ড্রাগনের দেশ ভুটান ভ্রমণ

Happiness does not come in reaching the destination. It has beneath in the path.

আপনি যদি কথা গুলোতে বিশ্বাস করেন তাহলে নিচের লেখাটা আপনার জন্য। আমরা অনেকেই  হয়তো বাই রোডে ইন্ডিয়ার ভিতর দিয়ে ভুটান ঘুরে এসেছি। আবার অনেকে এখনো যাই নাই। আমি এখানে আমার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি।

আমি প্রচিত হলিডেজ নামক একটা স্বানামধন্য ট্যুর এন্ড ট্রাভেল কোম্পানির ফেইসবুক পোস্ট দেখে আগ্রহী হই তাদের সাথে গ্রূপ ট্যুর বাই রোড ভুটান যাবার। মাত্র ১০,০০০ টাকায় ভুটানের ৩টা শহর এবং পাসপোর্টে ৮টা সীল মারার লোভ থামাতে পারি নাই। আমরা রওনা দিয়ে ছিলাম ২০ নভেম্বর রাত ৮.৩০ মিনিটে। তার আগে বলে নেই, ভুটান অন আরাইভাল ভিসা দেয় এবং যেহেতু ইন্ডিয়ার ভিতর দিয়ে বাই রোডে যেতে হবে তাই আমাকে ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়েছে।

ট্রানজিট ভিসা নেবার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি লাগবে প্রচিত হলিডেজ তা বলে দিবে, চাইলে তারা ফ্রিতে আপনার ডকুমেন্টস রেডি করে অনলাইনে আবেদনও করে দিবে। নিজেই করতে পারবেন কিন্তু তাদের কাছ থেকে করানোই ভালো। কারণ আপনাকে ডেমো বাস টিকেট জমা দিতে হবে, হোটেল বুকিংয়ের কনফার্মেশন লেটারের কপি আপনার ইমেইল একাউন্ট থেকে প্রিন্ট করে জমা দিতে হবে। তাই ট্রাভেল কোম্পানি হেল্প নেয়াই ভালো। এখন বলি, ডকুমেন্ট শক্ত করতে আপনি কয়েকটা জিনিস দিতে পারেন (যদি থাকে) ১.  ই-টিন সার্টিফিকেট, ২. পাসপোর্টে ডলার এনডোর্সমেন্ট ৩. ইউটিলিটি বিলের অরিজিনাল কপি জমা দেবার দিন সাথে রাখবেন অনেক টাইম দেখতে চাই।

এবার ভিসা ডকুমেন্টস জমা দেবার পালা। খেয়াল রাখবেন আপনি যেদিন জমা দিচ্ছেন তার আগে পরে কোনো ছুটি আছে নাকি। তাহলে ওই দিন প্রচন্ড ভিড় হবে এবং আপনাকে হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে। এবং যেহেতু ট্রানজিট ভিসা জার্নি ডের এক দিন আগে দেয় তাই মিস হয়ে গেলে আপনি ব্যাড লাকে পরে যাবেন। গ্রুপের দুই জনকে আমাদের রেখে যেতে হয়েছে এই কারণে। এপ্লিকেশন জমা দিতে হবে যমুনা ফিউচার পার্কে। আমি অনেক সকালে গিয়ে ছিলাম। সকাল ৭.৩০। জমা নেই ৯ টাই। লাইন ধরে ঢোকায় তখন থেকেই। আমরা মেইন গেটের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়ায় ছিলাম। ৮.৩০ গেট ওপেন করতেই সবাই দৌড় দিয়ে মেইন এনট্রান্সএর সামনে চলে যায়। যেখানে আমি ৫০ জনের পিছে ছিলাম সেখানে আমি ২৫০ জনের পিছনে পরে যায়। আমার মনে হলো ঘুম মিস দিয়ে আসাটা বড় বোকামি হয়েছে।

এবার IVAC এ ঢোকার টাইমে আপনাকে টোকেন দিবে ওয়েটিং লাইনের। আপনি অবস্যই টোকেন নেবার টাইম বলবেন আমি ট্রানজিট ভিসার জন্য দাঁড়াবো।. Otherwise আপনাকে টুরিস্ট ভিসার টোকেন ধরে দিবে। ট্রানজিট ভিসার কাউন্টার হচ্ছে ২ নম্বর। ঢুকতেই হাতের ডান দিকে। আমার জানা ছিল না তাই আধা ঘন্টা আমি খাবি খেয়েছিলাম।

