নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ – সেদিন যেখানে ভেসে ছিল দশমীর চাঁদ, তবু মিষ্টের সাথে যুক্ত হলো তিক্ত স্বাদ

আমার শহর থেকে সমুদ্র পাড়ি দেয়া জাহাজ ছাড়ে অথচ জাহাজে চড়িনি কখনো। যাত্রীবাহী জাহাজের দৌড় যদিও সন্দ্বীপ হাতিয়া কিংবা বরিশাল, তবুও তো সমুদ্র দর্শন। এবার জাহাজ ভ্রমণ হয়ে যাক। কয়েক বন্ধুকে বলতেই রাজী। তারপর একদিন সকালে ব্যাগ গুছিয়ে সদরঘাট জাহাজ ঘাটে চলে এলাম। আজকে জাহাজ যাবে হাতিয়া। হাতিয়ার পাশে আছে নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপ নামটা শুনেই কেমন একটা রোমাঞ্চ বুকের ভেতর নির্জনতার ডাক দেয়। সঙ্গীহীন একাকী একটা দ্বীপ সমুদ্রের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বছর যাবত শুনছিলাম নামটা। যেখানে সমুদ্র সৈকত জুড়ে শুধুই সবুজ বনাঞ্চল আর সেই বনাঞ্চলে আছে অসংখ্য হরিনের পাল আর অজস্র পাখির মেলা। যাত্রাপথ মোটেও সুগম নয়, সেই কারণে যাচ্ছি যাবো করতে করতে, কাজ থেকে ছুটি নিচ্ছি নেবো করতে করতে অনেক দেরী করে ফেলেছি। এবার সত্যি যাত্রা। যাত্রার রুট জেনে নিয়েছিলাম ইন্টারনেট ঘেঁটে। চট্টগ্রাম থেকে জাহাজে হাতিয়া। হাতিয়া একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে নিঝুম দ্বীপ যাবার ঘাট, সেখান থেকে নৌকায় পার হলেই নিঝুম দ্বীপ।

জাহাজের টিকেট কেটে চারজনের জন্য একটা কেবিন বুকিং করা হলো। যথাসময়ে জাহাজে উঠে কেবিনের চেহারা দেখে চোখ ছানাবড়া। এই জাহাজের বয়স আমার বয়সের দ্বিগুন বই কম নয়। তবু তাতেই সই। এডভেঞ্চার করতে গেলে কিছুটা ছাড় দিতেই হয়। জাহাজ চলতে শুরু করলো। ছয় ঘন্টার যাত্রা। কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট জেটি থেকে জাহাজ ছেড়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পৌঁছাতেই ঘন্টা পার হয়ে গেল। শম্ভুকের চেয়ে অবশ্যই গতি বেশী, এমনকি কচ্ছপের চেয়ে। খরগোশের সাথে তুলনা করা ঠিক হবে না। কেবিনে চা দিয়ে গেল জাহাজের সেলুন থেকে। ফার্স্ট ক্লাসের সার্ভিস। দুপুরে খিচুড়ির অর্ডার নিয়ে গেল। ধুমিয়ে চা আর ধুম চলতে থাকলো জাহাজের সাথে সাথে। একসময় আবিষ্কার করলাম দিগন্ত মুছে গেছে, বহির্নোঙ্গরে ভিড় করে থাকা জাহাজের ছায়াও অদৃশ্য। এখন চারপাশে শুধুই আদিগন্ত সমুদ্র অগাধ জলরাশি। পান্নাসবুজ জলে চোখ জুড়িয়ে যায়।

মুগ্ধতার রেশ নিয়ে দুপুরের ওজনদার ঝাল খিচুড়ি চালান করে দেয়া গেল। রেলিং এ ঝুঁকে সমুদ্রের জলের তরতর পিছিয়ে পড়া দেখছিলাম। তারপর বেলাটা পশ্চিমে হলে পড়ার কালে ডেক যাত্রীদের মধ্যে দূরদর্শী কেউ চিৎকার দিল, ওই তো হাতিয়ার চর দেখা যায়। আমি তাকিয়ে ঝাপসা দিগন্ত বাদে কিছুই দেখলাম না। তবু ‘এসে গেছি’, ভাবনাটাই আনন্দের। কিছুক্ষণ পর যখন আবারো রব উঠলো ঐ তো দেখা যায়। তখন আমি আবারো তাকিয়ে দেখলাম কিছু নেই। বিরক্ত হয়ে ভাবলাম এ কেমন বেকুবি রে বাপ! কিছুই দেখি না অথচ তারা বলছে, দেখা যায়! তখন একজন বললো- এদিকে না, ওই দিকে। তাকিয়ে দেখি, আরে তাই তো? মাত্র আধমাইল দূরেই তীর দেখা যায়।আমাদের কেবিনটা সমুদ্রের দিকে, তার উল্টা দিকে হলো তীর।

