একা একা বিদেশ ভ্রমণ, সড়কপথে ভুটান (থিম্ফু, পুনাখা, পারো)

ভিসা

সড়কপথে ভুটান যেতে হলে প্রথমেই যা দরকার তা হচ্ছে ভারতের ট্রানজিট ভিসা। এটা কি করে পাওয়া যায় বা কিভাবে কি করতে হয় তা প্রায় সবাই জানেন। তবু এই পোস্ট পড়ার পর অনেকেই ভিসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস শুরু করবেন। তাই শুরু থেকেই শুরু করি, মানে ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ভিসা প্রাপ্তি। ট্রানজিট ভিসা পাওয়াটা তত জটিল না, সহজেই মেলে ।

কিভাবে কি করবেন

  • যেদিন আবেদন জমা দিতে যাবেন তার আগের রাতে অনলাইনে যথাযথভাবে ফর্ম পূরণ করুন।
  • পূরণ করা ফর্মের প্রিন্ট নিন। সাথে একটি ফটোকপি।
  • প্রিন্টেড এবং ফটোকপি করা ফর্মের নির্দিষ্ট জায়গায় ২X২ সাইজের এক কপি করে ছবি আঠা দিয়ে লাগান। ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং যেটা অনলাইনে দিয়েছেন সেটাই হতে হবে।
  • আবেদনপত্র জমা দিতে সকাল সকাল ivac গুলশান/বারিধারা শাখায় চলে যান।

সাথে যা যা নেবেন

  • পাসপোর্ট । পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেগুলোও সাথে নিন।
  • পাসপোর্টের প্রথম দুই পেজ/চার পেজের ফটোকপি।
  • অনলাইন আবেদন ফর্ম, ফটোকপিসহ।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের মূলকপি ও ফটোকপি।
  • আগের রাতে ফর্মে যে ছবি লাগিয়েছেন আঠা দিয়ে, সেরকম আরেক কপি ছবি।
  • আবাসনের প্রমাণপত্র; বাসার বিদ্যুৎ বিলের মূলকপি ও একটি ফটোকপি। বিল অবশ্যই পেইড বিল হতে হবে এবং তিন মাসের পুরনো হওয়া যাবে না।
  • পেশার প্রমাণপত্র; চাকুরীজীবি হলে এনওসি, (সাদা পাসপোর্টধারীরা বাড়তি হিসেবে অফিস আইডি, ভিজিটিং কার্ড সাথে নিন । যদিও এর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসীর মেজাজ মর্জির তো কোন আগামাথা নাই। কখন চেয়ে বসবে কে জানে 😛 ), স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ডিপার্ট্মেন্ট প্রধানের দেয়া এনওসি। ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স। অন্যসব প্রফেশন হলে তার যথাযথ প্রমাণ।
  • ১৫০/২০০ ডলারের এন্ডোর্সমেন্ট বা ব্যাংক স্টেট্মেন্ট । স্টুডেন্ট হলে বাবার ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  • শ্যামলী বাসের ঢাকা-শিলিগুড়ি কনফার্মড রিটার্ন টিকিট (ভুটান যাবার জন্য শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাবার প্রয়োজন নেই। ভিসা হয়ে গেলে বাসের টিকিট ফেরত দেবেন । টিকিটের আপ-ডাউন দাম ৩০০০ টাকা । ফেরত দিলে ১০% কেটে রাখবে ।)

সব কাগজ ঠিকঠাক জমা দিলে (এবং চেহারাসুরত আমার মত সুন্দর হলে 😛 ) ৫/৬ কর্মদিবসের মধ্যেই পাসপোর্ট ফেরত পাবেন। অর্থাৎ রবিবার কাগজ জমা দিলে নেক্সট রবিবারের মধ্যেই ভিসা পান বা না পান পাসপোর্ট পাবেন ফেরত।

ভিসা পাবার পর প্রস্তুতি পর্ব

ভুটান ভ্রমণের কয়েকটা সিজন আছে। অনেকটা কাশ্মিরের মত। একেক সিজনে একেক খরচ। তবে যারা থিম্ফু, পারো, পুনাখা-এই তিন জায়গা দেখার উদ্দেশ্যে ভুটান যেতে চান তাদের জন্য অক্টোবর থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়টা বেস্ট। শীতে সবুজের পরিমাণ কম ঠান্ডার পরিমাণ বেশি পাবেন। কিন্তু এ সময়ে ওয়েদার ঘোরাঘুরি ও সাইট সিয়িং এর জন্য পারফেক্ট। আকাশ ঘন নীল, মিষ্টি রোদ, আকাশে (ক্ষেত্রবিশেষে পায়ের নিচে) দুরন্ত ভেড়ার পাল কিংবা শন পাপড়ির মত মেঘ – এইসব শীতের সিজনেই পাবেন। অন্য সময়ে খরচ যেমন কম তেমনি ভীড়, আবহাওয়ার আনুকূল্যও কম।

প্রথমেই শ্যামলীর শিলিগুড়ি বাসের টিকিট ফেরত দিয়ে বুড়িমারী পর্যন্ত টিকিট করুন যে কোন বাসের। অনেক বাসই যায় বুড়িমারী। নন-এসি বাস সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা ভাড়া। এগুলো ঢাকার কল্যানপুর, গাবতলী থেকে রাত সাড়ে ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ছেড়ে যায়। বুড়িমারী পৌছে সকাল ৭ টার মধ্যে ।