আশা করছি আপনি ঠিক সময়ে ভিসা সহ পাসপোর্ট হাতে পেয়ে গেছেন। এখন বাস জার্নি স্টার্ট। ব্যাগ গোছানোর টাইমে অবস্যই একটা ডকুমেন্ট ফাইল এক্সট্রা করে রেডি করে নিন। সেখানে আপনার পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসার ফটোকপি, আপনার NOC এর ফটোকপি, NID ফটোকপি এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ কালার পিকচার সাথে নিয়ে নেন। মাস্ট একটা পেন নিন। অনেক ইমিগ্রেশন (জাইগাওঁ/ ফুন্টসোলিং) এ আপনাকে ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। অন্যের পেনের দিকে চেয়ে থেকে কি লাভ বলুন।

বাস ভোর বেলায় বুড়িমারী পৌঁছাবে। আপনার বাস যখন পৌঁছাবে তখনি আপনার ইমিগ্রেশন সিরিয়াল পরে গেলো। আমাদের বাস পৌঁছাবার আগেই একটা বাস পৌঁছে যায় তাই আমরা সিরিয়ালে দুই নম্বর। এখন ফ্রেশ হন (পারলে বড়টা সারেন, কারণ এর পর বিকেলে জাইগাওঁ এর হোটেলে না পৌঁছানো পর্যন্ত কাঁদলেও লাভ নেই), নাস্তা করেন এন্ড ওয়েট করেন আপনার গ্রূপ লিডার/ বাস স্টাফ রায় সব হেল্প করবে। ও ভালো কথা আপনি যদি কিছু স্পিড মানি দিতে না চান তাহলে ঢাকাতেই মতিঝিলের সোনালী ব্যাঙ্ক শাখায় ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ২ কপি রশিদ নিয়ে নেন এবং বুড়িমারীতে পাসপোর্টের সাথে জমা দিন। আমি অনেক পাকনা তাই ট্রাভেল ট্যাক্স আগেই দিয়ে ছিলাম।

যথা সময়ে আপনার ছবি তুলে ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করে কাস্টমস পার হয়ে ইন্ডিয়াতে ঢুকে যান। আপনাকে টাকা ভাঙ্গায় রুপি নিতে বলবে। আপনি দেখানো জায়গা থেকেই রুপি নিয়ে নেন। ওরাই ভালো রেট দিবে, বাকিরা মাছি মারে। ভালো কথা ভুটানে রুপি অনায়াসে চলে। নির্দ্বিধায় নিয়ে নিন। ১০০০ রুপি নিবেন না। ৫০০ রুপি কম নেবায় ভালো। ভাংতি কোনো দেশের দোকানদারি দিতে চাই না ভাই।

ইন্ডিয়া কাস্টমস কমপ্লিট করে আপনি গ্রূপের সাথে জীপে করে চলে যান জাইগাওঁ ইমিগ্রেশন সেন্টারে। পাসপোর্টে departure সীল মেরে চলে যান হোটেলে। যদি ফুন্টসোলিংএ হোটেল হয় তাহলে ফুন্টসোলিংয়ের ইমিগ্রেশন সেন্টার থেকে arrival সীল মেরে নিয়ে চলে যান হোটেলে। আমার পার্সোনাল ওপিনিয়ন আপনি জাইগাওঁতে হোটেল নিন। ফুন্টসোলিং আপনি যখন ইচ্ছা রাস্তা পার হয়ে ঘুরে আসতে পারবেন পাশের এলাকা টহল দেবার মতন করে। জাইগাওঁতে ঘুরুন shopping করুন যায় করুন অবশ্যই স্ট্রিট ফুড ট্রায় করুন। সাথে একজন পার্টনার থাকলে ভালো হয়। যাই নিন শেয়ার করে খান। আপনার পেট ভরাতে কে বলেছে আপনি খালি টেস্ট নিন। রাতে ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁতে ডিনার সারুন। আমি করেছিলাম রাজস্থান রেস্তোরাঁতে। রুটি থালি (সেট মেনু উইথ ভাত) ১৫০~১৬০ রুপি। আপনি যদি মিট ছাড়া ডিনার করলে মারা যাবেন মনে করেন তাহলে বিসমিল্লাহ হোটেল নামক একটা হোটেলে যান ভুরিভোজ করেন। আমি দেশের বাইরে যেখানেই যায় সেখানেই আমি পুরোপুরি veg indian হয়ে যায়। আমার কোনো প্রব্লেম হয় না ভাই। আমি নিরামিষী পেট ভোরে খেয়ে ঢেকুর দিতে পারি, খুব বড়জোর মাছ খাই বাট নো মিট। হালাল ইস্যু। আপনার ইস্যু নেই, তাহলে আপনাকে থামায় কে।