জাহাজ তীরের কাছে যাবে না। এখানে ভাঙনের খেলা চিরকাল। এখন যেখানে সমুদ্র, যেখানে আমাদের জাহাজ, তারো কয়েক মাইল গভীরে ছিল হাতিয়া জেলার বিস্তৃতি। ভাঙতে ভাঙতে চলে গেছে সব। জাহাজের কূলে ভেড়ার উপায় নেই। জাহাজ থামলো তীর থেকে কয়েকশো গজ দূরে। সেখানে যাত্রী নামাতে ছুটে আসছে কয়েকটা নৌকা ও ট্রলার। এরা ২০ টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের তীরে তুলে দেবে। আমরা একটা নৌকায় উঠলাম। পাঁচ মিনিটেই তীরে পৌঁছে গেলাম। কাদামাটি এড়িয়ে তীরে উঠতে পেরে আনন্দিত। এই জায়গার নাম নলছিরি ঘাট।

তীরে নেমে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ‘ওসখালি বাজার’। হাতিয়ার প্রধান কেন্দ্র। আমাদের হোটেলও সেই বাজারের কাছেই। তীরে বেশ কিছু মোটর সাইকেল দাড়ানো। এই দ্বীপে মোটর সাইকেল হলো প্রাইভেট বাহন। কিছু তিন চাকা টেক্সি আছে। আর আছে লম্বা যাত্রীবাহী জীপ, যেটাকে চট্টগ্রামে আমরা বলি ‘চাঁদের গাড়ি’। আমরা চারজন একটা ভটভট করা টেক্সি নিলাম আড়াইশো টাকা দিয়ে। আমাদের হোটেলের নাম রেড সী। জেনেছিলাম এটাই হাতিয়ার একমাত্র ভদ্র হোটেল। আরো কয়েকটা থাকলেও তেমন সুবিধার না। যেতে যেতে দেখলাম বাংলাদেশের আর দশটা মফস্বল এলাকার মতোই চেহারা। সাইনবোর্ড না থাকলে বলা মুশকিল এটা কোন অঞ্চল। সমগ্র বাংলাদেশেই দোকানপাঠ ঘরবাড়ি জমি, খালবিল, ধানক্ষেত, তরিতরকারীর চেহারা এক রকম। এমনকি আমি পশ্চিমবঙ্গে যখন যাই বেনাপোল থেকে কোলকাতা যাবার পথেও যেরকম দৃশ্য দেখেছি তাতে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ওটা আলাদা কোন দেশ। সেই একই মানুষ, একই দারিদ্রের ছাপ সবখানেই।

নলছিরি ঘাট থেকে ওসখালি বাজারের দূরত্ব প্রায় দশ কিলোমিটার। কিন্তু যানজট না থাকাতে আধঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম হোটেলে। এই দ্বীপের এটাই প্রধান সড়ক। দ্বীপের এই মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত চলে গেছে এক টানে।

নবনির্মিত হোটেলটা খুবই ছোট। মাত্র পাঁচখানা ঘর। সবগুলোই একতলায়। দোতলার কাজ চলছে দেখলাম। দুখানা ডাবল বেডের ঘর আমাদের দেয়া হলো। ঘরগুলো বেশ পছন্দ হলো। কোন ঘেরাও নেই হোটেলে। রাস্তার পাশে খোলামেলা জায়গায় তোলা। চারপাশে গ্রাম। এরকম জায়গায় এতটা ভালো ঘর আশা করিনি। ঘরের ফিটিংস বাথরুম এলসিডি সবই আন্তর্জাতিক মানের দাবী রাখে। আমরা ছাড়া তেমন কেউ নেই হোটেলে। ডেস্কের ছেলেটার সাথেই ফোনে বুকিং এর সময় কথা হয়েছিল। বেশ চটপটে স্মার্ট ছেলে। সে একাই পুরো হোটেলের কাজ চালাচ্ছে। এখানে খাবার ব্যবস্থা নেই। রাতে আমাদেরকে বাইরের একটা হোটেল থেকে এনে ঘরোয়া পরিবেশে খাওয়ালো। দেশী মুর্গী, ভর্তা, ডিম, ডাল, সালাদ দিয়ে আয়েশ করে খাওয়া গেল। আসার আগে শুনেছিলাম এখানকার খাওয়াদাওয়া খুবই বাজে। ভাগ্যক্রমে এই ছেলের বদৌলতে ভালো জায়গার খোঁজ পেলাম। পরদিন আমরা নিঝুম দ্বীপ রওনা দেবো। ভোরে আমাদের জন্য একটা তিন চাকার ভটভট টেক্সি ঠিক করা হলো। সে আমাদেরকে ঘাটে নামিয়ে অপেক্ষা করবে। আমরা ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার সময় ওকে নিয়েই ফিরতে পারবো। বেশ ভালো ব্যবস্থা।

