প্রথমেই একটা জিনিস পরিস্কার করে নেই, আমি কোন ট্রাভেল এজেন্ট এর মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া যাই নি। সম্পূর্ণভাবে গুগল এবং ট্রিপ এডভাইজার (TripAdvisor) এর সাহায্য নিয়ে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছিলাম।
বালি যাওয়ার জন্য আমি বেছে নিয়েছিলাম Malindo Air কে। টিকেট বুক দিয়েছি সরাসরি ওদের ওয়েবসাইট থেকে ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে। সাধারণত বালি যাওয়ার জন্য আপনাকে মালয়েশিয়া হয়ে যেতে হবে। প্রথমে ঢাকা টু কুয়ালালামপুর (আনুমানিক ৩ ঘন্টা)। সেখানে ৩/৪ ঘন্টার ট্রানজিট এর পর কুয়ালালামপুর টু বালি (আরো ৩ ঘন্টা)। আমার ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ সময় রাত ১২:৫০ এ। আমি বালিতে পৌছায় দুপুর ১টায় (বালি সময়)।
খরচঃ চেষ্টা করবেন কমপক্ষে ১ মাস আগে বুকিং দিতে। যত আগে কাটবেন তত খরচ কম পড়বে। ভাড়া জনপ্রতি গড়ে ৩০০০০-৩৫০০০ টাকা (রাউন্ড ট্রিপ)
টিপসঃ প্লেনের খরচ, সময় ইত্যাদি বিস্তারিত জানার জন্য skyscanner.net নামক ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করতে পারেন।
ইন্দোনেশিয়া গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশীদের জন্য চালু করেছে অন-এরাইভাল ভিসা। মানে নামলেই ভিসা। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। নামার পর জিজ্ঞাসা করেছে কত দিন থাকবো। ব্যস, দিয়ে দিল ৩০ দিনের ভিসা মাত্র ৫ মিনিটে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনেও খুব বেশি সমস্যা হয় নি। তারা শুধূ রিটার্ন টিকেটের কপি দেখতে চেয়েছে। তবে, ফ্রেশ পাসপোর্ট হলে একটু বেশি প্রশ্ন করতে পারে, আটকানোর কথা না যদি আপনার গতিবিধি খুব বেশি সন্দেহজনক না হয়। পুরো ট্যুরে আমার কোথাও কোন ডকুমেন্টস লাগে নি। তবে, সতকর্তাস্বরূপ, আমি ২০০ ডলার এনডোর্স করিয়েছি, এনডোর্স সার্টিফিকেট সাথে রেখেছি। এছাড়া, পাসপোর্টের কয়েকটি কপি, এনঅাইডি কপি, কয়েক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, হোটেল বুকিংয়ের প্রিন্টেড কপি এবং ই-টিকেটের কপি সাথে রেখেছিলাম।
খরচ
ফ্রী। ভিসার জন্য ওরা কোন ফী নেয় না।
বালিতে আমি ১ রাত থেকেছি Ubud এলাকায় এবং বাকি ৩ রাত থেকেছি Kuta এলাকায়।
উবুদে আমি ছিলাম “Aya’s Room” নামক রিসোর্ট এ। বুকিং দিয়েছিলাম booking.com থেকে (http://bit.ly/2ebulrU)। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। রুম বড় ছিল, এসি করা ছিল, বাথটাব সহ বাথরুম এবং Well-decorated ছিল। সাথে ছিল সকালের ফ্রী নাস্তা দু’জনের জন্য।
খরচ – ৪ লক্ষ রুপিয়াহ (বাংলাদেশি ১ টাকায় প্রায় ১৬২ রুপিয়াহ)
তারপর কুটাতে আমি ছিলাম Home@36 Condotel নামক হোটেলে। বুকিং দিয়েছিলাম agoda.com থেকে (http://bit.ly/2e7YyuI)। টাকা অগ্রিম পে করতে হয়েছে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। এদের হোটেলটি একেবারে বীচের সাথে। ছবি দেখলেই বুঝবেন। রুম ভালো ছিল, এসি করা ছিল এবং দারুন ভাবে সুসজ্জিত ছিল। সাথে ছিল সকালের ফ্রী ব্যুফে নাস্তা দু’জনের জন্য।
