গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ আমরা ৭ বন্ধু মিলে ঘুরে আসি হিমালয় কন্যা নেপাল থেকে। নেপাল যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ট্যুর থেকে ফিরেই ‘নেপাল ভ্রমণ’ বিষয়ে বিস্তারিত একটি বর্ণনা দিবো, যাতে ভবিষ্যতে যারা যাবেন তাদের একটু হলেও উপকারে আসে। উল্লেখ্য, আমি কোন ট্রাভেল এজেন্ট এর মাধ্যমে যায় নি। সম্পূর্ণভাবে ToB Helpline, Google, Booking.com এবং TripAdvisor এর সাহায্য নিয়ে সবকিছু ব্যবস্থা করেছি।
আমার হিন্দী ভাষা জানা থাকায় নেপালে গিয়ে খুবই সুবিধা হয়েছে কারণ তারা প্রায় সকলেই হিন্দী বুঝেন। এজন্য সেখানের স্থানীয়দের সাথে আমি খুব সহজেই এবং সখ্যতার সাথে আলাপচারিতা করেছি। তাদের সাথে আলাপ করে যা বুঝলাম, নেপালে ভ্রমণ সিজন শুরু হয় অক্টোবর থেকে এবং এটি ফেব্রুয়ারী/মার্চ পর্যন্ত চলে। কিন্তু এ সময়ে প্রচুর ভীড় থাকে নেপালে এবং নেপাল অনেকটা ট্যুরিস্ট নির্ভর দেশ হওয়ায় এ সময়টাতে জিনিসপত্রের দামও বেশি থাকে। আমি এ বিষয়টা গুগল করে কিছুটা আগেই জেনেছি এবং সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ৩০ এ সময়টা শুনেছি অনেকটা আদর্শ সময়। কারণ এ সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে এবং অনেকটা অফসিজনই থাকে। তাই সবকিছু মোটামুটি কমে পাওয়া যায় এবং ভীড়ও কম থাকে। বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি ঘুরে আসার পর।
তাই, আমি সাজেস্ট করবো সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ৩০ এ সময়টাতে ঘুরে আসতে। আর একটি সাজেশন্স হচ্ছে, আপনারা যদি চাকুরীজীবি হন, তবে যাওয়ার প্লানটা করবেন শুক্রবার – বুধবার। তাহলে বৃহস্পতিবার অফিস ধরতে পারবেন এবং আপনাকে শুধু ৪ দিনের ছুটি নিতে হবে (রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ)।
নেপাল যাওয়ার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে (Biman Bangladesh Airlines)। এখানে কয়েকটি জিনিস/টিপস মনে রাখবেন –
নেপাল এ আমাদের জন্য রয়েছে অন-এরাইভাল ভিসা। মানে এয়ারপোর্টে নামলেই ভিসা দিয়ে দিবে। এখানে যে যে জিনিসগুলো মনে রাখা জরুরী –
নেপালে আমরা ১ রাত থেকেছি কাঠমুন্ডুর থামেল (Thamel) এলাকায়, ২ রাত থেকেছি পোখারার Sarankot এলাকায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ ফুট উপরে) এবং ২ রাত থেকেছি কাঠমুন্ডুর নাগরকোঠ (Nagarkot) এলাকায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০০ ফুট উপরে)। অনেকে সাজেস্ট করেন রুম আগে বুকিং না দিয়ে সেখানে ঘুরে ঘুরে বুকিং দিতে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আগে বুকিং দেওয়াই ভালো। থামেলের রাস্তাগুলো বাংলাদেশের পুরান ঢাকার মত। সেখানে লাগেজ হাতে করে ঘুরে ঘুরে হোটেল খুঁজা খুবই ঝামেলাদায়ক হবে বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া, এতে করে অনেক সময় নষ্ট হয়। ট্রাভেলে সময়ের মূল্য আছে।