মজার বিষয়, আপনি কখনো স্বর্গ এবং পৃথিবীর বর্ডার দেখেছেন? আমি আপনার সারপ্রাইজ নষ্ট করতে চাই না। আপনি দেখুন এবং ডিসকভার করুন নিজের চোখে। ভালো কথা সবার জন্য লেখা তাই এটাও বলে দিচ্ছি, আপনি যদি হার্ড ড্রিঙ্কস করেন তাহলে ফুয়েন্টশোলিং এ  পাবেন এভেইলেবল। কিন্তু ৯ টার পর দোকান বন্ধ হয়ে যাই। So be hurry. ৫০ রুপিতে বিয়ার পাবেন লোকাল ভূটানিজ বিয়ার। জাইগাওঁতে ড্রিঙ্কস সেল করে না। ইন্ডিয়াতে নাকি আপনি মদ পাবেন না। শুনলে হাসি পাই। যেহেতু গ্রূপে গিয়েছিলাম সো এক রুমে ৩~৪ জন করে ঢুকে ছিল। আমি আবার একটু বাথরুম লাভার তাই কিছু টাকা বেশি দিয়ে একটা দেশি ভাইকে সঙ্গী করে একটা রুম নিয়ে নেই। ভাই খুব ভালো মানুষ বিছানায় শোবার আগে বললো ভাই সকালে ডেকে দিবেন এবং তারপরি শোবা মাত্র ঘুম। আমি বাথরুম সকালে ফার্স্ট ইউজ করতে পারবো ভেবে খুশিতে কেঁদে দিয়েছিলাম।

সকালে জয়গাওতে কোনো রেস্টুরেন্ট খোলা পাবেন না। তারা ৯ টার পর দোকান খোলে। আবার হামলা চালান স্ট্রিট ফুডে। এখানে আপনি লুচি-আলু কারি, রুটি-গোবি কারি, রুটি-মিক্স ভেজ, রুটি-চিকেন কারি, আলু পরাটা, ফ্রাইড রাইস, মম সহ অনেক কিছু পাবেন। জি আমি সব ট্রায় করেছিলাম। আমি একটু খাদক বটে। সাথে চা, আর কি চাই। কিন্তু আমাদের আরো কিছু চাই। তাই লাস্টে এক গ্লাস ফ্রেশ গরম মহিষের দুধ মেরে দিলাম।

আবার জার্নি স্টার্ট টু থিম্পু ফ্রম ফুন্টসোলিং। আমরা যেহেতু ১৭ জন ছিলাম ট্যুর লিডার আমাদের জন্য একটা কোস্টার নিয়ে নিসিলো। যেই ড্রাইভারকে আমরা ৪ দিন ওর বৌ এর কাছে যাইতে দেয় নাই। অল টাইম আমাদের সাথে আটকায় রেখেসিলাম। অনেক মজার মানুষ ছিল। বাস এ উঠতে যেয়ে দেখবেন সবাই হুড়োহুড়ি করে আগের সিটে বসে পরসে আর আপনার জন্য রেখে দিয়েছে লাস্টের ৪টা সিট। আমরা আসলে বাঙালি তো। যাইহোক আপনি নির্দ্বিধায় লাস্টের সিটে আরাম করে ছড়িয়ে বসুন। একটা ঝাকি খাবেন না পুরো ৩ দিনের ভুটান ট্রিপে। এইটা আমার চ্যালেঞ্জ। ভুল হইলে আমি ফ্রীতে আপনাকে গাইড করে টাইগার নেস্টের চূড়ায় নিয়ে যাবো। ট্রায় করবেন বাম পাশে বসার জন্য। দুই দিকেই খালি পাহাড় আর পাহাড়। কিন্তু বাম পাশে আপনি হাজার ফুট নিচে নদীর বয়ে চলা দেখতে পারবেন।