পরদিন সকালে যথাসময়ে টেক্সি এলে আমরা রওনা দিলাম। পথে একটা হোটেলে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম পরোটা মামলেট ডাল ভাজি চা ইত্যাদি দিয়ে। আটটা বেজে গেছে ততক্ষণে। আমাদের যেতে হবে মোক্তারিয়া ঘাট। দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। প্রথম ২৪ কিলোমিটারে জাহাজমারা নামক জায়গায় পৌঁছাবো মোটামুটি ভালো রাস্তা। তারপর বাকী ৮ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙ্গা আছে। শেষ দুই কিলোমিটার একদম ইট বিছানো খরখরে রাস্তা। মেরুদণ্ডের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তবু উপায় নেই। আমরা মোটামুটি দশটার দিকে পৌঁছে গেলাম ঘাটে। গিয়ে দেখি অনেক মানুষ অপেক্ষা করছে। নৌকা মাত্র একটা। সেখানে সবার জায়গা হবে না। একটা নৌকা যায়, আরেকটা আসে। এভাবেই চলে। ওঠানামার অবস্থাটা জঘন্য। সার্কাসের লোক না হলে এই যাত্রা কঠিন। পুরো এক্রোবেটিক কায়দা দিয়ে নৌকায় আরোহন করলাম আমরা। ঠাসাঠাসি গাদাগাদি অবস্থা। লোক তুলছে তো তুলছেই। শেষে ডুবে না যায় নৌকা মাঝ দরিয়ায়। ওই ওপারে দেখা যাচ্ছে আমাদের নিঝুম দ্বীপ। নদীটা প্রায় এক মাইল প্রস্থ। এটা সমুদ্রের একটা অংশ বলা যায়। বঙ্গোপসাগরের একটা চ্যানেল এফোড় ওফোড় করে বেরিয়ে গেছে।

যাই হোক ইঞ্জিন নৌকা দশ মিনিটে পার হয়ে গেল ওই পারে। ওদিকেও নামার সময় এক্রোবেটিক কায়দা। ঘাট বলতে যা আছে সেটা কয়েকটা কাঠের তক্তা। ওটা পেরিয়ে তীরে উঠলাম আমরা। এই তো সেই কাংখিত নিঝুম দ্বীপ। এসে তো পড়লাম। এখন কী? কোনদিকে যাবো, কিছুই জানি না। আমাদের সাথে যারা এসেছে তাদের প্রায় সবাই পর্যটক বলা যায়, কিছু স্থানীয় লোক আছে। এই জায়গাটা নির্জন। কোন স্থাপনা নেই। কিছু মোটর সাইকেল দাড়ানো। আমরা দুটো মোটর সাইকেল ভাড়া করলাম অন্যদের দেখাদেখি। ওরা বলছে নামার বাজার নামে একটা জায়গায় নিয়ে যাবে, সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য। আসলে এটাই তো ছিল গন্তব্য। কিন্তু এখানে তো হরিন বা বন কোনটাই দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং আবারো পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কতদূর যেতে হবে আমরা জানি না। মোটরসাইকেল ড্রাইভার জানে। প্রায় আট নয় কিলোমিটার পেরিয়ে একটা বাজারমতো জায়গায় এসে আমাদের নামিয়ে দিল মোটরসাইকেল।

এবার? চারজন মুখ চাওয়াচাউয়ি করলাম। এটা তো দেখি একটা জলজ্যান্ত গ্রাম। এখানে বন কই, হরিন কই? কোথায় গেলে হরিনের ছোটছুটি দেখতে পাবো। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, এখানে হরিন নেই, বনও নেই। এটা নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন। হরিন দেখতে হলে এখান থেকে নৌকা ভাড়া করে আরেকটা দ্বীপে যেতে হবে। খুঁজে এক মাঝির দেখা মিললো, সে বললো চৌধুরী খাল নামের একটা জায়গায় যাবার জন্য তাকে ২০০০ টাকা দিতে হবে। নৌকায় যেতে আধঘন্টাও লাগে না। মাইল দুয়েকের মতো রাস্তা। এত অল্প দূরত্বে এত টাকা! পরে দরাদরি করে সে এক হাজারে রাজী হলো, কিন্তু সে আমাদেরকে আরেকটা গ্রুপের সাথে যোগ করে নিয়ে যাবে। ওই গ্রুপটা এখন যাবে না। দুটোর পর যাবে। এখন বাজে বারোটা মাত্র। আরো দুঘন্টা বাকী।

