ডুয়ার্স ভ্রমণ – গরুমারা, চাপরামারি, জলদাপাড়া, খয়েরবারি, লাভা এবং রিশপ

একটি খুব সুন্দর, সংক্ষিপ্ত আর ছিমছাম ভ্রমণ করে এলাম – উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স থেকে। চারটি জঙ্গল – গরুমারা, চাপরামারি, জলদাপাড়া আর খয়েরবারি, দুটি পাহাড়ী এলাকা – লাভা আর রিশপ, সঙ্গে বিভিন্ন নদী কেন্দ্রিক স্থান – সামসিং, সুনতালেখোলা, মূর্তি, ঝালং, বিন্দু – সব মিলিয়ে যাকে বলে একেবারে কম্প্যাক্ট ট্যুর এর ব্যবস্থা ছিল।

যাত্রা শুরু হল শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিং মেলে – নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে। অবশ্য আরও কিছু সহযাত্রী রওনা হয়ে গেছেন আগেই – কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে, তাঁরা নামবেন নিউ ম্যাল স্টেশনে – ২০১৬ এর ২২ অক্টোবর সকালে। দুটি স্টেশনেই গাড়ী থাকবে – সবাই গিয়ে একত্রিত হবেন লাটাগুড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে চালসা (Chalsa) এর কাছে একটি রিসোর্টে – যেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা তিন দিনের জন্যে ।

পরের দিন সকালে ট্রেন পৌঁছল নিউ জলপাইগুড়িতে, ঘণ্টা খানেক মত দেরীতে। স্টেশনে মজুত তিনটে গাড়ী। গাড়ী নিয়েই যাওয়া হল – কাছেই কৃষ্ণা হোটেলে সকালের নাস্তার জন্য। চা-এর সঙ্গে যে যার পছন্দ মত খাবার বেছে নিলেন – আলু পরোটা, লুচি-তরকারি, ডিম-পাউরুটি, বা ইডলি – ধোসা।

সকালের নাস্তার পর এবার সোজা গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়া আমাদের তিন দিনের সাময়িক আবাসের দিকে। জায়গাটা লাটাগুড়ি থেকে দশ কিলোমিটার মতো দূরে – যেতে সময় লাগবে প্রায় দু ঘণ্টা। আর রাস্তাটা কিন্তু ছবির মত সুন্দর। দুপাশে সবুজ গাছ গাছালি, তার সঙ্গে বয়ে চলা জলের ধারা – আর দূরে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়। ধুসর সেই পাহাড়ের পিছনেই আরও আছে বরফে ঢাকা সাদা পাহাড় – কিন্তু তারা আবার অনেক সময়েই ঢাকা থাকে মেঘের আড়ালে। সেই মেঘ আর সেই পাহাড়ের ইচ্ছে না হলে পথিক দর্শন পায় না সেই তুষার শুভ্রতার। আমরাও পাই নি – কিন্তু আড়ালে তিনি আছেন, হয়ত মেঘ একটু সরে গেলেই ঝিলমিলিয়ে উঠবেন তাঁর শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য নিয়ে – এই ভাবনাটাও তো মনের চোখকে সবসময় সজাগ করে রাখে।

দুপাশে এই ছবির মতো দৃশ্যের মাঝখানে ছবির মতই সুন্দর রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে একসময় আমরা পেরিয়ে গেলাম তিস্তা ব্যারেজ। কি বিশাল নদী আর তার ওপরে কি বিরাট ব্যারেজ। সেভক রোডের পাশে পাশে, কালিম্পং যাওয়ার পথে পথে, করোনেশন ব্রীজের তলা দিয়ে যে বয়ে যাওয়া তিস্তাকে আমরা দেখি – এ তো সে তিস্তা নয়। সে তিস্তা প্রচণ্ড বেগে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে চলা এক পাহাড়ী নদী – কিন্তু অনেকটাই সরু। এখানে সেই তিস্তাই হয়ে গেল এক বিশাল নদী – আর বিপুল তার প্রস্থ। সত্যি, যারা এই দুই তিস্তাকেই দেখেছেন – তাঁদের প্রথমেই একটু চমক লাগবে বই কি !

তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে ছুটে চলছে গাড়ি

আমরা চলেছি আমাদের রিসোর্টের দিকে। মন হয়ে যাচ্ছে শিশুর মত – অজানাকে জানার আর অদেখাকে দেখার আগ্রহে। সেখানেও নিশ্চয়ই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারব সবুজ প্রকৃতির মাঝখানে।

নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তিস্তা ব্যারেজ পেরিয়ে প্রায় দু ঘণ্টার পথ উজিয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম আমাদের রিসোর্টে। সামনেই গাড়ী চলার পাকা রাস্তা – সেই রাস্তার পাশে বিস্তীর্ণ চা-বাগান, আর সেই চা বাগানের পাশেই আমাদের রিসোর্ট, সুন্দর পরিবেশে। ঠিক লাটাগুড়িতে নয়, সেখান থেকে দশ কিলোমিটার মত দূরে, চালসা মহাবাড়ী অঞ্চলে – গরুমারা জঙ্গল (Gorumara Forest) এলাকার পাশেই। এই এলাকায় সব কটি থাকার জায়গাই ঠিক সাধারন হোটেলের মত শুধু একটি মাত্র বিল্ডিং নিয়ে নয় – বরং অনেকগুলি ছোট বড় বাড়ী বা কটেজ, অনেকখানি বাগান, নানারকম ফুলের গাছ, ছোটদের খেলার জায়গা – এই সবকিছু নিয়েই এখানকার এক একটি হোটেল বা রিসোর্ট। প্রকৃতির মাঝে বেশ অনেকখানি জায়গা জুড়ে বেশ হাত পা ছড়িয়ে থাকার ব্যবস্থা এখানকার প্রতিটি রিসোর্টেই। আমাদের থাকার জায়গাটিও সেইরকম। ভেতরে দুটি বড় বাড়ীতে – বিভিন্ন ধরণের ঘর, সামনেই বাগান – আর সেই বাগানের অন্যদিকে আবার চারটি আলাদা কটেজ। তার মধ্যে দুটি কটেজে বাঁশের কাজ। অন্য একটি বাড়ীতে ডাইনিং হল, কনফারেন্স রুম ইত্যাদি। সব ঘরেই টিভি, কিছু ঘরে এসি, গীজার অর্থাৎ আধুনিক স্বাচ্ছন্দের সব আয়োজনই মজুদ – কিন্তু প্রকৃতিকে দূরে সরিয়ে নয়। ওঁদের নিজস্ব বাগান খুব সুন্দর – নানা ধরণের ছোট বড় গাছ, গাছের কেয়ারী করা রাস্তা, বাগানে বাচ্চাদের দোলনা, পাখির খাঁচা, নিজস্ব হাঁস মুরগীর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। বাগানের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তাদের প্যাঁক প্যাঁক আওয়াজ শুনতে শুনতে মনটা ভারী হাল্কা হয়ে যায়। তার ওপর আছে বাগানের মধ্যেই বাঁধানো বসার জায়গা আর আছে একটা উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। সেই টাওয়ারে উঠে চারদিকের চা বাগান, সেই বাগানের অপর প্রান্তে ভোরের সূর্যোদয় – সব কিছুই দুচোখ ভরে দেখে নেওয়া যায়। সব মিলিয়ে বেশ ভালই আমাদের থাকার ব্যবস্থা।