আমরা যখন থিম্পু পৌছালাম তখন বিকেল, তাই ট্যুর লিডার আগেই লাঞ্চ অর্ডার দিয়ে রাখে ড্রাইভারের এক পরিচিত ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁতে। ও হ্যা সকল প্রকার খাওয়া ট্রাভেলারের নিজের খরচে ছিল। যায় হোক আমরা লাঞ্চ করে চলে গেলাম বুদ্ধ টেম্পল দেখতে। ভালো কথা রাস্তা পারাপার হবার রুলস ফলো করুন। দেশের অপমান করে কি লাভ বলুন। সাথে করে গরম কাপড়, হাত মোজা এবং মাথার টুপি নিয়ে নিন। ওখানে অনেক ঠান্ডা বাতাস। টেম্পল ঘুরুন ছবি তুলুন এবং একটু চোখেও দেখুন, খালি ছবি তুলে যায়েন না। সন্ধ্যা হয়ে যাই পার্টি শেষ আমরা হোটেলে ব্যাক করি। থিম্পু সিটি থেকে বাইরে ছিল আমাদের হোটেল। সন্ধ্যা ৭.৩০ হোটেলে চলে আসতে মনটা খারাপ ছিল কিন্তু হোটেল দেখে মন ভোরে যাই। ৩ ষ্টার হোটেল, ফ্লোর থেকে হিট বের হয়। তাই আপনি খালি পায়েই হাঁটতে পারবেন। ওই রাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল -৪।

হোটেলে ঘুমানোর জন্য এতো দূরে তো আসিনি। তাই আমার রুমমেটকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম আবার থিম্পু সিটির উদ্দেশ্যে। হোটেল রিসেপশন থেকে খোঁজ পাই দুই উপায়ে শহর যাওয়া যাবে। এক. কার রিজার্ভ করে। সেক্ষেত্রে গুনতে হবে ৩০০ রুপি। আসার সময় ৪০০ রুপির মতন। দুই ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া করে সেক্ষেত্রে জন প্রতি ভাড়া পড়বে ৫০ রুপি। আমরা ট্যাক্সি নিলাম সাথে হোটেল থেকে আরো ২ জন জোগাড় করে নিলাম। শহরে রাতের খাবারের খরচ পড়লো মাথা পিছু ১৮০ রুপি। ইন্ডিয়ান ভেজ। প্রতিটা রেস্তোরায় কাম বার। সবাই ভাতও খাচ্ছে আবার মদও খাচ্ছে।

আমরা সকালে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট করে বের হয়ে পরি সাইটসিয়িংয়ের উদ্দেশে। পথে দূর থেকে দেখি রাজার বাড়ি। তারপর বেরিয়ে পরি পারো শহরের উদ্দেশে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য টাইগার নেস্ট।

টাইগার নেস্ট মনাস্টেরী: ভুটান হচ্ছে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬,৫০০ ফুট উপুড়ে এবং টাইগার নেস্ট আরো ৩,৫০০ ফুট উপরে। এতো উঁচুতে ওঠার উদ্দেশ্য খালি মন্দির দেখা নয়। এই পাহাড় চড়া আপনার জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে দিবে। অনেকটা “Lord  of the  Rings” সিনেমার মতো প্রতি মুহূর্তে একটা eye যেন আপনাকে দেখছে এবং আপনার কনফিডেন্স নিয়ে ছেলে খেলা খেলছে। প্রতি মুহূর্তে আপনার মনে হবে আপনি হেরে যাচ্ছেন আপনি আর এগুতে পারবেন না। সেই সময় আপনি থামুন। কিছুক্ষন বিশ্রাম নিন। এক ঢোক পানিতে গলা ভিজান। দেখবেন আপনি আবার নতুন উদ্দম পাবেন সামনে আগানোর জন্য।

টাইগার নেস্ট

আমার উচ্চতা ৫.৭ ইঞ্চি ওজন ৯০কেজি। আমার টাইম লাগসে ২.৪৫ ঘন্টা। আপনি না পারার কোনো কারণ নাই। ওঠার সময় একটা ৫০০মি: লি: এর একটা বোতলে চার ভাগের এক ভাগ পানি নিয়ে উঠুন। পারো পাহাড়ে দুই জায়গায় পানির ঝর্ণা পাবেন কল লাগানো। ওরা বলে হলি ওয়াটার। ভোরে নিন পানি আপনি নতুন উদ্দম পাবেন এগিয়ে যাবার। এখন কথা হচ্ছে কেন উঠবেন? আপনি তা নিজেই অনুভব করবেন পাহাড়ে উঠার পর। ৪~৫ জন সঙ্গী সাথে নিয়ে উঠুন দেখবেন তারাই আপনার উপরে উঠার মূল শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। তারাই আপনাকে সাহস সঞ্চার করবে। নামতে লেগেছিল ৪০ মিনিট। আমরা ক্যাফেটেরিয়ায় কিছু সময় রেস্ট নিয়েছিলাম। ২০ রুপির কোক ৭০ রুপি দিয়ে কিনে ছিলাম কারণ কোক কার্বোহাইড্রেটের বিশাল সম্ভার। সাথে চকলেট রাখতে পারেন। চকলেট আপনাকে দিবে এনার্জি।