থামেল এলাকায় ছিলাম Om Tara Guest House নামক হোটেল এ। বুকিং দিয়েছিলাম booking.com থেকে (https://booki.ng/2xkwZoS)। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা একটি এক্সিকিউটিভ রুম নিয়েছিলাম এবং ২টি ট্রিপল বেড রুম নিয়েছিলাম। সকালের খাবার ইনক্লুড ছিল না।
এক্সিকিউটিভ রুমে ২টি বড় বেড ছিল, আলাদা কিচেন রুম ছিল, ফ্রিজ ছিল, ড্রাইনিং টেবিল ছিল, সোফা ছিল, বাথটাব সহ বাথরুম এবং Well-decorated ছিল। আমরা রাতের খাবার এখানে নিজেরা রান্না করেছি 🙂
ট্রিপল বেড রুমে তিনটি বেড এবং সোফা ছিল উইথ এটাচড বাথরুম।
খরচঃ এক্সিকিউটিভ রুম ২৫ ডলার; ট্রিপল বেড রুম প্রতিটি ১৩.৫ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করলে ভালো। কনভার্সন করিয়ে রুপি দিলে আপনার লস হবে। আমাদের মোট বিল ছিল ৫২ ডলার। আমি ৫০ ডলার দিয়ে বাকি ২ ডলার রুপিতে দিয়ে দিয়েছি।
পোখারার শরনকোট এলাকায় ছিলাম Superview Lodge নামক হোটেলে। বুকিং দিয়েছিলাম booking.com থেকে (https://booki.ng/2wIGdJI)। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা ৪টি ডিলাক্স ডাবল রুম নিয়েছিলাম।
সবগুলো রুমেই ২টি সিঙ্গেল বেড ছিল, বারান্দা ছিল এবং বাথরুম ছিল। বেস্ট হচ্ছে এখানকার ভিউ। আপনি রুমে বসেই পুরো পোখারা শহর দেখতে পাবেন। 🙂
খরচঃ ডিলাক্স ডাবল রুম প্রতিটি ২৫ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন।
কাঠমুন্ডুর নাগরকোট এলাকায় ছিলাম Peaceful Cottage & Café du Mont নামক হোটেলে। বুকিং দিয়েছিলাম সরাসরি ওদের ফেসবুক ফ্যানপেজের মাধ্যমে। ওরা খুবই একটিভ। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা ১টি ৩৬০ ডিগ্রী রুম নিয়েছিলাম (৬জন থাকা যায় এবং সকালের ব্যুফে ব্রেকফাস্ট ইনক্লুডেড)। এই রুমটি হোটেলের সবচেয়ে উপরের তলায় এবং এর চারিদিকে জানালা। মানে আপনি পুরো নাগরকোটের ভিউ পাবেন এই রুমে বসে। এতে ২টি সিঙ্গেল বেড ছিল, ১টি ডাবল বেড ছিল এবং ১টি ডাবল ফ্লোরিং বেড ছিল। তাছাড়া সোফা ছিল এবং বাথরুম ছিল।
খরচঃ ৩৬০ ডিগ্রী রুম ১০০ ডলার। কিছুটা Bargain করতে হয়েছে। আমার কাছে প্রথমে চেয়েছিল ১৪০ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন।
নেপালে গিয়ে আমাদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছে কারণ আমরা হালাল খাবার খুজছিলাম সব জায়গায়। Thamel এলাকায় হালাল খাবার খেতে চাইলে চলে যান Al-Madina HALAL FOODS রেস্টুরেন্ট এ। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/maps/7NmY5dB2Fry)। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপ –
পোখারা এলাকায় হালাল খাবার খেতে চাইলে চলে যান “পোখারা হালাল ফুড” নামক রেস্টুরেন্ট এ। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/maps/xVNHdda4poz)। দোকানটি মার্কেটের ভিতরে। খুজতে সমস্যা হতে পারে। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপ –
টিপস (Tips)
