আমিয়াখুম, ভেলাখুম, ক্রাইক্ষ্যং ঝর্না, নাফাখুম, রেমাক্রী ফলস ভ্রমণ

আজ ২০ তারিখ, রাত ১১:২০, জিন্না পাড়ার কটেজ।

সাত ঘন্টা ট্রেকিং এরপর অবশেষে কটেজে পোঁছালাম। এত কঠিন ট্রেকিং পর আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচব না। কাল ভয়ংকর দেবতা পাহাড় পার করতে হবে, হয়তো ওখানেই আমার শেষ। যদি আমার মৃত্যু হয় তাইলে আজকের এই এত কষ্টের পথ পাড়ি দেয়ার কথা কেউ জানবে না। তাই কিছুটা ঝোকের বশে লিখে রাখা। শুরু যখন করছি তাহলে আমার এই জার্নির প্রথম থেকে শুরু করা যাক।

১৯ তারিখ

সকাল ৭ টা চকরিয়া যাব এই উদ্দেশ্য গাড়িতে উঠে আবার নেমে গেলাম। কি ভেবে চলে আসলাম বদ্দারহাট। পুর্বানির টিকেট কেটে বান্দরবনের উদ্দেশ্য রওনা। আমি তখনো জানি না আমি আমার জীবনের কত্ত বড় ডিসিশান নিয়ে ফেলেছি। সকাল সাড়ে ১০ টায় বান্দরবন এসে পোঁছালাম। হালকা নাস্তা করে একটা গ্রুপ খুঁজতে লাগলাম থানচি যাব এই উদ্দেশ্য। গাড়িতে আসতে আসতে আমি আর অভি প্ল্যান বানালাম যে থানচি যাব ওইখানেই আশপাশ ঘুরে পরের দিন চলে আসব অথবা ম্যাক্স তিন্দুতে কুমারী ঝর্না দেখে চলে আসব। এক পরিচিত গাইড কে ফোন দিয়ে বললাম আমরা আসছি। তিনি ঘুরে দেখাবেন এই সম্মতি দেয়াতে আমরা নতুন করে একটা গ্রুপ খুঁজতে লাগলাম যে থানচি অব্দি চাঁদের গাড়ি শেয়ার করব। কোন গ্রুপ না পাওয়াতে অবশেষে বাসেই চড়ে বসলাম ঠিক সাড়ে এগারটায়। একটু পর পর বৃষ্টি মেঘের আবরণ কেটে বাস এগিয়ে চলছে তার নিজের গতিতে। যখন আমরা থানচি পোঁছাই তখন সাড়ে চারটা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তিনি একটা গ্রুপ পেয়ে আমাদের দেয়া কথা ভুলেই আমিয়াখুমের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন। থানচিতে যখন এদিক সেদিক করে ঘুরছিলাম দেখা পেলাম এক গাইডের। নাম ডেবিড মারমা।

আমাদের পুরা কাহীনি জানার পর একটা কটেজ ঠিক করে দিলেন থানচিতেই থাকার জন্য। আর বললেন কাল এক গ্রুপ আসতেছে ঢাকা থেকে তাদের সাথে আপনাদের নিয়ে যাব আমিয়াখুম। টাকা যা আসে আপনারা আমাকে ভাগ করে দিয়েন। প্রস্তাব টা আমাদের করা ছিল এবং উনি তাতে রাজি ছিলেন। বিকেল বেলায় অসাধারন এক মুন্ডি আর মুরগীর কাবাব আর আশ পাশ ঘুরে ফিরে কাটিয়ে দিলাম।ঘুরাঘুরি শেষে মসজিদের পুকুরে স্নান করে সোজা চলে এলাম থানচি ব্রিজ।রাত তখন সাড়ে আটটা। আধফালি চাঁদ, আকাশে লক্ষ তারা আর দূরের পাহাড়ের অবয়ব সাথে মোবাইলে বাজছে অনিকেত প্রান্তর। অসাধারণ এক পরিবেশ। এভাবেই দুই বন্ধু সাড়ে নটা অব্দি বসে ছিলাম। লবন ছাড়া ডাল, আলু ভর্তা দিয়ে রাতের খাবার শেষে সোজা সাংগু নদীর পাশে একটা ঘাটে। ৫ মাস আগের মুহুর্ত গুলো মিস করছিলাম। আমাদের পুরা গ্রুপ ছিলাম। তখন ও সাংগু নদীর পাশে বসে বার বি কিউ আর গান করেছিলাম। আর এখন কেউ নাই। অনেক রাত অব্দি বসে কটেজে এসে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