টিকিট কাটার পর আপনার দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে পাসপোর্টের ২ কপি ফটোকপি করা। এক কপি ভুটান ঢোকার সময় ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশানে লাগবে। আরেক কপি লাগবে যদি সিম কার্ড কিনতে চান। এছাড়া আর কোথাও পাসপোর্টের কপি লাগবে না। তবু আপনি চাইলে বাড়তি কপি নিতে পারেন। তবে হ্যা, পুনাখা যাবার জন্য থিম্ফু থেকে যে পারমিট নিতে হয় তার জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি লাগবে আবার। কিন্তু সেখানে ফুন্টশোলিং থেকে আপনার পাসপোর্টে দেয়া এন্ট্রি পারমিটের ফটোকপিও লাগবে। সুতরাং এই কপিটি থিম্ফু পৌছে করতে হবে।

ছবি লাগবে মাত্র দুই কপি। দুটোই ভুটানে। আপনি চাইলে ছবিও বেশি নিতে পারেন। আপনার ইচ্ছা।

অক্টোবরে খানিকটা কম হলেও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে ভুটানের তাপমাত্রা দিনের বেলায়ই ৭-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। সুতরাং রাতে কী হয় ভাবুন। তো নিজেকে বাঁচানোর জন্য জামাকাপড়-কসমেটিকস কী নেবেন নিজেই ঠিক করুন।

যারা পারো টাকসাং বা টাইগারস নেস্ট দেখবেন তারা অবশ্যই ভালো গ্রিপের জুতা নিয়ে যান। নতুবা বিপদে পড়বেন। ব্যাগ গোছানোর সময় পাসপোর্টের সাথে অফিস/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়া এনওসি, নিজের ন্যাশনাল আইডি সাথে নিন। নতুবা বাংলাদেশ ইমিগ্রেশানে এক দেড়শ টাকা আক্কেল সেলামী দিতে হতে পারে।

এবার মূল জার্নিতে আসি

রাত ৯ টায় গাবতলী বা কল্যানপুর থেকে বাসে উঠুন। সারারাত বাস জার্নি। পারলে একটু ঘুমিয়ে নিন। পরদিন সকাল থেকে রাত অব্দি আবার ছুটতে হবে।

১ম দিন

সকাল ৭ টায় বুড়িমারী বর্ডারে এসে পৌছুলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশান অফিস খুলবে সকাল ৯ টায়। ততক্ষণে বাসের কাউন্টারে বসে ফোন বা পাওয়ার ব্যাংক চার্জ দিন। ৮ টার সময় চলে যান বুড়িমারী বাজারে। আসা যাওয়া ভ্যান ভাড়া ২০ টাকা নেবে। সেখানে জনতা ব্যাংকে ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স পরিশোধ করে রশিদ নিন। রশিদটি ইমিগ্রেশানে লাগবে।

সাড়ে ৮ টায় চলে আসুন বুড়ির হোটেলে। এখানে সকাল সকালই ভাত রান্না হয়। যাদের সকালে ভাত খাবার অভ্যাস আছে তারা এবেলাই ভাত খেয়ে নিন। কারণ এটাই হবে আগামী কয়েকদিনের জন্য আপনার তৃপ্তি করে ভাত খাওয়া। খাওয়া শেষে সোজা চলে যান ইমিগ্রেশান অফিসে। নিজে নিজে সব করতে চাইলে সময় খানিকটা বেশি লাগবে এখানে বাট টাকা বাঁচবে শ’দুয়েক। বর্ডারের দু’পাশেই সব কাজ করে দেবার জন্য দালাল আছে। নিজে করলে মোট টাকা লাগবে ৬০+৫০=১১০। সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। আর দুপাশের দুই দালালের হাতে পাসপোর্ট তুলে দিলে খরচ হবে ১৫০/২০০+১০০=২৫০/৩০০। টাইম লাগবে ২০ মিনিট। সেইসাথে ব্যাগ-পত্তর খোলা থেকে তো বাঁচলেনই।

ভারতীয় ইমিগ্রেশানের কাজ শেষ হতেই আপনার কাজ হচ্ছে টাকা ও ডলার এখানেই রুপিতে কনভার্ট করা (আপনি যদি দালালের হাতে পাসপোর্ট দেন তবে সে-ই আপনাকে মানি এক্সচেঞ্জারের কাছে নিয়ে যাবে) রেটটা এখানেই সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়। মানি এক্সচেঞ্জারকে বলবেন সে যেন ৫০০ এর উপর নোট না দেয় এবং অবশ্যই নতুন নোট দেয়।

মুদ্রা বদলানো শেষ। এবার দৌড় শুরু। সকাল ১০ টার ভেতর যদি ইমিগ্রেশানের সব কাজ শেষ করতে পারেন তবে আশা করা যায় বাংলাদেশ সময় দুপুর ১ টা থেকে দেড়টার মধ্যে জয়গাও ইমিগ্রেশানে পৌছে যাবেন। খেয়াল করুন, এখান থেকে রুপির হিসেব শুরু হচ্ছে।

চ্যাংড়াবান্ধা থেকে বাস ও ট্যাক্সি – দু উপায়েই ভারতের জয়গাও বর্ডারে যাওয়া যায়। ট্যাক্সিতে গেলে গাড়ির সাইজভেদে ১২০০-২০০০ রুপি। আর বাসে গেলে মোটে ১০০ রুপি খরচ হবে এক জনের। গাড়ি/জীপগুলো মানি এক্সচেঞ্জের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে।