নেপালে যাতায়াত খরচ একটু বেশি বলে আমার মনে হয়েছে। মনে রাখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সবসময়ই বেশি নেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই যাতায়াত বিষয়ে অবশ্যই দরদাম করবেন। আর ওদের ড্রাইভাররা খুব একটা ফ্রেন্ডলিও না। আপনি যাত্রাপথে কোথাও থামতে চাইলেই ওরা কেমন জানি করে।
এয়ারপোর্টে নেমে যদি আপনি দরদাম না করে আরামে চলে যেতে চান গন্তব্যে, তবে এয়ারপোর্টে প্রি-পেইড ট্যাক্সি সেন্টার আছে। ওদের ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। এয়ারপোর্ট থেকে থামেলে যেতে ওরা খরচ নিবে ৭০০ রুপি (২০-২৫ মিনিটের রাস্তা)। এয়ারপোর্ট গেটে দাড়ানো ট্যাক্সিওয়ালাদের সাথে কথা বলে লাভ নাই। এরা প্রি-পেইড ট্যাক্সিওয়ালাদের লোক। জিজ্ঞেস করলে ভাড়া চাইবে ১০০০ রুপি, যাতে করে আপনি ভিতরে গিয়ে প্রি-পেইড ট্যাক্সি নিতে পারেন। আমার সাজেশন্স হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসুন। ৫/৭ মিনিট হেটে এয়ারপোর্টের এক্সিট পয়েন্টে আসুন। অনেক খালি ট্যাক্সি পাবেন। দরদাম করলে ৪০০-৫০০ রুপিতে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। আমরা ৭ জনের জন্য ১টি মাইক্রো নিয়েছিলাম ১০০০ রুপি দিয়ে।
থামেল থেকে পোখারা যাওয়ার জন্য বেস্ট হচ্ছে বাস দিয়ে যাওয়া। থামেলে অনেক ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর দোকান পাবেন। সেখানে গিয়ে দরদাম করতে পারেন। আমরা এসি বাস পেয়েছিলাম জনপ্রতি ৬ ডলার দিয়ে। সাধারণত ভাড়া ৬-৮ ডলার হয়। যদি গাড়ি দিয়ে যেতে চান তবে খরচ পরবে ১৫০ ডলারের মত।
পোখারা থেকে সারাংকোট যেতে চাইলে আপনাকে ট্যাক্সি নিতে হবে। সাধারণত ট্যাক্সিগুলোকে আপডাউন ভাড়া দিতে হয়। পার ট্যাক্সি খরচ পরবে ১০ ডলারের মত।
পোখারায় ঘুরাঘুরির জন্য গাড়ী দরকার হয়। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এই ট্রাভেল এজেন্সির সাথে (http://bit.ly/2wAdVG9)। ওদের ফুল ডে প্যাকেজ ৪৫ ডলার এবং হাফ ডে প্যাকেজ ২৫ ডলার। আমরা হাফ ডে নিয়েছিলাম ২০ ডলার দিয়ে।
থামেল থেকে নাগরকোট যেতে চাইলে আপনাকে ট্যাক্সি নিতে হবে। সাধারণত ট্যাক্সিগুলোকে আপডাউন ভাড়া দিতে হয়। পার ট্যাক্সি খরচ পরবে ২০০০ রুপির মত।
আমরা যা যা করেছি তা নিচে তুলে দিচ্ছি। জরুরী নয় যে এভা্বেই করতে হবে। তবে আমরা যতটুকু সম্ভব অধিকাংশ জিনিস কভার করার চেষ্টা করেছি।
ইমিগ্রেশন শেষ করে থামেলে গিয়ে হোটেল উঠে ফ্রেশ হতে হতে বিকাল ৪টা বেজে যায়। আমরা বের হয়ে আল মদিনা হোটেলে চলে যাই এবং সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। খেতে খেতে মোটামুটি সন্ধ্যা হয়ে যায়। তারপর থামেল এলাকাটা ঘুরে দেখি। ঘুরার পাশাপাশি আপনাকে এখানে আরো যে ৩টি জিনিস করতে হবে তা হলো –
এগুলো কেনা হয়ে গেলে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পরার চেষ্টা করুন। কারণ পোখারার বাসগুলো সকাল ৭:৩০ এ একযোগে ছেড়ে যায় এবং বাস মিস করে ফেললে গাড়ী দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।