চালসায় আমাদের রিসোর্টের বাগানে বাঁধানো বসার জায়গা, ওয়াচ টাওয়ার আর ঠাকুর ঘর।

রিসোর্টে পৌঁছে খুব বেশী সময় কিন্তু পাওয়া গেল না। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তৈরি হয়ে পৌঁছে যেতে হল খাবার জায়গায়। কিন্তু তৃপ্তি করে খেতে গিয়ে সময় নষ্ট করার মত সময় তখন আমাদের নেই। কারণ ততক্ষণে রিসোর্টে এসে পোঁছে গেছে জঙ্গল দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারটি জিপ – এক একটি জিপে ৬ জন করে যাত্রীকে নিয়ে তারা যাবে গরুমারা জঙ্গলে।

গরুমারা জঙ্গলের অনেকগুলি প্রবেশ দ্বার – তার মধ্যে একটি আমাদের রিসোর্টের বেশ কাছেই। তবে এগুলি জিপের জন্য বরাদ্দ – হাতিতে চড়ে যাওয়ার গেট আলাদা। আমাদের ব্যবস্থা ছিল জিপের – এক একজনের জন্যে প্রবেশমূল্য ৪০০/- টাকা করে। রিসোর্ট থেকে আগেই পুরো গ্রুপের টিকিটের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল – তার জন্য অবশ্য তাদের অল্প কিছু অতিরিক্ত দিতে হয়েছিল আমাদের। জঙ্গলে প্রবেশের এই যে টিকিটমূল্য – এগুলি কিন্তু প্যাকেজের মধ্যে নয় – সেটা প্রথম থেকেই পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর জঙ্গলে ঢোকার দুটি সময় – একটি সকাল ছটা থেকে, আর অন্যটি বিকেল তিনটে থেকে। রাত শেষ হয়ে দিন শুরু হওয়ার মুখে আর আবার দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যে নেমে আসার মুখেই বন্য প্রাণীদের দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলেই এই ব্যবস্থা। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল বিকেল তিনটের স্লট।

অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম – গরুমারার গেটে। সেখানে প্রতি গাড়ীতে একজন করে জঙ্গলের গাইড উঠলেন। গাইডরা বসেন ড্রাইভারের পাশে – তাদের নির্দেশ মতই গাড়ী জঙ্গলে ঘোরে নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে। সেখানে যে কোন গাড়ী ঢুকতে পারেনা – একমাত্র জঙ্গলের জীপেরই সেখানে প্রবেশাধিকার। গাইডরা আন্দাজ করতে পারেন কোথায় বন্য জন্তু দেখার সম্ভাবনা – তাঁরা সেইমতই ড্রাইভারকে নির্দেশ দেন। যদিও বনের কোন বাসিন্দার দেখা পাওয়া সম্পূর্ণ ভাগ্যের ওপরেই নির্ভর করে, এ ব্যাপারে কেউ নির্দিষ্ট করে কোন গ্যারান্টি দিতে পারে না।

তা সেই ভাগ্যের ওপর ভরসা করেই আমরা ঢুকলাম জঙ্গলে। জঙ্গল গভীর থেকে গভীরতর হল, তার আদিম সৌন্দর্য হল ঘনীভূত, আর আমাদের উত্তেজনার পারাও লাগল চড়তে। নিস্তব্ধ জঙ্গল, মাঝে মাঝে পাখির ডাক – ইতিউতি নাম না জানা কিছু ছোট বড় পাখির ওরাউড়ি। আর, একটা আশ্চর্য শব্দ – পুরো পুজার ঘণ্টাধ্বনির মত। গভীর নিস্তব্ধ জঙ্গলের মধ্যে হঠাৎ সেই ঘণ্টা ধ্বনি শুনে চমকে উঠতে হয়। গাইডের মুখে শুনলাম – ওটা একধরণের ঝিঁঝিঁর ডাক। আমরা তো বাকরুদ্ধ – পোকার ডাক এমন অবিকল ঘণ্টা ধ্বনির মতো !! কত কি যে না জানা আছে প্রকৃতিতে।

কিন্তু বাকরুদ্ধ করে দেওয়া আসল ঘটনা তো ঘটল একটু পরেই। হঠাৎ করেই একদল হাতির মুখোমুখি আমরা। রাস্তা ঘেঁষেই জঙ্গলের মধ্যে তারা পাতা খাচ্ছিল – আমাদের দেখেই সজাগ হয়ে পড়ল অতিমাত্রায়। সবাই ক্যামেরায় ছবি তোলায় ব্যস্ত – কিন্তু গাইড দের বার বার বারণ সত্বেও কারোর ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ জ্বলে ওঠে – আর তাতেই ঘনিয়ে আসে বিপত্তি। একটি হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে সোজা জীপের দিকে তাড়া করে আসে। এই অবস্থায় দ্রুতগতিতে জীপ ব্যাক করে আসাই নিয়ম – কিন্তু সেখানে পর পর জিপের লাইন পড়ে গেছে – আমরা ছাড়া আরও অন্য গ্রুপও ছিল – তাই প্রথম দিকের জিপের অবস্থা হয়ে পড়ল সঙ্গীন – সামনে তাড়া করে আসা হাতি অথচ পেছনে ব্যাক করে আসারও কোন উপায় নেই। অন্য হাতিগুলির মেজাজও সুবিধের নয়। কিন্তু গাইডরা এই পরিস্থিতির জন্যে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত – তাই তারা সমস্বরে বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুত শব্দ ও আওয়াজ করতে লাগল, আর সেই আওয়াজের জেরেই রাস্তা ছেড়ে আবার হাতি সরে গেল জঙ্গলের মধ্যে। জঙ্গলের মধ্যে সাধারন ভাবে কোন শব্দ বা আওয়াজ করতে নেই – কিন্তু এই ধরণের পরিস্থিতিতে শিক্ষিত গাইডের বিশেষ ধরনের আওয়াজই আত্মরক্ষার উপায়।

