জাভাময় জার্নি (ইন্দোনেশিয়া, জুলাই ২০১৬)

দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার। ঈদের বিশাল ছুটির আগের শেষ কর্মদিবস। যথারীতি ব্যাগ গুছিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম যেন প্রয়োজনবোধে অফিস থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে চলে যাওয়া যায়। বন্ধুদের সাথে ইফতারটা সেরে যথাসময়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম। ওয়েব চেক-ইন করা থাকা সত্ত্বেও আবার এয়ারলাইনের কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস নিতে হল। (কবে যে আমাদের এয়ারপোর্টের মানুষজন এই জিনিসগুলা বুঝবে!) তারপর ইমিগ্রেশন পার হয়ে ফ্লাইটে না ওঠা পর্যন্ত ওয়েটিং লাউঞ্জে বসে রইলাম। ঢাকা থেকে আমার প্রাথমিক গন্তব্য কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের এয়ারবাস এ ৩২০-২০০ বিমানে করে চার ঘণ্টা জার্নি করে পৌঁছে গেলাম কুয়ালালামপুর। সকাল চারটায় নেমে পরবর্তী ফ্লাইটের আগে চার ঘণ্টার বিরতি। যেহেতু আমি কুয়ালালামপুরে ঢুকছি না, ভাবলাম ভাল করে বিমানবন্দরটা ঘুরে দেখবো। প্রথমে মেইন টার্মিনাল থেকে ট্রেনে করে চলে আসলাম স্যাটেলাইট টার্মিনালে।

কুয়ালালাম্পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্যাটেলাইট টার্মিনাল।

রানওয়ের ভাল ভিউ পাওয়া যায় এমন একটা রেস্টুরেন্টে কফি খেতে বসলাম। ফ্লাইটের প্রায় এক ঘণ্টা আগে বোর্ডিঙের ঘোষণা শুনে এগিয়ে গেলাম নির্দিষ্ট বোর্ডিং গেটের দিকে। ইন্দোনেশিয়াতে সবে মাত্র বাংলাদেশী সাধারণ পাসপোর্টে ভিসামুক্ত সুবিধা চালু করা হয়েছে। তাই তখনও অনেকেরই এই বিষয়ে ধারণাটা পরিষ্কার না। যাহোক কোনও ঝামেলা ছাড়াই গারুদা ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তাগামী বিমানে চড়ে বসলাম। মাত্র দুই ঘণ্টার ফ্লাইট হলেও চমৎকার অভিজ্ঞতা হল। আরামদায়ক সীট, পা রাখার প্রশস্ত যায়গা আর ফ্লাইট ক্রুদের চমৎকার ব্যাবহার সত্যি মুগ্ধ করল আমাকে। এরপর বিমান থেকে নেমে ভিসা মুক্ত সীল নেবার লাইনে দাঁড়ালাম। বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। তিনি পাশের অফিসারের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে তেমন কোনও সুরাহা না করতে পেরে আমাকে আমাকে সহই ইমিগ্রেশন কন্ট্রোলারের রুমে নিয়ে গেলেন। তিনি জানতে চাইলেন আমার কাছে ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ, হোটেল বুকিং এবং ফিরতি টিকেট আছে কিনা। সকল কাগজ দেখানোর পর আমাকে বসিয়ে রেখেই আমার পাসপোর্ট হাতে তিনি বেড়িয়ে গেলেন। মিনিট পাঁচেক পর পাসপোর্ট এ ‘ভিসা এক্সেম্পটেড’ সীল সহ হাসিমুখে এসে আমার পাসপোর্ট ফেরত দিলেন। কাস্টমস কন্ট্রোল থেকে বের হয়ে প্রথমেই ডলার ভাঙিয়ে ইন্দোনেশিয়ান রুপাইয়া নিয়ে নিলাম। প্রসঙ্গত, ১ বাংলাদেশী টাকায় আপনি পাবেন ১৬৫ ইন্দোনেশিয়ান রুপাইয়া। তথ্যটা জানা থাকায় ডলার ভাঙ্গাতে গিয়ে খুব একটা অবাক হলাম না যখন প্রায় আধা বান্ডিল নোট পেলাম, তাও আবার প্রতিটা নোট ১০০০০০ এর! মিলিওনিয়ার মিলিওনিয়ার টাইপ একটা ভাব নিয়ে সোকার্নো-হাতা এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আসলাম। কিছুদূর হেটে গিয়ে দামড়ি বাসে উঠে পড়লাম। গন্তব্য গাম্বির ট্রেন ষ্টেশন। মোটামটি ঘন্টাখানেকের মধ্যে গাম্বির পৌঁছে গেলাম। গাম্বিরে নেমে কিছুক্ষণ সেখানে বসা স্থানীয় ছেলেদের সাথে আড্ডা দিলাম। সেখানে ঘণ্টাখানেক থেকে সিএনজি-সদৃশ তুকতুকে উঠে বসলাম। গন্তব্য চিকিনি রায়া। চিকিনি তে নেমে মুদ্রা বিভ্রাটের কারণে আমি সাধারণ ভাড়ার প্রায় দশগুন ভাড়া পরিশোধ করলাম। ভাড়া মিটিয়ে চলে গেলাম হোস্টেলে। হোস্টেলে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সোজা রুমে চলে গেলাম। টানা জার্নিতে শরীরটা বেশ ছেড়ে দেয়ার দরুন ঐ রাতে আর কোথাও বের হওয়া হয়নি।