দুপুরের খাবারের জন্য একটা হোটেলে ঢুকলাম। ঝুপড়ি কিছু রেস্টুরেন্ট আছে পাশাপাশি। সবগুলোতেই নানান পদের মাছ রান্না করে সাজানো আছে রেস্টুরেন্টের প্রবেশপথেই। আমরা পছন্দমতো মাছ নিয়ে কোনমতে খাওয়া সারলাম। রান্নাটা জঘন্য। তবু যেখানে যে ব্যবস্থা সেটা মেনে নেয়াই রীতি।

দুটোর পরপর আমরা ঘাটের দিকে হাঁটা দিলাম। কিছু পর একদল তরুণও আমাদের পেছন পেছন এলো। ওরা একটা নৌকায় উঠে বসছে। আমরা ওদের বললাম, এই নৌকাতে আমরাও যাবার কথা। শুনে তেড়িয়ে হয়ে উঠলো তাদের একজন। বললো কস্মিনকালেও না। আমরা বললাম, মাঝি তো তাই বললো। ওরা মাঝিকে ডেকে আচ্ছা করে ধমকালো। বললো ওই নৌকা ওরা একাই নেবে। আর কাউকে তুলবে না। ছেলেগুলো ঢাকা থেকে এসেছে। কয়েকটা ছেলে চরম বেয়াদব। বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলেপেলে মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এত বড় নৌকা, আমরা সাথে গেলে সমস্যা কি। ওরা বললো, নৌকায় ওরা মাস্তি করবে, খারাপ কাজ করবে, আমরা থাকলে সেটা করতে পারবে না। মনে মনে শুয়োরের বাচ্চা গালিটা এলেও দমিয়ে রাখলাম। মাঝিকে বললাম, তুমি সমাধান করো, তোমার নৌকা। এখানে আর কোন নৌকাও নেই যে ঠিক করবো। আগে জানলে অন্য নৌকা ভাড়া করে নিতাম।

তখন মাঝি একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে দিল। ওর ছোট আরেকটা নৌকা আছে, সেটার ইঞ্জিন নেই। তাই এই নৌকার সাথে বেঁধে দেবে দড়ি দিয়ে। বড় নৌকার টানে এটাও চলবে। আমি প্রথমে রাজী ছিলাম না ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হতে। কিন্তু হাতে সময় কম। এত দূর এসে হরিণের বন দেখে না গেলে কেমনে কী? বাকীরা বললো এই ব্যবস্থাতেও যেতে রাজী ওরা। কি আর করা। চললাম বড় নৌকার পেছনে দড়ি বাঁধা ভাসমান ছাগলের মতো। তবে নৌকাতে ইঞ্জিন না থাকাতে ভালোই লাগছে। বড় নৌকাতেই ভটভট। এটা নিঃশব্দে চলছে। কিছুদূর গিয়ে খাল পেরিয়ে বড় নদীতে পড়লো নৌকা। এবার আর শান্তি নাই। এখানে বড় ঢেউ। বড় নৌকার পেছনে খেলনার মতো লাফাচ্ছে আমাদের নৌকাটা। মোড় ঘুরতে গেলে উল্টে যাবার সম্ভাবনা। সামনে গিয়ে আরেকটা খাল আছে সেটাই চৌধুরীর খাল। আর পাঁচ মিনিটের পথ। তখনি বড় নৌকার এক তরুণ হুংকার দিল মাঝিকে- ঐ বেটা কই যাস? মাঝি বললো- চৌধুরী খাল। তরুণ বললো- আমরা যাবো কবিরাজের চর। নদীর ওই পারে। মাঝি বললো, আগে চৌধুরী খালে যাই। পেছনের নৌকার ওরা নামবে ওখানে। তারপর কবিরাজের চর যাবো।

কিন্তু ওরা কিছুতে রাজী হলো না এখন চৌধুরী খালে ঢুকতে। ওরা আগে কবিরাজের চর ঘুরে আসবে, তারপর এখানে আসবে হরিন দেখতে। এদিকে আমাদের হাতে সময় কম। ফিরতে দেরী হলো হাতিয়া যাবার নৌকা পাবো না। এখনি সাড়ে তিনটা বেজে গেছে। কবিরাজের চর গেলে আর ফেরা হবে না। নিঝুম দ্বীপে থাকার কোন জায়গা অবশিষ্ট নেই। এখানে মাত্র দুটো ছোট হোটেল আছে। আর কিছু আছে লোকের মেসবাড়ি। কোনটাই খালি নেই আজ।