গরুমারা জঙ্গলে সাফারিতে হাতির তাড়া

হাতি রাস্তা ছাড়তেই দ্রুত গতিতে সেই জায়গা পেরিয়ে আসা হল। দু ঘণ্টার জঙ্গল সাফারি আমাদের শেষ হল চরম উত্তেজনার মধ্যে।

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়া। প্রথম গন্তব্য সামসিং। যাওয়ার পথে কয়েকজনের অনুরোধে একটি কালী মন্দিরের সামনে দাঁড়ানো হল কিছুক্ষণের জন্যে। চালসা আনন্দময়ী কালীবাড়ী। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়ানো – বোঝাই গেল মাঝে মাঝে বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয় এখানে – তখন বেশ ভীড়ও হয় হয়তো। কিন্তু আমরা যখন গেলাম তখন শুধু পুজারী ছাড়া আর বিশেষ কেউ ছিলেন না।

এখান থেকে সামসিং (Samsing) বেশী দূরে নয় – আধ ঘণ্টার রাস্তা। ছোট্ট সুন্দর একটা জায়গা – একসঙ্গে চা বাগান, নদী আর পাহাড়ের সমাবেশ। দুপাশে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে গাড়ী এসে দাঁড়াল ভিউ পয়েন্টে – যেখানে রাস্তার একদিকে চা বাগান আর অন্যদিকে বেশ খানিকটা নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে মূর্তি নদী । আর তার পরেই সবুজ পাহাড়ের রেঞ্জ। একদিকে চা বাগানের নিস্তব্ধতা, অন্য দিকে পাথরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদীর গর্জন। একদিকে চা বাগান আর পাহাড়ের সবুজ, অন্যদিকে নদীর পাথরের ধুসরতা। স্থির পাহাড় – চঞ্চল নদী । সব মিলিয়ে সামসিং একটা ছোট্ট সুন্দর কবিতার মতো।

সামসিং থেকে ভিউ

সামসিং থেকে কুড়ি মিনিটের পথ আমাদের পরের গন্তব্য – রকি আইল্যান্ড। এখানেও সেই একই মূর্তি নদী – কিন্তু জায়গাটির রূপ আলাদা। শয়ে শয়ে ছোট বড় পাথর – সেই সব পাথরের ওপর দিয়ে, পাশ দিয়ে, ফাঁক দিয়ে বিভিন্ন ভাবে বয়ে চলেছে মূর্তি। পাথরের বাধায় জল ছিটকে যাচ্ছে চারদিকে, জলের স্রোত সাদা ফেনায় পরিণত হচ্ছে – আর বাধা পেয়ে নদীর জল থেকে গর্জন উঠছে অবিরত। এখানে চা বাগানের স্নিগ্ধতা নেই – আছে ঘন সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বেরিয়ে আসা নদীর দাপাদাপি। পাথরের ওপর পা ফেলে ফেলে নদীর কাছে পৌঁছতে হয়, সাহসীরা তার পরেও আরও পাথর ভেঙে, জলের ওপর দিয়ে লাফিয়ে চলে যান কোন বড় পাথরের ওপর – তাদের দু পাশ দিয়ে নদী বইতে থাকে – তারা নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকেন, সেলফি তোলেন। সেই মুহূর্তে হয়ত সেই পাথরটাই হয়ে যায় একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ – যার চারপাশ দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বয়ে যাচ্ছে মূর্তির জল। পাহাড়ে, পাথরে, জলেতে, ফেনাতে – এক আশ্চর্য জায়গা এই Rocky Island.

রকি আইল্যান্ড

রকি আইল্যান্ড থেকে সুনতালেখোলা (Suntalekhola) – প্রকৃতির খুব কাছাকাছি আর একটি ছবির মত জায়গা। রকি থেকে মিনিট ১৫ এর মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় সুনতালেখোলার প্রবেশ দ্বারে। প্রবেশ দ্বার বলতে বাঁশ দিয়ে আটকানো রাস্তা – তার ওপারে গাড়ী যেতে দেয় না। সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটা পথে পৌঁছতে হয় নদীর কাছে। তবে হাঁটতে না চাইলে সেখান থেকে অন্য গাড়ীও নেওয়া যায় – তারা নদীর কাছে নিয়ে গিয়ে আবার কিছুক্ষণ পরে ফিরিয়ে আনবে। যারা হেঁটে যাবেন – তারা সুন্দর গাছে ঢাকা পাহাড়ী পথে গিয়ে পৌছবেন একটি ঝুলন্ত ব্রিজের কাছে। গাড়ীও ছেড়ে দেবে সেই ব্রিজের মুখে। তারপর সেই ব্রিজ পার হওয়ার পালা। একসঙ্গে অনেক লোকের সেই ঝুলন্ত ব্রিজে ওঠা নিষেধ – একজন উঠলেই সেই ব্রিজ দুলে ওঠে। বেশ রোমাঞ্চকর অথচ মজার অনুভুতি। ব্রিজ পেরিয়ে একটু দূর গেলেই বনবিভাগের বাংলো – তাঁরাই রক্ষনাবেক্ষন করেন এই ঝুলন্ত ব্রিজের। পাশেই সেই মূর্তি নদী – এখানেও সে পাথরের ফাঁক দিয়ে দিয়েই চলেছে – তবু এখানে তার রূপ একটু আলাদা। পাথর যেন এখানে একটু কম – সবুজ অনেক বেশী। প্রকৃতি এখানে অনেক আদিম – অনেক নির্জন। ঘন গাছগাছালির মাঝে, আলোছায়ার ফাঁকে, পাতা ঝরার শব্দে, নানান পাখির ডাকে, নদীর কলকলে – সুনতালেখোলা এক আশ্চর্য আরণ্যক কানভ্যাস।

ঝুলন্ত ব্রীজ, সুনতালেখোলা

এবার আমরা রওনা হলাম লাভা (Lava) হয়ে রিশপের উদ্দেশ্যে। জঙ্গল থেকে এবারের যাত্রা পাহাড়ের দিকে। লাটাগুড়ি থেকে লাভার পথের দৃশ্য অবশ্যই সুন্দর – কিন্তু মাঝখানের কিছুটা রাস্তার অবস্থা অবর্ণনীয়। ভাঙাচোরা সেই রাস্তার ওপর দিয়ে যেতে গিয়ে হয়ত মাঝে মাঝেই বাইরের সৌন্দর্যের দিক থেকে মন চলে যায় পথের যন্ত্রণার দিকে – কিন্তু যদি চোখ রাখা যায় বাইরে, তাহলে চা বাগান, নদী, ঝর্না, পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে গায়ে ঘুরে ওঠা রাস্তা – সব মিলিয়ে বৈচিত্রে ভরপুর এই যাত্রাপথ।