সকালে উঠে বাসে উঠে পড়ুন। এই জার্নিটা অনেক লম্বা। পোখারা পৌছাতে পৌছাতে ২:৩০ এর মত বেজে যাবে। পথে ২/৩ জায়গায় ব্রেক দিবে ব্রেক ফাস্ট ও লাঞ্চের জন্য। এসব জায়গায় ব্রেক ফাস্টে খরচ হবে জনপ্রতি ২০০ রুপির মত এবং লাঞ্চে খরচ হবে জনপ্রতি ৪০০-৫০০ রুপির মত। আমার সাজেশন্স হচ্ছে এখানে লাঞ্চ না করে টুকটাক নাস্তা খেয়ে ফেলুন।
আপনি যদি আমাদের মত সারাংকোটে থাকতে চান, তবে পোখারা বাসস্ট্যান্ড এ নেমে আপনার প্রথম কাজ হবে পরের দিনের সাইটসিংয়ের জন্য প্ল্যান করে ফেলা। যেই ভুলটা আমার করেছিলাম। কারণ উপরে চলে গেলে আপনার হোটেলের সাথে যোগাযোগ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। উপরে উল্লেখিত ট্রাভেল এজেন্সির দোকানে চলে যান, গুগল ম্যাপ লোকেশন এখানে (https://goo.gl/maps/Fzc3y9XqrwF2 এই দোকানের পাশের দোকান)। এখানে গিয়ে যা যা বুক দিবেনঃ
এগুলো বুক দেওয়া হয়ে গেলে, হেটে চলে যান Pokhara Halal Food নামক দোকানে। সেখানে গিয়ে লাঞ্চ সেরে রাতের খাবার পার্সেল করে নিয়ে নিন এবং গাড়ী যোগে সারাংকোট চলে যান। পোখারা থেকে সারাংকোটে হোটেলের ঐখানে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। চেষ্টা করবেন সূর্য ডোবার আগে যেতে। তাহলে পুরো পোখারা শহরের বিকেলের সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারবেন।
সারাংকোটে থাকার মূল কারণ হচ্ছে পোখারা ভিউ এবং রুমে বসে অন্নপূর্ণা রেঞ্জের ভিউ উপভোগ করা। আর বেস্ট পার্ট হচ্ছে আপনার হোটেল থেকে মূল ভিউ পয়েন্টে যেতে পায়ে হেটে সময় লাগবে ৫ মিনিট। এই ভিউ দেখলে ৫০০০ ফুট উপরে কেন এসে বসে আছেন, তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আর সারাংকোটে আপনার বারান্দার সামনে মেঘ ভেসে বেড়াবে এবং কপাল ভালো হলে দেখবেন যে মেঘ কালো হয়ে নিচে বৃষ্টিও হচ্ছে।
সারানকোট এ যদি আপনি নাও থাকেন তবুও এদিনে আপনাকে সারাংকোট এর ভিউ পয়েন্টে আসতেই হবে ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য। অন্নপূর্ণার উপর যখন সূর্যের লাল আভা পরে তখন আর কি বলবো। সারাংকোটে থাকার সুবিধা এটাই যে, এই ভিউ দেখতে হলে আপনি সূর্য উঠার ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠলেই হবে। আর যদি পোখারায় থাকেন, তবে আপনাকে উঠতে হবে রাত ৩-৪টায়। উঠে গাড়ী নিয়ে রওনা দিতে হবে। যাই হোক, ঘুম থেকে ভিউ পয়েন্টে চলে যান। অবশ্যই টিকেট সঙ্গে নিবেন। সূর্য উঠা দেখা শেষ হলে, হোটেলে চলে আসুন এবং একটু রেস্ট নিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলুন।
সকাল ১০টা নাগাদ প্যারাগ্লাইডিং এর গাড়ী আপনাকে নিতে আসবে। প্যারাগ্লাইডিং সারাংকোটেই হওয়ায় আপনার গন্তব্যে যেতে ১০ মিনিট লাগবে। এরপর প্যারাসুট নিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে পড়ুন। প্যারাগ্লাইডিং (Paragliding) শেষে পোখারার আশেপাশে টুকটাক কেনাকাটা সেরে নিতে পারেন এবং দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর HALF DAY Sightseeing এ বেরিয়ে পড়ুন। Full DAY নিতে চাইলে কেনাকাটা আর খাওয়া বাদ দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং শেষ করেই বেরিয়ে পড়ুন।