পরেরদিন সকালে বেশ দেরি করে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে নিচে নেমে অভ্যর্থনায় গিয়ে আশেপাশের কিছু স্থানে যাওয়ার সহজ আর সস্তা উপায় জেনে নিলাম। এরপর সেভেন ইলেভেনে ঢুকে পেটে হাল্কা পুজো দিয়ে বের হয়ে গেলাম মেগাসিটি জাকার্তার পথে পথে। একে একে পুরান শহর এবং কোঁতা এলাকার আশে-পাশের পাবলিক প্লেসগুলোতে ঘুরতে থাকলাম। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামার পর গেলাম সারিনাহ মার্কেটে। কেনাকাটা করতে না, বরং তার আশেপাশে এক রাস্তায় প্রচুর স্ট্রীট ফুড পাওয়া যায় শুনে লোভ সামলাতে না পেরে এখানে আসা। তার সাথে সাথে সুরাবায়া যাবার জন্য আমার বিমান টিকেটের প্রয়োজন ছিল যা সারিনাহ মার্কেটের এয়ার এশিয়া অফিস থেকে কেটে নিলাম। প্রায় দিগুন দাম দিয়ে হলেও টিকেটটা নিয়ে নিলাম। নাহলে আর কোনও উপায় পাচ্ছিলাম না জাকার্তা ছাড়ার। উল্লেখ্য এখানেও ঈদের সময় মানুষের ঘরমুখি ভিড় লেগে থাকে। আগেরদিন কিছুক্ষন চেষ্টা করেছিলাম বাস বা ট্রেনের টিকেট কাঁটার কিন্তু বিধি বাম। তাই কোনোভাবেই বাস বা ট্রেনের টিকেট না পাওয়া যাওয়ায় শেষমেষ প্লেনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে উপনীত হই। যদিও আমার ইচ্ছা ছিল ঠিক পরেরদিনের ফ্লাইট নেয়ার কিন্তু ফ্লাইট স্বল্পতায় পরেরদিনের টিকেটের দাম অনেক বেশি হওয়ায় আরও একদিন পর ফ্লাইট নিলাম। টিকেট কেটে বের হয়ে এবার নিশ্চিন্তমনে হোস্টেলের দিকে রওনা করলাম। একটা জিনিস না বললেই না যে ইন্দোনেশিয়ার বেশিরভাগ মানুষজন বেশ ভাল এবং বড় মনের মানুষ। চিনে না জানে না, মানুষজন রাস্তা থেকে দাওয়াত দিয়ে অচেনা মানুষকে বাসায় নিয়ে খাওয়ায়। ঠিক যেমনটা আমরা বিশ বছর আগে ছিলাম। রাত আঁটটা পর্যন্ত সেখানে থেকে এবার আবারও হোস্টেলে ফেরার পালা। তীব্র মাথা বেথায় আমার বেড়ানো তখন প্রায় শিকেয় উঠেছে। ওষুধ কিনতে ফার্মেসী গিয়ে ওষুধের দাম শুনে আমি মাথায় হাত না দিয়ে পারলাম না। দাম শুনেই মোটামটি আমার মাথা ব্যাথা ভাল হয়ে গেল। এক পাতা ফেক্সো-ফেনাডাইনের দাম চাইলো চার লাখ রুপাইয়া বা চব্বিশশো টাকা! ফার্মেসী না ডাকাত রে ভাই! অগত্যা হোটেলে ফীরে গোসল দিয়ে এক রকম জোর করেই ঘুমাতে গেলাম। অনেক্ষন এদিক ওদিক করেও ঘুমাতে না পেরে শেষে নিচে নেমে গেলাম। সেখানে আরও জনাকয়েক ব্যাকপ্যাকারের সাথে ঘণ্টা দুয়েক জমিয়ে আড্ডা দিয়ে পরে আবার আমার বাঙ্ক বেডে ফেরত গিয়ে আমার দ্বিতীয় দিনের সমাপ্তি ঘটালাম।

আমার হোস্টেল বাঙ্ক

আগের দুই দিনের অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে তৃতীয় দিনে আমি নিজেকে পূর্ণরূপে ফীরে পেলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সাথে সাথেই রওনা করলাম। হোস্টেল থেকে বের হয়ে হেটে চিকিনি ট্রেন ষ্টেশন থেকে আমার পরবর্তী গন্তব্য বগোড় (Borgore)

চিকিনি ট্রেন ষ্টেশন

পৌঁছতে পৌঁছতে মোটামটি দুপুর হয়ে গেল। রাস্তার একটা দোকানে বসে খেয়ে নিলাম মি গরেং (আক্ষরিক অর্থেঃ নুডুলস)। এরপর হেটে হেটে বগোড় শহর ঘুরতে থাকলাম। রাস্তার পাশের বিল্ডিঙের স্থাপত্যে সেই পুরনো ডাচ ভাবটা কিন্তু খুব সহজেই চোখে ধরা পরে। প্রাথমিক গন্তব্য ছিল বগোড় বোটানিক্যাল গার্ডেন। বোটানিক্যাল গার্ডেন যাওয়ার পথেই পড়ল ইস্তানা বা রয়াল প্যালেস। রয়াল প্যালেসের উঠানে মুক্তভাবে হরিণ ঘুরতে দেখে বেশ মজা পেলাম।

বগোড় রয়াল প্যালেস অভয়ারণ্য।

এরপর বগোড় বোটানিক্যাল গার্ডেনে দুইটা ঘণ্টা যে কিভাবে কেটে গেল টা বোঝা দায়। এবার আবার জাকার্তায় ফেরার পালা। ফিরতি পথ ধরে হাটা দেয়ার প্রায় সাথে সাথেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হলেও সত্যি বলতে বৃষ্টিটা খুব উপভোগ করছিলাম। যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে বগোড় শহরের ওপর। বৃষ্টিকেও যে মানুষের আপন মনে হতে পারে, এই প্রথম তা মনে হল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি একটু কমলে আবার হাটা দিলাম। একটু পরেই আবার মেঘের ডাক শুনে দৌড়ে একটা আংকত ধরলাম। (আমাদের ম্যাক্সি টাইপ এর টেম্পো বিশেষ)। ঐ মুহূর্তে রাস্তা দিয়ে হাটতে কিন্তু বেশ ভাল লাগছিল কিন্তু পাসপোর্ট সাথে থাকায় ভাবলাম যদি আবার ভিজে যায়! ষ্টেশন এর কাছাকাছি আংকত থেকে নেমে এক দৌড়ে ষ্টেশন এর ভেতরে চলে গেলাম। টিকেট কেটে সোজা ট্রেনের ভেতরে। এরপর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম জাকার্তা। সারাদিনের দৌড়াদৌড়ির পরেরদিনের ফ্লাইটের কারণে রাস্তা থেকে খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছালাম। এরপর এক ঘুমে রাত পার।

আগেই হোস্টেলের অভ্যর্থনায় বলে রেখেছিলাম সকাল ছয়টায় ওয়েক আপ কল দেবার জন্য। ঠিক ছয়টা পাঁচে আমাকে জাগিয়ে তোলা হল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নাস্তা সেরে রেডি হয়ে লবিতে নেমে আসলাম। সেখানে আরেকজনকে পেলাম যে এয়ারপোর্টের দিকে যাবেন। দুইজন মিলে ট্যাক্সি আর দামড়ি বাসের সমন্বয়ে সময়ের বেশ কিছুটা আগেই পৌঁছে গেলাম আমাদের যার যার নির্দিষ্ট টার্মিনালে। এরপর সময়মত প্লেন ধরে এক ঘণ্টা পাঁচ মিনিট বাতাসে ভেসে পৌঁছে গেলাম সুরাবায়া। সুরাবায়া পূর্ব জাভা বিভাগের রাজধানী।