লাটাগুড়ি ছাড়িয়ে মনোরম চা বাগানের মাঝখান দিয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম একটি ব্রীজের কাছে – যার তলা দিয়ে পাথর ভাঙতে ভাঙতে ছুটে চলেছে পাহাড়ী নদী – ফাফরখেতি। আগে নাম শুনিনি – কিন্তু দেখে মন ভরে গেল। একদিকে পাহাড়ী ব্রীজ, আর অন্যদিকে বেশ কিছুটা নীচ দিয়ে পাথরে পাথরে ফেনা তুলে বয়ে চলেছে সেই নদী। নদীর পারে, রাস্তার ওপর একটা পাথরের ওপর একটা ছোট্ট মন্দির।গাড়ী দাঁড়াল অনেকক্ষণ – অনেকে নীচে নেমে চলে গেল – একেবারে সেই নদীর কাছে। আধ ঘণ্টা পর সেই সুন্দর নদী তীর ছেড়ে আবার আমরা এগিয়ে চললাম লাভার দিকে।

ফাফরখেতি নদীর পাড়ে

বেশ কিছুক্ষণ পরে আমরা পৌঁছলাম লাভা। মাঝখানে রাস্তা বেশ খারাপ ছিল – কিছুটা দেরী হল তার জন্যেও। তবে পৌঁছে দেখলাম – সুন্দর জায়গা। চারপাশে সবুজ পাহাড়ের মাঝখানে ছোট সুন্দর শহর । কিন্তু ম্যাপে এর উচ্চতা দেখলাম – সাত হাজার ফিটের ওপরে – অর্থাৎ দার্জিলিঙের চাইতেও উঁচু, প্রায় ঘুমের কাছাকাছি। কিন্তু সে পরিমাণ ঠাণ্ডা কই? আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম – কিন্তু অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে আর একটু ঠাণ্ডা বোধ হয় আশা করাই যায়। কিন্তু কোন গরম জামা তো কই লাগলো না আমার – সাধারণ পোষাকেই তো দিব্যি চলে গেল।

যাই হোক – লাভার আকর্ষণ সবার কাছে এর শান্ত সৌন্দর্য আর পাহাড়ী প্রকৃতি। আলাদা করে দেখার জায়গা হিসেবে একটি মনাস্ট্রি আর অনেক দূরে একটি জলপ্রপাত। আমাদের সময় কম – তাই শুধু মনাস্ট্রিই দেখা হল। গাড়ীর রাস্তা থেকে একটি তোরণ পেরিয়ে চওড়া পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে একটু উঠলেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। একটি বিশাল চত্বরের একদিকে মূল মনাস্ট্রি, আর অন্যদিকে মস্ত বড় প্রেয়ার হল। দুটিতেই মাঝখানে ভগবান বুদ্ধের বিশাল মূর্তি – আর তার দুপাশে অন্যান্য বৌদ্ধ দেবতার মূর্তি। মূল মন্দিরে কাঁচের আলমারিতে রাখা প্রচুর দুষ্প্রাপ্য পুঁথি। মাঝখানের চত্বরে অনেক মানুষ আর মঠের সন্ন্যাসী আর ছাত্রদের ভিড় থাকলেও – ভেতরের পরিবেশ খুব শান্ত। মনাস্ট্রির বাইরে একটু নীচে নেমে গেলেই শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা আর শিক্ষা কেন্দ্র – সেই সঙ্গে সোনালী রঙের চুড়া দেওয়া কয়েকটি বৌদ্ধ স্তূপ – সূর্যের আলোয় যা ঝলমল করে। পরিষ্কার দিনে এখান থেকে ভালো করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আমরা তা দেখতে না পেলেও দুরে পাহাড়ের যে দৃশ্য দেখেছি – তাও কিন্তু কম সুন্দর নয়।

লাভা মনাস্ট্রি

লাভা থেকে এবার রিশপ। এখানে কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দেওয়া ভাল। ডুয়ার্স এর প্যাকেজ ট্যুরে সাধারণত লাভা রিশপ (Rishyap) অন্তর্ভুক্ত থাকে না। কারণ লাভা, রিশপ, লোলেগাঁও মিলে একটা ছোট সার্কিট হয় – অনেকেই দু তিন দিনের জন্য আলাদা করে ওই জায়গাগুলিতে ঘুরতে যান। তাতে জায়গাগুলির সৌন্দর্য অনেক ভাল করে অনুভব করা যায়, অনেক বেশী স্পটও দেখা যায়। সীমিত সময়ের প্যাকেজ ট্যুরে সেভাবে দেখা সম্ভব হয় না। তবু কয়েকজন যাত্রীর অনুরোধে আমাদের লাভা আর রিশপ যাওয়া হয়েছিল – কিন্তু লোলেগাঁও যাওয়া সম্ভব ছিল না। সত্যি বলতে কি – আমাদের ট্রিপটি ছিল অনেকটাই বুড়ি ছোঁয়া ধরনের, অনেকখানি পথ পেরিয়ে শুধু অল্পক্ষণের জন্যে যাওয়া। তাই এখানে জায়গাগুলির বিস্তৃত বর্ণনা কিন্তু পাওয়া যাবে না।

রিশপ গ্রাম

যাই হোক – রিশপ, লাভা থেকে আরো ওপরে – গাড়ীতে যেতে লাগে আধঘণ্টা। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে আসছে – খাওয়ার সময় এগিয়ে আসছে, তাই মাঝপথে একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ী থামিয়ে সেখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা হল। খাওয়া দাওয়ার পর যথা সময় রিশপ পৌছলাম। রিশপ আসলে একটি ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই যার মূল আকর্ষণ। আর সেই সৌন্দর্যের বেশির ভাগটাই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে, কারণ এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার খুব সুন্দর রূপ দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য – আমরা দেখতে পেলাম না, পুরো বরফের পাহাড়ই ঢেকে গেছে ঘন মেঘের তলায়। হয়তো ভোরবেলায় এলে দেখা যেত – বেলা বাড়লেই মেঘ এসে ঢেকে ফেলে পাহাড়কে। তাই একটু যে হতাশ হলাম না – তা নয়, তবু – ” কি পাইনি তার হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজি “। যা দেখেছি, যা পেয়েছি – তাই কি কিছু কম?