তবে আমার মতে, Half Day প্যাকেজটাই বেটার। কারণ Full DAY তে ১/২টা একস্ট্রা যে আইটেম আছে তা না দেখলেও চলে।
সাইটসিইং শেষে হোটেলে চলে যান এবং সূর্যাস্তের আগে যদি পৌছান তবে আবারো ভিউ পয়েন্টে চলে যান এবং অন্নপূর্ণা দেখে আসুন। টিকেটটি পুনরায় নিয়ে যান।
সকাল ৬:৩০ এর মধ্যে গাড়ী নিয়ে পোখারা বাস স্ট্যান্ড এ চলে যান এবং বাসে উঠে পড়ুন কাঠমুন্ডু (Kathmandu) এর উদ্দেশ্যে। এখানে সবকিছু মোটামুটি দ্বিতীয় দিন এর অনুরূপ। কাঠমুন্ডু পৌছানোর পর থামেলে গিয়ে আল মদিনা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন এবং রাতের খাবার প্যাকেট করে নিন। তারপর ট্যাক্সিযোগে রওনা দিন নাগরকোটের উদ্দেশ্যে। চেষ্টা করবেন ৫টার আগে রওনা দিতে। কারণ কাঠমুন্ডুতে ৫টার পর ঢাকা শহরের মত জ্যাম থাকে। থামেল থেকে নাগরকোট যেতে আপনার সময় লাগবে ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটের মত। নাগরকোট পৌছে হোটেলে চেকইন করে বিশ্রাম নিন। নাগরকোটে মোটামুটি ঠান্ডা পরে। সুয়েটার নিতে ভুলবেন না।
নাগরকোট হচ্ছে এমন এক জায়গা যা মূহুর্তে মূহুর্তে রং বদলায়। একবার দেখবেন পুরো পরিষ্কার আবার দেখবেন মেঘ দিয়ে চারদিক পূর্ণ হয়ে গেছে। নাগরকোটে আপনি চাইলে সারাদিন শুয়ে বসে প্রকৃতি দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। কিংবা সকালের নাস্তা সেরে কাঠমুন্ডু চলে যান লোকাল বাস দিয়ে। নাগরকোট বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস নিয়ে চলে যান ভক্তপুর Bhaktapur (জনপ্রতি ৫০ রুপি) এবং সেখান থেকে আরেক বাসে কাঠমুন্ডু (জনপ্রতি ২৫ রুপি)।
কাঠমুন্ডু গিয়ে New Road এলাকায় চলে যান এবং গুগল ম্যাপ ধরে ধরে (http://bit.ly/2fldkRp) থামেলের দিকে পায়ে হেটে যেতে থাকুন। এই পুরো হাটার মধ্য দিয়ে আপনার শপিং সেরে ফেলুন। এখানে থামেল থেকে সস্তায় জিনিস পাবেন।
সব মিলিয়ে নেপাল ভ্রমণ আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। এর আগে ভুটান এবং ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেছি। তাই হয়তো তুলনা করে মন ভরে নি। কিছু জিনিস খারাপ লেগেছে। যেমন, নেপাল কিছুটা নোংরা এবং ধুলিময় দেশ। মানুষজন যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রাখে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খুব বেশি ভালো না। আগেই বলেছি যে, ড্রাইভারদের ব্যবহার আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয় নি। আর কাঠমুন্ডুতে জ্যামের কথা আর নাই বা বললাম। ঘুরাঘুরির চেয়ে জার্নিটা একটু বেশি হয়ে গেছে। তবে, অন্নপূর্ণা রেঞ্জ দেখা, সারাংকোট এবং নাগরকোটের সৌন্দর্য বর্ণনা করে প্রকাশ করার মত নয়। এগুলো দেখেই খারাপ জিনিসগুলো ভুলে থাকতে পেরেছি 😀
আমাদের ট্যুরে জনপ্রতি খরচ হয়েছে বাংলাদেশী টাকায় ২৯০০০ টাকা (তন্মধ্যে বিমান ভাড়া ১৭১০০ টাকা)। আরেকটু কিপটামি করতে পারলে বাজেট ২৮০০০ এ নামিয়ে আনা সম্ভব।
প্যারাগ্লাইডিং এবং শপিং এর খরচ এখানে অর্ন্তভুক্ত নয়।
Leave a Comment