এলিফ্যান্টা কেভ, মুম্বাই

মুম্বাই এর ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’ থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে আরব সাগরের মধ্যে ছোট্ট দ্বীপ এলিফ্যান্টা (Elephanta Island) এর অবস্থান৷ ১৯৮৭ সাল থেকে এই এলাকা ইউনেস্কোর হেরিটেজ সাইট। বর্তমানে এটি ভারতীয় পুরাতাত্বিক সংস্থার অধীন। প্রতি বছর এখানে কমবেশি ২০ লক্ষ পর্যটক আসেন। এই দ্বীপে রয়েছে সাতটি ছোট বড় গুহা যেগুলি পাথর কেটে বানানো হয়েছিল আনুমানিক ৫০০-৬০০ খ্রিস্টাব্দে।

প্রাচীন কালে এর নাম ছিল ‘ঘরাপুরিচি লেনি’ যার অর্থ হল ‘গুহার শহর’। পর্তুগিজ জমানায় ১৫৩৪ সালে অঞ্চলটি আবিষ্কৃত হয়। প্রায় আড়াই কিলোমিটার ব্যাপ্ত দুটো পাহাড় নিয়ে ৫০০ ফুট উচ্চতার এলিফ্যান্টা কেভ অনেকটা হাতির মাথার মতো। গুহাটি খুবই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৭০ সালে গুহাটি নতুন করে সংস্কার করা হয় এবং এখন এটি ইউনেসকোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ তকমায় ভূষিত হয়েছে।

এলিফ্যান্টা দ্বীপের গুহাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়৷ পূর্বদিকের পাহাড়ে দুটি বুদ্ধ গুহা ও একটি ইঁট নির্মিত বুদ্ধ স্তূপ লক্ষ করা যায়৷ গুহা দুটির একটি অসম্পূর্ণ৷ এগুলিতে কোনও ভাষ্কর্য নেই৷ বুদ্ধ স্তূপের অবস্থানের জন্য পাহাড়টিকে ‘স্তূপ হিল’ বলে৷ আর পশ্চিম দিকের পাহাড়ে পাঁচটি হিন্দু গুহার অবস্থান৷ এর মধ্যে মূল গুহাটি ‘শিব গুহা’ নামে পরিচিত৷ গুহাটির ভাস্কর্যে শিবের বিভিন্ন রূপের ও কর্মের বর্ণনা আছে৷

সপ্তম শতাব্দীর একটি শিলালিপি অনুযায়ী দ্বিতীয় পুলকেশীর সময়কালে এই গুহাগুলির নির্মাণ হয়েছিল নাবিকদের আশ্রয় এর জন্যে। পরবর্তী কালে এই গুহাগুলি মন্দিরে পরিণত হয়। শিবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন নান্দনিক ভাস্কর্য এ পূর্ণ হতে থাকে মন্দির প্রাঙ্গন। এলিফ্যান্টা গুহার টিকিট ঘরের কাছেই ছোট জাদুঘরে এই প্রাচীন গুহার ইতিকথা নথিবদ্ধ করা আছে।

এলিফ্যান্টা উত্‍সব

প্রতিবছর ফ্রেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম এলিফ্যান্টা উত্‍সবের আয়োজন করে৷ এ-বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারবেন এমটিডিসি-এর দপ্তরে৷ ই-মেল contactmaharastraourism@gmail.com

সময়সূচী

এলিফ্যান্টা কেভ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

টিকেট মূল্য

সার্ক দেশের নাগরিকদের জন্যে প্রবেশমূল্য ২৫ রুপী, ফরেনারদের জন্য ৬০০ রুপি এবং ভারতীয়দের প্রবেশমূল্য ১০ রুপী। ছবি তোলার জন্যে কোনো আলাদা মূল্যের প্রয়োজন নেই তবে ভিডিও করা নিষেধ।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এলিফ্যান্টা কেভ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। গরম ঋতুতে অসহনীয় গরম পরার কারনে ভ্রমণ উপভোগ্য থাকে না আর বর্ষায় সাগর অনেক উত্তাল থাকায় লঞ্চ ভ্রমণটা ভীতিময় হয়ে যায়।

কিভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন মুম্বাই যায়৷ বিমানেও যেতে পারেন৷ মুম্বাই এর গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া থেকে ২০০ রুপির রাউন্ড ট্রিপের ভাড়া দিয়ে ফেরীতে করে যেতে হয় এলিফ্যান্ট কেভে। ফেরীতে প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট করে যেতে ও আসতে লাগে। জেটিঘাট থেকে গুহা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য টয়ট্রেনের ব্যবস্থা আছে৷

সতর্কতা

এই পথে প্রচুর পুলিশ চেকিং হয়। তাই সাথে পাসপোর্ট অথবা NID অথবা ছবি সম্বলিত কোন পরিচয় কার্ড রাখবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ caveselephantaindiaislandmumbai