রিশপে মেঘেদের লুকোচুরি

রিশপ থেকে ফেরার সময় আবার সেই খারাপ রাস্তার ধাক্কা। সময় সংক্ষেপ করার জন্য ড্রাইভাররা নিজেরাই অন্য একটা রাস্তা বেছে নিয়েছিল – কিন্তু সেই পথ আরও খারাপ। একটি জিপের টায়ার গেল পাংচার হয়ে – তা বদলে আবার রওনা হওয়া গেল। আর সেই ফিরতি পথে আবার একটি নদী – সম্ভবত চেল নদী। নদীর কাছেই গাড়ী দাঁড়াল চা খাওয়ার জন্য। জায়গাটা গরুবাথান। সবাই চলে গেল নদীর তীরে – যেখানে শত শত ছোট বড় পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে সাদা ফেনা তুলে ছুটে চলেছে পাহাড়ী নদী। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে – অন্ধকার নামতে চলেছে ধীরে ধীরে, পড়ন্ত বিকেলের আলোয় নদী তীরে সে এক অপূর্ব স্নিগ্ধ পরিবেশ। প্রকৃতির দান এভাবে ছড়িয়ে আছে সারা উত্তরবঙ্গ জুড়েই।

নদীর নাম মূর্তি (Murti) – জায়গার নামও তাই। আমাদের চতুর্থ দিনের সকালের ভ্রমণের শেষ পয়েন্ট। গরুমারা জঙ্গলের একটি প্রবেশদ্বার – এই মূর্তি বীট। তার একটু দূর দিয়েই বয়ে চলেছে মূর্তি। রাস্তা চলে গেছে মূর্তি ব্রীজের ওপর দিয়ে – কিন্তু সেই ব্রীজের পাশ দিয়ে নেমে চলে যাওয়া যায় একেবারে মূর্তির পাশে। এখানে মূর্তি অনেক শান্ত – পাথরের তেমন বাধা নেই – তাই অনেক নিশ্চিন্ত। স্বচ্ছন্দে তার কাছে চলে যাওয়া যায় – পাশে বসে গল্প করা যায়। শান্ত নদীর জলে কত ছোট ছোট মাছ সাঁতার দেয় – একেবারে পায়ের কাছে এসে। পাহাড় এখানে নদীকে অনেকখানি জায়গা ছেড়ে দিয়েছে, নদীও তাই বয়ে চলেছে অনেক্ খানি জায়গা নিয়ে। অনেকটা সমতলের চেহারা – দুপাশে গাছগাছালি, মাঝখানে নদীর নীল জল। পাহাড় আছে – কিন্তু সে অনেক দূরে – দূর সীমানার প্রহরীর মতন।

মূর্তি নদী আর মূর্তি ব্রীজ

সকালবেলায় বিভিন্ন জায়গার নদী দর্শন শেষ করে ফিরে আসা হল রিসোর্টে – শুধু দুপুরের খাওয়ার জন্য। কারণ লাঞ্চ করে নিয়েই আবার বেরোতে হবে – এবারের গন্তব্য চাপরামারি জঙ্গল (Chapramari Forest)

ঠিক সময়েই জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে জীপ এসে দাঁড়াল রিসোর্টে। সব জঙ্গলের নিয়ম মতই এখানেও বাইরের গাড়ী ঢুকতে পারে না – জঙ্গলের অনুমোদিত জীপই শুধু ভেতরে যেতে পারে। মাথা পিছু পাঁচশো টাকা দিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা আগেই করে রাখা ছিল- আমরা শুধু সই করে জঙ্গলে ঢুকলাম। গরুমারার মত এখানেও সেই উত্তেজনা – কখন কি দেখা যায়। বেশী অপেক্ষা করতে হল না – দেখতে পেলামও। জীপ আমাদের নিয়ে এল এক ওয়াচ টাওয়ারের কাছে – তার পাশেই বন বিভাগের দারুন সুন্দর দোতলা বাংলো। সামনেটা ঘেরা আছে বিদ্যুৎবাহী তার দিয়ে – তার ওদিকে একটি ছোট পুকুর আর Salt Lick – যেখানে বুনো জন্তুরা নুন আর জল খেতে আসে। সেখানেই দেখা গেল সেই গউরের দলকে। অনেক দূর থেকে অবশ্য – দুরবিন থাকলে হয়তো একটু ভাল হত। তবে গরুমারায় হাতির দলের মত একেবারে সামনে তো নয়ই – বরং কাছে আসার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই নির্ভয়েই তাদের দেখা যেতে পারে, তবে ঐ দূর থেকেই। বেশ কয়েকটি ছিল এই দলে- তার মধ্যে একটি বাচ্চা চলছিল তার মায়ের পিছু পিছু। তার রঙ একেবারে আলাদা – দূর থেকে দেখলে ঠিক হরিণ বলে মনে হয়। এটাই ওদের বৈশিষ্ট – ছোট বেলায় এমনই থাকে, বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের আকার ধারণ করে ধীরে ধীরে।

চাপরামারি জঙ্গলে গউর বা ভারতীয় বাইসন

গউর দেখে আবার আমরা উঠলাম জীপে। আবার বেশ খানিকটা জঙ্গল ভেঙ্গে আমরা গিয়ে পড়লাম বন বিভাগের কিছু কটেজের এলাকায়। আসার পথে দেখেছি – জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই রেল লাইন চলে গেছে। আর কটেজের এলাকাটি বেশ প্রশস্ত – অনেকগুলি কটেজ আছে, আছে খোলা চত্বরে বসার জায়গা আর একটি ছোট মঞ্চ। সেখানে আমাদের দেখান হল – নেপালি সম্প্রদায়ের নিজস্ব কিছু নাচ আর গান। বিকেলের জঙ্গল ভ্রমণে কুড়ি মিনিটের এই অনুষ্ঠানটি সরকারি ব্যবস্থাতেই অন্তর্গত – ওদের কিছু সাহায্য আর উন্নতির লক্ষ্যে। সূর্য তখন অস্তাচলগামী – জঙ্গল আর পাহাড়ে আকাশের রঙ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে, – গোধূলির সেই স্বর্ণ আভায় সেই নাচ আর গানের মধ্যে দিয়েই শেষ হল আমাদের সেদিনের চাপরামারি দর্শন।

পরেরদিন অর্থাৎ পঞ্চম দিন সকালবেলায় লাটাগুড়ি (Lataguri) কে বিদায় জানিয়ে আমাদের গন্তব্য জলদাপাড়া। তবে যাওয়ার পথে আরও দুটি সুন্দর জায়গা দেখে নিয়ে তবেই আমরা পৌছব আমাদের গন্তব্যে। তারই প্রথমটি হল – ঝালং।