জুয়ান্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পূর্বমুহূর্ত।

এয়ারপোর্ট থেকে নেমে আবারও দামড়ি বাস নিয়ে পৌঁছলাম পুরাবায়া বাস টার্মিনালে। পুরাবায়া বাস টার্মিনাল থেকে লোকাল বাস নিয়ে পৌঁছলাম গুবেং বাস ষ্টেশনে। তারপর হোস্টেল খুঁজে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম সুরাবায়া শহর দেখতে।

মাতাহারি মল, গুবেং ট্রেন ষ্টেশন আর আশেপাশের কিছু যায়গা ঘুরে ফীরে সন্ধ্যায় আবার হোস্টেলে ফিরলাম। হোস্টেলে পরিচয় হল টাইশা (ইন্দোনেশিয়ান) আর টইনি (ডাচ) এর সাথে। হোস্টেলের লবিতে বসে প্রায় রাত একটা পর্যন্ত আড্ডা দিলাম। আমরা ঘুমাতে যাবার আগে আরও একবার তিনজন মিলে রাস্তায় কিছুক্ষণ হেটে বেড়ালাম। এরপর টইনির সাথে প্ল্যান করলাম যে আমরা পরেরদিন একসাথে মাউন্ট ব্রোমো যাবো। প্ল্যানিং পর্ব শেষ করে ঘুমাতে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা নিজেরাই যাবো এবং কোনও ট্যুর অপারেটরের সাহায্য ছাড়াই। সকালের জন্য অ্যালার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

অ্যালার্ম ফেল মারলো। রাতে কখন যে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে টেরও পাইনি। আমাদের প্ল্যান ছিল সকাল দশটা নাগাদ বের হয়ে যাবো। কিন্তু আদতে বের হতে হতেই এগারোটা বেজে গেল। বের হয়ে সাথে সাথেই পুরাবায়া যাবার জন্য বাস পেলাম না। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে অবশেষে পুরাবায়া যাবার জন্য বাস পেলাম। ঘণ্টাখানেক জার্নি করে পৌঁছলাম পুরাবায়া বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ইন্টার সিটি বাসে করে আমাদের প্রাথমিক গন্তব্য প্রোবোলিঙ্গ বাস ষ্টেশন। আর সেখানেই ঘটলো বিপত্তি। ঈদের ঠিক আগেরদিন হওয়ার কারনে ব্রোমো যাবার যানবাহনের খুব স্বল্পতা। প্রায় দুই ঘণ্টা সেখানে অপেক্ষা করার পর অবশেষে নয়জন মিলে আমরা একটা মিনিভ্যান ভাড়া করলাম। সাধারণ সময়ে যেখানে ভাড়া পরে ৩০,০০০ রুপাইয়া, সেখানে আমরা দিলাম ৬০,০০০ রুপাইয়া মাত্র! যেতে হবে বলে কথা, টাকা পরের বিষয়। সাধারণত মানুষ ব্রোমো তে গিয়ে রাতে থেকে সকালে সূর্যাস্তটা দেখে। আমি আর টইনি দুইজনই অফ-ট্র্যাক ব্যাকপ্যাকার হবার দরুন সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আজ রাতেই আবার সুরাবায়া ফিরবো, যে করেই হোক। সুতরাং আমরা ২,২০,০০০ রুপাইয়া দিয়ে ব্রোমো জাতীয় উদ্দানের টিকেট না কেটে স্থানীয়রা ব্যাবহার করে এমন একটা ট্রেইল ধরে নেমে গেলাম। ব্রোমোর কাছাকাছি যেতে যেতে আলো পরে গেল। এরপর আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা। লক্ষকোটি তারার মেলা উপরের খোলা আকাশে।

অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ (সি অফ স্যান্ডস)

মাউন্ট ব্রোমো এলাকার অতিপ্রাকৃত ল্যান্ডস্কেপের কথা অনেক শুনেছি। স্বনয়নে দেখেও তা বিশ্বাস হচছিল না। হঠাৎ করে তাকালে আপনার মনে হবে আপনি অন্য কোনও এক গ্রহের বুকে দাড়িয়ে আছেন। জ্বালামুখের কাছে যেতে গিয়ে উপর থেকে সালফারের টুকরা এসে আমাদের এথনিসিটি মোটামটি আপসাইড ডাউন করে ফেললো।

টইনি কে দেখে মনে হচ্ছিলো ও সিরিয়ান আর আমি ব্রাউন এশিয়ান থেকে পুরাদুস্তর নিগ্রো বনে গেলাম। আমাদের নিজেদের চেহারা ফ্ল্যাশ লাইটে দেখে নিজেরাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম কিছুক্ষণ। এবার ফেরার পেলা। ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে শুধুমাত্র একটা মোবাইল টাওয়ার লাইট (যা কমপক্ষে পাঁচ কিলো দূরে অবস্থিত) অনুসরণ করে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে আবার উপরে উঠে এলাম। সব মিলিয়ে সাত কিলোর ট্রেক ঐ ট্র্যাকে। সত্যি বলতে আমার শারীরিক ফিটনেসের যে বাজে অবস্থা তাতে সাধারণত এত অল্প সময়ের মধ্যে পেরে উঠতাম না কিন্তু জেদ ছিল যে এটা করেই ছাড়বো। আগেরদিন যে কয়টা লোকাল বন্ধুদের প্ল্যানটা শেয়ার করেছিলাম, সবাই প্রায় এক বাক্যে বলে দিয়েছিল ‘সম্ভব না’। সেই অসম্ভব কে সম্ভব করার অদম্য ইচ্ছাই হয়তো আমাদের আবার উপরে নিয়ে এসেছিল। যা হোক আমরা যে মিনিভ্যানে করে এসেছিলাম ঐ মিনিভ্যানটা দিয়েই প্রোবোলিঙ্গ ফেরত যাবার জন্য অ্যাডভান্স করে গিয়েছিলাম। কোনোরকম দম ফীরে পেয়েই চেপে বসলাম গাড়ীতে। বেশ আরামদায়ক একটা রাইড নিয়ে পৌঁছলাম প্রোবোলিঙ্গো। রাত তখন নয়টা। উল্লেখ্য, প্রোবোলিঙ্গ থেকে আমরা সুরাবায়ার যে এলাকাটিতে ছিলাম সেখানে যেতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা লাগে। উৎসবমুখর পরিবেশে বাসে চেপে বসলাম। পুরা বাসে আমরা দুইজনই শুধু আউটসাইডার। বাকি সবাই লোকাল। বাস থেকে পুরাবায়া নেমে আর গুবেং যাওয়ার বাস পাওয়া গেল না। কাছাকাছি যায় এমন একটা বাসে চেপে বসলাম যেটা আমাদের গুবেং থেকে কিলো দশেক দূরে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পায়ে হাটার চেষ্টা করলাম। ক্লান্তি, অবসাদ আর ক্ষুধায় তখন আমরা দুইজনই চোখেমুখে প্রায় অন্ধকার দেখছিলাম। এক পর্যায়ে বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়ে আমরা একটা ট্যাক্সি নিলাম। বার-পনেরো মিনিটেই পৌঁছলাম গুবেং। এবার খাবার পালা। রাস্তার পাশে একটাই দোকান পেলাম। খেতে বসে অর্ডার দিলাম “নাসি পি আয়ুম গরেং” অর্থাৎ সাদা ভাত আর মুরগী ফ্রাই। একটু ঝোলের মত একটা জিনিসও দিল যেটা প্রথমে আমি নিতে চাইনি। পরে ঐ ঝোল দিয়েই আমি আরও দুই প্লেট ভাত খাই। টইনি হা করে তখন আমার খাওয়া দেখছে। জাতি হিসেবে আমরা যে আসলেও ভেতো, এটা হয়তো সে আগে এভাবে বুঝতে পারে নি। খাবারের বিল মিটিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে হোস্টেলে ফীরে গেলাম। দেখলাম অনেকেই ঘুমাননি। সবাই আগ্রহ ভরে জানতে চাইলেন আমরা যেতে পেরেছি কি না, কত খরচ পড়ল ইত্যাদি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, ট্যুর অপারেটররা সাধারণত ওভারনাইট এরকম একটা ট্রিপের জন্যও দেড় মিলিওন রুপাইয়া দাম হাকে। সেখানে আমরা সাধারণ সময়ের থেকে অনেক বেশি ভাড়া মিটিয়েও ২,৫০.০০০ এর মধ্যে ট্রিপটা কমপ্লিট করেছি। পরের দিন ঈদ বলে আর খুব বেশি দেরি করলাম না। ফ্রেশ হয়ে সবাইকে গুড নাইট বলে বোবা ঘুম। টইনির ভাষ্য অনুযায়ী, আমি নাকি সেদিন একটা জলহস্তীর থেকেও বাজেভাবে নাক ডেকেছি। ব্যাপারটা অসম্ভব কিছু না তবে জলহস্তীর নাক ডাকা শোনা হয়নি কখনও তাই ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না।

