দামনিওন সাদুয়াক ফ্লোটিং মার্কেট

থাইল্যান্ডের ব্যাংককের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ১০০ কিমি দূরে রাতচাবুড়ি এলাকায় অবস্থিত দামনিওন সাদুয়াক ফ্লোটিং মার্কেট। যেখানে প্রতি বছরই হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। ছোট ছোট বোটে রকমারি সবজি আর ফলের সমাহার! আর এর সঙ্গে মাথায় বাঁশের টুপি-পরা থাই মেয়েদের বেচা-কেনার মনোরম এক দৃশ্য। ১৮৬৬ সালে রাতচাবুড়ি আর সামুতসাখোন রাজ্যের মধ্যে নৌপথে যাতায়াত চালু করতেই দামনিওন সাদুয়াক খালটি কাটা হয়। স্থানীয় কৃষিকাজেও এই খালের পানি খুব সাহায্য করে। মালাক্কা গ্রেপ, চাইনিজ আঙুর, আম, কলা, নারকেলসহ একাধিক ফল আর সবজি জন্মায় এখানে। আর নানা রকমের ফল, সবজি, মিষ্টি, গোশত ছোট ছোট বোটে ভরে ফেরি করে বেড়ান এখানকার বিক্রেতারা। অল্প কিছুদূর এগুলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে খালের পাড় ঘেঁষে বাহারি দোকান সাজানো। বোট থামিয়ে কেনাকাটা, বেশির ভাগই থাই ট্রেডিশন পোশাক, নারকেলের খোলার শোপিস-লাইট, পাখা, ভ্যারাইটিজ টাইপের মাথার ক্যাপ, হেন্ডিক্রাফট, ওয়ালম্যাট, পেইন্টিং, ফ্রুটস, নৌকাভর্তি ডাব সব মিলে এলাহিকান্ড।

নির্জন নিভৃতে খালের বাঁকে বাঁকে দোকানগুলোতে ডল টাইপের মেয়েদের বেচাকনা দেখে অবাকই হতে হয়। ছোট লাঠি রাখে বোটগুলোকে দোকানে ভেড়াতে, খালের দুই ধারে অসংখ্য নারকেল গাছ, মাঝে মাঝে আবাসিক বাড়ি, খালের অলিগলিও কম না, ৬০/৭০ বছর বয়সী বুড়ীরা নির্বিঘ্নে বোট চালাচ্ছে, যাত্রীদের কাছে ডাব বিক্রি করছে। দ্বীপের মত একটা জায়গা নারকেল গাছে ভরা, খেজুরের রসের মত পাতিল ঝুলানো থাকে, এই রস গ্লাসে করে আইস দিয়ে পর্যটকদের আপ্যায়ন করা হয়। খেতে সুস্বাদু। কিছুদূর এগুলেই দেখা যায় লাল রঙের বিভিন্ন কারুকাজের টেম্পল। টেম্পলের গা ঘেঁষে অনেক জাতের মাছ, খাবার দিলে দেখা যায় এদের উথাল পাথাল লাফালাফি। ভেলায় ভেসে জিনিসপত্র কিনতে কিনতে দেখে নেয়া যায় খালের পাশে ট্রেডিশনাল থাই বাড়িঘর। চেখে দেখারও সুযোগ আছে থাইদের নিজস্ব খানাপিনা। দামনিওন সাদুয়াক থেকে আরও যে ছোট ছোট খাল বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয়েছে সেগুলোর শোভাও কম নয়! এজন্য রয়েছে বোট ট্রিপ সার্ভিস। পুরো এলাকাটি ঘুরতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লেগে যায়। দেশটিতে যত বেড়াতে যাওয়ার জায়গা আছে, তার মধ্যে দামনিওন সাদুয়াক ভাসমান বাজারটি (Damnoen Saduak Floating Market) কিন্তু ‘মোস্ট ফটোগ্রাফড’ ডেস্টিনেশন।

খরচঃ

বোট বা নৌকা ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ বাথ এবং মটর চালিত নৌকার ভাড়া পড়বে ৬০০-৮০০ বাথ।

কখন যাবেনঃ

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই ভাসমান বাজারটি জমজমাট থাকে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট এ নামুন। ব্যাংকক থেকে সাউদার্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে রাতচাবুড়ি। ভাড়া পড়বে ৫০ বাথের মত। সকাল ৬টা থেকে প্রতি ৪০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায়। ব্যাংকক থেকে যেতে ১.৫-২ ঘন্টার মত লাগে। প্যাকেজে টিকেট কিনলে ১২০০ থাই বাথ পড়বে পিক ড্রপ সহ।

কোথায় থাকবেন

ভাসমান বাজারে ঘোরা শেষে আপনি যদি রাতে থাকতে চান তাহলে আপনাকে Samut Songkhram এ চলে যেতে হবে। ওখানে থাকতে পারবেন। অন্যথায় ব্যাংককে ফিরে আসুন। ব্যাংককে আপনি থাকার জন্য আপনার সামর্থ্যের মধ্যে বহু ব্যবস্থা পাবেন। এমনকি চাও ফ্রায়া নদীর সামনে অবস্থিত হোটেলেও আপনি থাকতে পারেন যেমন ব্যাংককের বিখ্যাত ওরিয়েন্টাল হোটেল অথবা পেনিনসুলা হোটেল অথবা গাছপালা ও বাগান ঘেরা কোন হোটেলেও আপনি থাকতে পারেন আপনার পছন্দমতো নগরীর বানিজ্যিক অংশের বাইরে । ব্যাংককে আপনি পৃথিবীর যেকোন জায়গার তুলনায় ভাল আতিথেয়তা লাভ করবেন। আপনি যদি ব্যাংককের বিখ্যাত নিশিজীবন এলাকা যেমন প্যাটপং, সয় কাউবয় বা নানা প্লাজায় থাকতে পছন্দ করেন তাহলে আপনার উচিত ভাল একটি হোটেলে রুম বুক করা যেমন সিলমে ক্রাউন প্লাজা হোটেল কি ওয়্যারলেস রোডে প্লাজা এথেনিতে। তারা দক্ষতার সাথে আপনার যত্ন ও প্রয়োজনমতো সব ব্যবস্থা করে দেবে।

খাওয়া দাওয়াঃ

চাইনিজ ও থাই খাবারের সমারোহ শহরের সর্বত্র। টম ইয়াং কুং হচ্ছে নারকেলের দুধ, কাঁচালংকা, আদা, লেমন গ্রাস, মাশরুম আর চিংড়ি দিয়ে তৈরি একরকম স্যুপ। স্টিমড রাইস উইথ গ্রিনহোল পিপারকর্ন দিয়ে সবুজ অথবা লাল চিকেন কারি। কাঁচা পেঁপে, আম, লেবুর রস আর লংকা মেশানো স্যালাড এর সঙ্গী। চেখে দেখা যায় শার্ক ফিন স্যুপ আর বার্ড নেস্ট স্যুপ। ছোটো ছোটো ফলের আকারে তৈরি মিষ্টিগুলি দেখতেও ভারি মজা লাগে। ভালো লাগবে রোজ অ্যাপল, ম্যাঙ্গোস্টিন।

Leave a Comment
Share