এবার বলি বাসে কিভাবে যাবেন? প্রথমে ২০ রুপি ভাড়ায় একটা ভ্যান নিয়ে চ্যাংড়াবান্ধা বাইপাস চলে যান। সময় লাগবে ১০মিনিট। সেখান থেকে ময়নাগুড়ির বাসে উঠুন। আপনাকে নামতে হবে ময়নাগুড়ি বাইপাস চৌরাস্তায়। ভাড়া নেবে ১৫ রুপি। সময় নেবে ২০-২৫ মিনিট। ময়নাগুড়ি বাইপাস থেকে আরেকটা বাস ধরতে হবে আপনাকে। সেটা জলপাইগুড়ি-হাসিমারা বাস। ময়নাগুড়ি বাইপাসে বাস সহজে পাওয়া যায় না। ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। অবশ্য ভাগ্য ভালো থাকলে ৫-১০ মিনিটেই পেয়ে যেতে পারেন। ময়নাগুড়ি বাইপাস থেকে হাসিমারা ৫০ রুপি ভাড়া। সময় লাগবে ২ঘন্টা। হাসিমারা নেমে সেখান থেকে ১০ রুপি ভাড়ায় আরেকটা বাসে জয়গাও। ১০-১৫ মিনিট টাইম লাগবে। বাস থেকে নেমে একটু হেটে চলে যান জয়গাও ভারতীয় এমিগ্রেশান অফিস। সেখানে এক্সিট সীল লাগিয়ে ৫ রুপি ভাড়া দিয়ে চলে যান ভুটান গেট।

মূল যে গেট সেটা কেবল গাড়ি যাবার জন্য। বাম পাশে দুটো ছোট গেট আছে। ২ ও ৩ নাম্বার। ২ নম্বরটা এন্ট্রি। ৩ নাম্বারটা এক্সিট। ২ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে একটু এগোলেই ইমিগ্রেশান অফিস। সেখানে একটা ফর্ম পূরণ করে আপনার পাসপোর্টে এন্ট্রি সীল লাগিয়ে নিন। এতে সময় লাগবে বড়জোর ১০ মিনিট। ওরা আপনাকে ৭ দিনের পারমিট দেবে। শুধু থিম্ফু ও পারোর জন্য। এই দুই জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও যেতে চাইলে বা সময় বাড়াতে চাইলে থিম্ফুতে তা পাওয়া যাবে। ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশান অফিসে দুপুর ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত লাঞ্চ ব্রেক। সুতরাং এই সময়ের আগে যদি কাজ সারতে না পারেন তবে দুপুরের খাবারটা এই ফাকে খেয়ে নিন। ভুটানের সীম কার্ড কিনতে চাইলে এখান থেকেই কিনে নিন। ২১০ রুপি খরচ হবে। ২০০ রুপি মেইন একাউন্টে পাবেন।

দুপুর ২টা থেকে ২টা ৩০ এর মধ্যে থিম্পুর গাড়ি ধরুন। ট্যাক্সিতে গেলে খরচ পড়বে ২৬০০ রুপি, ৪ সীটের গাড়ি। শেয়ারের ট্যাক্সি পাওয়া গেলে ৬৫০ রুপি। এতে সময় লাগে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। আর বাস সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় নেয়। ভাড়া নেয় ২৫০ রুপি। বাস এবং ট্যাক্সি উভয়ই পথে এক জায়গায় ব্রেক দেয়। সেখানে দুটো রেস্টুরেন্ট আছে। দুপুরের খাবারটা যদি আগে সারতে না পারেন তবে এখানে সেরে নিন। কিংবা ফুন্টশোলিং থেকে যদি বিকেলে রওনা দিয়ে থাকেন তবে রাতের খাবারটা এখানে খেয়ে নিন। কারণ রাত ৯ টার পর থিম্ফুতে খাবার পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বাস বা ট্যাক্সি, যাতেই আসুন আপনার থিম্ফু পৌছুতে রাত হবে। এসে সোজা হোটেলে উঠুন। পথেই গরম কাপড় যা আছে পড়ে নিন। নতুবা গাড়ি থেকে নামলে ঠান্ডায় জমে যাবেন।

ভুটান গেট

দ্বিতীয় দিন

আহ! দারুন একটা ঘুম দিলেন তো? ২৪ ঘন্টা দৌড়ের ওপর থাকার পর এমন একটা ঘুম দরকার ছিল। সকালে কয়টায় উঠলেন? মোবাইলে এলার্ম দিয়েছিলেন কয়টার? যাইহোক, সকাল সাড়ে ৬ টায় উঠতে হবে। বের হতে হবে ৭ টায়। কারণ এক দিনেই থিম্পুর যা দর্শনীয় জায়গা সব দেখতে হবে এবং এর অর্ধেক দেখতে হবে হেঁটে হেঁটে। নো ট্যাক্সি। আপনি একা ঘুরতে এসেছেন। সারাদিনের জন্য ট্যাক্সি নিলে মানিব্যাগের তলা থাকবে না। তবে ঘাবড়ানোর কারণ নেই। থিম্পুর ট্যুরিস্ট স্পটগুলো সব হাঁটা দূরত্বেই। শুধু দুয়েকটা স্পট ট্যাক্সির পথ। আর দলবেঁধে গেলে তো ঝামেলাই নেই। সারাদিনের ট্যাক্সি তখন মামুলি।

ভালো কথা, আগের রাতেই হোটেল রিসিপশনে বলে রাখুন আপনি সকাল ৭ টায় বের হবেন। নইলে খানিক দেরি হবে বের হতে। এরা ঘুম কাতুরে জাতি। ৮টা ৯টার আগে ওঠে না। অথচ ঘুমায় ১০ টার ভেতর।

এবার আসি থিম্ফুতে কী কী জায়গা ঘুরবেন। প্রথমে পায়ে হাঁটা জায়গার লিস্ট দিই…

  • Memorial Chorten
  • Royal Textile Academy
  • Folk Heritage Museum
  • National Library and Archives
  • Clock Tower
  • Archery Ground
  • Stadium
  • Tashichhodzong
  • Thimphu Chu বা থিম্ফু নদী

