আসাম ভ্রমণ – পর্ব-১ (গৌহাটি)

২৭ আগস্ট, ২০১১, শনিবারঃ

ডাউকি বাজার

তামাবিল সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ডাউকিতে যখন পা রাখলাম, ঘড়িতে বাংলাদেশ সময় তখন দুপুর দু’’টা বাজে। স্থানীয় খাসিয়া ড্রাইভার টাই অনেকক্ষণ থেকেই আমার পিছে ঘুরঘুর করছিল। উদ্দেশ্য হলো, আমাকে তার মারুতি ৮০০ সিসির গাড়িতে শিলং পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। কাস্টমস-এর ফরম্যালিটিজ শেষ করে দেখি তখনও ব্যাটা দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্যে। শিলং পর্যন্ত দাম চাইছে ১৫০০ রূপি। অবশেষে ১২০০ রূপিতে রাজী হলো। সাথে থাকা মালামাল ওর গাড়িতে উঠিয়ে এক কিলোমিটার সামনে ডাউকি বাজারে এসে থামলাম আমরা। দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম ওখানেই।

বেশ কিছুদিন থেকেই ভাবছিলাম ভারতের আসাম আর মেঘালয় রাজ্য ঘুরে আসলে মন্দ হয়না। এবারের ঈদের বেশ বড় ছুটিটা তাই কাজে লাগালাম। আমার খুব কাছের বন্ধু মারুফ, মনসুন সিং আর রুবুলের বাড়ি আসামেই। বাংলাদেশ থেকে যাবার আগেই তাই ওদের সাথে পুরো ট্যুরটা প্ল্যান করে নিয়েছিলাম। এবার ভারতের দুটো রাজ্য ঘুরলাম: আসাম এবং মেঘালয়। আসামের ২৭ টা জেলার মধ্যে কামরূপ জেলার ’গৌহাটি’ আর আসামের রাজধানী ’দিশপুর’ শহর, ন’গাঁও জেলার ’ন’গাঁও’ শহর আর কারবি অংলং জেলার ’ডিফু’ শহর ঘুরলাম। মেঘালয় রাজ্যের ৭ টা জেলার মধ্যে ঘুরলাম ’চেরাপুঞ্জি’ আর মেঘালয়ের রাজধানী ’শিলং’।

ডাউকি ব্রিজ যা জাফলং থেকে আমরা দেখে থাকি

দুপুরের খাওয়াটা দ্রুত শেষ করে টাই-এর গাড়িতে ডাউকি বাজার থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরের শিলং-এর পথে যখন রওনা হলাম, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে তখন। শুরুতে প্রায় ঘন্টা খানেক রাস্তা বেশ কিছুটা খারাপ। টাই জানালো, শিলং থেকে ডাউকি বর্ডার পর্যন্ত চার লেনের রাস্তার কাজ চলছে। দক্ষহাতে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছে টাই।

পথের দু’ধারের অবর্ননীয় সৌন্দর্য

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগলো। দেখলাম, মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়েছি আমরা। বৃষ্টির ধারা বেড়ে গেল। একরাশ মেঘ এসে পুরো ঢেকে দিয়েছে আমাদের। এক হাত দুরের জিনিসও তখন দেখা যাচ্ছেনা। এভাবে বেশ খানিকটা পথ চলার পর মেঘ কেটে গেল, বৃষ্টিও থেমে গেল। পথের দু’’ধারের পাহাড়ী উপত্যকা আর ঝর্ণার অবর্ণনীয় সৌন্দর্য দু’’চোখ ভরে দেখতে লাগলাম। নতুন কেনা Nikon D90 ক্যামেরা দিয়ে তুলতে থাকলাম একের পর এক ছবি। যাবার পথে পাইনুরসিলা, লাইলংকোট, মিল্লিম পার হলাম। ছোট ছোট এ বাজারগুলোর বাড়ি-ঘর আর মানুষগুলো ছবির মতোই সুন্দর।

শিলং-এর পথে

বিকাল পাঁচটায় টাই আমাকে নামিয়ে দিল শিলং শহরের গৌহাটি যাবার ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ডে। ওর মোবাইল ফোন দিয়েই মারুফের সাথে কথা বলে নিলাম। মারুফ জানালো গৌহাটি শহরের ’’খানাপাড়া’’ এলাকায় যেন আমি চলে আসি। অতএব আর দেরী না করে গৌহাটীগামী একটি মারূতি-সুজুকি ওয়াগন-আর গাড়িতে আরও পাঁচ জনের সাথে শেয়ারে উঠে পড়লাম ২৫০ রূপি ভাড়াতে। এবারের ড্রাইভার আব্দুল কাইয়ুম।

নয়নাভিরাম পথের দৃশ্য

পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম আমরা। শিলং থেকে গৌহাটীর এ প্রচণ্ড ব্যাস্ত রাস্তাতেও দেখলাম চার লেনের কাজ চলছে। আস্তে আস্তে শিলং-এর ঠাণ্ডা থেকে আসামের গরমের মাঝে ঢুকলাম। সারাদিনের জার্নিতে প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে। গাড়িতে একটু ঝিমুনি এলো। কাইয়ুম এর ডাক শুনে বুঝলাম, পথের ধারে এক ধাবাতে (রেস্টুরেন্ট) সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে। ওখানে অখাদ্য এক চিকেন ফ্রাইড রাইস আর চা খেয়ে আবার রওনা হলাম আমরা।

পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা

গৌহাটি শহরে পৌঁছানোর পর খানাপাড়াতে আমাকে নামিয়ে দিল কাইয়ুম। ওখান থেকে অটো ধরে রাত ৯ টায় পৌঁছে গেলাম জি.এস রোডের ’সোহাম’ শপিং মলের বিপরীতে ’’দি ধাবা’’ এর সামনে। ক্লান্ত এবং বিধ্বস্ত আমি। কিন্তু মারুফের দেখি কোন খোঁজ নেই। মারুফকে ফোন করার জন্যে এদিক ওদিক পি.সি.ও ফোনের দোকান খুঁজতে লাগলাম। এখানে অহমীয়া (আসামের ভাষা) ছাড়া বাংলা তেমন কেউ একটা বুঝেনা। রাত প্রায় সাড়ে ন’’টা বাজে। সব দোকান ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেশ খানিকটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। উপায়ন্তর না দেখে ’’দি ধাবা’’তে ঢুকে পড়লাম। রিসেপশন ডেস্কে বসা ম্যানেজারকে ইংরেজি-হিন্দী মিলিয়ে বুঝিয়ে বললাম যে, মারুফ আমার বন্ধু এবং তাকে আমার একটা ফোন করা দরকার। ভদ্রলোক হাসিমুখে মারুফকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখি মারুফ তার খালাতো ভাই জাহিদকে নিয়ে উপস্থিত। তারপর তিনজন মিলে এখানেই রাতের খাওয়া সেরে চলে গেলাম কাছেই ’খ্রীস্টান বস্তি’ এলাকায় জাহিদের এপার্টমেন্টে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা চললো মারুফ আর জাহিদের সাথে। আড্ডার ফাঁকেই পরের দিনগুলোর ট্র্যাভেল প্ল্যান রেডি করে ঘুমের অতল রাজ্যে হারিয়ে গেলাম সবাই।

গৌহাটি শহর
Leave a Comment
Share