চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়াখালী বিচে একদিন

দীর্ঘদিনের চন্দ্রনাথ যাওয়ার বাসনা অবশেষে পূরণ হলো। সীতাকুন্ড যাওয়ার জন্য ট্রেনে মেইল ছাড়া অন্য কোন ট্রেন না থাকায় পুরনো ভালোবাসা চট্টগ্রাম মেইলে উঠলাম। যাত্রার শুরুতে আবারও ধরা। ১০০ টাকার টিকেট কাউন্টার থেকে ১১০ টাকায় কাটতে হলো। (এই ট্রেনে টিকেট না কাটলেও কোন সমস্যা হয় না। নিজের দায়ত্ববোধ্যতা থেকে কাটা এবং প্রতিবারই খেসারত দিতে হয়!)

ঢাকা থেকে আমরা চারজন রওনা হলাম। বাকিরা চট্টগ্রাম থেকে আসবে। আমি ছাড়া অন্যরা আগে চট্টগ্রাম মেইলে উঠে নাই বলে ওদেরকে মেইলের বিভিন্ন নিয়ম শিখাচ্ছিলাম। প্রথমেই মেইলে সিট পাওয়ার জন্য দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতে হলো। সিট পাওয়া গেলো। এরপর হাসি, ঠাট্টা, গল্প, ঘুমে সকাল ৬.৩০ মিনিটে সীতাকুন্ডে পৌঁছে গেলাম।

সীতাকুন্ড রেলস্টেশন নেমে সেখানেই ফ্রেশ হয়ে তন্দুর রুটি, সবজি দিয়ে নাস্তা করে নিলাম। নাস্তা শেষে হেঁটে রওনা হলাম সীতাকুন্ড বাজারের দিকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। সীতাকুন্ড বাজারে এরপর অপেক্ষার পালা। ৮.৩০ এ চট্টগ্রাম থেকে বাকি বন্ধুরা আসলে আমাদের চন্দ্রনাথ (Chandranath Hill) অভিযান শুরু হয়। সীতাকুন্ড বাজার থেকে দামাদামি করে ৭ জন রিজার্ভ সিএনজিতে উঠি ভাড়া ৮০ টাকা।

চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গোড়ায় সিএনজি নামিয়ে দিলো। আহা! ট্রেকিং শুরু! কিছুদূর গিয়ে ১০ টাকা করে বাঁশ কিনে নিলাম।

বাম পাশের আধো পাহাড়, আধো মনুষ্য তৈরি সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে আসলাম। যতটা উঁচু বা কষ্ট হবে ধারনা করেছিলাম সেটা না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হলাম বলা চলে। তবে প্রচন্ড বাতাস সে হতাশা দূর করে দিলো অনেকখানি। অতৃপ্তি ছিলো শুধু পরিষ্কার দৃশ্য দেখতে না পাওয়া। দুপুর ১১.৩০ পর্যন্ত থেকেও কুয়াশা না কাটায় সাগর দেখা হয় নাই।

নামার সময় ডান পাশের সিঁড়ি পথে নামলাম। এই পথ আসলেও অনেক খাড়া এই পথে উঠলে কি অবস্থা হতো চিন্তা করেও প্যারা খাচ্ছিলাম। বেশিরভাগ মানুষ এই পথেই উপরে উঠে এবং অর্ধেক পথে গিয়ে ফিরে আসে!

চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ মিশন শেষে আবার সীতাকুন্ড বাজার চলে আসলাম এবার ৯০ টাকায় আসতে হলো সেই একই সিএনজিতে ৭ জন। সীতাকুন্ড বাজারে হালকা নাস্তা করে ১৭০ টাকা সিএনজি রিজার্ভ করে চলে গেলাম গুলিয়াখালী বিচ। সিএনজি যেখানে নামিয়ে দেয় সেখান থেকে বিচ পর্যন্ত যেতে বেশ অনেক দূর হাঁটা লাগে এবং একটা ব্রিজ পার হতে হয়। ব্রিজে একজন দাঁড়িয়ে থাকে টাকা তোলার জন্য। ১০ টাকা করে চাইলেও ৭জন ৩০ টাকা দিয়ে চলে আসলাম। আরেকটু কথা বললে ২০ টাকা দিলেও হতো!