খরচ – আনুমানিক ২৮-৩০ ডলার প্রতি রাত। হোটেল রুমের ছবি উপরের লিংকগুলোতেই দ্রষ্টব্য।
যেহেতু সকালের খাওয়া হোটেল থেকে দিয়েছে তাই আমাদের খরচ হয়েছে বাকি দু’বেলা নিয়ে।
উবুদে আমরা খেয়েছিলাম Queens of India নামক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট এ। খরচ হয়েছে মোটামুটি ৬ লক্ষ রুপিয়াহ।
কুটাতে হোটেল সংলগ্ন রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন ২০% ছাড়ে। অথবা বাইরেও খেতে পারেন। দু’জনের জন্য প্রতিবেলা খাওয়ায় আপনার মোটামুটি ৪ লক্ষ রুপিয়াহ খরচ হতে পারে।
খাওয়া-দাওয়ার কিছু ছবি এখানে দিলাম
এয়ারপোর্টে নেমে যদি আপনি দরদাম না করে আরামে চলে যেতে চান গন্তব্যে, তবে এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি সেন্টার আছে। ওদের ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। এয়ারপোর্ট থেকে উবুদ যেতে আমাদের খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ রুপিয়াহ (প্রায় দেড় ঘন্টার যাতায়াত)
আমরা যা যা করেছি তা নিচে তুলে দিচ্ছি। জরুরী নয় যে এভা্বেই করতে হবে। তবে আমরা যতটুকু সম্ভব অধিকাংশ জিনিস কভার করার চেষ্টা করেছি।
প্রথম দিন – প্রথম দিন ইমিগ্রেশন শেষ করে উবুদে গিয়ে হোটেল উঠে ফ্রেশ হতে হতে বিকাল ৪টা বেজে যায়। আমরা বের হয়ে একটি ইন্ডিয়ান হোটেলে হালকা খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। হোটেলের আশেপাশে কিছু মন্দির-দোকান এবং দর্শনীয় স্থান ছিল। সেগুলো পায়ে হেটে ঘুরে ৮টার মধ্যে হোটেলে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ি।
দ্বিতীয় দিন – Live Volcano Trekking এর জন্য আপনাকে নিতে গাড়ি আসবে রাত ২টায়। সেখান থেকে ট্রেকিং শুরু স্পটে যেতে যেতে প্রায় ৩:১৫ বেজে যায়। সেখানে চা-কফি খেয়ে ট্রেকিং শুরু করতে হয়। উদ্দেশ্য উপরে উঠে সূর্যোদয় দেখা। তারপর হোটেল ওরা পৌছে দিলে সকালের নাস্তা খেয়ে আমরা ১টি টেক্সি দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভাড়া করি। টার্গেট হচ্ছে হোটেল একেবারে চেক-আউট করে উবুদের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে একেবারে কুটাতে চলে যাওয়া।
এদিনে আমরা প্রথমে যাই, Monkey Forest (চারিদিকে শুধু বানর আর বানর দেখবেন)। সেখান থেকে চলে যাই Rice Field দর্শনে। ভাবছেন, ধানক্ষেত দেখার কি আছে। এটার একটি বিশেষত্ব আছে। ছবির অ্যালবাম দেখলে বুঝে যাবেন। তারপর সেখানে থেকে যাই Bali Purina নামক একটি কৃষি ফার্ম এ। এখানে কফি তৈরি করা হয় এবং আপনাকে ৭ রকমের কফি ফ্রীতে খেতে দিবে। খাওয়ার পর আপনি চাইলে চলে আসতে পারেন কিংবা বালি স্পেশাল কফিগুলো কিনতে পারেন। তারপর সেখান থেকে আমরা আরো দুটো Temple ভিজিট করে কুটাতে চলে আসি।