আমাদের রিসোর্ট থেকে একঘণ্টার পথ এই ঝালং। দুপাশে গাছের মধ্যে দিয়ে সুন্দর রাস্তা। তবে আজকের ভ্রমণের একটা বৈশিষ্ট – ঝর্ণার আধিক্য। সারা পথ জুড়ে কত যে ঝর্না – বলে শেষ করা যায় না। কোনটি ছোট – কোনটি আকারে বেশ বড়। অনেক জায়গায় সেই সব ঝর্নার জল এক দিকের পাহাড় থেকে নেমে এসে রাস্তার ওপর দিয়েই বয়ে গিয়ে অন্য দিকে পড়ছে – গাড়ী যাচ্ছে সেই সব পথে নেমে আসা ঝর্নার ওপর দিয়েই। গাছে ছাওয়া সবুজ পাহাড় আর ঝর্নার সেই দেশেরই একটি জায়গা হল ঝালং। চারদিকে সবুজে সবুজ – আর নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে আর একটি নতুন নদী – জলঢাকা। সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে পাহাড় থেকে ভেঙ্গে আসা ছোট ছোট নুড়ি পাথরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী – এ দৃশ্য অনেক জায়গাতেই হয়ত অনেকটা একই রকম তবুও সব জায়গার সৌন্দর্যই কিন্তু আলাদা আলাদা। ঝালং (Jhalong) ও সেরকম – নিজের সৌন্দর্যে নিজেই ভরপুর।

জলঢাকা নদী – ঝালং।

ঝালং থেকে এবার বিন্দু। এখানেও সেই জলঢাকা – কিন্তু এখানে তার রূপ আর গুরুত্ব দুটোই আলাদা। কারণ বিন্দু একেবারে ভারত আর ভুটানের সীমানায় – দু দেশের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে জলঢাকা। ওপারের পাহাড় আর তার ওপরের ঘরবাড়ী – সব ভুটানের। আর তার চাইতেও বড় কথা – এখানেই দুই দেশের মাঝখানে জলঢাকা ব্যারেজ। সেই ব্যারেজ থেকে ছাড়া জলঢাকার জল বিপুল তেজে লাফিয়ে পড়ছে – আর তারপর পাথর ভেঙ্গে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে সামনে। গাড়ী থেকে নেমে একটু হেঁটে আর তারপর একটু নীচে নেমে নদীর কাছে যাওয়া যায় – কিন্তু ব্যারেজকে দেখতে হয় দূর থেকে – কাছে যাওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু বেশ একটা অন্য অনুভুতি হয় এখানে – চারপাশের ঘন সবুজ পাহাড় , সামনে লাফিয়ে চলা নদী – সবই হয়ত অন্য অনেক জায়গার মত সুন্দর, তবু ঠিক সামনের পাহাড়টা আর তার ওপরের ঘরবাড়ী স্পষ্ট দেখা গেলেও তা আমাদের দেশে নয় – বিদেশে, ভুটানে। ব্যারেজ পেরোলেই ভূটান, কত কাছে – তবু যেন দূরে, বিদেশে। কিন্তু প্রকৃতিতে কোন বিভাজন নেই, সৌন্দর্যের দিক দিয়ে – সবই এক সুরে বাঁধা। একই পাহাড়, একই সবুজ – শুধু মাঝখানে মানুষের তৈরি সীমানা।

বিন্দু থেকে এবার সোজা জলদাপাড়া। দূরত্বটা অনেক – তিন ঘণ্টা প্রায় সময় লাগে পৌঁছতে। আমাদের তাড়া ছিল – কারণ ওখানে পৌঁছেই পরেরদিন সকালে জঙ্গল সাফারির টিকিট কাটতে হবে। আর তার জন্য অন্তত থাকতে হবে আমাদের ছ জন কে। এখানে সিস্টেম একটু আলাদা – প্রত্যেক জিপ থেকে অন্তত একজনকে থাকতে হয় টিকিট কাটার সময় ভোটার কার্ড সঙ্গে নিয়ে। হোটেল বা রিসোর্ট থেকে কিছু ব্যবস্থা করা যায় না, নিজেদেরই উপস্থিত থাকতে হয়। পরের দিন সকালের সাফারির টিকিট আগের দিন সন্ধ্যে ৬টায় দেয় – তার জন্য লাইন পড়ে কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে। তাই আমাদের এত তাড়া।

যাই হোক – ঘণ্টা তিনেক পরে জলদাপাড়া (Jaldapara) পৌঁছে ওখানেই চটজলদি খেয়ে নেওয়া হল একটা শেডের তলায়। টিকিট কাউন্টার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের কাছেই। কয়েকজন লাইন দিতে রয়ে গেলাম – বাকিদের নিয়ে গাড়ী চলে গেল রিসোর্টে – যেখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা। রেঞ্জারের অফিস থেকে টিকিট দেওয়া হয় – সেখানে লাইন রেখে একটু দেখে নিলাম পাশেই একটা Nature Interpretation Centre . জলদাপাড়ার জীব বৈচিত্র আর পরিবেশ নিয়ে একটি ছোট্ট সুন্দর মিউজিয়াম। অনেক জঙ্গল এলাকাতেই বন দফতর থেকে এইরকম মিউজিয়াম বা Nature Interpretation Centre করা থাকে।

সন্ধ্যে ৬টায় টিকিট দেওয়া শুরু হল। জীপ সাফারি আর হাতি সাফারির কাউন্টার আলাদা। ওদের নির্দিষ্ট ফর্ম আছে – সেই ফর্ম পূরণ করে, প্রতিটি জীপের প্রতিটি যাত্রীর নাম লিখে, ভোটার কার্ডের জেরক্স দিয়ে তবে টিকিট কাটতে হয়। একটি জীপ সাফারির মোট খরচ – ১৬৪০ টাকা – এতে ছজন যেতে পারেন। কাউন্টারে ভিড় বেশী হলে লাইনের পিছন দিকের লোকেরা সবাই টিকিট নাও পেতে পারেন। তাই প্রথম দিকে থাকার জন্যে এত তাড়াহুড়ো।

যাই হোক – আমাদের সবার টিকিট হয়ে গেল। রিসোর্ট থেকে আবার গাড়ী এল আমাদের ফেরত নিয়ে যেতে। বেশ অনেকটা ভেতরে আমাদের রিসোর্ট, জঙ্গল আর ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। অন্ধকার সেই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখলাম- অনেক জায়গায় গাড়ীর টায়ার জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে – হাতির ভয়ে। দূর থেকে পটকা পাঠানোর আওয়াজ আসছে – তার মানে হয়ত হাতি বেরিয়েছে কোথাও। আমাদের রিসোর্টেও শুনেছি হাতি এসে পড়ে রাত্তিরে।

