একদম কম খরচে চারদিনের নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ

অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি, তিনজনে প্রায় চার হাজার টাকা বাজেট ধরে নিঝুম দ্বীপ (Nijhum Dwip) থেকে ফেরার পর দেখি জনপ্রতি আড়াই হাজার খরচ।

কেন যাবেন নিঝুম দ্বীপ

নিঝুম দ্বীপ গেলে আপনি একসাথে – সমুদ্র সৈকত, দ্বীপের অন্য এক পাশে সেন্টমারটিনের ফিল, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, নিঝুম দ্বীপের জাতীয় উদ্যান, হরিণের পালের দেখা, আর সেই সাথে ভরপুর প্রাকৃতিক দৃশ্য তো আছেই।

নিঝুম দ্বীপ কিভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাট ঠিক একদম ৫ঃ৩০টায় এমভি ফারহান৩/ফারহান৪ লঞ্চে (১৫০টাকা ডেক ভাড়া) সকাল ৬টায় হাতিয়া। সেখান থেকে মাছ ধরা লঞ্চে সোজা নিঝুম দ্বীপ অথবা বাইকে (৩০০/৪০০টাকা) করে চলে যান ঘাটপার, সেখান থেকে নৌকায়(৪০টাকা) করে নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপ তো আসলেন এইবার মূল বাজারে যাবার পালা তাই আবার বাইকে(১০০টাকা) করে চলে যান একদম আসল নিঝুম দ্বীপের নামারবাজার।

নিঝুম দ্বীপে থাকার ব্যবস্থা

থাকার জন্য নিঝুম দ্বীপে বর্তমানে ভালো মানের হোটেল আছে। আমরা ছিলাম হোটেল দিপান্তরে, ডাবল বেড পার ডে ৯০০ টাকা ভাড়া (চার/ছয় জন সহজেই থাকা যাবে)।

নিঝুম দ্বীপে খাওয়া দাওয়া

হোটেলের কাছেই অনেক খাবার দোকান পাবেন, দামও খুব বেশি না একটা। সকালে পাবেন পরোটা/রুটি, দুপুরে ভাত আর টাটকা মাছ, মুরগী, সবজি, ডাল। সন্ধায় লুচি, আর রাতে দুপুরের মতই। এখানে টাকার কথা বলব না, কারন খাওয়ার খরচ আপনার নিজের উপর, আমরা অনেক সাশ্রয়ী করে খাওয়ার খরছ করেছিলাম।

এছাড়া রাতে বারবিকিউ করতে পারেন সমুদ্রের পাড়ে, হোটেল সি-বার্ডের এক পিচ্চি ছেলের সাহায্য নিয়ে আমরা করেছিলাম। এছাড়া ওখানে সকালে/সন্ধায় ফ্রেশ খেজুরের রস খেতেও পারবেন, দাম গ্লাস প্রতি ১৫/২০টাকা।

নিঝুম দ্বীপে ঘোরার প্ল্যান

৩রা জানুয়ারি, ২০১৮ রওনা দিয়ে ৪ তারিখ সকাল ১০টায় নিঝুম দ্বীপ পৌছাই। হোটেল বুকিং করে ফ্রেশ হয়ে পাশেই ২/৩ মিনিটের পথ নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান ঘুরে আসি। এরপর সূর্যাস্তের আগেই চলে যাই সি-বিচে। সন্ধ্যায় দিকে নামারবাজারে যেয়ে লুচি দিয়ে নাস্তা করি। এরপর বাজার ঘুরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুম।

সকালে নাস্তা করে ট্রলারে ৫০০/১০০০ টাকা দিয়ে চৌধুরী খাল, কামলার চর ঘুরে আসি। দুপুরে এসে বাইক দিয়ে অন্য কিছু জায়গা ঘুরে নেই। সন্ধ্যায় নামারবাজার ফিরে এসে বারবিকিউ করি। আপনারা চাইলে রাতে নিঝুম দ্বীপে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারেন নির্ভয়ে।

নিঝুম দ্বীপ থেকে ফিরতে পারেন যেভাবে

কপাল কিংবা ভাগ্য ভালো থাকলে মাছ ধরার ট্রলার পেয়ে যেতে পারেন, আমরা পেয়ে গেছিলাম। মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে নিঝুম দ্বীপ থেকে হাতিয়া চলে এসেছিলাম নতুবা আগের মত প্রায় ৫/৬’শ খরচ করে ফিরতে হবে সড়কপথে। কিন্তু মাছ ধরা ট্রলার বেস্ট। কারন খুব উপভোগ করতে পারবেন চারিপাশ। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় হাতিয়া থেকে ঢাকার পথে লঞ্চ ছাড়ে। পরদিন ভোর ৫/৬টায় ঢাকার সদরঘাট।

কিছু দরকারি তথ্য

  • দ্বীপে কারেন্ট থাকে না, রাত ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত, তাই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যান। চার্জ করতে হলে বাজারে ভাড়ায় চার্জ কড়া যায়।
  • পিচ্চি-বাচ্চা কাচ্চা হতে দূরে থাকবেন ততই মঙ্গল, সি বিচ চিনতে হলে বাজারের মানুষদের জিজ্ঞেস করুন। পারলে গুগুল ম্যাপের সাহায্য নিন, যার কেউ নাই তার গুগল ম্যাপ আছে 😉
  • রবি/এয়রাটেল/গ্রামীনের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় চলার মত।

সবশেষে, দ্বীপের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করুন। যেখানে সেখানে খাবারের প্যাকেট ফেলা থেকে বিরত থাকুন আর দ্বীপের মানুষরা অনেক ভালো তাই তাদের প্রতি আন্তরিক থাকবেন এবং সামাজিকতা রক্ষা করে চলুন। হ্যাপি জার্নি!

Leave a Comment
Share