থানচির রাস্তা

২০ তারিখ

সকাল সাড়ে আটটায় দরজায় কড়া নাড়ল ডেবিড গাইড। বলল ঢাকার টিম এসে গেছে। আপনারা রেডি হন আমিয়াখুমের জন্য। দুই বন্ধুর মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা। এত্ত আরলি কোন টিম আসতে পারে না ঢাকা থেকে আর আমাদের এখনো খাওয়া,হাগা মুতা কিচ্ছু হয় নাই। আস্তে আস্তে সব শেষ করে নতুন টিমের সাথে পরিচিত হলাম। তারা ৪ জন আমরা সহ মিলে ৬ জন। আরেক গ্রুপের সাথে পরিচয় তারাও আমাদের সাথে যেতে চায়। তাদের সংখ্যা ৫ জন। টোটাল ১১ জন মিলে দুপুর ১২ টাই টর্চ, দড়ি, জুতা সব নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। নৌকা এসে থামল পদ্মঝিরির ঠিক মুখে।
জানতাম অনেক হাটা পথ। প্রায় ৬/৭ ঘন্টা। তাই ডিম কলা যা পারলাম খেয়ে পদ্মঝিরি হয়ে আমাদের হাটা যাত্রা শুরু। ঘন্টা খানেক হাটার পর দেখা পায় ঝর্নার।নাম বৃষ্টি ঝর্না। আর জানি না কোন আলৌকিক ব্যাপার আছে কিনা। ওখানে পোঁছানোর ঠিক কয়েক মিনিটের মাথায় ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। ব্যাগের কাপড় পলিথিন এ মুড়িয়ে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেই ঝিরি পথে আমাদের হাটা শুরু।

পাহাড়ের রুপ বৃষ্টিতে কি সুন্দর তখন তা দেখলাম।কিন্তু কত ভয়ানক হতে পারে তা এবং আমাদের জন্য প্রকৃতি কিভাবে রেডি হচ্ছে তা আমরা পরেই ভালই টের পেয়েছিলাম। ওই গল্পে পরে আসছি। এভাবে কিছুদুর হাটার পর প্রথম পাড়ার দেখা পায়। নাম রাইজন পাড়া। এখানে এসে হালকা খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলা শুরু। আঁকা বাঁকা ঝিরিপথ পার করে করে সামনে আগাচ্ছিলাম আর দেখছিলাম প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য। রাইজন পাড়া পার হয়ে আমাদের আঁকা বাঁকা ঝিরি পথ শুরু। কোথাও কোমড় পানি।কোথায় হাঁটুর নিচে। এভাবে বিকাল পাঁচটায় আমাদের ঝিরি পথ শেষ। এখন বিশাল ২ টা পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। হালকা ঢালু আবার কিছু খাড়া অংশ পাড়ি দিয়ে আমরা প্রথমে পোঁছাই হরিশচন্দ্রপাড়া। সুন্দর ছিমছাম পাড়া। বিকেল বেলা পাহাড়ের উঁচু থেকে আশেপাশে পাহাড়ের উপর জুম ঘর দেখা যায়। ওইদিকে বৃষ্টি আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পাড়ায় কিছুক্ষন চা বিস্কুট খেয়ে আমাদের পরবর্তী যাত্রা শুরু।