ব্রিজ পার হয়ে যত আগাতে থাকলাম তত যেন মুগ্ধ হচ্ছিলাম। সমুদ্রের পাশে ম্যানগ্রোভ বন। জোয়ারের সময় হওয়ায় চারপাশ ছিলো অস্বাভাবিক সুন্দর। সমুদ্রের পাড়ে সামুদ্রিক বাতাস খেতে খেতে না ঘুমালে হয়? কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিলাম। এরপর শুরু হলো গান। মনের আনন্দে গান গেয়ে ঘন্টা দুয়েক সময় কাটিয়ে চলে আসলাম। যদিও আসতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না। সূর্যাস্তটা দেখতে পারলে বেশ হতো।

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

ফিরতি পথে সিএনজি রিজার্ভ করতে বেশ বেগ পেতে হলো প্রায় ১০-১৫ মিনিট বকবকের পর ১৮০ টাকায় রিজার্ভ করলাম। চলে আসলাম সীতাকুন্ড বাজারে। ভোজ রেস্টুরেন্টে ভরপুর ভোজ করলাম। সমাপ্তি ঘটলো সীতাকুন্ড ট্যুরের।

খরচ

১। ঢাকা-সীতাকুন্ড, মেইল ট্রেনঃ ১০০ টাকা
২। সীতাকুন্ড বাজার-চন্দ্রনাথ, সিএনজিঃ ১০/১৫ টাকা (রিজার্ভ নিলে ৫ জন হলে ৫০ টাকার বেশি দিবেন না)
৩। চন্দ্রনাথ-সীতাকুন্ড বাজারঃ ১৫ টাকা (রিজার্ভ নিলে দামাদামি করে উঠবেন। ৫ জন হলে ৫০/৬০ টাকার বেশি দিবেন না)
৪। সীতাকুন্ড বাজার-গুলিয়াখালী বিচ, সিএনজিঃ ১৫০টাকা রিজার্ভ (৬/৭ জন যদি বসতে পারেন ১৭০ টাকার বেশি দিবেন না।)
৫। গুলিয়াখালী বিচ ব্রিজ পারাপারঃ জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৫টাকা দিবেন পারলে আরো কমাবেন
৬। গুলিয়াখালী বিচ-সীতাকুন্ড বাজারঃ ১৫০ রিজার্ভ (৫জন)
৭। সীতাকুন্ড থেকে অনেক বাস কাউন্টার আছে ঢাকায় আসার। শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস। ভাড়া ৪৭০ টাকা চাইবে। এগুলোতে আসার দরকার নেই। কক্সবাজার-ঢাকাগামী অনেক বাস আছে যেগুলোতে ২৫০-৩০০ টাকায় চলে আসতে পারবেন।
৮। বাস পেতে দেরি হলে বা অপেক্ষা করতে মন না চাইলে প্রথমে ফেনী চলে আসতে পারেন। বাস ভেদে ৬০-৮০ টাকা ভাড়া নিবে। ফেনী থেকে ঢাকা ২৭০ টাকা।
৯। চট্টগ্রাম মেইলে বসে যেতে চাইলে ৯.৩০টার মধ্যে কমলাপুর থেকে প্ল্যাটফর্ম-২ ে দাঁড়ানো ট্রেনে সিট দখল করতে হবে। কোন কারনে সিট না পেলে ট্রেনের গার্ডদের টাকা দিলে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়!

কিছু পরামর্শ

১। সিএনজিতে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন।
২। খাবার সময় দাম জেনে এরপর অর্ডার করবেন।
৩। সীতাকুন্ড বাজারে ভোজ রেস্টুরেন্টে আমরা বিরানী,ভাত,মাংস সব খেয়েছিলাম। এদের খাবার ভালো।
৪। পাহাড়ে উঠার সময় লাঠি নিয়ে উঠবেন। তেমন কাজে না লাগলেও মনে সাহস পাবেন।
৫। চন্দ্রনাথে উঠার সময় অবশ্যই বাম পথ দিয়ে উঠবেন এবং ডানের সিঁড়ি দিয়ে নামবেন।
৬। চন্দ্রনাথ থেকে নামার সময় ইকোপার্কের রাস্তায় যাবেন না। হাঁটতে হাঁটতে জীবন শেষ হয়ে যাবে এবং ওই রাস্তায় ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে।
৭। গুলিয়াখালী বিচে যাওয়ার সময় জোয়ার-ভাটার খোঁজ নিয়ে যাবেন। দুপুর ১-২টার দিকে জোয়ার থাকে।
৮। গুলিয়াখালীতে (Guliakhali Sea Beach) সূর্যাস্ত পর্যন্ত থেকে আসবেন সম্ভব হলে। সেইক্ষেত্রে যেই সিএনজিতে যাবেন তার ফোন নাম্বার রেখে দিবেন।
৯। গুলিয়াখালীতে নৌকা ভাড়া করে ঘোরা যায়।

ঢাকা-সীতাকুন্ড-ঢাকা আমাদের চারজনের জনপ্রতি খরচ হয়েছিলো ৮৯৫ টাকা।

Leave a Comment
Share