জলদাপাড়া জিপ সাফারির কাউন্টারের সামনেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ, যেটির আগে নাম ছিল – মাদারিহাট ট্যুরিস্ট লজ। আমার মতে এটিই জলদাপাড়ায় থাকবার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা। কারণ এখান থেকেই জঙ্গল ভ্রমনের জীপ ছাড়ে আর এখানে থাকলে টিকিটের সুবিধাও অনেকটাই পাওয়া যায় – যদিও জঙ্গলের ভিতরে থাকার রোমাঞ্চ হয়ত পাওয়া নাও যেতে পারে। বিরাট এই ট্যুরিস্ট লজের ভিতরে বাগানটিও খুব সুন্দর – নানা রকম ফুলের গাছের সঙ্গে এখানকার জঙ্গলের বহু পশু পাখির মূর্তি আর তাদের পরিচিতি দিয়ে সাজানো। এটির সঙ্গে আমাদের ট্যুরের কোন সম্পর্ক নেই – কিন্তু টিকিট কাটার জন্য অপেক্ষা করার মাঝখানে এটিও একটু ঘুরে দেখে নেওয়া গেল।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ – যেটির আগের নাম ছিল মাদারিহাট ট্যুরিস্ট লজ।

পরেরদিন আমাদের জঙ্গল সাফারির সময় ছিল সকাল ৬টায়। তাই ভোর চারটেয় উঠে তৈরি হয়ে পাঁচটার আগেই বেরিয়ে পড়তে হল। ড্রাইভারদের ঘর ছিল রিসোর্টের মূল ভবনের বাইরে। তাদের মুখে শুনলাম – সারারাত তারা হাতির ডাকে ভয়ে ঘুমোতে পারেনি। আমাদের মধ্যেও অনেকেই সে ডাক শুনেছেন – গভীর রাতে। কিন্তু রিসোর্টের কথায় আসব পরে – এখন জঙ্গল দেখতে যাওয়ার পালা।

যথাসময়ে আমাদের গাড়ীগুলো পৌঁছে গেল জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের এলাকায়। সেখান থেকে জঙ্গলের নির্দিষ্ট জীপ আমাদের নিয়ে যাবে জঙ্গলের ভিতরে। আজ আর কোন ঝামেলা নেই – আগের দিন প্রতিটি টিকিটেই আলাদা আলাদা জীপের নম্বর লিখে দেওয়া ছিল – সেই মত নির্দিষ্ট জীপে নির্দিষ্ট যাত্রীরা উঠে বসলেন – জীপ আমাদের নিয়ে চলল জঙ্গলের ভিতরে। এখানেও জঙ্গল বেশ গভীর। সেই গভীরে যেতে যেতে দেখা মিলল প্রচুর ময়ূরের। আর দেখলাম জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা হলং নদী। কিন্তু আমরা যে আরো কিছু দেখতে চাই। তারা কোথায় – যাদের খোঁজে এত দূরে আসা? এতো রোমাঞ্চ, এত উত্তেজনা, এমন নিঃশব্দ প্রতীক্ষা – গভীর জঙ্গলে?

গণ্ডার – জলদাপাড়া জঙ্গল ।

না – বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না – পাশেই দেখলাম – জলদাপাড়ার সম্পদ – সেই একশৃঙ্গ গণ্ডারকে। একলাই – পাশের জঙ্গলে ঘাস আর গাছের পাতা খাচ্ছে। আক্রমণাত্মক নয় গরুমারার হাতিদের মত। আমরা খানিক দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম জীপ থেকে – কিছু বলল না। গণ্ডার দর্শন শেষ করে এগিয়ে গেলাম সামনেই একটা Watch Tower এর দিকে। অন্য Watch Tower গুলোর মত সরু নয় – বরং অনেকটা তিন তলা বাড়ীর মতো। সেখানে ওপরে বনরক্ষীদের বড় বড় ঘর আছে, নীচে অফিস আছে। ওপর থেকে দৃষ্টি চলে অনেক দূর অবধি। পাশেই একটি হাতির বাচ্চা বাঁধা আছে – তাকে ট্রেনিং দিয়ে কুনকি হাতি তৈরি করা হবে। তবে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নতুন কিছু আর দেখা গেল না – তাই আমরা যাত্রা করলাম হলং বাংলোর দিকে। ফেরার সময় আবার সেই ময়ূরগুলো আর সেই গণ্ডারটা – তখনো আপন মনে খেয়ে চলেছে।

ময়ূর – জলদাপাড়া জঙ্গল

হলং বাংলো (Holong Forest Bungalow) এই এলাকার সবচাইতে বিখ্যাত বাংলো – যা প্রায় সারাবছর সরগরম থাকে মন্ত্রী, অমাত্য আর বিভিন্ন ভি আই পি এর আগমনে। তার মাঝে সুযোগ পেলে সাধারণ পর্যটকরাও থাকতে পারেন অবশ্য। জঙ্গলের মূল গেট থেকে এটি প্রায় ছয় কিলোমিটার ভিতরে। এখান থেকেই হাতি সাফারির ব্যবস্থা। সারে সারে পোষা হাতিরা এসে দাঁড়ায় সেখানে মাহুতের সঙ্গে। হাতিতে চড়ার মঞ্চ করা আছে – পর্যটকরা লাইন দিয়ে ওঠেন – এক একটি হাতি চারজন করে দর্শককে পিঠে চাপিয়ে রওনা দেয় গভীর জঙ্গলের মধ্যে এক ঘণ্টার জন্যে। দেখলাম – ঐ হাতিদের সঙ্গে একটি ছোট্ট বাচ্চা হাতি আছে – তার মায়ের সঙ্গে, ওই দলে আছে তার দিদিমাও। মা যখন যাত্রীদের পিঠে নিয়ে জঙ্গলে যায় – সেও চলে তার মায়ের সঙ্গে সঙ্গে। আর এইভাবে তার ট্রেনিংও হয়ে যায় অনেকটাই।

জঙ্গল দেখা শেষ হল আমাদের। এবার রিসোর্টে ফেরার পালা। শুধু একটা কথা ভেবে ভাল লাগছে। আমরা তিনটি জঙ্গল দেখেছি এবারের যাত্রায় – কোন জঙ্গলই আমাদের খালি হাতে ফেরায়নি। গরুমারায় হাতি, চাপরামারিতে বাইসন বা গাউর, আর এই জলদাপাড়ায় – গণ্ডার — এই অঞ্চলের তিন প্রধানের সঙ্গেই আমাদের দেখা হয়েছে তিন জায়গায়। জঙ্গলে সবই অনিশ্চিত – তাই এটুকুও না হতে পারত। কিন্তু হয়েছে – আর সেই জন্যেই সার্থক হয়েছে আমাদের জঙ্গল ভ্রমণ। ভাগ্য আমাদের সহায় হয়েছে – আর তাই মনে হচ্ছে ব্যাপারটা বেশ রোমাঞ্চকর বইকি !

