ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক সদা কর্মব্যস্ত এবং বৃহত্তম শহর। এটি ফেয়া নদীর পশ্চিম তীরে থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত।  ব্যাংককে পা রাখলেই অতীত আর বর্তমানের পাশাপাশি সহাবস্থানের ছবিটি চোখে পড়ে। ব্যাংককের মতো এত রঙিন শহর বোধহয় গোটা পৃথিবীতেই খুব কম আছে। বাড়িঘর-অফিস-কাছারি থেকে গাড়ি-ঘোড়া সবই নানা রঙে রঙিন। রাস্তার ধারে ধারে নানা রঙের ফুলের শোভাও শহরকে আরও রঙিন করে তুলেছে। দোকান, রেস্তোরাঁ, বার, মাসাজ পার্লার, ম্যল, মার্কেট নিয়ে জমজমাট শহরের রাস্তার সওয়ারি নিয়ে ছুটছে ‘টুকটুক’ অর্থাৎ অটোরিকশা। পথের ধারেই ফেরিওয়ালারা বেচছে খাবার। ব্যাংককের প্রধান দ্রষ্টব্য চাও প্রায়া নদীর পশ্চিমতীরে না ফ্রা লারন রোডের উপর প্রায় এক বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন রাজপ্রাসাদ বা ‘দুসিত মাহাপ্রাসাত’। ১৭৮২ সালে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন রাজা প্রথম রাম। প্রাসাদচত্বরেই রয়েছে ব্যাংককের আরেক আকর্ষণ ওয়াট ফ্রা কায়ে বা পান্নার বুদ্ধমন্দির। রাজা রামের আমলেই ১৭৮৫ সালে মন্দিরটি তৈরি হয়। মন্দিরের বাইরের ও ভিতরের দেওয়ালে নানা ভাস্কর্য, ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজ রয়েছে। বুদ্ধের মূর্তিটি একটিমাত্র জেড পাথর কেটে তৈরি। প্রাসাদচত্বরে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির এবং কাম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের একটি মিনিয়েচার মডেল আছে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বারোটা এবং দুপুর একটা থেকে তিনটে পর্যন্ত গ্র্যান্ড প্যালেস খোলা থাকে।

ব্যাংককের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির ওয়াট পো বা ওয়াট ফ্রা চেতুপন। শায়িত বুদ্ধের এই মন্দিরটি পঁচানব্বইটি প্যাগোডা, বোধিবৃক্ষ ও কৃত্রিম ঝরনায় সজ্জিত। মন্দিরের অভ্যন্তরে মোট ৩৯৪টি বুদ্ধমূর্তি আছে। তবে প্রায় দেড়শো ফুট লম্বা ও চল্লিশ ফুট উঁচু বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের শায়িত সোনার পাতে মোড়া মূর্তিটি সত্যিই অসাধারণ। ব্যাংককের আরেক দ্রষ্টব্য সোনার বুদ্ধমন্দির। প্রধান বুদ্ধমূর্তিটি প্রায় পনেরো ফুট উঁচু। দ্য ন্যাশনাল মিউজিয়ামে রয়েছে প্রায় ১৫০০ বছরের বৌদ্ধ শিল্পকলার নিদর্শন। বুদ্ধদেবের জন্মস্থানের নামাঙ্কিত সবুজ ঘাসে মোড়া লুম্বিনি পার্কটিও ভারি সুন্দর। লেকে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে।

মন্দির, রাজপ্রাসাদ, মিউজিয়াম, পার্ক ঘুরে দেখে স্টিমারে ভেসে পড়া যায় চাও প্রায়া নদীর বুকে। চাও প্রায়া নদীর বুকে সূর্যাস্ত এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

‘ব্রিজ অন দ্য রিভার কোয়াই’-চলচ্চিত্রের কল্যাণে বিশ্বখ্যাত এই ব্রিজটিও দেখে নেওয়া যায়। একসঙ্গেই বেড়িয়ে নেওয়া যায় এরওয়ান জলপ্রপাত। ব্যাংকক থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে ওয়াট ফা লুয়াং টা বুয়া বা ব্যাঘ্রমন্দির। বৌদ্ধমন্দিরটিতে লামাদের সঙ্গে থাকে পোষা বাঘেরাও।

