কোহ সামেত দ্বীপে আমরা!

থাইল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠলেই সাধারণত ব্যাংকক, পাতায়া, ফুকেট অথবা ফি ফি দ্বীপের কথাই বেশি ভাবে মানুষ। আগের দু’বার এসব জায়গায় ঘুরার কারণে ভাবলাম এবার নতুন কোথাও যাই। তাই পরিকল্পনা করলাম কোহ সামেত (Koh Samet) দ্বীপে যাব। তাই প্রায় ১ মাস আগেই অনলাইনে হোটেল বুক করেছিলাম। আমার সঙ্গী ছিলেন আমার এক সহকর্মী। দু’জন মেয়ে মিলে ঘুরাটা আমাদের কাছে নতুন নয় বলে দুশ্চিন্তা হয়নি মোটেও। এবার ভ্রমণের গল্পটা শুরু করা যাক। ২০ মার্চ রাতে থাই এয়ারওয়েজের বিমানে করে ভোরে ব্যাংকক পৌছালাম। সেদিনটা ব্যাংককে ঘুরেই কাটালাম। পরদিন সকালে নাশতা সেরে ট্যাক্সি করে একামাই বাস স্ট্যান্ড আসলাম। গন্তব্য ব্যান ফি। প্রতি ঘন্টায় বাস/মাইক্রোবাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত। ২৫০ বাথ করে বাসের টিকেট। একসাথে ৫০ বাথ করে ফেরির টিকেটও করে নিলাম। সকাল ১১টায় বাসে উঠে বসলাম। বেশ আরামদায়ক বাস। সাড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে পৌছালাম বন্দরনগরী ব্যান ফিতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আমাদের ছোট্ট কাঠের ফেরিতে উঠলাম। সাগরের গভীর সবুজ জলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আধা ঘণ্টায় পৌঁছে গেলাম নাদান পিয়েরে (ফেরি ঘাটকে ওখানে পিয়ের বলে)। এলাম তবে স্বপ্নের কোহ সামেত!

আমাদের ভিলাটা পিয়েরের খুব কাছে হওয়ায় হেটেই চলে এলাম। চেকইন করে আমাদের চোখ তো ছানাবড়া। আমাদের রুমটা ঠিক সাগরের উপরে।সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে বিছানা থেকেই। দিনের বেলাতেও ঝিঝির ডাকে কানপাতা দায়। একটু বিশ্রাম নিয়েই বেড়িয়ে পরলাম দ্বীপ ভ্রমণে। মোটরসাইকেল আর টুকটুক এখাকার চলাচলের ভরসা। তবে, আমরা ঠিক করলাম পায়ে হেটেই ঘুরব ৮ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটা। সেদিন কিছুটা ক্লান্ত থাকায় সৈকতের উপর সাজানো এক রেস্তরাঁয় বসেই পার করে দিলাম সন্ধ্যাটা। পরদিন লম্বা একটা ঘুম দিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। বেশ রোদ থাকলেও ফুরফুরে হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যায়।

সারদিন ঘুরেও খুব একটা ক্লান্তি লাগেনি। ন্যাশনাল পার্কের টিকেট করতে হল সুন্দর কয়েকটা সৈকতে যাওয়ার জন্য। লক্ষ্য করলাম থাইল্যান্ডের অন্যান্য দ্বীপের চেয়ে পর্যটক অনেক কম এখানে। যারা এসেছেন বেশিরভাগই ইউরোপীয়। যারা নির্জনতাপ্রিয় তাদের জন্য আদর্শ স্থান এটি।

কোহ সামেতে থাকার জন্য রয়েছে নানামানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট। তাই আপনার বাজেট অনুযায়ী থাকতে পারবেন। বার থাকলেও ডিস্কো চোখে পড়েনি তেমন। রয়েছে অনেক খাবারের দোকান। আমরা থাই, সামুদ্রিক খাবারই বেশি খেয়েছি। তবে যারা থাই খাবার পছন্দ করেন না তাদের একটু সমস্যা হতে পারে। কারণ এখানে বাংলা অথবা ভারতীয় খাবারের দোকান নেই।

আমরা দুইরাত থেকেছি এখানে। সোন্দর্যের লীলাভূমি থেকে ফেরত আসতে একটুও মন চাইছিল না। যারা নিরিবিলি ঘুরতে পছন্দ করেন, তারা ঘুরে আসতে পারেন সময় সুযোগ বুঝে।

খরচ

বাস ভাড়া: ৫০০-৬০০ বাথ (আসা- যাওয়া)
ফেরি ভাড়া : ১০০ বাথ ( আসা-যাওয়া)
হোটেল: ১৫০০ বাথ/দিন (এর কম বেশি হতে পারে আপনার পছন্দ অনুযায়ী)
খাওয়া : ২৫০-৩০০ বাথ (প্রতিবেলা)
বাইক/টুকটুক: আমরা নেইনি

এই দ্বীপটা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সবাই নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলে। কোন যানবাহন হর্ন বাজায়না। খুবই নিরাপদ মনে হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশও রয়েছে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ koh sametthailand