এই স্পটগুলো পায়ে হেঁটে দেখতে পারবেন। সকাল ৭ টায় বের হলে সহজেই ১২ টার ভেতর দেখা শেষ হয়ে যাবে। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে এই জায়গাগুলোর ম্যাপ মোবাইলে স্ক্রিন শট (screen shot) হিসেবে নিয়ে যান। তাতে অনেক সুবিধে হবে। কোনটা কী এবং দেখতে কেমন তা জানার জন্য google মামা আছে। উনাকে খোঁচা মারুন 😛

এবার আসি ট্যাক্সি করে কোথায় যাবেন…

  • বুদ্ধা পয়েন্ট বা Buddha Dordenma
  • Takin Preserve Zoo
  • Choki Traditional Art School

ব্যস, এই তিনটেই ট্যাক্সি করে যাবার প্লেস। আরো দুই তিনটা জায়গা আছে। বাট সেগুলো দ্রষ্টব্য না। দুপুর ১২ টার মধ্যে পায়ে-হেঁটে-দেখা জায়গাগুলো শেষ করুন। যেখান থেকেই শুরু করেন না কেন শেষ করুন Tashichhodzong এ। এর পাশেই পুনাখার পারমিট করানোর জন্য ইমিগ্রেশান অফিস। এপ্লিকেশান করলে ৩০ মিনিট পর পারমিট পাবেন। এই সময়ের মধ্যে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিন।

দুপুর ১টায় ট্যাক্সি নিয়ে বের হোন বুদ্ধা পয়েন্ট,  zoo এবং আর্ট স্কুল দেখতে। চিড়িয়াখানা এবং আর্ট স্কুলটা বাদ দিতে পারলে বুদ্ধা পয়েন্টে হেঁটেই যেতে পারেন। মাত্র ৬ কিলো দূরত্ব মেইন শহর থেকে। নতুবা আধা বেলার জন্য আপনার পকেট থেকে ৫০০-৮০০ রুপি অনায়াসে বেরিয়ে যাবে।

সারাদিনের সোয়া সতের কেজি তৃপ্তি আর কয়েক সের ক্লান্তি নিয়ে হোটেলে আসুন। যদি বাসে পুনাখা যেতে চান তবে হোটেলে আসার আগে থিম্ফু নদীর ওপারের বাসস্ট্যান্ডে যান। গিয়ে অগ্রিম টিকিট নিয়ে আসুন। নতুবা পরদিন সকালে টিকিট নাও পেতে পারেন। বাস সারাদিনে ২ টা। প্রথমটা সকাল সাড়ে ৮ এবং পরেরটা দুপুর ২ টায়। ভাড়া ৭০ রুপি। যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। আপনি চাইলে শেয়ারের ট্যাক্সিতেও যেতে পারেন পুনাখা। ৩০০ রুপি নেবে। সময় বাসের চেয়ে ১ ঘন্টা কম লাগবে।

যদি শেয়ারের ট্যাক্সিতে পুনাখা যেতে চান তবে হোটেলে এসে কাউন্টারে বলে রাখুন আপনি আগামীকালও সকাল ৭ টায় বেরোবেন। কারণ সকাল সকাল না বেরোলে শেয়ারের ট্যাক্সি পাওয়া মুশকিল। ট্যাকে টাকা বেশি থাকলে ৩০০০ রুপিতে থিম্পু টু পুনাখা টু থিম্ফু ট্যাক্সি একাই নিতে পারেন। ট্যাক্সি আপনাকে পুনাখার সব স্পট ঘুরিয়ে দেখাবে।

থিম্পু গেট

তৃতীয় দিন

সকালে থিম্পু থেকে পুনাখা যাবেন। ব্যাক করবেন সন্ধ্যার খানিক আগে। এসেই পারো চলে যাবেন। সুতরাং সকালেই আপনার হোটেলে চেক আউট হয়ে যাচ্ছে। আগের রাতেই বলে রাখুন আপনি সকালে চেক আউট করবেন এবং আপনার একটা লাগেজ এখানে রেখে যাবেন (মাল-পত্তর এতদূর টেনে নিতে পারলে অন্য কথা)। বিকেলে পুনাখা থেকে ফিরে ব্যাগ সহ চলে যাবেন থিম্ফু বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ট্যাক্সিতে পারো।

পুনাখায় যা দেখবেন

  • Punakha Dzong
  • Suspension Bridge
  • Khamsum Namgyal Chorten
  • Chimi L’hakhang Temple

দর্শনীয় জায়গা কম বলে হতাশ হবেন না। পুরো পুনাখাই আসলে একটা দেখার মত ব্যাপার। আর আসা যাওয়ার পথে গাড়ি থেকেই দোচুলা পাস দেখতে পারবেন। বাস বা শেয়ারড ট্যাক্সি হলে নামতে পারবেন না। জায়গাটা পুনাখা ও থিম্পু, এই দুয়ের মাঝামাঝি। তাই একে দেখতে চাইলে খরচটা বেড়ে যায়।

দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে পুনাখা থেকে থিম্ফুর বাস ছাড়ে। মিস করলে আবার ট্যাক্সি। বিকেলে চলে আসুন থিম্ফু বাসস্ট্যান্ড। শেয়ারড ট্যাক্সিতে পারো। সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মত। ভাড়া পড়বে ২০০ রুপি। চাইলে সকালেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খানিকটা সময় লস হবে আপনার। সকাল সকাল পারো দেখা শুরু করতে পারবেন না। থিম্ফু থেকে দিনে দুইটা না যেন তিনটা বাস আছে। ভাড়া ৫৫ রুপি। সময় নেয় আড়াই ঘন্টা প্রায়।