আগের দিন রাতেই আমরা এই রিসর্টটিতে এসেছি – আর পরের দিন ভোরেই বেরিয়ে পড়েছিলাম জঙ্গল সাফারিতে। তাই ভাল করে এটি দেখা হয়নি তখন। কাজেই জঙ্গল থেকে ফিরে সকালবেলায় ভাল করে ঘুরে দেখা গেল আমাদের মাত্র এক রাতের আশ্রয়স্থল এই রিসর্টটিকে।

জলদাপাড়ায় আমরা যে রিসর্টে ছিলাম

জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ থেকে রিসর্টটি অনেক ভিতরে – প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে। ধানক্ষেত আর চা বাগানের মধ্যে দিয়ে রাস্তা – সেই সমস্ত জায়গায় হাতির আনাগোনা। কাছে পিঠে লোকালয় নেই। রিসর্টের একেবারে সামনেই চা বাগান – সেখানে দাঁড়িয়েই চায়ের পাতা তোলা দেখা যায়, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা যায়। আবার রিসর্টের পাশে আর পিছনেই ঘন জঙ্গল – সেখানে মাঝে মাঝেই হাতি এসে পড়ে, সারারাত হাতির ডাক আর ডাল ভাঙার আওয়াজ শোনা যায়। রিসর্টের সামনে ওদের নিজস্ব অনেকখানি ঘাসের মাঠ আর কিছু ফুলের বাগান। সকালে সেই মাঠে বেড়ানো গেলেও – রাতে বোধ হয় সেখানে যাওয়া খুব নিরাপদ নয়। রাত্তিরে রিসর্টের ঘেরাটোপের মধ্যেই থাকা ভাল। ঘরগুলি প্রশস্ত, দু একটি ঘরে বাঙ্ক খাট আছে, কয়েকটি ঘরে গিজার আছে। তবে কোন ঘরেই টিভি নেই – শুধু রিশেপসানে একটি রাখা আছে। এসিও নেই কোন ঘরে। তবে এসবের বোধ হয় কোন প্রয়োজন হয় না এখানে। তাছাড়া বেশীর ভাগ মানুষই এখানে খুব কম দিনের জন্যেই আসেন – যেমন আমরাও ছিলাম মোটে এক রাত্তির। সকালে জঙ্গল দেখে এসে ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে একটু তাজা হয়ে দুপুরে লাঞ্চ করে বেরিয়ে পড়া – আমাদের শেষ দর্শনীয় খয়েরবারি (Khayerbari) দেখে রাত্তিরেই ফেরার ট্রেন ধরা।

জলদাপাড়া রিসর্টের সামনেই লাগোয়া চা বাগান

দুপুরে লাঞ্চ করে জলদাপাড়ার রিসোর্ট থেকে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সন্ধ্যেবেলায় ট্রেন ধরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার আগে ঘুরে যেতে হবে আমাদের এখানকার শেষ গন্তব্য – খয়েরবাড়ী। খয়েরবাড়ী আসলে বন্য জন্তুদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। বলা যেতে পারে একটি বিশাল চিড়িয়াখানা – যেখানে জঙ্গল থেকে বা কোন সার্কাস দল থেকে উদ্ধার করা আহত বা অসুস্থ প্রাণীদের রাখা হয় তাদেরই পরিচিত প্রাকৃতিক পরিবেশে। বিশাল এলাকা নিয়ে এই কেন্দ্রটি – অনেকখানি জায়গা জুড়ে এক একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে বাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদি। সেই সব খাঁচার মধ্যে পুরো জঙ্গলের পরিবেশে তারা ঘুরে বেড়ায়। এত বড় এই এলাকাটি যে তাড়াতাড়ি পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা বেশ কষ্টকর। অথচ ভিতরে কোন গাড়ী যেতে পারেনা। মাঝে মাঝে অবশ্য দুয়েকটি ভ্যান রিকশা চোখে পড়েছে – কয়েকজন যাত্রীকে নিয়ে। আমরা অনেক হেঁটে আর অনেক চেষ্টা করে দুটি মাত্র বাঘ আর একটি চিতাবাঘ দেখতে পেলাম। তার মধ্যে একটি বাঘ কুমিরের সঙ্গে লড়াইয়ে কুমিরেরই কামড়েে একটি পা হারিয়েছ্বে। এত বড় খাঁচায় গাছপালার আড়ালে জন্তুগুলিকে খুজে পাওয়াই দুরূহ।

বাঘের আস্তানায় – খয়েরবাড়ী ইকো পার্ক

এই খয়েরবাড়ী দেখার সাথে সাথেই শেষ হল আমাদের কয়েকদিনের ডুয়ার্স ভ্রমণ। এর মধ্যেই আমরা আলাদা আলাদা ভাবে দেখেছি তিনটি জঙ্গল – গরুমারা, চাপরামারী, জলদাপাড়া। দুটি পাহাড়ী জায়গা – লাভা, রিশপ আর সেইসঙ্গে বেশ কয়েকটি পাহাড়ী নদী-ভিত্তিক স্থান – যেমন সামসিং, সুনতালেখোলা, ঝালং, বিন্দু ইত্যাদি। নদী দেখেছি – ফাফরখেতি, তিস্তা, মূর্তি, জলঢাকা। তিনটি জঙ্গলে আলাদা আলাদা ভাবে দেখতে পেয়েছি – হাতি, বাইসন, গণ্ডার। আর পেয়েছি অজস্র চা বাগান আর পাহাড়ি ঝর্না অর্থাৎ পুরো ভ্রমণটিই ছিল নানা বৈচিত্রে ঠাসা। ভ্রমণ সূচী সেই ভাবেই সাজানো হয়েছিল যাতে ঐ এলাকার অসাধারণ বৈচিত্রময় প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। তাই সেদিক দিয়ে এই ভ্রমণ অবশ্যই সার্থক। তা ছাড়া দক্ষ পরিকল্পনা ও আন্তরিক ব্যবহারে এই ট্রিপটি হয়ে উঠেছিল সত্যিই আকর্ষণীয়। উদ্যোক্তারা সব সময় আমাদের সুবিধে অসুবিধের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন, ব্যবহার ও যত্নে কোন ত্রুটি ছিল না – ফলে কারোরই কোন অভিযোগ ছিল না। নিত্য নতুন জায়গায় ভ্রমণের সাথে সাথে ভাল থাকার জায়গা, আরামপ্রদ যানবাহন, নিত্য নতুন খাওয়ার মেনু – সব মিলিয়ে একটি নিটোল ভ্রমণ।

Leave a Comment
Share