ব্যাংকক (Bangkok) শহরে ঘুরতে খুব বেশী অর্থের প্রয়োজন হয়না। ট্যাক্সি ও টুক টুক নামে যান পাওয়া যায় এখানে। এগুলো মটরচালিত ত্রিচক্র যান। নির্দিষ্ট রাস্তায় চলাচলের জন্য বাস রয়েছে যেগুলি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও শীতাতপ ছাড়াও। আপনি যদি চাও ফ্রায়ার কাছে থাকেন তাহলে নৌ ট্যাক্সি ও খেয়া পারের ব্যবস্থা রয়েছে। লম্বা লেজওয়ালা নৌকাতেও আপনি ভ্রমণ করতে পারেন আর আপনার জন্য নির্দেশনাসহ ভ্রমণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

ব্যাংককে কেনাকাটা কোথায় করবেন

কেনাকাটা হলো ব্যাংককে আর একটি আনন্দজনক ব্যাপার। বিগত কয়েক বছরে আরও অধিক সংখ্যক প্লাজা, মল এবং দোকানপাট এখানে মাথা উঁচু করেছে। মানুষের উচ্চ পছন্দের কেনাকাটার মধ্যে রয়েছে থাই সিল্ক ও থাই সোনা।

সিল্ক সামগ্রী প্রস্ত্তত হয় বৈচিত্রময় রং ও নকশা দিয়ে সেসাথে থাকে আকর্ষণীয় দাম। আপনি থাই খনি থেকে উত্তোলিত চুনি ও নীলা পাথর দেখতে পারেন। আপনি যদি জুয়েলারী সামগ্রী ক্রয় করেন তাহলে এগুলি সস্তায় মিলবে না তবুও মোটামুটি সাশ্রয়ী দামে আপনি কিনতে পারবেন এগুলি স্থানীয়ভাবে তৈরী একারনে। যারা স্বর্ণের জুয়েলারী ক্রয় করবেন তাদের উচিত চায়না টাউনে যাওয়া যেখানে ৯৬.৫% খাঁটি সোনার জুয়েলারী পাওয়া যায়।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট এ নামুন। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে করে যেতে হবে নিজ হোটেলে।

ব্যাংককে থাকার হোটেল

ব্যাংককে আপনি থাকার জন্য আপনার সামর্থ্যের মধ্যে বহু ব্যবস্থা পাবেন। এমনকি চাও ফ্রায়া নদীর সামনে অবস্থিত হোটেলেও আপনি থাকতে পারেন যেমন ব্যাংককের বিখ্যাত ওরিয়েন্টাল হোটেল অথবা পেনিনসুলা হোটেল অথবা গাছপালা ও বাগান ঘেরা কোন হোটেলেও আপনি থাকতে পারেন আপনার পছন্দমতো নগরীর বানিজ্যিক অংশের বাইরে । ব্যাংককে আপনি পৃথিবীর যেকোন জায়গার তুলনায় ভাল আতিথেয়তা লাভ করবেন। আপনি যদি ব্যাংককের বিখ্যাত নিশিজীবন এলাকা যেমন প্যাটপং, সয় কাউবয় বা নানা প্লাজায় থাকতে পছন্দ করেন তাহলে আপনার উচিত ভাল একটি হোটেলে রুম বুক করা যেমন সিলমে ক্রাউন প্লাজা হোটেল কি ওয়্যারলেস রোডে প্লাজা এথেনিতে। তারা দক্ষতার সাথে আপনার যত্ন ও প্রয়োজনমতো সব ব্যবস্থা করে দেবে।

খাওয়া দাওয়া

চাইনিজ ও থাই খাবারের সমারোহ শহরের সর্বত্র। টম ইয়াং কুং হচ্ছে নারকেলের দুধ, কাঁচালংকা, আদা, লেমন গ্রাস, মাশরুম আর চিংড়ি দিয়ে তৈরি একরকম স্যুপ। স্টিমড রাইস উইথ গ্রিনহোল পিপারকর্ন দিয়ে সবুজ অথবা লাল চিকেন কারি। কাঁচা পেঁপে, আম, লেবুর রস আর লংকা মেশানো স্যালাড এর সঙ্গী। চেখে দেখা যায় শার্ক ফিন স্যুপ আর বার্ড নেস্ট স্যুপ। ছোটো ছোটো ফলের আকারে তৈরি মিষ্টিগুলি দেখতেও ভারি মজা লাগে। ভালো লাগবে রোজ অ্যাপল, ম্যাঙ্গোস্টিন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ bangkokshoppingthailand