ঘুম থেকে উঠলাম সকাল সাতটায়। খুব কষ্ট হয়েছিল ঐদিন ঘুম থেকে উঠতে। তবুও ঈদের দিন বলে কথা, তাই চোখ ডলতে ডলতে বাথরুমের দিকে এগোতেই চক্ষু চড়কগাছ। বেশ লম্বা লাইন বাথরুমের সামনে। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ার দরুন অনেকেই গোসল করে ঈদের নামাজের জন্য তৈরি হবেন বলেই এই ভিড়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সিরিয়াল পাবার পর ঠিক তিন মিনিটে গোসল সেরে বের হয়ে গেলাম যেন আমার পিছনে যারা ছিলেন তারাও সময়মত জামাত ধরতে পারেন। এরপর রেডি হয়ে বের হলাম মসজিদ খুঁজতে। রাস্তায় লোকজনের তেমন একটা ভীড় না দেখে একটু অবাকই হলাম। ব্যাপার কি? আমি কি তাহলে বেশি আগে বের হয়ে গেলাম? পাঁচ মিনিট পরেই আমার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না। তাড়াতাড়ি তো নয়ই, বরং আমি জামাত ধরতে পারলাম না দেরির কারণে। দুই-তিন জনের সাথে কথা জানলাম কাছেই একটা চাইনিজ মসজিদ আছে যেখানে একটু দেরি করে জামাত হয়। ট্যাক্সি নিয়ে দৌড়ে গিয়ে মসজিদের সামনে নামতে গিয়ে আবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভার কে বললাম আমি তো মসজিদে যাবো, আপনি আমাকে প্যাগোডা তে নিয়ে আসলেন কেন? তিনি অট্টহাসি দিয়ে ভাঙা ইংরেজিতে বোঝালেন এটাই মসজিদ। অবাক বিস্ময়ে হেটে ভিতরে ঢুকেও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। ভাবলাম ঈদের দিন নামাজ পড়ার স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে হয়তো প্যাগোডার সামনে নামাজ পড়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

চেং হু মসজিদ, সুরাবায়া, পূর্ব জাভা।

ভুল ভাঙল নামাজ শেষে। উঁহু, আসলেই এটা একটা মসজিদ। আরবি লেখার পাশাপাশি চাইনিজ (খুব সম্ভবত তাইওয়ানিজ) ভাষাতেও বেশ কিছু লেখা ছিল যা আমার জন্যও একেবারেই নতুন। আরবি ভাষায় ‘আল্লাহু’ লেখা আর পাশে চাইনিজ হরফ একদমই মানাচ্ছিল না। (আল্লাহ্ মাফ করুক) এরপরই ঘটল ইন্দোনেশিয়াতে থাকা অবস্থায় বেস্ট ব্যাপারটা। নামাজ শেষে সবাই যখন কোলাকুলি করছেন আমি তখন এক কোনায় চুপচাপ দাড়িয়ে আমার পরিবার আর বন্ধু-বান্ধবদের কথা ভাবছিলাম। আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট এক ছেলে আমার দিকে এগিয়ে এসে প্রথমে কোলাকুলি করলো। এরপর আমার সাথে প্রায় পাঁচ মিনিটের আলাপে তাকে জানালাম যে আমি এখানকার লোকাল নই। এরপর সে দৌড়ে আমার আড়ালে চলে গেল। সে তার পিছনে প্রায় চল্লিশ জনের একটা দল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমি কি এমন ভুল করলাম বা বললাম যার কারণে সে এত মানুষ জড়ো করে আনলো। তবে আমার ভুল ভাঙতেও বেশিক্ষন লাগেনি। আমাকে একা একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে তার সাথে তাবলীগে আসা সকলকে নিয়ে এসেছেন আমার সাথে কোলাকুলি করার জন্য। আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসছিল প্রায়। নিজের বাসা, নিজের দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে নিশ্চিতভাবেই আমি আশা করিনি যে চল্লিশ জন মুসল্লি হাসি মুখে আমার সাথে কোলাকুলি করার জন্য লাইনে দাড়িয়ে থাকবে। সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর বিদায় নিয়ে হোস্টেলের দিকে হাটা দিলাম। পথিমধ্যে সেই মুসল্লিদেরই একজন অনুরোধ করলেন তাঁর সাথে তার বাসায় গিয়ে কিছু খাওয়ার জন্য। না করার কোনও সুযোগই দিলেন না। মিনিট দশেক হেটে পৌঁছে গেলাম ওনার বাসায়। তার নাম ইসমাইল আবদুল্লাহ। একে একে আমাকে তিনি তার বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঘণ্টাখানেক ওনার বাসায় থেকে সবাইকে তাঁদের এই অভূতপূর্ব আতিথিয়তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসলাম। যাবার আগে সবাইকে বাংলাদেশে আসার দাওয়াত দিয়ে আসলাম। হোস্টেলে আসতে আসতে প্রায় বিকাল হয়ে গেল। চারতলায় শাওয়ার সেকশনে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার বের হলাম। টইনিও হাটা দিল আমার সাথে। তারপর আমরা রিভারফ্রন্ট ধরে সাবমেরিন মনুমেন্ট, বাচ্চাদের স্কেটিং গ্রাউন্ড আর বিশাল বড় এক মার্কেট পাশে ফেলে আমরা একটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের একটা সেমিট্রি গেলাম। ওখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে শহরের আশেপাশে আরও ঘণ্টাখানেক হাটাহাটি করে হোস্টেলে ফিরলাম। টইনি আর টাইশার কাছে বিদায় নিয়ে আমার ক্যাপস্যুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

