মেঘালয়ার গল্প

আচ্ছা মামা, এতো মেঘ আসে কোত্থেকে !!!

ঐ যে, ও ও ও….. ওই যে দূরে দেখা যায় বিশাল পাহাড়, কত্ত উঁচু, মাথাভর্তি সাদা সাদা চুল, ও হলো মেঘালয়া, মেঘ আসে ঠিক ওখান থেকে।

তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে, রসিয়ে রসিয়ে চলবে গল্প বলা, ইনশাআল্লাহ্‌ !!! আমার upcoming গুড্ডু মামার সাথে, মেঘালয়ের দিনগুলির গল্প 😊😊…

মেঘালয় নিয়ে ইনফো জোগাড় করতে গিয়ে যে জিনিসটা বেশি প্রয়োজন মনে হয়েছে তা হলো স্পট গুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। ভিসা প্রসেসিং নিয়ে অসংখ্য পোস্ট আছে, তা থেকে যথেষ্ট ইনফো পাওয়া যায়। তাই সেটা নিয়ে আর লিখতে গেলাম না। যেসব জায়গা গুলোতে না গেলে ট্যুরটা পূর্ণতা পেতো না, তাদের সবকটার নাম একত্র করার একটা প্রয়াস শুধু।

ডে ০: চট্টগ্রাম – ঢাকা – সিলেট

২৭ জুন, মঙ্গলবার, বিকেল ৩.০০ টার শ্যামলী ননএসি বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশ্য যাত্রা। রাত ১০.০০ টা নাগাদ ঢাকার ফকিরাপুল বাসস্ট্যন্ডে টিমের বাকি সদস্যদের সাথে যোগ দেই। হানিফ ননএসি বাসে করে রাত ১১.০০টায় যাত্রা শুরু হয় ফকিরাপুল থেকে সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে। সিলেটের কদমতলী বাস স্টেশনে যখন পৌঁছায়, ঘড়িতে তখন ভোর ৪.৩০টা আর গোটা সিলেট শহরে ঝুম বৃষ্টি।

সন্ধ্যা আর ভোরের মধ্যে তফাৎটা কেবলই সময়ের, ছবিঃ arnabs

ডে ১: সিলেট – তামাবিল বর্ডার – ডাউকি বর্ডার – ডাউকি বাজার – umkrem fallsBop hills/পাংথুমাই ফলস – living root bridgeMawlynnong village – শিলং

২৮ জুন, বুধবার, ভোর ৫.০০ টার দিকে যাত্রা শুরু হয় কদমতলী বাস স্টেশন থেকে, তামাবিল বর্ডারের উদ্দ্যেশ্যে। যাত্রা সঙ্গী ১৬ জন। বাস আগে থেকেই রিজার্ভ করা ছিলো। ৭.০০ টা নাগাদ পৌঁছায় তামাবিল বর্ডারে। এটা বাংলাদেশ সাইড আর মেঘালয় সাইড বর্ডারের নাম ডাউকি। তামাবিল বর্ডারে ইমিগ্রেশন শেষ করতে সময় নেই প্রায় ৩.৩০ ঘন্টা ☹। হেঁটে বর্ডার ক্রস করে ওপাড়ে ডাউকি বর্ডারে যেতে হয়। ডাউকিতে ইমিগ্রেশন প্রসেসিং শেষ হয় ৩০ মিনিটেই 😊 । তারপর শুরু হয় মেঘালয় গল্পের। প্রায় দুপুর ১২.০০টায় ডাউকি থেকে জিপে করে যাত্রা শুরু হয় Mawlynnong village এর উদ্দ্যেশে। পথে ডাউকি বাজারে নেমে হাল্কা খাওয়া দাওয়া আর টাকা টু রুপি কনভার্শন এর কাজ সারা হয়। (আমরা রেইট পাই ১০০ টাকায় ৭৮ রুপি, very poor ☹)। শিলং এ ডলার টু রুপি করানো যায়। Mawlynnong এর যাত্রা পথে দেখা হয় Um-krem falls আর Bop hills/পাংথুমাই ফলস। মাউলিনং পৌছানোর আগ পর্যন্ত আপনার হাতের ডানে পড়বে আরো অনেক অনেক ঝর্ণা আর বায়ে থাকবে সিলেটের জাফলং। প্রত্যেকটা ঝর্ণা তে নামতে গেলে আর শিলং পৌছানো লাগবে না। So, control yourself. গোটা মেঘালয় ট্যুরেই থাকবে ঝর্ণার ছড়াছড়ি আর মেঘের আনাগোনা 😊 । um-krem এ্রর জলে নেমে ইমিগ্রেশন এর ক্লান্তি ভুলি আর Bop hills এর গর্জন কানে নিয়ে আবার উঠে পড়ি জিপে। মেঘালয়ের পাহাড়ি আনারস খেতে খেতে চলতে থাকে যাত্রা।

