পাটনিটপ

পাটনিটপ (Patnitop) ভারতের কাশ্মীর প্রদেশে অবস্থিত একটি হিল ষ্টেশন যা জম্মু থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পাটনিটপ এর অবাক করা সৌন্দর্য, পাইনের ঘেরাটপে শোভিত পাহাড়, বিস্তীর্ণ সবুজের ছায়াবন আপনাকে মোহিত করবেই। এখান থেকে সানসার ঘুরে আসতে পারেন খুব সহজেই। পাটনিটপে আছে প্যারাগ্লাইডিং এর ব্যবস্থা। এছাড়া এখান থেকেই ঘুরে আসতে পারেন চিনার গার্ডেন, স্কেটিং গার্ডেন, নাগ মন্দির। আপনার কাশ্মীর ভ্রমণ আইটেনারীতে পাটনিটপ যুক্ত করে নিলে পস্তাবেন না এটুকু বলাই যায়। একটা রাত এখানের কাটানোর চেষ্টা করুন।

নাথাটপ

পাটনিটপ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ট্রেক করে নাথটপে (Nathatop) পৌছানো যায় যার উচ্চতা প্রায় ২৭১১ মিটার। এটি পাটনিটপ থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শীতকালে পাহাড়টি বরফে ঢাকা থাকে যার ফলে এর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই শীতকালে এখানে স্কিইং করতে পারেন। এছাড়া নাথাটপ প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য খুব বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বাতাসের অবস্থা অনুযায়ী, ফ্লাইয়ের সময়কাল ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা বা তার কম-বেশি হতে পারে।

এই চূড়া থেকে হিমালয়ের চমৎকার এবং পরিষ্কার দৃশ্য পাওয়া যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এবং যারা এক জায়গায় নিরিবিলি বসে জায়গাটির নির্মলতা, নির্জনতা, সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য নাথাটপ অবশ্যই একটি দেখার মতো জায়গা।

মাধাটপ

২০২৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, মাধাটপ (Madhatop) সড়কপথে সহজেই যাওয়া যায় এবং পাটনিটপ থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত। আদিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, মাধাটপ ট্রেকারদের জন্যে, হানিমুনের জন্যে এবং শীতকালীন এক্টিভিটির জন্যে সেরা।

নাগ মন্দির

পাটনিটপের কাছে নাগ (Nag Mandir) মন্দিরটি ৬০০ বছরেরও বেশি পুরানো। নাগ পঞ্চমী উত্সবের সময়, শত শত শিব ভক্ত জড়ো হয় যারা এই মন্দিরে সাপ রাজা কোবরাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং পূজা করতে ভিড় জমায়।

এই মন্দিরটি প্রধানত কাঠের তৈরি যা চারপাশের সবুজে ঘেরা। মন্দিরটি শুধুমাত্র একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, এটি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান যা এর দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

শিব ঘর

শিব ঘর (Shiv Ghar) প্রায় ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং পাটনিটপ থেকে ১১ কিমি ট্রেক করে পৌছাতে হয়। একদিনের একটি রোমাঞ্চকর ট্রেক করে এখানে পৌছানো যায়। জম্মুর পর্যটন বিভাগের দোকান থেকে ট্রেকিং সরঞ্জাম ভাড়া করা যেতে পারে।

সানসার

পাটনিটপ থেকে সানাসার (Sansar) মাত্র ৬০ মিনিট দূরে অবস্থিত। দুটি ছোট হ্রদ সানা এবং সার থেকে সানাসার এর নামকরণ করা হয়েছে। এর অপার্থিব প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য এটি পর্যটকদের কাছে একটি দারুন গন্তব্য। একবার আপনি সানাসারে গেলে পোনি রাইডসহ বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিস উপভোগ করতে পারেন বা তৃণভূমিতে অলস সময় কাটাতে পারবেন। পাত্নিটপ থেকে সানাসারের দিকে যাওয়ার রাস্তার সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবেই। আপনি যদি জম্মু-কাশ্মীরের সেরা পর্যটন স্থানগুলিতে ভ্রমণ করতে চান, তবে অবশ্যই আপনার চেকলিস্টে সানাসার যুক্ত করা উচিত।

পাটনিটপ যাওয়ার উপায়

ট্রেনে জম্মু হয়ে পাটনিটপ

ভারতের প্রায় সব বড় শহরের সঙ্গে জম্মু তাওয়াই রেলপথে সংযুক্ত আছে। কলকাতা থেকে যাওয়ার জন্য রয়েছে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস যা সপ্তাহের প্রতিদিন কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়, আছে হিমগিরি এক্সপ্রেস যেটি হাওড়া থেকে সপ্তাহে তিন দিন ছেড়ে যায় এবং সাপ্তাহিক সুবিধা এক্সপ্রেস (হাওড়া থেকে)। আপনি চাইলে দিল্লিতে ট্রেন বদল করেও যেতে পারবেন। দিল্লি থেকে জম্মু যাওয়ার অনেক ট্রেন।