আমি ধরে নিচ্ছি বিকেলেই আপনি পারো যাচ্ছেন, ট্যাক্সিতে। সেই হিসেবে প্ল্যান। পারো পৌছুতে রাত হবে। হোটেলে চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে রাত ৮ টা থেকে সাড়ে ৮ টার ভেতর খাবারের খোঁজে বের হোন। যে হোটেলে উঠেছেন সেখানেই যদি খান তবে রাত ৮ টার ভেতর অর্ডার করে আসুন এবং বলে আসুন আপনি কয়টায় খাবেন। কিছু হোটেলে রাত ১০ টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে।

চতুর্থ দিন

আজকে ঘুরবেন পারো শহর। এই শহরেই আছে ভুটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি। দুপাশে পাহাড় (মাননীয় আদালত আমাকে মাফ করবেন। আমি ভুলে পাহাড় বলে ফেলেছি, এগুলো পর্বত) মাঝখানে চওড়া ভ্যালী। তার মধ্যে এই এয়ারপোর্ট। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখানে করার আরো একটা কারণ আছে। তা হচ্ছে Paro Taktsang বা টাইগারস নেস্ট। এই মন্দিরটি সমস্ত ভুটানের ট্যুরিজম অ্যাট্রাকশনের একটা আইকন হয়ে গেছে। তাই অনেক বিদেশী কেবল এটা দেখার জন্য ভুটানে আসেন। পারোতে এয়ারপোর্ট থাকার এটা ২য় কারণ।

যাইহোক, পারোতে কী কী দেখবেন তা বলি এখন…

  • টাইগারস নেস্ট
  • ন্যাশনাল মিউজিয়াম
  • কিচু মন্দির
  • Rinpung Dzong
  • এয়ারপোর্ট বার্ডস আই ভিউ পয়েন্ট

আগেভাগে বলে নিই, সময় অনুযায়ী আজকের দিনটাকে দুই ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। একটা সকাল পার্ট। আরেকটা বিকেল। সকাল পার্ট ৭টায় শুরু হয়ে ১২টায় শেষ। বিকেল পার্ট ১২ টা থেকে ৫ টা। এক পার্টে শুধু টাইগারস নেস্ট। অন্য পার্টে বাকি সব। এখন কোনটা কোন পার্টে ফেলবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আমার সাজেশান যদি চান তবে আমি বলব সকাল পার্টে বাকি ৪ টা স্পট এবং বিকেলে টাইগারস নেস্ট যান। এর অন্তত চারটে কারণ আমি দেখাতে পারি।

প্রথমত, দুপুর ২টার পর প্রায়শই পারো টাকসাং মনেস্ট্রি বা টাইগারস নেস্ট-এ এর মংকরা একটা প্রার্থনার আয়োজন করেন। সেটা অবশ্যই একটা দেখার বিষয়। যারা না দেখেছেন তারা বুঝবেন না। এটা সকাল পর্বে হয় কিনা আমার জানা নেই। আমি দুপুর পর্বে গিয়েছি তাই পেয়েছি।  ভালো কথা, দুপুর ১টা থেকে ২ টা পর্যন্ত টাকসাং দর্শন বন্ধ থাকে। লাঞ্চ ব্রেক।

দ্বিতীয়ত, সকাল বেলায় যদি আপনি টাকসাং দেখতে বের হন তাহলে দেখা শেষ করে নিচে নামতে আপনার ২টা বেজে যাবে, আপনি যতই ফাস্ট হোন না কেন। তো আপনি লাঞ্চ করবেন কখন আর বাকি স্পট কভার করবেন কখন? বাধ্য হয়ে ট্যাক্সি নেবেন এবং তলা ফাঁকা হবে। বলে রাখা ভালো, বাকি ৪ স্পট কিন্তু হাঁটা পথ। চাইলেই টাকা বাঁচানো যায়।

তৃতীয়ত, আপনি যদি পাহাড়-পর্বতে অনভ্যস্ত হোন তবে এই টাকসাং দেখতে গিয়েই আপনার অবস্থা হবে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। হাত-পা ছেড়ে দেবে। রুমে এসে নিশ্চিত ‘চ্যাগায়া’ পড়ে থাকবেন। বাকি সময় নষ্ট।

চতুর্থত, এয়ারপোর্ট বার্ডস আই ভিউ পয়েন্টে যাবেন সকাল ৯ টায়। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সকালে এ সময়ে ২ টা টেক অফ থাকে। ভাগ্য ভালো থাকলে একটা বা দুইটা ল্যান্ডিংও পেতে পারেন। সমতলে থেকে সমতলে প্লেনের মুভমেন্ট দেখেছেন। পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে প্লেনের মুভমেন্ট দেখুন। কেমন লেগেছিল জানাবেন।

এবার কিভাবে ঘুরবেন তা বলি

টাইগারস নেস্ট কী তা তো জানেন। তবু একটু বলি। এটা সমদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ফিট ওপরে পাথরের পর্বতের খাঁজে নির্মিত এক বৌদ্ধ মন্দির। এর গঠনশৈলী আর অবস্থান এতটাই ইউনিক যে বিদেশী যারাই এখানে আসে সবাই একে দেখে অবাক হয় আর বলে এই জিনিস সেভেন ওয়ান্ডার্স-এ জায়গা পাচ্ছে না কি করে। এর তো অতি অবশ্যই সপ্তাশ্চর্যের একটা হবার কথা। উইকিপিডিয়ায় এর সম্পর্কে বেশ ভালো আর্টিকেল আছে। চাইলে পড়তে পারেন। পারো ভ্যালী থেকে এর উচ্চতা ৩০০০ ফিট। পারো শহর থেকে ট্যাক্সি করে এর বেজ পর্যন্ত যাওয়া যায়। ওয়ান ওয়ে ট্যাক্সি ভাড়া সিজন ভেদে ২৫০-৪০০ রুপি। চার সিটের ট্যাক্সি। একা গেলে ২০০ রুপি। হাই সিজনে ২৫০। ট্যাক্সি আপনাকে বেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। ড্রাইভারের ফোন নাম্বার রেখে দিন। পর্বত থেকে নামতে নামতে কল দেবেন আপনাকে নিয়ে যেতে। নতুবা ফেরার ট্যাক্সি পাবেন না। সবাই রিজার্ভ ট্যাক্সি নিয়েই আসে।