শেষমেষ বড় নৌকা থেকে আমাদের দড়ির বাঁধন খুলে নিয়ে এক মাঝি আমাদের নৌকাকে বৈঠা মেরে খালের মধ্যে নিয়ে গেল। কিছুদূর গিয়ে নেমে যেতে হলো আমাদের। ভাটার সময় আর ভেতরে যাওয়া যায় না। এবার তীরে উঠে বাকীটা পথ হেটেই যেতে হবে। তীরে উঠে দারুণ মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অতি চমৎকার একটা জায়গা। এটাকেই বলা যায় আসল নিঝুম দ্বীপ। এতক্ষণ যেসব এলাকা পেরিয়ে এলাম, তা ছিল নিতান্তই গ্রাম। ওদিকে দেখার কিছুই নাই। এই দুর্গম জায়গাটাই আসল দেখার জায়গা। এটা দেখার জন্যই এতদূরের যাত্রা। কিন্তু ভেবে মন খারাপ হয়ে গেল যে এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আমাদের হাতে মাত্র দেড় ঘন্টা আছে। এই দেড় ঘন্টার আনন্দের জন্য তিনটা দিন বরাদ্দ করতে হলো আমাদের!

ভেবে কাজ নেই। ক্যামেরায় ছোটখাট ক্লিক করতে করতে আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। তীরে উঠে প্রথমে বিশাল একটা প্রান্তর। সবুজ ঘাসে ছাওয়া। এই ঘাস খেতেই সন্ধ্যার আগে আগে হরিন বেরিয়ে আসে জঙ্গল থেকে। কিন্তু এখন হরিন দেখতে হলে জঙ্গলের গভীরে ঢুকতে হবে। মাঝি বললো সে আমাদের সাথে থাকবে। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বললাম, খুব ভালো প্রস্তাব।

আমরা জঙ্গলে ঢুকে পড়লাম। রূপ দেখে তো পাগল হয়ে যাবার দশা। এরকম জনমানবহীন অরণ্য আগে কখনো দেখিনি। প্রথমে হালকা গাছপালা। তারপর যতই গভীরে যেতে থাকি গাছপালার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। পায়ের নীচে মাথা উঁচু করে থাকা শ্বাসমূল। একটু পা ফসকালেই শ্বাসমূলের খোঁচায় আহত হবার সম্ভাবনা। সাবধানে পা চালাতে হচ্ছে। প্রায় আধঘন্টা হাঁটার পর যেখানে এসে পৌঁছালাম সেখান থেকে পেছনে তাকিয়ে কিছুই দেখা যায় না। চারপাশে একই রকমের গাছ, একই জঙ্গল। উত্তরদক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম কিছুই বোঝা যায় না। কোথাও কেউ নেই। কেমন একটা গা ছমছম নির্জনতা। আমরা পাঁচজন ছাড়া যেন কেউ নেই এমন এক পৃথিবীতে এসে পৌঁছে গেছি। আরো কিছুদূর যাবার পর জঙ্গল এতই ঘন হয়ে গেছে যে হাঁটাই যাচ্ছে না গা বাঁচিয়ে।

জঙ্গল সরিয়ে সরিয়ে আমরা এগোচ্ছি। মাঝি লোকটা আগে আগে। সে বলছে আরো গভীরে গেলে একটা জলাশয় আছে সেখানে হরিনেরা জল খেতে আসে। তার আগে কিছুদূর যাবার পর আমরা হঠাৎ করে একটা পোড়ো ভিটায় এসে পড়লাম। এখানে বিশাল একটা গাছ শিকড় ছড়িয়ে হঠাৎ যেন মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেছে বিদঘুটে ভঙ্গীতে। দেখে শুনে জায়গাটাকে ডাকাতের আস্তানা বলে মনে হলো। কেমন অদ্ভুত একটা আলো এখানে। সূর্য নেমে যাচ্ছে দ্রুত। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে গেছে মনটা। কী জানি কোন ঝামেলা আছে কিনা। সবার চেহারায় খানিক অন্ধকার। এই জঙ্গল থেকে পথ খুঁজে বের হওয়া দুষ্কর। মাইলের পর মাইল জঙ্গল। এই দ্বীপের সাথে লোকালয়ের কোন সংযোগ নেই সমুদ্রপথ ছাড়া। সেই পথটা খুঁজে বের করা অসম্ভব গাইড ছাড়া। মাঝি লোকটার মতলব কিছু বুঝতেছি না।