জম্মু থেকে পাটনিটপ ১১৩ কিলোমিটার, তাই বাসে কিংবা গাড়িতে খুব সহজেই যেতে পারেন। জম্মু থেকে আনুমানিক ২-৩ ঘন্টা সময় লাগে এবং শেয়ারড সুমোতে জনপ্রতি ₹১০০/১৫০ খরচ হয়।

ট্রেনে উধমপুর হয়ে পাটনিটপ

পাটনিটপের নিকটতম রেল স্টেশন হল উধমপুর , যেটিতে প্রতিদিন দুটি ট্রেন রয়েছে যা নতুন দিল্লি থেকে আসে। সেরা ট্রেন হল 2446 যোগাযোগ ক্রান্তি এক্সপ্রেস যা নতুন দিল্লি থেকে শুরু হয় এবং সকাল 8 টায় উধমপুরে পৌঁছায়। উধমপুর থেকে বাস বা শেয়ার গাড়িতে পাটনিটপ যেতে পারবেন, দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি, সময় লাগবে ১ ঘন্টা।

ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in ওয়েবসাইট থেকে।

শেয়ার ট্যাক্সিতে শ্রীনগর থেকে পাটনিটপ

পুরাতন শ্রীনগরের লাল চকের কাছে ঘন্টাঘর থেকে শেয়ার ট্যাক্সি পাওয়া যায়। শ্রীনগর থেকে পাটনিটপ পর্যন্ত ভাড়া ₹২০০/২৫০ এবং ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে পৌঁছাতে।

বিমানে দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে বা বিমানে জম্মু যেতে পারেন কিংবা বিমানে শ্রীনগর পৌঁছে সেখান থেকে পাটনিটপ যেতে পারবেন।

পাটনিটপে থাকবার খোঁজ

সানাসারে থাকার জন্য রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পর্যটনের কটেজ একদম লেকের ধারে। অনলাইন বুকিং www.jktdc.co.in । আর যাঁরা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য রয়েছে প্রাইভেট মালিকাধীন তাঁবুর ব্যবস্থা যোগাযোগ করুন: ‘শেরপা অ্যাডভেঞ্চার’, দলবিন্দর সিং, যোগাযোগ ৯৬২২৬৮৮৮৮, ৯৮৫৮১৯৯১৩০

এছাড়া থাকার জন্য পাটনিটপে অনেকগুলি প্রাইভেট হোটেল রয়েছে, যাদের মধ্যে অবস্থানগত কারণে ‘হোটেল গ্রীন ল্যান্ড’, ‘হেটেল স্যামসন’, ‘পাটনিটপ হাইটস’, ‘হোটেল গ্রিন টপ’ ‘হোটেল শিবালিক’, ‘ভারদান রিসোর্ট’ ভালো। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, অনলাইন বুকিং ব্যবস্থাও আছে।

কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য

জম্মু থেকে পাটনিটপ যাওয়ার পথে পড়বে মানসর লেক। জম্মুর স্থানীয়দের কাছে প্রিয় একটি পিকনিক স্পট। চারি দিকে পাহাড় আর তার মাঝে নীল টলটলে জলের একটি লেক। ভারী মনোরম পরিবেশ। বাবা মানসর শেষনাগের এক অবতার। কথিত আছে উনি এখানেই ধ্যান করেন, রয়েছে তাঁর মন্দিরও। লেকের জলে রয়েছে প্রচুর মাছ, তাঁদেরও দেবতা হিসাবে মানা হয়। ইচ্ছে করলে লেকে বোটিংও করতে পারেন।

পাটনিটপ থেকে ৭ কিমি দূরে কুদ। এখানকার খাঁটি ঘিয়ে তৈরি শোনপাপড়ি অবশ্যই চেখে দেখবেন। জায়গাটি সারা জম্মুতে বিখ্যাত হয়ে রয়েছে শোনপাপড়ি, চকোলেট, কালাকাঁদের জন্য। স্থানীয়রা বলেন ‘পাটিসা চকলেট’। ‘প্রেম কাট্টি’ দোকানটি একটি ব্র্যান্ড হয়ে রয়েছে সারা জম্মুতে।

সাধারন প্রশ্ন এবং উত্তর

বছরের কোন সময়ে পাটনিটপে তুষারপাত দেখা যাবে?

শীতের মৌসুমে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত পাটনিটপে তুষারপাত হতে দেখা যায়।

পাটনিটপের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলি কি কি?

পাটনিটপের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলি হল নাথাটপ, নাগ মন্দির, সানসার লেক, বিল্লু কি পাউরি, কুদ পার্ক। এছাড়া শীত মৌসুমে পাটনিটপে প্যারাগ্লাইডিং এবং স্কিইং করতে পারেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Kashmir