বেজ থেকে মন্দির পর্যন্ত যেতে কত সময় লাগে তা নির্ভর করে আপনার স্ট্যামিনা, হাঁটার অভ্যাস, গতি কেমন তার ওপর। সাধারণত ওঠার সময় আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা লাগে। নামার সময় ২ ঘন্টা। আমার কত সময় লেগেছিল বলি। আমি বেজ থেকে যখন ওপরে উঠতে শুরু করেছি তখন সময় সাড়ে ১২ টা। আবার যখন বেজ এ পৌছেছি তখন ঘড়িতে ৪টা ৪৫। এর মধ্যে আমি মন্দিরে সময় কাটিয়েছি ২০ মিনিট। পথিমধ্যে যে ক্যাফেটা আছে সেখানে সময় কাটিয়েছি প্রায় ১০ মিনিট। পথে এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে অসংখ্য ছবি তুলেছি। সেখানে সময় ব্যয় হয়েছে। তবে আমি উঠেছি ও নেমেছি অপেক্ষাকৃত শর্টকাট রাস্তা দিয়ে।

নিচে ঘোড়া পাওয়া যায় ভাড়া যেটা ২৫০ না যেন ৩০০ রুপি নেয় পার হেড। তবে ওতে লাভ নেই বেশি। হাফ ওয়ে উঠতে পারবেন ঘোড়ায় করে। বাকিটা হেঁটে। এবং নামার সময় পুরোটাই হেঁটে। আর লাঠি কিনতে পাওয়া যায়। ৫০ রুপি সর্বনিম্ন রেট।

যাদের অলটিটিউড সিকনেস আছে, হাইট ফোবিয়া আছে তাদের জন্য ব্যাপারটা একটু কষ্টকর হবে। কিছুটা সময় ওঠার পর সাময়িক শ্বাস-কষ্টও হতে পারে কারো কারো। বাট শুরু যদি করেন তবে শেষ পর্যন্ত উঠুন। ইট উইল বি আ লাইফ টাইম মেমরি। বাকি স্পটগুলো দেখার জন্য যদি ট্যাক্সি নেন তবে তো হলোই, নতুবা থিম্ফুর মতো এখানেও ঢাকা থেকে নিয়ে আসা ম্যাপের স্ক্রিনশট আপনাকে সাহায্য করবে।

রাতটুকু পারো শহরেই কাটান। তার আগে সন্ধ্যাবেলায় বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফুন্টশোলিং যাবার টিকিট কেটে আসুন। ২৫০ রুপি নেবে। সকাল সাড়ে ৭ টায় প্রথম বাস।

টাইগার নেস্ট

পঞ্চম দিন

সকালের বাসে ফুন্টশোলিং আসুন। সকালের নাস্তাটা করুন বাস চুখা জং-এর যে জায়গাটাতে ব্রেক দেবে সেখানে। সাড়ে ৭ টার বাসে উঠলে ১২ টা – সাড়ে ১২ টার মধ্যে ফুন্টশোলিং পৌছে যাবেন। থিম্ফু যাবার সময় যেখানে আপনার পাসপোর্টে arrived সীল পড়েছিল এবার সেখানে গাড়ি থামবেই না। সোজা ফুন্টশোলিং বাসস্ট্যান্ড। হেঁটে চলে আসুন ইমিগ্রেশান অফিস। সেখান থেকে এক্সিট সীল নিয়ে নিন পাসপোর্টে। এবার আসুন ভারতের জয়গাও ইমিগ্রেশান অফিস। এন্ট্রি সীল নিন। দুপুরের খাবারটা খেয়ে এবার রওনা দিন চ্যাংড়াবান্ধা। ট্যাক্সিতে যেতে চাইলে ভুটান গেটের রাস্তায় অসংখ্য ট্যাক্সি পাবেন। আর বাসে যেতে চাইলে আগের সেই রুট, জয়গাও-হাসিমারা-ময়নাগুড়ি বাইপাস-চ্যাংড়াবান্ধা বাইপাস-বর্ডার। বর্ডার বাংলাদেশী সময় সন্ধ্যা ৬ টায় বন্ধ হয়। তার আগেই পৌছান। বর্ডারে কিভাবে কী করতে হবে তা তো আগেই বলেছি।

যারা ভুটান ভ্রমণ শেষে দার্জিলিং যেতে চান তাদের এই দিনের হিসেবটা একটু আলাদা হবে।

হোটেল

থিম্পু, পারোতে অনেক হোটেল আছে। সবার রুচি ও সাধ্য অনুযায়ীই একেক হোটেল। থিম্ফুতে আমি যে হোটেলে ছিলাম তার ভাড়া দিয়েছি মাত্র ৫০০ রুপি পার নাইট। সিঙ্গেল বেড। টিভি আছে। বারান্দা বা জানালা নেই। হট ওয়াটারের ব্যবস্থা নেই। তবে পারোতে দারুন হোটেলে ছিলাম। বাজেট হোটেল। কিন্তু সব ব্যবস্থা পারফেক্ট। হট ওয়াটার, টেলিফোন, এলইডি টিভি, পাবলিক জোনে ওয়াইফাই, মাউন্টেন ভিউ বারান্দা – এ সবই ছিল। ১২০০ রুপির ডাবল বেডেড রুম ৮০০ রুপিতে নিয়েছিলাম দরদাম করে। কোন হোটেল নেবেন বা কোনটার রেট কেমন তা খুব সহজেই hotel.bt সাইট থেকে পেতে পারেন। ভুটানের প্রায় সব হোটেলের অ্যাড্রেস এবং কনটাক্ট ইনফরমেশান এখানে পাবেন।