যথারীতি অ্যালার্মের শব্দে সকালে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণ চোখ কচলাকচলির পর ক্যাপস্যুল থেকে নামলাম আর ফ্রেশ হয়ে আসলাম। ব্যাগ রাতেই গোছানো থাকায় আয়েশি মুডে লবির সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে টানা দুই দুইটা বিরি খেয়ে ফেললাম। ধীরে সুস্থে নাস্তা সেরে গোজেক অ্যাপের মাধ্যমে বাইক ট্যাক্সি ডেকে নিলাম। ঈদের পরদিন হওয়াতে এমনিতেই জ্যাম কম। প্রায় হাওয়ার বেগে উড়ে মাত্র পচিশ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম জুয়ান্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। চেক ইন আর নিরাপত্তা তল্লাশি শেষ করে ওয়েটিং লবিতে বসে ঝিমাতে শুরু করলাম। বোর্ডিং অ্যানাউন্সমেন্ট শুনে নির্দিষ্ট গেটের দিকে হাটা দিলাম। এবার ড্যাশ-৮০০ করে যেতে হবে যোগজাকার্তা।

এক ঘণ্টা দশ মিনিট উড়ে নিরাপদে অবতরণ করলাম আদিসুচিপ্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ছোট কিন্তু বেশ গোছানো একটা বিমানবন্দর। যোগজাকার্তাতে যে হোমসটেতে আমার থাকার কথা সেই প্রপার্টি মালিকের বলে দেয়া রাস্তা অনুযায়ী এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে ট্রান্স-যোগজাকার্তা বাসে উঠে বসলাম। আমার গন্তব্যস্থলের দিকে যায় এ-ওয়ান বাস। আধা ঘণ্টায় যোগজাকার্তা শহর দেখতে দেখতে চলে আসলাম জালান জাগালান। আসার পথে যোগজাকার্তার বিখ্যাত মালিওবোরো স্ট্রীট, ক্রাটন প্যালেস দেখে হোস্টেল খুজতে থাকলাম। আধা ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর পেয়েও গেলাম। পৌঁছে প্রথমেই শাওয়ার নিলাম। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লবিতে বসা বাকি ব্যাকপ্যাকারদের সাথে আড্ডা জমালাম। তার আগেই পরেরদিনের জন্য বড়বুদুর প্যাগোডা আর প্রাম্বানান মন্দির দেখার ট্রান্সপোর্ট বুক করে ফেললাম। একে একে সবাই সবার ঘুরে দেখা জায়গাগুলোর বর্ণনা দিতে থাকলো। আমার পালা এলে আমি বললাম কিভাবে আমরা “দেড় মিলিয়ন রুপাইয়ার” (ট্র্যাভেল এজেন্টরা এরকমই চাইবে) পরিবর্তে নিজেরা ভেঙ্গে ভেঙ্গে মাউন্ট ব্রোমো গিয়ে মাত্র আড়াই লাখ রুপাইয়ায় পুরা ট্রিপটা শেষ করে দিনে দিনে ফীরে এসেছিলাম। সবাই খাতা কলম নিয়ে বসেছিলাম আমরা। যার যে তথ্যটুকু দরকার সেটা যার যার মত লিখে নিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার ব্যাপক ক্ষুধা পেল। আমি উঠে যেতেই আমার সাথে যোগ দিল ব্রিটেন থেকে আসা এড্রীয়ান আর ম্যাট। তিনজন জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে খাবার দোকান খুজতে লাগলাম। একটা দোকানে প্রথমে বসলেও ভেজিটারিয়ান খাবার না থাকায় উঠে গেলাম। এড্রীয়ান ভেজিটারিয়ান হওয়ায় ওর জন্য উপযুক্ত একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে বের করলাম। আমি আর ম্যাট মি গরেং অর্ডার করলাম আর এড্রীয়ান নিল ভেজিটেবল স্যুপ। খাওয়াদাওয়া শেষে ফিরতি পথে কিছু সাপ্লাই কিনে নিয়ে হোমসটেতে ফিরলাম। ফেরার পর বিছানায় যেতে দেরি করলাম না কারণ পরদিন আমাকে বেশ সকাল সকাল গাড়ী পিক করার কথা। গন্তব্য বড়বুদুর আর প্রাম্বানান মন্দির। সবাইকে গুডনাইট বলে আমার জন্য বরাদ্দ বাঙ্কে গিয়ে সোজা ঘুম।

যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। গাড়ী এলো পাঁচটায়। আমিই শেষ যাত্রী হওয়ায় খুব ভাল সীট পাওয়া গেল না। সামনের সীটে আরেকজনের সাথে শেয়ার করে বসতে হল। আমি বসে হেলান দেবার আগেই পাশের যাত্রী পকড়পকড় জুড়ে দিল। ঘুম কম হওয়ায় ভেবেছিলাম গাড়ীতে বসে একটু ঘুমিয়ে নিব তবে বিধি বাম। আমার পাশে বসা বসা ভদ্রলোক আমেরিকান। নিজের পরিচয় দিয়ে হাত মেলাবার জানতে পারলাম ওর নাম অ্যালেক্স। অ্যালেক্স আমেরিকান হলেও ফিলিপিনের একটা স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। প্রথমে আলেক্সের পকপকানি তে বিরক্ত হলেও আসতে আসতে আড্ডা জমে গেল। আলেক্সকে বেশ আমুদেই বলতে হবে। একে একে আমাকে বলতে লাগলো এশিয়ার কোন দেশে সে কি কি করে বেড়িয়েছে। ঘণ্টাদেড়েক পর আমরা পৌঁছলাম বড়বুদুর কমপ্লেক্স (Borobudur Temple Compounds)। বড়বুদুর মন্দির মাগেলাং নামক স্থানে অবস্থিত। আমাদের মাইক্রো থেকে নামিয়ে ব্রীফ করা হল। জানানো হল যে তিন ঘণ্টা পর পরবর্তী গন্তব্যে যাবার জন্য এখানেই আমাদের ফীরে আসতে হবে। কমপ্লেক্স হেটে পার হয়ে এবার টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালাম। আগেই পড়েছিলাম যে বড়বুদুর এবং প্রাম্বানানের টিকেট একসাথে এখান থেকেই কাঁটা সম্ভব। করলামও তাই। হিসাব করে দেখলাম দুই টিকেট একসাথে কাটলে শ-তিনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বড়বুদুরের টিকেটের সাথে আবার এক বোতল পানি অথবা এক কাপ চা/কফি ফ্রী। রাতে ঘুম কম হওয়ার কারণে শরীরে যে ম্যাজম্যাজ ভাবটা ছিল, কফি খাওয়ার পর সেটা কেটে গেল। আমি আর অ্যালেক্স গল্প করতে করতে ওয়াকওয়ে পার হয়ে বড়বুদুরের মূল ফটকের সামনে আসলাম। এ পর্যায়ে মানুষের সংখ্যা দেখে আমরা দুইজনই ঘাবড়ে গেলাম।

বড়বুদুরের মূল কমপ্লেক্সের সিঁড়ি

সামনে যা দেখলাম সেটাকে জনসমুদ্র বললেও ভুল হবে। কোনোরকমে গুঁতাগুঁতি করে প্রথমেই উঠে পড়লাম একদম উঁচু লেভেল। সবথেকে উপরের লেভেল থেকে আশেপাশের ভয়ানক সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। চারদিকে ঘন সবুজ বন আর তার ব্যাকড্রপে আছে কিছু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে মাটির বুক চীরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে পাইন জাতীয় কিছু লম্বাকৃতির গাছ। তার ঠিক পিছনে খণ্ড খণ্ড মেঘের ভেলা সকালের সৌন্দর্যটাকে দিগুন করে দিচ্ছিল।

ঐ স্তরের চারপাশে ঘুরে ফীরে নানাভাবে ছবি তুলে নেয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর একেক লেভেল করে নামি আর একেক লেভেলের সৌন্দর্য উপভোগ করি। বড়বুদুর মন্দিরে সর্বমোট আটটি ধাপ। প্রত্যেক ধাপের পুরো দেয়াল জুড়ে মাটির নানারকম কারুকার্য করা। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক থেকে, কিছু ভাল ছবি নেয়ার ব্যার্থ প্রচেষ্টায় ক্ষান্ত দিয়ে নিচে নেমে এলাম।

বড়বুদুর বৌদ্ধবিহার।

ঘড়িতে দেখলাম পার্কিং এর কাছে ফীরে যাবার নির্ধারিত সময়ের হিসেবে আমাদের হাতে আরও কিছুক্ষণ সময় রয়েছে। আমরা বড়বুদুরের লাগোয়া একটা পার্কে বসে গল্প করলাম। এরপর পূর্বের কথা অনুযায়ী ঠিক দশটায় আমরা পৌঁছলাম গাড়ীর সামনে। আধা ঘণ্টা ধরে এ-গাড়ী ও-গাড়ী করে অবশেষে রওয়ানা করলাম প্রাম্বানানের উদ্দেশ্যে। যোগজাকার্তা থেকে বড়বুদুর আসার পথে তেমন ট্রাফিক জ্যাম না পেলেও মাগেলাং থেকে সোলো যাওয়ার পথে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামে পড়লাম। দেড় ঘণ্টার রাস্তা পৌঁছতে সময় লাগলো পাক্কা চার ঘণ্টা। গাড়ী যখন প্রাম্বানানের পার্কিং এর সামনে থামল, সূর্য তখন খাড়াভাবে মাথার ওপর। নেমে প্রথমেই আমি আর অ্যালেক্স দুপুরের খাবার পর্বটা সেরে নিলাম। উদরপূর্তি করে এবার মন্দিরে প্রবেশের পালা।