হরিশচন্দ্র পাড়া

প্রথমে হরিশচন্দ্রপাড়া থেকে যেটুকু পথ উপরে উঠলাম ওইটুকু পথ নামলাম। আরেকটি পাহাড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হরিশ্চন্দ্রপাড়া থেকে নামছিলাম তখনি নামল ঝুম বৃষ্টি। পাহাড়ে বৃষ্টি যেমন এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরী করে ঠিক বিপদের মাত্রা হাজার গুন বাড়িয়ে দেয়। পাহাড়ে উঁচুতে উঠার পর শুরু হয় বৃষ্টির সাথে সাথে প্রচন্ড রকমের বজ্রপাত। আমাদের গাইড ২/৩ জন কে নিয়ে অনেকটুক পথ এগিয়েছে। বাকিরা কোনভাবে এক গাছের নিচে নিজেদের রক্ষা করছি। কোন উপায় না দেখে এই পরিবেশের মধ্যে দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ও আচ্ছা ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা ৬ টা। পাহাড়ে সন্ধ্যা খুব তাড়াতাড়ি হয়। এদিকে পিচ্ছিল পাহাড়, ঝুম বৃষ্টি আর তার এসবের চেয়েও ভয়ংকত হল বজ্রপাত। পাহাড়ে বজ্রপাত কতটুকু ভয়ংকর হতে পারে তা মাঝে মধ্যে পুড়ে যাওয়া গাছ দেখলেই বুঝা যায়। বিজলীর আলোয় চারপাশে আলোকিত হয়ে যায়। প্রতি বিজলীর আলোয় সবাই একসাথে আল্লাহ ঈশ্বরের নাম জপ করে গেছে। মাথা নিচু করে বসে গেছি। এভাবেই সবাই কাছাকাছি থেকে অল্প অল্প করে আগাচ্ছিলাম।রাস্তা বলতে একদম পাহাড়ের ঢাল ঘেষে দুই পা পাশাপাশি রাখার মত জায়গা। আর এর পরেই খাদ। চারপাশে চোখ বুলালে যদ্দুর দেখা যায় খালি পাহাড় আর পাহাড়। এত বিশালতার মাঝে কত ক্ষুদ্র আমরা। ধরেই নিয়েছলাম আমি এখানেই শেষ। হয়তো বজ্রপাত গায়ের উপর এই বুঝি এসে পড়ল। এরপর বৃষ্টি কিছু কমল। আকাশে তখন হালকা আলো আর বিজলীর ঝলকানি। তা দিয়েই কোন ভাবে পথ চলেছি। নিচে নেমে পেলাম এক ঝিরি।

সন্ধ্যা তখন সাতটা হবে হয়তো। পানি হাঁটু অব্দি। পুরাই অন্ধকার রাস্তা। কিছু দেখা যায় না। আমাদের ১১ জনের টিমে টর্চ আছে শুধু ২ টা।পানির মধ্যে পাথর পার করে করে গাছের ফাকে ফোকর দিয়ে এগুচ্ছিলাম। আমাদের গাইড ভাই একবার আগায় একবার পিছায় এভাবেই সবাইকে দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এভাবেই আসলাম নতুন পাড়া। এবার আমরা ১১ জন একসাথে। নতুন পাড়া থেকে নামতে কয়বার যে আছাড় খেলাম, কাদা মাটির সাথে প্যান্ট ঘষতে ঘষতে পাহাড় থেকে নিচে এলাম। পাহাড়ের ঢালু রাস্তা তখন ভীষন ভয়ংকর। বৃষ্টি তখন কমেছে কিন্তু বিজলী ঝলকানি চলছেই। এভাবেই কিছু সমতল ভূমি কিছু পাহাড়ের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিলাম আরো এক ঘন্টা। অনেকটা যুদ্ধ শেষ করে এবার আমাদের সামনে আরেক বিপত্তি। রাত তখন আটটার কিছু বেশি। এবার আমাদের সামনে একটা ৩০/৪০ ফুট প্রস্থের খাল। পানি গলা অব্দি। স্রোত আছে ভালই। ডেবিড দা পার হয়ে আগে গিয়ে টর্চ ধরে। আমরা মাথার উপর ব্যাগ তুলে স্রোতের সাথে তাল রেখে আড়াআড়ি ভাবে খাল পাড়ি দিলাম। ওই পাড়ে পোঁছে চট করে ছোট পাহাড়ের উপর উঠে চলে আসলাম জিন্না পাড়া। রাত তখন সাড়ে আটটা। বলে রাখা ভাল আমাদের গ্রুপের কয়েকজনকে অলরেডি জোঁকের কামড় খেতে হয়েছে। পাহাড়ি জোঁকের কামড় যারা খেয়েছে তারাই জানে একবার খেলে আর সহজে রক্ত বন্ধ হয় না। স্নান করে কিছুক্ষন পর খেতে বসলাম। আইটেম ডাল ভাত মুরগীর মাংস আর সবজি। রাতের খাবার শেষে প্যারাসিটামল কে তখন সঞ্জীবনী মনে হয়েছিল। খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার মত শুয়ে পড়ল। আমি শুয়ে শুয়ে এই কাহীনি লিখছি। কাল আমাদের দেবতা পাহাড় পার করতে হবে। জানি না আমাদের কপালে কি আছে। দেবতা পাহাড় সোজা খাড়া পাহাড়। এংগেল বলতে গেলে পুরাই ৯০ ডিগ্রী আর খুবই বিপদজনক। পা ফসকালেই শেষ।