Um-krem falls, ছবিঃ নীল
Bop Hills যাকে মোরা পাংথুমাই বলি, ছবিঃ নীল

মাউলিনং এর পথেই পড়ে living root bridge. বর্ষার কারণে এর ডাউন স্ট্রিমেই আমাদের রেমাক্রি টাইপ ফিলিংস পাওয়া যায়। আরেকটূ ডাউনে গেলে বেশ বড়সড় কাসক্যাডও পাওয়া যায়। ব্রিজ দেখে আবার জীপে করে যাত্রা মাউলিনং এর উদ্দ্যেশ্যে। এশিয়ার পরিছন্ন গ্রামে পৌঁছে দুপুরের খাওয়া দাওয়া আর হাল্কা ঘুরাঘুরি। আলো থাকতেই বেরিয়ে পড়ি গ্রাম থেকে শিলং এর উদ্দ্যেশ্যে।

Mawlynnong village, ছবিঃ নীল

মাউলিনং টূ শিলং এ যাওয়ার রাস্তা টা জীবনেও ভুলবার নয়। এতো সবুজ, এতো মেঘ, এতো আলো। আল্লাহ্‌!!! মেঘালয় তার নামের যথার্থতা রেখেছে। পথে পড়ে অনেক ভিউ পয়েন্ট। শেষ বিকেলের মেঘ রৌদ্রের খেলা দেখি আমরা দুটো ভিউ পয়েন্টে, অল্প বিরতি দিয়ে। সূর্যের রক্তিম আভায় মেঘ গুলো সব তুলো হয়ে ছুটছে। এতোদিন আপনি তা দেখেছেন মাথা উঁচিয়ে। আজ দেখবেন মেঘের উপরে দাঁড়িয়ে। তারপর শিলং এর পথ ধরা। রাত ৮.০০টা পৌঁছে যায় শিলং। খেয়ে দেয়ে শান্তির ঘুম।

ডে ২: শিলং – Laitlum CanyonsJongksha view pointMawkdok Dympep Valley View PointWahkaba Fallsseven sister fallsMawsmai Limestone CaveNohkalikai Falls – শিলং

২৯ জুন, বৃহস্পতিবার, নাস্তা সেরে সকাল ৭.০০টার মধ্যে যাত্রা শুরু লাইটলুম এর উদ্দ্যেশ্যে। মেঘের রাজ্য আর সবুজ পাহাড় কেটে কেটে যতই এগিয়ে যায় আমরা মেঘ যেন আরো ঘন হতে থাকে। লাইথলুম গিয়ে তো একেবারে মেঘের পেটে 😊 😊 । মেঘের মাঝে পাহাডের কিনারে বসে জমে গেলো চা পানের আসর ।

Laitlum Canyons, ছবিঃ নীল

ফেরার পথে জোংকশা রোডের পাশ থেকে শিলং এর ভিউ দেখে আবার ও থেমে যায় জীপ। চলে মেঘ রুদ্দুরের মাঝে পাহাডের লুকোচুরি দেখা।

Jongksha view point, ছবিঃ তাফ

রওনা হই wahkabar জন্য। পথে Mawkdok view point এ নেমে নুডলস খাওয়া। আর ব্রিজের নিচের কাসক্যাড গুলোতে হাটাহাটি, হিম ঠান্ডা পানি, আর গরম গরম ভুট্টা। আহা শান্তি !!!

Mawkdok view point entry, ছবিঃ arnabs

Wahkaba, Seven sister, Mausmai cave, Nohkalikai এ সবই চেরাপুঞ্জিতে, আর এগুলোর বর্ণনা দেয়ার মতো দৃষ্টতা দেখানো, আমার পক্ষে অসম্ভব। শুধুই দেখতে থাকুন 😊 😊 ।

Wahkaba Falls, ছবিঃ arnabs
Seven Sister Falls, ছবিঃ নীল
Mausmai Cave, দাদা ভয় পাইছে 😉 ছবিঃ তাফ
Nohkalikai Falls, ছবিঃ নীল

mausmai cave ছাড়া বাকি ফলস গুলো দেখতে দেখতে অনায়াসে দিন কেটে যাবে, সূর্য যাবে ডুবে। তাই আবারো, control yourself এবং ভিউ দেখতে দেখতে শিলং ফেরা 😊 😊। অতঃপর খেয়ে দেয়ে শান্তির ঘুম।