প্রাম্বানান মন্দির, সোলো।

টিকেট দেখিয়ে গেট থেকে ঢুকে মন্দিরের মূল স্থানে যেতেও মিনিট পাঁচেক হাটতে হয়। এরপর মূল কমপ্লেক্সে ঢুকে ঘুরে ঘুরে দেখার পালা। যারা কম্বোডিয়ার আংকর ওয়াট সম্পর্কে জানেন, তাঁদের জন্যও সুখবর হচ্ছে প্রাম্বানান অনেকটাই দেখতে আংকর ওয়াটের মত। যারা ভিসা জটিলতায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আংকর ওয়াট দেখতে যেতে পারেন নি, তারা এখানে এসে দুধের স্বাদ ঘোলে ঠিকই মেটাতে পারবেন। প্রচণ্ড রোদের কারণে দুই একটা টাওয়ার দেখেই আমরা ক্ষান্ত দিলাম। দশ মিনিট হেটে, আধাঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে মাইক্রোর সামনে গেলাম। আমাদের সাথে আসা এক বেলজিয়ান টুরিস্টের পাসপোর্ট হারানো যাওয়ায় গাড়ী ছাড়তে বেশ কিছুটা বিলম্ব হল। বেচারা প্রায় পুরাটা রাস্তায়ই মলিন মুখে বসে রইলো। ফিরতি যাত্রা শুরুর দেড় ঘণ্টা পর আমাদের নামিয়ে দেয়া হল। নেমে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে হোটেলে ঢুকে লুতফির কাছে আমার বাস টিকেটের আপডেট জানতে চাইলাম। ও আমাকে জানালো যে টিকেট পাওয়া যায়নি। এর অর্থ আমাকেই বাস ষ্টেশন থেকে টিকেট কিনতে হবে। পরের পরের দিন ভোর সকালে আমার জাকার্তা থেকে কুয়ালা লাম্পুর যাওয়ার ফ্লাইট। ইন্দোনেশিয়াতেও বাংলাদেশের মতই ঈদের পর রাজধানিমুখি মানুষের ফিরতি ঢল নামে। লুতফি আমাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যাগ গোছাতে বলল। আমি করুন চোখে ওর দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে কিছুটা সময় রেস্ট নেয়া যাবে কিনা। ওর আপত্তিসূচক দৃষ্টি দেখে মুহূর্তেই ব্যাগ গোছানোর কাজে হাত দিলাম। আমাকে বাইকের পিছে তুলে লুতফি ঝড়ের বেগে বাস ষ্টেশন পৌঁছলো। যেতে যেতে ও আমাকে বলল যে আমি আজকে সন্ধ্যার মধ্যে রওনা না করলে নাকি ফ্লাইট মিস করার শঙ্কা থেকে যায়। ওর কথা শুনে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বলে কি এই মেয়ে! ছুটি শেষে রাস্তায় জ্যাম হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু তাই বলে এগারো ঘণ্টার রাস্তা কি বাইশ ঘণ্টা লাগবে নাকি? হ্যা-না কোনকিছুই না শুনে আমি টিকেট নিতে অগ্রসর হলাম। লুতফির সাহায্য নিয়ে টিকেট কাটলাম সাধারণের প্রায় পাচগুন দামে। ফ্লাইট ধরতে হবে বলে এটা নিয়ে কোনও বারগেনিং করলাম না। বাসে যখন উঠে বসলাম সময় খুব সম্ভবত ঘড়ির কাঁটা তখন সাতটা ছুঁই ছুঁই । সারাদিনের ক্লান্তি আর ধকলের কারণে বাস চাকা গড়াতে শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঘুম দিলাম। মাঝরাতে খাবারের বিরতিতে আমার ঘুম ভাঙল। ক্ষুধা না থাকলেও বাথরুম ব্যাবহার করাটা তখন একরকম জরুরীই ছিল। জরুরী ভিত্তিতে জরুরী প্রয়োজন সেরে আবার বাসে উঠে বসলাম। কয়েকজনের সাথে কথা বলে একটু ভয় পেলাম আর মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ালাম আট ঘণ্টা সময় হাতে রেখে রওনা করার জন্য। লুতফিকেও ফোনে ধন্যবাদ দিলাম। স্থানীয়দের কথা শুনে পুরা ট্রিপে প্রথমবারের মত একটু ভয় পেলাম কারণ হচ্ছে তারা আমাকে জানালো যে আমরা এখনও জাকার্তার এক তৃতীয়াংশ রাস্তাও পার হতে পারি নি। বাস চলতে শুরু করলে আল্লাহর নাম নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন আমরা একটা পাহাড়ি খাড়া পথে ঢালু হয়ে বাস দাঁড়ানো। ভাবলাম হয়তো জাকার্তার কাছাকাছি চলে এসেছি বলেই এই জ্যাম। বাইরে তাকিয়ে সূর্যের অবস্থান দেখে বোঝার চেষ্টা করছিলাম সময় কত হতে পারে। কিছু না বুঝে আবার ঘুম দিলাম। ভাবলাম সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত ভাবার দরকার নাই কোনও কিছু। ফ্লাইট তো আমার পরদিন ভোরে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা তবে ঘুম ভেঙ্গেও যখন দেখলাম আমরা একই জায়গায় আছি তখন প্রথমবারের মত বুকটা কেপে উঠলো।

পরবর্তি চৌদ্দ ঘণ্টার কাহিনীতে তেমন কিছু নেই। প্রায় পুরোটাই আমি বাসে বসা। ফ্লাইট যেখানে আমার সকাল সাতটায়, আমি জাকার্তা শহরে পৌঁছলাম সকাল দশটায়। ভাল তো, ভাল না? এর মধ্যে বাসের শেষ এগারো ঘণ্টা আমার ফোনে চার্জ ছিল না। কোনওভাবে ফ্লাইট রি-শিডিউলেরও কোনও সুযোগ পেলাম না। ক্লান্ত, জীর্ণ-শীর্ণ দেহখানি বস্তার মত টেনে কোনোরকমে এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। অনেক দর কষাকষি করেও কোনও লাভ হল না। ফ্লাইট ‘মিস বলে তো মিস’। ঐদিনের কুয়ালালাম্পুরের আর যে ফ্লাইটগুলো আছে সেগুলো আমার ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাইরে। অগত্যা আমাকে জাকার্তা থেকে ঢাকা যাওয়ার পুরা টিকেটই আমাকে নতুন করে পূর্ণমুল্য পরিশোধ করেই কিনতে হল। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন আর খুবই অল্প কিছু টাকা নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে এলাম। ফেসবুক আর ভাইবারে বেশ কিছু বন্ধুদের সাথে শলা-পরামর্শ করলাম কি করা যায় এটা নিয়ে। আমার ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু বাগাস আগে থেকেই বলছিল ওর বাসায় আমি যেন অন্তত একটা রাত আমি থাকি। কথা আর কাজের মিল রেখে আমি চলে গেলাম মূল শহরের দিকে। এরপর ব্যাগটা একটা পরিচিত দোকানে রেখে শুধু ওয়ালেট আর পাসপোর্ট নিয়ে বের হয়ে গেলাম শহর ঘুরতে। প্রথম দুই দিন অসুস্থতার জন্য খুব বেশি একটা ঘুরে দেখতে পারি নি জাকার্তা। সুযোগ যখন এসেছে, এর সদব্যাবহার তো করতেই হবে। বাসে করে চলে আসলাম গাম্বির ষ্টেশন। সেখান থেকে গোজেক বাইক ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসলাম ইস্তিকলাল মসজিদ। এটি ইন্দোনেশিয়ার সর্ববৃহৎ মুসলিম উপাসনালয়।

ইস্তিকলাল মসজিদের সুউচ্চ মিনার

অন্য ধর্মের লোকেরাও গায়ে রোব কিংবা আলখেল্লা চাপিয়ে ভেতরে যেতে পারেন। জুতা জমা রেখে সিঁড়ি দিয়ে দুইতলা বেয়ে নামাজের মুলস্থানে গেলাম। সুবিশাল মসজিদের ঠিক মাঝখানে ঝুলে আছে এক দানবাকৃতির পেন্ডুলাম। তার উপরে মসজিদের গম্বুজের প্রায় পুরোটা প্রস্থ জুড়ে আছে একটা ঝাড়বাতি।

এই মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা করা স্থান রয়েছে। এরপর লবিতে ফীরে গিয়ে লবি এবং আশেপাশের আরও কিছু ছবি তুললাম। ইস্তিকলাল মসজিদ থেকে বের হয়ে ঢুকলাম জাকার্তা ক্যাথেড্রাল। ক্যাথেড্রালটা ইস্তিকলাল মসজিদের ঠিক উল্টোপাশে অবস্থিত।