আমাদের একজন ফিসফিস করে বললো, সে কোন ডাকাত দলের এজেন্ট না তো? আমাদের ভুলিয়ে গভীর জঙ্গলে কোন ডাকাতের আস্তানার কাছে নিয়ে যাচ্ছে। এরকম অনেক রকম সন্দেহ দেখা দিল সঙ্গীদের মধ্যে। মাঝিকে বললাম, ‘আর দেখার কিছু নাই, চলো এবার ফিরে যাই’, সে বললো- ‘পেছন দিকে ফেরা যাবে না। সামনেই কোথাও পথ বের করতে হবে’। ওদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে বন। কোথাও হরিনের চিহ্নমাত্র নেই। হাঁটতে হাঁটতে গলা শুকিয়ে গেছে। পানির বোতল অনেক আগেই খালি। এই দ্বীপে কোন খাবার পানি নেই। দেড় ঘন্টা হেটে ফেলেছি ইতিমধ্যে। আর কতদূর। এখন যে জঙ্গলে এসে পৌছেছি সেটা আরো ভৌতিক। নীচে শ্বাসমূলগুলো আরো ঘন। পা ফেলতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে কোন বিপদ ঘটলে ছুটে পালানো অসম্ভব। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে শ্বাসমূলে হৃদয় এফোড় ওফোড় হয়ে যাবে।

কেমন একটা অসহায়ত্ব এসে দাড়ালো। ছেলেটাকে বিশ্বাস না করেও উপায় নেই। সে ছাড়া এই জঙ্গল থেকে বের হওয়া অসম্ভব। কিন্তু এরকম একজন অনিশ্চিত অপরিচিত লোকের পেছনে চলতে গিয়ে কেমন একটা গভীর অস্বস্তি খচখচ করছে। তবু যতটা দ্রুত পা চালাচ্ছি। প্রায় অন্ধকার একটা জঙ্গল ছেড়ে একটু আলোর সন্ধানে। কিন্তু আলো কই। যতই যাচ্ছি জঙ্গল আরো গভীর। মাঝি ছেলেটা বললো, পাঁচ মিনিট পর সামনে একটা খাল পড়বে, সেই খালের কিনার ধরে আমরা এগিয়ে গেলে একসময় বের হবার পথ পেয়ে যাবো। দ্রুত হাটছি। মাটি স্যাতস্যাতে এখানটায়। রোদ পড়ে না বলে এই অবস্থা। পা পিছলে যাচ্ছে বারবার। নীচের মাটিতে হরিনের অসংখ্য পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। বোঝা যায় এটা হরিনদের যাতায়াতের পথ। কিন্তু ওরা এখন আরো গভীরে।

আমরা কত মাইল হেঁটেছি জানি না। পায়ের ব্যথায় জানান দিচ্ছে পাঁচ কিলোমিটারের কম হবে না। খোলা জায়গায় এই পথ হাঁটা এতটা কষ্টের না। কিন্তু এখানে দুর্গম জঙ্গলে প্রতিটা পদক্ষেপেই অশান্তি। এতক্ষণের আনন্দ উবে গিয়ে আতংক ভর করতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে। পা চলছে না। টেনে টেনে চলছে সবাই। কিন্তু সামনের লোকটা দিব্যি বিড়ি ধরিয়ে ফূর্তির সাথে হেঁটে যাচ্ছে। তার পাঁচ মিনিট পার হয়ে কবেই পনেরো হয়ে গেছে। সেই খাল আর আসে না। পথও ফুরায় না। আমি উপরের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আর কিছুক্ষণ পর সূর্যটাও থাকবে না, তখন এই বনে সারারাত পচলেও বের হওয়া যাবে না। এখন জঙ্গলের ফাঁকফোকর দিয়ে গাছের শীর্ষে পড়া সূর্যের আলোটা দেখে বোঝা যাচ্ছে ওটা কোন দিকে অস্ত যাবে। আমাদের গন্তব্য সেদিকেই হওয়া উচিত। অথচ সামনের লোকটা কোন মতলবে আমাদের বিপরীত দিকে হাঁটিয়ে মারছে।

আমি হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাকীদের পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলাম ওই লোকটার কাছাকাছি। ধমক দিয়ে বললাম, ‘ঐ তুমি বাম দিকে ঘোরো, সোজা গেলে তো খালি গভীরেই যাবো, তোমারে বলছি এখান থেকে বের হবার পথে যাবো, তুমি উল্টা দিকে যাচ্ছো কেন? এখানে কোথাও তো রাস্তা নাই। তুমি বায়ে ঘুরে সোজা বের হবার পথের দিকে যাও, যেদিকে সূর্য ডুবছে, যেখানে আমাদের নৌকা আছে। সূর্য ডোবার আগেই বের হতে হবে এখান থেকে বুঝছো?’। সে আরো কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু আমি কড়া চোখে বললাম, ‘যেদিকে বলছি বের হও সেদিকে’। এবার সে ঘুরলো বাঁয়ের দিকে।

আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে আমরা ঘন জঙ্গল ছেড়ে একটু পাতলা জঙ্গলের দিকে এলাম। এদিকে পথ অনেক সোজা। এবার জোরে পা চালাতে পারলাম আমরা। আর মিনিট পনেরো পরেই আমরা দূরে আলো দেখতে পেলাম সমুদ্রের দিকে। হ্যাঁ ওদিকেই আমাদের গন্তব্য। একদম শেষ বেলার দিকে আমরা পথ খুঁজে পেলাম। জঙ্গল থেকে বের হয়ে দেখি সূর্য ডুবতে আরো কিছুক্ষণ বাকী আছে। জঙ্গলে মনে হচ্ছিল সূর্য বুঝি ডুবেই গেছে। সামনে বিশাল খোলা প্রান্তর। আধমাইল প্রস্থ হবে ময়দানটা। সেটি পেরিয়ে আমরা নৌকার কাছাকাছি এসে গেলাম। সেখানে পৌঁছে দেখি আমাদের ফেলে যাওয়া সেই ঢাকাইয়া বদগুলা নৌকা থেকে নেমে আসছে। ওরা এখানে সন্ধ্যে কাটাবে হরিণের খোঁজে। ওরা জানতে চাইলো, হরিণ দেখেছি কিনা। বললাম, অনেক হরিণ জঙ্গলে খেলা করছে, যাও দেখে আসোগে। ওরা জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেলো বীরদর্পে।

খালে যেখানে আমাদের নৌকা ছিল তার পাশেই বড় নৌকাটা। যেটায় আমাদের উঠতে দেয়া হয়নি। ফেরার সময় আমরা ঠিক করলাম বড় নৌকাটা দখলে নিতে হবে। মাঝিকে বললাম, ছোট নৌকায় ইঞ্জিন নেই। ওটা নিয়ে রওনা দিলে আমাদের আজকে আর হাতিয়া পৌছাতে হবে না। এখান থেকে নিঝুম দ্বীপের ‘নামার বাজার’ ঘাটে পৌছাতেই রাত হয়ে যাবে। সুতরাং যে করেই হোক বড় নৌকাটা দিয়ে আমাদের পৌঁছে দিতে হবে। সে প্রথমে রাজী হয় না। কিন্তু আমাদের চাপাচাপিতে সে বললো ঠিক আছে বড়টা নিয়ে নিঝুম দ্বীপের খাল অবধি যাবে আমাদের ছোট নৌকাটা নিয়ে। তারপর আমরা বৈঠা মেরে বাকী পথ চলে যাবো। অন্তত আধঘন্টা সময় বাঁচবে। বড় নৌকায় অন্য মাঝি ছিল। যেহেতু দুই নৌকার মালিক একই তাকে রাজী করিয়ে বড় নৌকাটা চালু করে আবারো আমাদের ফিরতি যাত্রা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা সমুদ্রের অংশটা পাড়ি দিয়ে খালে ঢুকে পড়লাম। তারপর আমাদের ছেড়ে দিয়ে বড়টা ফিরে গেল। আমরা আমাদের মাঝিকে নিয়ে বৈঠা মেরে এগিয়ে চললাম। খুব ধীর গতি। সন্ধ্যের আধো অন্ধকারে জঙ্গলের মাথার উপর ভেসে থাকা দশমীর চাঁদটা অদ্ভুত রঙ ছড়াচ্ছিল। ইঞ্জিন নৌকার শব্দ যন্ত্রণা নেই। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।

নির্জন একটা খাল বেয়ে আমরা ফিরতি গন্তব্যের দিকে যাবার সময় মাঝির সাথে গল্প শুরু করলাম। কিছুক্ষণ আগে এই মানুষটাকে জঙ্গলের মধ্যে মনে হচ্ছিল সাক্ষাত ডাকাত, এখন তাকে মনে হচ্ছে রূপ নারানের কূলে জেগে ওঠা এক দেবতা। সেই দেবতা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। সেই সাথে তার সাথে গল্প হচ্ছে জল জীবনের। গল্পের একটা অংশ আমাদের স্তব্ধ করে দিল। সেই অংশ বলতে গেলে ছোটখাট একটা রোমাঞ্চোপন্যাস হয়ে যাবে। সেটা অন্য সময় বলা যাবে। কিন্তু একই মানুষের উপর আমাদের বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের পার্থক্য দেখে বোঝা গেল দুঃসময়ে মানুষ কিভাবে চরম আস্থাহীনতায় ভুগতে পারে।

