চিয়াং মাই

১২৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চিয়াং মাই থাইল্যান্ডের প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় শহর। এটা ব্যাংকক থেকে ৭০০ কি.মি. দুরে অবস্থিত। সাগর থেকে ৩০০ মিটার উঁচু চিয়াং মাই হিমালয়ের পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। এখানকার বনে এখনও হাতি দ্বারা কাজ হয় । সুন্দর জলপ্রপাত, গুহা, গিরিসঙ্কট, বেষ্টিত বাগান সেইসাথে প্রচুর বৃক্ষরোপন চিয়াং মাই এ একটা সুন্দর বিস্তৃত ভূ-চিত্র তৈরী করেছে।

চিয়াং মাই লান না থাই এর রাজধানী ছিল, এখানে দশ লক্ষ ধান ক্ষেত্র রয়েছে। এটা ছিল প্রথম স্বাধীন রাজ্য যাকে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল বলা হয়। এটা ১৫৫৬ সাল পর্যন্ত একটা সফল ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ব্যবসা-বানিজ্যের্ত কেন্দ্র ছিল । বার্মা এখানে আগ্রাসন চালায়। ১৭৭৫ সালে বার্মিজদের হটিয়ে দিয়ে থাইরা একে থাইল্যান্ডের অবিচ্ছেদ্দ অংশে পরিণত করে। বিভিন্ন উতসব, ১৩০০ শতকের মন্দির, সুন্দর দৃশ্য, চমতকার ফলমুল যেমন আপেল, পীচ এবং স্ট্রবেরী, শীতল আবহাওয়া এবং সুন্দর রমনীদের দেখলে মনে হবে এটা শাংগ্রী লা।

ব্যাংকক থেকে চিয়াং মাই (Chiang Mai) ভ্রমণে বরাবরই একটা নির্জন এলাকা হিসেবে মনে হবে। ১৯২০ সালের আগে যদি আপনি এখানে আসতেন তাহলে নদীপথে অথবা হাতির পিঠে চড়ে আসতে হতো যা কয়েক স্তাহ সময়ের ব্যাপার। এখানকার মানুষদের নিজস্ব ভাষা, রীতি, হস্তশিল্প, ঐতিহ্য, নৃত্য এবং খাদ্য রয়েছে। চিয়াং মাই ভ্রমণে আসবেন যারা তারা কখনো এখানে ভ্রমণের আনন্দ ভুলবেন না। এখানে মোন, বার্মিজ, শ্রীলঙ্কান এবং লান না থাই এর স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। এখানে বিভিন্ন জিনিসের উপর দেখা যাবে প্রচুর কাঠের খোদাই কাজ ঠিক জটিল সিড়ির মতো।

চিয়াং মাই ও এর আশেপাশে ভ্রমণ

নগরীতে আপনি পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করে এর নিবিড়তা অনুসন্ধান করতে পারেন। আপনি যদি পদব্রজে ভ্রমণ না করতে চান তাহলে বাস, মিনিবাস, অথবা ত্রিচক্রযানে চড়তে পারেন। আপনি গাইডেড ভ্রমণে যেতে পারেন তারা আপনার সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। দিন ও স্তাহ ভিত্তিতে কোন গাড়ী ভাড়া করা যেতে পারে। আপনি যদি ব্যাংককে আসেন তাহলে বিভিন্ন রকম যানবাহন পাবেন চিয়াং মাই যাওয়ার জন্য। চিয়াং মাই ও ব্যাংককের মধ্যে রেল, বাস ও বিমানপথে যোগাযোগ রয়েছে। থাই এয়ারওয়েজ বোইং জেটে আপনার মাত্র ৫৫ মিনিট সময় লাগবে। আপনি যদি বাসে যেতে চান তাহলে ফাহোনিওথিন রোডে যাবেন তারা আপনাকে ১২ ঘন্টায় পৌঁছে দেবে। যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে সময় লাগবে ১৪ ঘন্টা।

চিয়াং মাই এর উৎসব

চিয়াং মাই এ বেশ কয়েকটি বার্ষিক উতসব অনুষ্ঠিত হয়। তিনটা আছে উল্লেখ করার মতো। প্রথমটি হলো ফুল উতসব যা ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম স্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। এটা নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফুল ফোটার উতসব। উতসবের সময় শোভাযাত্রা ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় উতসব হলো সংক্রান। এটা এপ্রিলের ১৩-১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এটা থাইবাসীদের নতুন বছর উদযাপন। ধর্মীয় উতকর্ষতা সাধনের জন্য ৩ দিনের উতসব, তীর্থযাত্রা, সুন্দরীদের প্যারেড, নাচ এবং অন্যান্য নির্বাধ অনুষ্ঠান সেসাথে জল ছোড়া উতসব রয়েছে। শেষ উতসব হলো লয় ক্রাথং। এটা মধ্য নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। এটা চান্দ্র বছরের দ্বাদশ মাসের পূর্ণ চন্দ্ররে দিন অনুষ্ঠিত হয়। এটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় উতসব কারণ মানুষ পূর্ণ চন্দ্ররে রাতে কলাগাছের ভেলায় মোমবাতি, ধূপ, ফুল এবং একটা কয়েন জলদেবতাকে সম্মান করে ভাসিয়ে দেয় সেসাথে ভাসিয়ে দেয় বিগত বছরের পাপকে।