জাকার্তা ক্যাথেড্রালের অভ্যন্তরে।

অনুমতি নিয়ে প্রার্থনাকক্ষে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসে রইলাম। কিছুক্ষণ সময় পার করে গোটা দশেক স্ন্যাপ নিয়ে বের হয়ে আসলাম। এরপরের গন্তব্যের নাম ন্যাশনাল মনুমেন্ট। এটিকে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তার প্রতিক বলা যায়।

খুব সম্ভবত ডাচ উপনিবেশ থেকে বেড়িয়ে এসে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ব্যাপারটিকেই এই মনুমেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। (নট শিওর, সাইটেশন প্রযোজ্য) গুগল ম্যাপে ইস্তিকলাল মসজিদ থেকে খুব কাছে দেখালেও প্রবেশপথটা পেতে বেশ কিছুটা ঘুরে আসতে হল। ঘণ্টাখানেক থেকে সন্ধ্যা নামার পর আবার রওনা করলাম এয়ারপোর্টের দিকে। বাগাস পালেম্বাং থেকে ফীরে এয়ারপোর্টেই আমরা একত্র হলাম। এরপর ওর সাথে ওর বাসায় গিয়ে উঠলাম। আন্টি আমাদের দুইজনের জন্য প্রচুর খাবার দিয়ে দিয়েছিলেন বাগাসের কাছে। অনেকদিন পর ঘরোয়া রান্না পেয়ে গোগ্রাসে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেলাম। খাওয়াদাওয়া শেষে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে শুয়ে ঘুম দিলাম।

ভোর সোয়া পাঁচটায় আমাকে ঘুম থেকে ওঠালো বাগাস। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হতে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ওর বাসা থেকে বের হলাম। এরপর দুইবার বাস বদল করে পৌঁছে গেলাম বাগাসের কর্মস্থল। যেতে যেতে বাগাসের কথা শুনে আমার চোখ ছানাবড়া। ওদের অফিস নাকি সকাল সাতটা থেকে শুরু। তাও আবার সরকারী অফিস। ওর এই কথা শুনে উত্তর দেয়ার কোনও ভাষা খুঁজে না পেয়ে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম শুন্য দৃষ্টি নিয়ে। আমাদের মতই ঈদের পর প্রথম দিন ওদেরও অফিস-আদালত বেশ ঢিলাঢালাই হয় মনে হল। সবাই সবার সাথে লাইন ধরে কুশল বিনিময় করলো। এরপর আনুমানিক সাড়ে নয়টায় আমি, বাগাস আর উয়িদি মিলে বের হলাম। উয়িদি বাগাসের কলিগ এবং বন্ধু বিশেষ। গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে বাগাস আমি আর উয়িদি ছুটে চললাম। আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল জাকার্তা বিজনেস ডিসট্রিক্ট।

বিশ্ববিখ্যাত হার্ড রক ক্যাফের জাকার্তা শাখা।

সেখান থেকে হার্ড রক ক্যাফে (Hard Rock Cafe) হয়ে আমরা জাকার্তা ম্যানগ্রোভ রিজার্ভের (Jakarta Mangrove Forest) দিকে এগোলাম। পথে জাকার্তা নতুন ব্রীজ ( যা নবনির্মিত কৃত্তিম দ্বীপের সাথে জাকার্তা শহরের সংযোগ স্থাপন করে) এবং সু চিঁ (বুদ্ধিস্ট মিশনারী স্কুল এবং ইয়াতিমখানা) দেখে নিলাম।

টিকেট কাউন্টারে বাগাস আমাকে কথা না বলতে ইশারা করল। আমিও বাধ্য ছেলের মত ওর উপদেশ শুনে ঘাপটি মেরে পেছনের সীটে বসে রইলাম। একটু পরেই বুঝলাম এর মোজেজা। বিদেশীদের জন্য টিকেটের দাম প্রায় ছয়গুন। এই জন্য আমাকে লোকাল বলে চালান দেয়া হয়েছে বলে পরে জানতে পারলাম।

জাকার্তার সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বন।

পরের একটা ঘণ্টা চমৎকার একটা সময় কাটিয়ে এরপর আমরা অগ্রসর হলাম জাকার্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে। নিশ্চই আমি এবার আর ফ্লাইট মিস করতে চাই না। দুপুরের খাওয়াটা একসাথে সেরে এবার বিদায় জানাবার পালা। বাগাস আর উয়িদিকে বিদায় জানিয়ে সকল ফর্মালিটি শেষ করে অবশেষে এয়ার এশিয়ার কুয়ালালামপুরগামী ফ্লাইটে উঠলাম।

এরপর কুয়ালালামপুর নেমে চার ঘণ্টার ট্রান্সিট নিয়ে রাত বারোটায় অবতরণ করলাম হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আপাতত এতটুকুই, হয়তো বা আবারো দেখা হবে অন্য কোনও দেশে।

জানা থাকা ভাল

মুদ্রা বিনিময় মানঃ ১ টাকা = ১৫৬ ইন্দোনেশিয়ান রুপাইয়া। ওষুধপত্র যদি লাগে ঢাকা থেকে কিনে নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে কিনতে গেলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে। ধর্ম নিয়ে কোনও ধরণের মন্তব্য না করাই ভাল। ইন্দোনেশিয়াতে ধর্মীয় সম্প্রীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং পারতপক্ষে তারা ধর্মীয় বিষয়াবলী নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না।

জরুরী কিছু ইন্দোনেশিয়ান শব্দ/বাক্য

ট্রেন = কেরাতা আপি
থামুন = বেরহেন্তি
কি খবর? ভাল আছেন? = আপা কাবার?
সাধারণ পরিবহন (যা সবাই ব্যাবহার করতে পারবেন) = পারসিয়ারান
আপনার নাম কি? = সিয়াপা নামা আন্দা?
আমার নাম অনিক = নামা সায়া অনিক
আমার দেশে বাংলাদেশ/আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি = সায়া দারি বাংলাদেশ
না আমি এমনিই হাঁটাহাঁটি করছি (ট্যাক্সি ড্রাইভাররা বিরক্ত করলে) = জালান জালান
প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না = মাফ তিদাক
ধন্যবাদ = সেলামাত দাতাং
আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো = সেনাং বারতামু দাঙ্গান আন্দা
আপনার যাত্রা শুভ হোক = সেলামাত জালান
আপনার কথা বুঝতে পারছি না = সায়া তিদাক মেঙ্গেন্তি
আপনি ইংরেজি/ইন্দোনেশিয়ান বলতে পারেন? = আন্দা বিসা বিচারা বাহাসা ইংগ্রিস/ইন্দোনেশিয়া?
জি অল্প অল্প পারি = ইয়ে, সেদিকিত
ওয়েলকাম = তেরিমা কাসিহ

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ indonesiajavatravel story