২১ তারিখ

পরদিন ২১ তারিখ ভোরে আমার ঘুম ভাঙল সকাল পাঁচটায়। বাকি সবাই গভীর ঘুমে। শুয়ে শুয়ে আমি কটেজের জানালা দিয়ে আকাশ দেখি। আর গতকাল দিনের কথা ভাবছি। কিভাবে যে পাহাড়ের বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করে ফিরে এলাম আমরা। বিছানা ছেড়ে চট করে উঠেই মোবাইল হাতে বেরিয়ে পড়লাম। পাহাড়ের সকাল মিস করা যাবে না। এরি মধ্যে পাহাড়িদের জীবন যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। ওরা অলরেডি জুম চাষ করার জন্য পাহাড়ে রওনা দিতে আরম্ভ করেছে। আমি জিন্না পাড়া পুরা ঘুরার সিদ্ধান্ত নিলাম। এমন বড় পাড়া ও নয়। আস্তে আস্তে হাটলেও ১৫/২০ মিনিটে পুরা পাড়া শেষ হয়ে যাবে। হাতে গুনা ১২/১৩ টি ঘর আছে হয়তো। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে জিন্না পাড়ার পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে দূরে পাহাড়ের দিকে তাকালাম। আর যা দেখলাম তাতেই আমার মুখ জাস্ট হা হয়ে গেছে।

পাহাড়ের কিনারায় যেয়েই দেখি পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুত সুন্দর ভাবে মেঘ ভেসে আছে। সূর্যের হালকা কিরণ, ভেসে বেড়ানো মেঘ, বিশাল বিশাল পাহাড় আর আমি পাহাড়ের কিনারায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। আশপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছি। পাহাড়ের এক পাশে এক মাঠ তার একদম শেষে তাও পাহাড়ের কিনারায় এক স্কুল। ছেলেরা স্কুলে আসা শুরু করেছে। ওদের স্কুল শুরু হয় সকাল ৬ টায়। আমি দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। দূরে পাহারের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ওখানের মানু্ষের জীবন যাত্রা দেখলাম। কত কষ্ট করে ওরা দিন পার করে। সুখেই আছে এক প্রকার। সক্কাল সক্কাল দূরে পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ করতে চলে যায়। বাচ্চারা সকাল ৬ টায় স্কুলে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। বয়স্ক মহিলা গুলো ঝুড়ি বানাচ্ছে কিংবা কয়েকটা কলসি উপর কলসি নিয়ে একসাথে পানি নিয়ে যাচ্ছে। এত কষ্ট দেখলে মনে হয় আমরা এদের তুলনায় কি। এত এত ভাল থাকার পরেও আমাদের আরো চায়।ওদের মধ্যে এমনো আছে যারা সারাজীবন এই পাহাড়েই থেকে গেছে। এর বাইরের জগৎ টাকে দেখে নি কখনো। বিশেষ করে মহিলারা। কয়েকজন সর্বোচ্চ থানচি অব্দি নাহলে বান্দরবনের লামা। কিন্তু এই বান্দরবন ছেড়ে আর কোথাও যায় নি।এখান থেকে বের হলে ওদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে নাকি। জীবনটাকে ভাল ভাবে দেখতে হলে মাঝে মধ্যে পাহাড়ে যাওয়া উচিত। পুরা পাড়া ঘুরে কটেজে এসে ডিম দিয়ে সকালের ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমিয়াখুমের উদ্দেশ্য।

