বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকাগুলোতে যতবার গিয়েছি, একটা দীর্ঘশ্বাস পড়েছে। কারণ, সিলেট-নেত্রকোণা বেল্ট সহ প্রায় সীমান্ত এলাকাগুলোতেই সব পাহাড়গুলো ভারতীয়দের দখলে। আজকে আপনাদের শোনাবো সুনামগঞ্জের পর্যটনের অপার সম্তাবনাময় এলাকা তাহিরপুরের একটি জায়গা – বারেক টিলা। তাহিরপুর নিয়ে আমার আগের পোস্টটিতে জানিয়েছিলাম টাঙ্গুয়ার হাওড়ের কথা। বারেক টিলা বা বারিক্কা টিলাতেও গিয়েছিলাম ওই একই সময়। বছরের যে কোন সময় য়েতে পারেন আপনারা। তবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর – এ সময়টাতে ওইসব এলাকায় পানি থাকে বলে ট্রলার ইঞ্জিনে যাওয়াটা উপভোগ করতে পারবেন।
তাহিরপুর থেকে ইঞ্জিন বোটে সেই আলী নূর ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন সীমান্ত এলাকা টেকেরঘাটে। ট্রলারে তাহিরপুর থেকে যাওয়া-আসা বাবদ ১০০০-১২০০ টাকা লাগবে। আর আলীনূরকে পেলেতো কথাই নাই। অত্যন্ত অমায়িক একজন ভদ্রলোক।
যাইহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। টেকেরঘাট থেকেও বারেক টিলা যাওয়া যায়, আবার বসোরা নামের সীমান্তবর্তী আরেকটা জায়গা আছে, সেখান থেকেও যেতে পারেন। দু’জায়গা থেকেই মোটরসাইকেল পাবেন। একটি মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া দুইজন। টেকেরঘাট থেকে রিজার্ভ যাওয়া-আসা ৩০০ টাকা পড়বে। তবে মোটরসাইকেল জার্নিটা একটু কষ্টের বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। টেকেরঘাট থেকে মোটরসাইকেলে লাউরের গড় হয়ে বারিক্কা টিলা যাওয়া-আসা বাবদ প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগবে। যাবার সময় হাতের বাম দিকে তাকালে ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ের সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য।
বারেক টিলায় পৌঁছানেরা পর ওই টিলার উপরে উঠে নিচের দিকে তাকালাম। দেখলাম, ‘জাদুকাটা’ নদীতে শ’য়ে শ’য়ে নৌকা পাথর তুলছে, যে পাথর ভেসে আসছে ভারত থেকে। ওই এলাকার মানুষের প্রধান জীবিকা নির্বাহ হয় এই পাথর ব্যবসায়। স্থানীয় একজনের সাথে কথা বলে জানলাম, একজন পাথর উত্তোলনকারী প্রতি ঘনফুট পাথর তুলে ৫০ টাকা পায়। ছোট নৌকাগুলোতে পাথর তুলে দেয় তারা। পরবর্তীতে বড় নৌকাতে করে সে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানগুলোতে চলে যায়। বারেক টিলার মূল সৌন্দর্য চারদিকের নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি, দু’চোখ ভরে দেখেও যেন মন ভরেনা। একটি যায়গা আমরা যেতে পারিনি, যেটি হিন্দুদের একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান – ‘পোনাতীর্থ’, লাউরের গড় থেকে কাছেই অবস্থিত।
বারেক টিলার সামান্য কিছু অংশ বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে, বাকী অংশ ভারতের। আর ভারতীয় বি.এস.এফ কে বিশ্বাস নেই, সীমান্ত এলাকায় তাই পিলারগুলোর একদম কাছে না যাওয়াই ভাল। টিলার উপর থেকে নিচে নামলাম। যে নদীটা ভারত থেকে পাথর নিয়ে আসছে, সেখানে পা ভিজালাম। ইচ্ছে হলে নৌকা ভাড়া করেও নদীতে ভ্রমণ করে নিতে পারেন যে কেউ।
সন্ধ্যার আগে আগেই আমরা ফিরে এলাম টেকেরঘাটে। তারপর আলী নূরের ইঞ্জিন বোটে তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
একটা ব্যাপার না বলে পারছিনা, সেটা হলো, বাংলাদেশের যতগুলো ট্যুরিস্ট এলাকায় আমি গিয়েছি, সব জায়গাই আমরা বাংলাদেশীরা শব্দ দূষণ করে ওইসব এলাকার বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছি। কিন্ত তাহিরপুরের এইসব নয়নাভিরাম এলাকা এখনও দূষিত হয়নি। প্রত্যন্ত এলাকা বলেই এসকল দর্শনীয় এলাকার কথা মানুষ-জন এখনও তেমন জানেনা । তবে আমি মনে করি, সরকার উদ্যোগ নিলে তাহিরপুর হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট, যেখান থেকে আমাদের রাজস্ব আয়ও আসতে পারে প্রচুর।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে থাকতে হলেঃ
ট্রলার ভাড়া করতে হলে আলী নূরকে ফোন দিনঃ 01922056730
Leave a Comment