আর বেশীক্ষণ লাগলো না। কিছু পরেই আমরা নৌকা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাজারে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখান থেকে চা নাস্তা সেরে দুটো মোটর সাইকেলে চড়ে ফিরতি গন্তব্যে হাতিয়া ফেরার নৌকার ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নিঝুম দ্বীপের দুটো ঘাট দুই প্রান্তে। মোটর সাইকেলে আধঘন্টার মতো লাগলো খেয়াঘাটে পৌঁছাতে।

আসলে ঘাট বলতে কিছু নেই সেখানে। কাদাময় চর একটা। সেই ঘাটে গিয়ে দেখি অন্ধকারে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে যাত্রী উঠছে সরু তক্তার ব্রিজ দিয়ে। আমরা এগিয়ে উঠতে গেলাম, দেখলাম প্রবল ধাক্কাধাক্কি চলছে। কিছু লোক মোটর সাইকেল তুলছে। তারা হৈ হৈ করে বলছে এটা তাদের নৌকা আর কাউকে উঠতে দেবে না।

এদিকে আমাদের না উঠলে চলবে না। খানিক পর নৌকা থাকবে না এই ঘাটে। তখন থাকার কোন জায়গা নেই এই অচেনা জায়গায়। শেষমেষ আমাদের উঠতেই দিল না ওরা। রিজার্ভ নৌকা ওটা। বলা হলো আরেকটা নৌকা আসছে ওপার থেকে সেটা এলে আমরা উঠবো।

আবার ফিরে এসে তীরে অপেক্ষা। অন্ধকারের মধ্যে মাথার উপরে জ্বলছে রুপোলো চাঁদ। কিন্তু সেই চাঁদের সৌন্দর্য আর মৃদুমন্দ বাতাস আমাদের টানছে না। নদী পার হবার টেনশানে সবার মেজাজ খারাপ। এই নৌকা ছেড়ে যাবার পর আরেকটা নৌকা এলো। ওটাই শেষ নৌকা ওই পারে যাবার।

ওটা ভিড়লে দেখা গেল ওটাতেও দখলবাজি, হৈ চৈ, বিশ্রী অবস্থা। কেউ কাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয় এই অবস্থা। ওই দলটা আবারো মোটর সাইকেল তুলতে শুরু করেছে। অনেক লোক তাদের। তারা নাকি কোন রাজনৈতিক দলের পাণ্ডা। এদিকে আমাদের যেতেই হবে।

আমাদের সাথে আরো কিছু লোক আছে স্থানীয়। তারাও হৈ চৈ শুরু করলো। এই নৌকায় না গেলে কারোরই চলবে না। ক্যাডারদের চেয়ারম্যান হুমকির বিপরীতে্ আমাদের যাত্রীদলের একজন স্থানীয় এমপিকে ফোন করার হুমকি দিল। এই হুমকিতে বোধহয় কাজ হলো, ক্যাডারকুল নরম হলো, উঠতে দিল আমাদের। তবে উঠতে হল সেই এক্রোবেটিক কায়দায়। স্যাণ্ডেল জুতো সব ভিজিয়ে পানি মাড়িয়ে ঝুলাঝুলি করে উঠতে হলো নৌকায়। উঠে দেখি ওখানে মোটরসাইকেল, ভেড়া, হাঁস, মানুষ সব ধাক্কাধাক্কি করছে। মানুষ আর মালের মধ্যে কোন তফাত নাই। তবু উঠতে পেরেছি এই ঢের। তারপর অন্ধকারের মধ্যে নৌকা তরতর এগিয়ে চললো। দশ মিনিটের পথ। ততক্ষণে রাত আটটা বেজে গেছে।

ওই পারে পৌঁছে আমাদের টেক্সি খুঁজে বের করলাম। সকাল থেকে রিজার্ভ করে এনেছিলাম বলে সে সারাদিন ঘাটে বসে ছিল আমাদের জন্য। যাক তাকে পেয়ে স্বস্তি। এবার আরো দুই ঘন্টার ফিরতি যাত্রা। বাকী আছে মাত্র ৩২ কিলোমিটার। রাত দশটার মধ্যে পৌঁছাতে পারলেই হয়। অবশেষে হোটেলে পৌঁছানো গেল রাত দশটার মধ্যেই।

শেষ কথা – জায়গাটা সত্যিই অতীব সৌন্দর্যময়। কিন্তু যাতায়াতের অব্যবস্থাপনা এবং বিশৃংখলাটা চুড়ান্ত খারাপ হবার কারণেই এই তিক্ত অভিজ্ঞতা। যদি কোন কতৃপক্ষ যাতায়াত ব্যবস্থার দায়িত্বটা নিয়ে পর্যটন বান্ধব করে তাহলে নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণটায় শুধু আনন্দ স্মৃতিই যুক্ত হবে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ dipdwipislandnijhumstorytravel