আর হ্যাঁ, থিম্পুতে অবশ্যই clock tower এর আশেপাশে হোটেল নিন। wogzin lam, norzin lam রোডে ভালো বাজেট হোটেল আছে।

পারোর ক্ষেত্রে মেইন টাউনে পোস্ট অফিসের কাছেই বাজেট হোটেলগুলো। এখানে থাকলে ঘোরাটাও সহজ। hotel.bt থেকে ইচ্ছানুযায়ী হোটেল পছন্দ করে সেখান থেকে ওদের ফোন নাম্বার নিন। আগেভাগেই বুক করে যাওয়া ভালো। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত ভীড় একটু বেশি থাকে। চাইলে ফোনে বার্গেইনও করতে পারেন।

ট্রান্সপোর্ট

বাজেট ভালো থাকলে পুরো ভুটান ট্যাক্সি নিয়ে ঘোরা যায়। বাট যারা একা যাবেন বা কম খরচে ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের জন্যই আমার প্ল্যানটা। দল নিয়ে যারা যাবেন তারা ট্যাক্সি খরচটা অবশ্যই চাইবেন। তাদের জন্য নিচে ট্যাক্সি খরচটা ছবি আকারে দিয়ে দিচ্ছি।

খাবার

ফুন্টশোলিং, পারো, থিম্ফু সব জায়গায়ই ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে। তবে এগুলো সংখ্যায় কম। চাইলে যে কোন রেস্টুরেন্তে ভুটানিজ খাবার বা চাইনিজ ফ্রায়েড রাইস খেতে পারেন। আমি দুই দিন ভুটানের ট্র্যাডিশনাল খাবার khema datshi আর ega datshi খেয়েছি। হালাল খাবার এবং খেতে মন্দ না। ইন্ডিয়ান ভেজিটেবল থালিও মন্দ না।

খরচ

প্রথমে হোটেল। থিম্পু দুই রাত এবং পারো দুই রাত, মোট চার রাতে আপনার খরচ হবে প্রায় ৩০০০ রুপি। রুচি ও বার্গেইন করার ক্ষমতা অনুযায়ী খরচ বাড়তে পারে।

নেক্সট ট্রান্সপোর্ট। চ্যাংড়াবান্ধা টু ফুন্টশোলিং এন্ড ব্যাক ২০০ রুপি। ফুন্টশোলিং টু থিম্ফু বাই বাস ২৫০, বাই ট্যাক্সি ৬৫০ যদি শেয়ার মেলে। পরদিন ৮০০ রুপিতে থিম্ফু ঘোরা। পুনাখা যাওয়া – আসা বাই বাস ১৫০, বাই ট্যাক্সি ৬০০। শহর ঘোরা ৪০০। থিম্ফু টু পারো বাই ট্যাক্সি ২০০/২৫০। পারো টাকসাং ঘোরা ৪০০/৫০০ রুপি। চেলেলা পাস যদি যেতে চান তবে আরো ২০০০ রুপি যোগ হবে। (আমি নিজে চেলেলা পাস যাই নি। সামনের ফেব্রুয়ারিতে আবার যাব ভুটান। তখন যাব) পারো টু ফুন্টশোলিং ২৫০ রুপি বাই বাস। এই হল ট্রান্সপোর্টের খরচ। টাকসাং-এ ঘোড়া নিলে করলে আরো ২৫০/৩০০ যোগ হবে।

এবার খাবার। মোটামুটি ৪০০ রুপিতে ৩ বেলা খাওয়া হয়ে যায় আপনি যাই খান আর যেখানেই খান। আমি থিম্ফুতে খেয়েছি হোটেল AV তে। ইন্ডিয়ান হোটেল। ১৫০ রুপির বেশি লাগেনি একেক লাঞ্চ ও ডিনারে। সকালে কি খাবেন সেটা আপনার বিবেচ্য। ১০০ রুপিতে হয়ে যাবার কথা।

টূকিটাকি আরো কিছু খরচ আছে। সেটা ৪০০ রুপির বেশি না। যেমন থিম্ফুতে ভুটান রাজার কার্যালয় বা Tashichhodzong -এর প্রবেশ মূল্য ৩০০ রুপি। পারোতে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের প্রবেশ মূল্য সার্ক কান্ট্রির জন্য ২৫ রুপি। থিম্ফুর ফোক হ্যারিটেইজ মিউজিয়াম সার্ক ন্যাশনাল ৩০ রুপি। Takin Preserve ৩০ রুপি।

ঢাকা থেকে বুড়িমারী যাওয়া-আসা, বর্ডার খরচ, ট্রাভেল ট্যাক্স এগুলো তো বলেছি। এবার একটু কষ্ট করে আপনি কিভাবে ঘুরবেন, কয়দিন থাকবেন তা ঠিক করে আপনার খরচটা মিলিয়ে নিন। রুপিটা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করুন। ব্যস! বেরিয়ে গেল্ আপনার কত টাকা লাগবে তার হিসেব।

এবারে যেসব জিনিস জেনে রাখা ভাল…

আমি আমার পুরো লেখায় রুপি রুপি করেছি। কিন্তু রুপি ভুটানের মুদ্রা না। ভুটানের মুদ্রা Ngultrum বা নিউলট্রাম। কিন্তু সারা ভুটানেই ভারতীয় রুপি সমানভাবে চলে। নিউলট্রাম ও রুপির মান সমান। তাই ঝামেলা হয় না। ভুটানে কেনাকাটা করলে যা দিয়েই করেন না কেন খুচরা হিসেবে ওরা কিন্তু নিউলট্রামই দেবে। সেগুলো ভুটানেই খরচ করে আসুন। জয়গাও এর পরে এগুলো খরচ তো দূরের কথা, এক্সচেঞ্জই করতে পারবেন না।