উপরোক্ত উতসবগুলির যেকোন একটির সময় যদি চিয়াং মাই এ আসেন তবে সবচেয়ে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর হোটেল আছে যেখানে আরামদায়ক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকবার ব্যবস্থা রয়েছে। যাদের বাজেট সমস্যা আছে তারা সাশ্রয়ী অতিথি নিবাসে থাকতে পারেন। যদি চিয়াং মাই এর বাইরে থাকতে মনস্থ করেন তাহলে মা সা ভ্যালীতে থাকার জন্য বাংলো ও কেবিন পাবেন। আপনি থাই পর্যটন কর্তৃপক্ষের চিয়াং মাই শাখা থেকে ট্যূরিস্ট গাইড নিয়ে নিতে পারেন।

চিয়াং মাই এ চীনা খাদ্যের পাশাপাশি ইটালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, জার্মান এবং মুসলিম বৈশিষ্টের রেস্তোরাঁ আছে। এখানে আমেরিকান স্টাইলের কাবাব ঘর, স্যান্ডউইচ ঘর, ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ, পানশালা এবং নিরামিশ রেস্তোরাঁ রয়েছে। চা এবং কফি হাউজে আপনি ভাল চা অথবা কফি পান পাবেন। স্থানীয় খাবারের স্বাদ যদি আপনি উপভোগ করতে চান তাহলে মশলাযুক্ত নায়েম সসেজ সেসাথে হালকাভাবে রান্না করা খাও সয় নুডল্‍স খেতে পারেন। প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন খানটক ডিনার ও উত্তরের নৃত্য উপভোগ করার জন্য।

কি কি দেখবেন

শহরে কয়েকটা প্রধান মন্দির রয়েছে। একটির নাম ওয়াত চিয়াং মান যা সবচেয়ে পুরাতন। অন্য একটির নাম ওয়াত চেদি লুয়াং যা ১৫৪৫ সালের ভূমিকম্পে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওয়াত ফ্রা সিং এ ফ্রা সিং বুদ্ধম এর একটা ছবি রয়েছে। এটা তৈরী হয়েছিল ১৩৪৫ সালে। ওয়াত কু তাও চীনামাটি খচিত একটা সুন্দর প্যাগোডা।

ওয়াত সুয়ান ডক ওয়াত উমং এর একটা মন্দির। এটা চৌদ্দশ শতকে তৈরী হয়েছিল লান না থাই রাজের প্রমোদ বাগ হিসেবে। সবচেয়ে দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্দির হলো ওয়াত ফ্রা থাত দই সুদেপ। এটা একটা ভূ-চিহ্ন যেখান থেকে শহর দেখা যায়, শহর এখান থেকে ১৫ কি.মি. দুরে। এই মন্দিরে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যা পর্যটক আকর্ষণ করে এবং বৌদ্ধ পুন্যার্থিরা এখানে সারা বছর আসেন। এখানে আসতে ১২ কি.মি. পাহাড়ী জিগজ্যাগ পথ আছে। চিয়াং মাই এর চিড়িয়াখানা অবশ্যই দেখতে আসবেন যেখানে খাড়া সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। আপনি যদি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না চান তাহলে কার এ চড়ে মন্দিরে আসবেন যেখান থেকে মজাদার দৃশ্য দেখা যায়।

মন্দিরে ভ্রমণ ছাড়াও আপনি মার্কটে অথবা বড় বাজাওে যেতে পারেন কেনাকাটার জন্য। আপনি এখানে অ্যান্টিক, জুয়েলারী, পাইপ, এমব্রয়ডারী, সিল্ক, সুতি কাপড়, ঝুড়ি, সেলাডন, রুপার অলংকার, ফার্ণিচার, ল্যাকার ওয়্যার, খোদাইকাষ্ঠ এবং ছাতা পাবেন। আপনি চিয়াং মাই এ মানুষকে কর্মরত অবস্থায় দেখতে পাবেন। শহরের প্রান্তে বো সাং গ্রাম দেখা যাবে। আপনার কেনাকাটার কাজ শেষ হলে সান কামফানেগ এর উষ্ণ প্রস্রবনে আরাম করতে পারেন যা শহর থেকে ৩৬ কি.মি. দুরে অবস্থিত। প্রস্রবনের পানি উচ্চ সালফারযুক্ত যা স্বাস্থ¨ পুনরুদ্ধারক।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি ব্যাংকক। ব্যাংকক থেকে চিয়াং মাই থাই এয়ারওয়েজের বিমানে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছোনো যায়। এছাড়া বাস বা ট্রেনেও ব্যাংকক থেকে চিয়াং মাই যাওয়া যায়।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ chiangmaithailand