বলে রাখি পাহাড়ে চড়ার দুর্বল মানসিকতার অথবা শারীরিক অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। গুনতে হবে ৫০০ রুপি। এবং মনেস্ট্রিতে ঢুকতে হলে ২০০ রুপি গুনতে হবে এবং সাথে অবস্যই গাইড থাকতে হবে তা না হলে ঢুকতে দেয় না। কিন্তু বাঙালি পারে না কি বলেনতো ? যাই হোক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ৪০০ সিঁড়ি নেমে ৩০০ সিঁড়ি উঠে মনেস্ট্রিতে যেতে আমার ইচ্ছা করে নাই, সাথে গাইড ও ছিল না। তাই ওখান থেকেই দৃষ্টিনন্দন কিছু ছবি তুলে ফেরত নেমে আসি।

পারো বিমানবন্দর

সকালে একদল চলে যাই পুনাখার উদ্দেশ্যে। বলে রাখি পুনাখা যাবার জন্য আলাদা করে পারমিশন লাগে। তার জন্য থিম্পুতেই আবেদন করতে হবে। আপনার ভুটানিজ গাইড এ ব্যাপারে হেল্প করবে। সময় থাকলে অবস্যই যাবেন না হলে ভুটান ট্রিপ অতৃপ্তই থেকে যাবে। দোচলা পাস, রিভার রাফটিং এবং অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে ঘুরে দেখার মতো।

পারো থেকে ঢাকা ডাইরেক্ট জার্নি। মাঝ পথে জাইগাওঁতে লাঞ্চ করে নিন। এর পরে লাঞ্চ করার সময় সুযোগ পাবেন না। পুরো ২৭ ঘন্টা টানা জার্নি শেষে ক্লান্ত শরীরে আপনি ফিরবেন প্রাণের শহর ঢাকায়। এই ক্লান্তির পরে থেকে যাবে এশিয়ার সব চাইতে শান্তির দেশে কাটিয়ে আশা কিছু দিনের স্মৃতি আর দুর্দান্ত কিছু ছবি।

আপনি চাইলে পথিমধ্যে জাইগাওঁতে এক রাত কাটিয়ে আসতে পারেন অথবা দার্জিলিং, মিরিক, শিলিগুড়ি ঘুরে আসতে পারেন। ৩ দিন ইন্ডিয়া থাকার অনুমতি আপনারতো আছেই।

একজনকে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়নি, উনি হচ্ছেন আমাদের ভুটানিজ গাইড হ্যারি শর্মা। উনি সিইও ওই ট্রাভেল কোম্পানির। তিনি নিজে আমাদের গ্রুপের সাথে ঘুরেছেন এবং আমাদের সব রকমের হেল্প করেছেন। অনেক মজার মানুষ এবং ঢাকায় আসার ইচ্ছা তার। আসলে দেখা হবে এই আশা নিয়ে তার সাথে সেলফি তুলে বিদায় নিয়ে ফেরত আসি। আর আমাদের লোকাল গাইড আশিক ভাইয়ের কথা কি বলবো, উনার দুঃখ আগের প্রতিটা গ্রুপ তার সাথে ছবি তুলে, গাইডের সাথে স্মৃতি থাকার জন্য। কিন্তু এই গ্রুপে কেউ নেয় নাই। তার অনেক কষ্ট। আসলে পুরো ট্রিপে আমরা তাকে গাইড হিসেবে মনে করি নাই। সবার সাথে মিশে যাবার তার অসাধারণ ক্ষমতা আছে যার কারণে তাকে গাইড কম বড় ভাই হিসেবে মনে হয়েছে। প্রতি রাতে তিনি একবার করে রুমে এসেছেন কিছুক্ষন গল্প করে সব ঠিকঠাক আছে নাকি খোঁজখবর নিয়ে গেছেন। উনার পেশাদারিত্বে আসলেই ভরসা করা যাই।

আশা করি আপনার ভুটান রোড ট্রিপ প্রচিতর সাথে আনন্দময় হবে।

Leave a Comment
Share