ভুটানিরা দারুন হিন্দি বলে। ইংরেজিও কম-বেশি সবাই ভালো জানে। যাদের হর-হামেশা বিদেশি পর্যটক নিয়ে কারবার তারা তো ইংরেজি জানবেই। ভারতীয় টিভি চ্যানেল আর ভারতের চলচ্চিত্র, এই দুয়ের দৌলতে হিন্দিটা আপনি নিশ্চয়ই ভালোই জানেন। কিন্তু আমার সাজেশান হচ্ছে আপনি যদি কথা চালাবার মত সামান্য ইংরেজিও জানেন তবে সেটাই ব্যবহার করুন। আমাদের চেহারা এমনিতেই ইন্ডিয়ানদের মত, কিংবা ইন্ডিয়ানদের চেহারা আমাদের মত। ভুটানিরা ভারতীয়দের খুব একটা দেখতে পারে না। সেটা ওদের কথা ও আচরণে বোঝা যায়। তাই প্রথমেই হিন্দি বলে নিজেকে ভারতীয় বানিয়ে ফেলবেন না। বাংলাদেশীদের ওরা প্রচুর পছন্দ করে। হিন্দি ছাড়ুন আর বলুন আপনি বাংলাদেশী। তারপর দেখুন সম্মান কতটুকু বাড়ে।

ভুটান ধুমপানমুক্ত দেশ। সুতরাং সিগ্রেট-ফিগ্রেট ফুকতে হলে সাবধানে। শীতের দেশ, ধোয়া খাবার ইচ্ছে হতেই পারে যখন তখন।

এখানে প্রতিটা রেস্টুরেন্টই একেকটা বার। এছাড়া বিভিন্ন জেনারেল শপেও বোতল পাওয়া যায়। আমি কাউকে প্রোভোক করছি না কিন্তু। তবে শীতের দেশ, বলা যায় না 😛

ভুটানে কোন ট্রাফিক সিগনাল নেই। রাস্তায় নেই কোন ট্রাফিক বাতি বা জ্যাম। তাই রাস্তা পার হতে সাবধান।

ভুটান খুবই পরিচ্ছন্ন ও শৃঙ্খল একটা দেশ। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে না। আপনি যখন ভুটানে ঘুরতে যাচ্ছেন তখন আপনি আপনার সাথে বাংলাদেশের সম্মানটাকেও নিয়ে যাচ্ছেন। সেটা আপনার কাজ-কর্মে বাড়বে বা কমবে। ওদের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না। যেখানে সেখানে কোন ময়লা, পানির বোতল ফেলবেন না, সিগ্রেট খাবেন না। দেশে আপনি কেমন তা ওরা জানে না। সেখানে যা করবেন তা ওরা দেখবে। তাতে আপনার সাথে সাথে দেশেরও মান কমবে। অন্তত ৫০ পার সেন্ট ভুটানি আমাকে বলেছে, “You are Bangladeshi? Bangladeshis are good people. Far better than Indians.” শুনে বুকের ছাতিটা কয়েক ইঞ্চি বেড়ে গেছে।

ভুটানিরা যেমনি শান্তিপ্রিয় তেমনি খুবই হেল্পফুল জাতি। যা সাহায্য চাইবেন তাতেই এরা এগিয়ে আসবে। আমার ট্রিপে আমি তাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ হেল্প পেয়েছি তা লিখলে সেটা আলাদা একটা গল্প হয়ে যায়। সেটা থাকুক। তবে হ্যাঁ, ট্যাক্সি ড্রাইভারগুলো বড় চালাক হয়েছে। এরা অবশ্য তেমন কিছু করে না। ভাড়াটা প্রথমে বড় বেশি হাঁকে। আর অন্য অপশন থাকা সত্ত্বেও ট্যাক্সি নেবার জন্য সবাইকে প্ররোচিত করে।

আমার পুরো লেখায় আমি কোথাও ভুটানের একটুও সৌন্দর্যের বর্ণনা দিই নি। সেটা দেবোও না। আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ছিল একাকি যারা ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে ভুটান ভ্রমণের একটা টোটাল গাইড লাইন দেয়া। রাস্তাটা বাতলে দিলাম। পথে পা দিয়ে চোখ খুলে সৌন্দর্য দেখার কাজ আপনার। সেটা আমি কেন করে দেব? তবে শুধু এটুকু বলি, আপনি যদি প্রথমবার ভুটান যান তবে বিভিন্ন জায়গার সৌন্দর্যে হা করে তাকিয়ে থাকা বাবদ আপনার প্রতিদিন পৌনে দুই ঘন্টা খরচ হবে।

পরিশেষে একটা কথা বলি, আপনি যদি একা একাই ভুটান যান এবং আপনার বয়স যদি হয় অনুর্ধ্ব পঁচিশ, তবে যেখানেই যান, ইমিগ্রেশান কিংবা হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট কিংবা ট্যাক্সিতে, সবাই আধ মিনিট হা হয়ে থাকবে আপনি শুধু ঘোরার জন্য একা এদ্দুর এসেছেন শুনে। তাদের সেই হা-এর ওপর একটা জগত ভোলানো হাসি দিন। দিয়ে বুঝিয়ে দিন, বাঙালি সাহসী জাতি। ভুটান তো উঠানের কাছেই। বাঙালি চাইলে কঙ্গো থেকে মঙ্গোলিয়া, চীন থেকে চিলি একা একাই ঘুরতে পারে। দল লাগে না।

Leave a Comment
Share