এসে হোটেলে চেক-ইন করে হোটেলের বীচ সংলগ্ন রেস্টরেন্টে দুপুরের খাবার সেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীচে কাটিয়ে রাতে সুইমিং পুলে সুইমিং সেরে আবারো বীচের পাশে রাতের খাবার খেয়ে রুমে ব্যাক করি। (সত্যি বলতে বীচের পাশে বসে খাওয়াটা অনেক বেশি উপভোগ্য ছিল)।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিন এর ঘুরাঘুরির কিছু ছবি এখানেঃ http://bit.ly/2dmlDW2
তৃতীয় দিনঃ তৃতীয় দিনে আমরা রওনা দেই বালির বিখ্যাত কিছু Temple এবং আরেকটি কফি ফার্ম দেখার জন্য। তন্মধ্যে Tanah Lot, Bali, Indonesia অন্যতম। এর সৌন্দর্য ব্যাখ্যাতীত। পাশাপাশি Black Beach এর হালকা ফ্লেভারও পেয়ে যাবেন এখানে। এসব টেম্পল গুলোর ছবি পাবেন এখানে। আশা করি, ছবিগুলো কথা বলবে। এ কয়েকটি ঘুরতেই আপনার দিন পার হয়ে যাবে।
চতুর্থ দিনঃ পুরো ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিন ছিল এটি। কারণ আমরা যাচ্ছিলাম Marine Walk করতে। ৯৫ ডলারের এই প্যাকেজে যা যা ছিলঃ
– হোটেল থেকে পিকআপ
– একজন ট্যুর গাইড
– মূল আইল্যান্ড থেকে Lembongan Island পর্যন্ত স্পীডবোট রাইড (রীতিমত রোলার কোস্টার রাইড বলতে পারেন)
– আইল্যান্ড এর কাছাকাছি ওদের বোট থেকে Underwater Walking, Snorkeling, Banana Boat Ride, Water slides into the sea এই তিনটি জিনিস করানো।
– তারপর বোট থেকে আইল্যান্ডে যাওয়া।
– গাড়ীতে করে আইল্যান্ড ভ্রমণ এবং উপর থেকে প্যানোরমা ভিউ দর্শন।
– দুপুরের বুফ্যে খাবার
– Sea Kayaking
– Crystal Clear Swimming Pool Activity
– তারপর আবার মূল আইল্যান্ডে নিয়ে আসা
– হোটেল পৌছে দেয়া।
পনাকে রওনা দিতে হবে সকাল ৭টার মধ্যে এবং একটিভিটিগুলো শেষ করে ব্যাক করতে হবে ২:৩০ এর মধ্যে। Underwater Walk এ আপনার ছবি তুলে দিবে। সেক্ষেত্রে আলাদা খরচ দিতে হবে। আমাদের বেলায় ৫০০ ছবি তুলে দিছে এবং ২ লক্ষ রুপিয়াহ নিয়েছে। হোটেলে ফিরে এসে আমরা একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যায় কুটা শহর পদভ্রজে ভ্রমণে বের হই।
পঞ্চম দিন – খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পুনরায় বীচে চলে যাই। সমুদ্রস্নান শেষে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের ঘুরাঘুরির কিছু ছবি এখানেঃ http://bit.ly/2dIyJxG
১। ইন্দোনেশিয়াতে মুদ্রাস্ফীতি বেশী হওয়ায় জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি। তাছাড়া ওদের নিজস্ব প্রোডাক্ট কম। তবে, ওদের স্পেশাল প্রোডাক্টের মধ্যে কফিটা অন্যতম। ওটা কিনতে ভুলবেন না বিশেষ করে Luwak & Ginseng কফি। তাছাড়া, ওদের মরিচ ঝালের জন্য বিখ্যাত এবং জাফরান কিনতে পারেন যা খুবই সস্তা। আর এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী শপে কিছু স্পেশাল সাবান এবং চাবির রিং পাওয়া যায় কিনতে পারেন।
২। সাধারণ দোকান থেকে কিনলে দামাদামি করে কিনবেন। ওরা যা বলবে তার থেকে ৫০ ভাগ কম দাম বলবেন।
৩। চকলেট এবং সাবানের জন্য আমি বলবো মালয়েশিয়াতে ট্রানজিটকালীন কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী শপ থেকে কেনার জন্য।
Leave a Comment