্রমনটাই আমার কাছে বেশি ভাল লেগেছে বিচ থেকে।

★ ব্যাংকক

পাতায়া বাস টার্মিনাল থেকে ১০৮/- বাথ দিয়ে ব্যাংককের Ekkamai বাস টার্মিনাল তে নামতে হবে। Ekkamai BTS station থেকে Nana bts station নামলেই সুকুমভিট। মোটামুটি সবাই ব্যাংকক আসলে এই সুকুমভিট এলাকায়ই থাকে। Nana station এর চারপাশ টাই সুকুমভিট। মেইন রোডটি দিয়ে সুকুমভিটকে মূলত দুভাগে ভাগ করা, এখানে রোড গুলোকে মনে হয় Soi বলে, মেইন রোডের একপাশে জোড়া সংখ্যার রোড মানে soi- 2,4,6,8,10… এবং অন্যপাশে বিজোড় রোড মানে soi- 1,3,5,7,9… এভাবে।

আমি দুদিন soi 7/1 এ ছিলাম। hotel best value inn, ভাড়া ৯০০/- বাথ। ক্লান্ত থাকায় বেশি খুজিনি হোটেল। দুজন ছিলাম, ভালই ছিল হোটেল কিন্তু ভাড়াটা একটু বেশি। লোকেশন ভালো। Nana station এখান থেকে ৩০ সেকেন্ডের পথ। আমার সংগী দেশে চলে আসায় আমি হোটেল চেঞ্জ করলাম। এবার কম রেটের হোটেল পেলাম soi- 4 তে। Hotel de bed এটির নাম। ভাড়া ৫০০/- বাথ। ফেসিলিটি সবই আছে। Nana station ৫ মিনিট হেটে যাওয়া যায়। আর ব্যাংকক এর নাইট লাইফ Nana plaza মাত্র ১ মিনিট। এখানে তুলনামূলক কম রেটের হোটেল বেশি চোখে পড়েছে।

Soi-3 এলাকাটি মুসলিম এরিয়া। সবধরনের হালাল ফুড পাবেন। খুবই টেস্টি, দাম তো বেশি হবেই। খেয়ে খুব শান্তি পাবেন গেরান্টি। আমাদের দেশের ফ্রাইড রাইচে ডিম আর মাংস খুজতে হয় কিন্তু ওখানে হোটেল আল হোসাইনের ফ্রাইডে রাইচের চেয়ে মাংস বেশি দেখা যায় 🙂

ব্যাংককের ট্যুরিস্ট এটট্রাকশনের মধ্যে Grand palace অন্যতম। সুকুমভিট থেকে ক্যাবে ২০০-৩০০/- বাথ চায়। আমি গিয়েছি লোকাল বাসে ৬.৫০/- বাথতে, একটু সময় বেশি লাগে ঘুরে ঘুরে যায়। কিন্তু আপনি ব্যাংকক শহরটিও দেখে নিতে পারেন এই বাসে বসেই। Grand palace এর টিকেট মূল্য একটু বেশি ৫০০/- বাথ।

ব্যাংককে আপনি ওশান ওয়াল্ড, সাফারী ওয়াল্ড, ফ্লোটিং মার্কেট, মাদাম তুসো দেখতে পারেন, এগুলোর এন্ট্রি ফী বেশী।

রাতে অবশ্যই হোটেল থেকে বের হয়ে রাস্তায় ঘুরতে আসবেন, কারণ ব্যাংকক তখন জেগে উঠে, দিনে যে ফুটপাত গুলো একেবারে খালি নির্জন ছিল রাতে তা হয়ে উঠেছে উত্তাল। স্ট্রিট মার্কেট, বার, পাব, রমনীদের বিচরন ক্ষেত্র, আড্ডা ইত্যাদীতে… 😉

ব্যাংককেও আপনি প্রতি কদমে কদমে ম্যাসাজ সেন্টার পাবেন। পাতায়ার চেয়ে এখানে দাম প্রায় ১০০/- বাথ বেশি। ব্যাংককে আপনি লেডিবয় / হিজড়া একটু বেশিই দেখতে পাবেন কিন্তু আপনি অবশ্যই কনফিউজ হবেন এটা কি লেডি না লেডিবয়। কারন লেডিবয়ই বেশি সুন্দর দেখতে… 😀