ডে ৩: শিলং – এলিফ্যান্ট ফলস – Umiam Lake view pointUmiam Lake – গলফ ফিল্ড – Happy shopping

৩০ জুন, শুক্রবার। এ দিনটি ছিলো রিল্যাক্সেশনের। শহরের কাছাকাছিই পড়ে এলিফ্যান্ট ফলস। কয়েকটি স্টেপ আছে এটির। সাজানো গোছানো। লোকে লোকারাণ্য। ঝর্ণার সাথে সাথে দেখা হয়ে গেলো ভারত বর্ষের মানুষজন :P।

এলিফ্যান্ট ফলস, ছবিঃ arnabs

তারপর একে একে Umiam Lake এর পাড়ে আর গলফ ফিল্ডে কিছু সময় গড়াগড়ি করে শিলং এর center point এ ফিরে আসা।

Umiam Lake, ছবিঃ নীল

গলফ ফিল্ডে বসে মেঘালয়ান আম খাওয়ার সে গল্প না বললে আমের প্রতি বড্ড অসম্মান জানানো হবে। আহা মধুর সে আম !!! 😊 😊 দুপুরের মধ্যেই শিলং ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর ঝাঁপিয়ে পড়া শপিং এ। রাতে চলে Dominos এর পিজ্জা অতঃপর শান্তির ঘুম।

ডে ৪: শিলং – Krang Suri Falls – সোনাং পেডাং – ডাউকি বাজার – ডাউকি বর্ডার – তামাবিল – সিলেট – ঢাকার পথে

১ জুলাই, শনিবার, এ দিন খুব ভোরেই (প্রায় ৬.৩০টা) রওনা দিয়ে মেঘের পাহাড় কেটে কেটে আগাতে থাকি ক্রাংসুরির দিকে। ঝর্ণার কাছাকাছি যেতেই তার প্রমত্তা শব্দ আপনাকে বুঝিয়ে দিবে আপনি কি দেখতে যাচ্ছেন। ভরা বর্ষায় ক্রাংসুরি। আহা!! এ অন্য কিছু।

Krang Suri Falls, ছবিঃ তাফ

ক্রাংসুরিতে ধাপাধাপি শেষে আসা হয় সোনাং পেডাং এ। মূলত আমাদের উদ্দ্যেশ্য ছিলো এখানে এক রাত কাটানো। কিন্তু পাহাডি ঢলের কারণে ক্যাম্পিং সুবিধা না থাকায় সোনাং পেডাং চলে আসে দেখার লিস্টের সবার নিচে। কিন্তু মেঘালয় আপনাকে অবাক করবেই। সোনাং পেডাং এর সৌন্দর্য আপনাকে বুঝাবে, শুধু ক্যাম্পিং এর জন্য হলেও আবার আসতে হবে এ জায়গায়। ঝুলন্ত ব্রিজের পরে আছে বড় বড় বোল্ডারে ভর্তি পাহাড়ি নদীর মোহনা। ব্রিজের আগে পাবেন কায়াকিং আর স্রোতের টানে ভাসার আনন্দ। যাদের চশমা আছে তারা সাবধান, আমারটা গেছে। আর যারা সাঁতার জানেন না তারা আরো বেশি হুঁশিয়ার। পাহাড়ী নদী, অনেক খরস্রোতা।

অতপর সকল ধাপাধাপি শেষে ডাউকি বর্ডার হয়ে আবার দেশে প্রবেশ এবং রাতের হানিফ নন এসি বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা। সোনাং পেডাং থেকে বর্ডার খুব কাছেই। ২০-৩০ মিনিট এর পথ। আমরা প্রায় বিকেল ৪.০০ টার মধ্যেই এ পাড়ে চলে আসি।

খরচ

জিপ ভাড়া পড়েছিলো দিন ভেদে ৩০০০-৪০০০ রুপি মতো (৭জনের সীট)। আর কার ভাড়া ২০০০-২৫০০ রুপি (৪ জনের সীট)। আর ৭০০ – ১০০০ রুপি পার হেড কস্টে ভালো হোটেল পাওয়া যাবে শিলং এ। অল্প কিছু ছবি দিয়ে মেঘালয়ের সৌন্দর্য্য বুঝানো অসম্ভব। ছবির চাইতেও সুন্দর এই পাহাড় রাজ্, রাজ্যের মানুষ 😊 😊।

Leave a Comment
Share