শপিং / কেনাকাটা

Chatuchak weekend market (j j market) – থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় মার্কেট। শুধু শনিবার ও রবিবার খোলা থাকে। Nana bts station থেকে Moh chit bts station নামলেই এই মার্কেট। আমাদের বংগবাজার বা রিয়াজউদ্দিন মার্কেটের মতো। কি নেই এখানে? পাইকারী দরে কিনতে পারবেন। ১৫০০০ এর উপর দোকান আছে। ২৭ টার মতো সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এই দুদিনকে মাথায় রেখে ব্যাংকক সফর করা ভাল যদি শপিং করতে চান। যাওয়ার আগে অবশ্যই গুগল থেকে মার্কেট সম্মন্ধে বিস্তারিত দেখে গেলেই সুবিধা বেশি।

এছাড়া যারা এটা মিস করেছেন তাদের জন্য প্লাটুনাম, প্লাটিনাম, ইন্দিরা স্কায়ার তো রয়েছে। মোটামুটি কমে দরদাম করে কিনা যায়। ইন্দিরা স্কোয়ারটায় ভারতীয় বেশি। ডলার এই মার্কেটেই ভাংগাতে পারবেন একটি দোকান আছে। পাশেই Big C shopping center আছে। এখানেও এসির বাতাস খেয়ে সবকিছুই পেয়ে যাবেন, দাম মিডিয়াম। সব মার্কেটই একই জায়গায় এটাই সুবিধা।

Seven Eleven (7-11) নামে থাইল্যান্ডে প্রতিকদমে কদমে দোকান পাবেন। কোন ড্রিক্স, পানি, ড্রাই ফুড, সাবান, পেস্ট, বাদাম, দৈনন্দিন যা কিছু লাগে আপনি এইসব দোকান থেকে কিনবেন। মনে হয় এটি সরকার দ্বারা পরিচালিত, দাম খুবই কম।

মেট্রো ট্রেন

BTS, MRT, SRT নামে ট্রেন আছে যা শহর চষে বেড়াচ্ছে, সস্তা ও দ্রুততম বাহন। তবে মালয়েশিয়া থেকে থাইল্যান্ডের মেট্রো ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে।

টু এয়ারপোর্ট / ফেরা

Nana station থেকে Phaya thai staion এসে ট্রেন চেঞ্জ করে এয়ারপোর্ট লিংক ট্রেনে করে সোজা এয়ারপোর্ট। ভাড়া ৩১+৪৫= ৭৬/- বাথ। যদি ক্যাবে যেতে চান তাহলে মিনিমাম ৫০০/- বাথ লাগবে।

ডলার এক্সচেঞ্জ / ডলার ভাঙ্গানো

ডলার এয়ারপোর্ট এ ভাংগাবেন না, কম রেট পাবেন। দেশ থেকেই প্রয়োজনীয় থাই বাথ নিয়ে আসতে পারবেন, কোন সমস্যা করে না, আর যদি ভাংগাতেই হয় তাহলে ব্যাংকক এর soi 3 তে অনেক দোকান পাবেন ওখানে এক্সচেঞ্জ করবেন, কোন পাসপোর্ট লাগেনা ডলার ভাংগতে। যদি আপনি ঐসব বড় বড় মানি এক্সচেন্জ(western… etc) এ যান তাহলে আপনার পাসপোর্ট লাগবে, আবার রেটও কম দিবে।

★ একটা দরকারি কথা বলা হয়নি তাহলো থাইল্যান্ডের মানুষ গুলোকে খুবই ভাল লেগেছে। তাদের খুবই ভদ্র ও ফ্র্যান্ডলী মনে হয়েছে। শপিং করতে গেলে আমাদের বার্গেডিং করার অভ্যাস। আমি একটা দোকানে ব্যাগ কিনতে গিয়ে ৫০ বাথ করে বাড়াতে বাড়াতে তিন বার গেলাম। তাদের অনেক পেইন দিলাম। পরে ওদের দেয়া লাস্ট রেটেই ব্যাগটা নিলাম কিন্তু তারাতো কোন পেইন নিলই না বরঞ্চ আমাকে এমনভাবে কৃতজ্ঞতা/ধন্যবাদ দিল যে আমিতো লজ্জায় পরে গেলাম। আসলে তাদের ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশটা এমনভাবে করে যে আমি অভাক হয়ে যাই 🙂

** ফুকেট যাইনি, তাই আলোচনায় আসেনি… 🙁

Leave a Comment
Share