জিন্না পাড়ায় সকালের দৃশ্য

জিন্না পাড়া থেকে ঘন্টা দুয়েক অল্প ঝিরি পথ পাহাড় পার করে পৌঁছালাম দেবতা পাহাড়ের উপর। মনে মনে একটা সমকোণী ত্রিভুজ চিন্তা করেন। একপাশ ঢালু এরপর খাড়া। দেবতা পাহাড় ঠিক তেমন। ঢালু বেয়ে আমরা এখন দেবতা পাহাড়ের ঠিক উপরে। এবার আমাদের খাড়া ঢাল বেয়ে নিচে নামতে হবে। নামার জন্য পা রাখার জায়গা খুবই অল্প। আর পাশে খাদ। এটা দিয়ে নিচে নামার সিস্টেম হচ্ছে বিল্ডিংয়ের সিঁড়ির মত রাস্তা আছে।এক টিমের একজনের পা ফসকে এক ধাপ থেকে নিচের ধাপে চলে এসেছে। ভাগ্য ভাল সে যেখানটাই পা ফসকেছে ওই জায়গায় লতা পাতা ছিল তাই সে আটকে ছিল। পরে গাইড তাকে ধরে তুলেছে। সে সুস্থ ছিল। তাই ডেবিড দা বলেই দিয়েছে আর যাই করেন পা ফসকানো যাবে না। খুব সাবধান। দড়ি নিয়ে লোকাল গাইড সবার আগে আমরা সবাই মাঝখানে আর ডেবিড দা সবার পিছনে। এভাবে অল্প অল্প করে আগানোর পর আমাদের আগের টিম বলে আর আগানো যাবে না। সামনে পাহাড় ধস। নিচ থেকে আমিয়াখুমের গর্জন শোনা যাচ্ছে। এত কষ্ট করে এখান থেকেই কি ফিরে যাব আমরা? না পরে তখনি ওই টিমের একটা গাছের খুঁটির সাথে দড়ি বাঁধল। পাহাড় ধসের কারণে রাস্তা এখানটাই আরো ভয়ংকর হয়ে আছে। অল্প অল্প করে সবাই দড়ি ধরে ধরে নামছি। এভাবে বোধহয় ৪০ মিনিট ক্রমান্বয়ে নামার পর আমরা আমিয়াখুমের দেখা পেলাম। ওখানে ছবি টবি তুলে চলে গেলাম ভেলাখুম। ভেলায় করে ভেলাখুম ভাসলাম। নাইক্ষ্যং মুখে স্রোতের কারণে যেতে পারি নি। স্রোতের কারণে অতটুক অব্দি ভেলা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

দেবতা পাহাড় থেকে নামার সময়।। এখানটাই পাহাড় ধস হয়েছে।

এরপর আবার খাড়া দেবতা পাহাড় পার করে চলে আসলাম ক্রাইক্ষ্যং ঝর্নায়। অসম্ভব সুন্দর একটি ঝর্না। ট্রেইল সহজ। ঝিরি পথ দিয়ে হাঁটা। জিন্না পাড়া থেকে আধা ঘন্টা লাগে মাত্র। এখানে আসার পর কয়েকজনের দেখি জোঁকে ধরে বসে আছে। ব্যাপারটা অনেকের এমন পায়ের জুতা খুলেই দেখে ৩/৪ টা জোঁক একসাথে বসে আছে। কোনভাবেই সরানো যাচ্ছে না। লবন, হাত দিয়ে কোন ভাবেই সরানো না গিয়ে পাথর দিয়ে ঘষে ঘষে এই জোঁক তুলতে হয়ছে। ক্রাইক্ষ্যং ঝর্নায় ধাপাধাপি শেষ করে জিন্না পাড়ায় ফিরে এলাম। বিকেলে এসেই ভাত খেয়ে আশ পাশ টা ঘুরতে লাগলাম। আজ আমাদের জিন্না পাড়ায় শেষ দিন। অদ্ভুত এক মায়া আছে পাড়াটাই। পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে দূরের পাহাড় দেখছি। একটু পরেই শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। কটেজে এসেই বাসের মাচার উপর বসে বসে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে লাগলাম।। সন্ধ্যা নটার কিছু বেশি হবে হয়তো। আকাশের সম্পূর্ণ মেঘ কেটে উঁকি দিচ্ছে চাঁদ মামা। মিটিমিটি করছে অসংখ্যা তারা। দূরের পাহাড়ে গায়ে, পাড়ায় আধফালি চাঁদের জোৎস্নায় এক মায়ায় জড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক বছর আগে যকের ধন নামে একটা গল্পের বই পড়েছিলাম। ওখানে এমন পরিবেশের কথা পড়েছি।আজ নিজ চোখে দেখলাম। ধন্য আমি। আজ আমাদের পাহাড়ের ২য় দিন। এরি মধ্যে পাহাড়ের বৃষ্টি, কড়া রোদ, বজ্রপাত,মেঘের পাহাড় ছুঁয়ে থাকা, রাতের আকাশ আর জোৎস্না সবি দেখলাম। কাল খুব ভোরে বের হতে হবে। তাই এলার্ম দিয়ে ঘুমাতে গেলাম। তখনি জানি না সবচেয়ে বড় বিপদ আমাদের এখনো বাকি।

ক্রাইক্ষ্যং ঝর্না

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আবারো ডিম,ডাল,আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে আমরা জিন্না পাড়া থেকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিলাম। দুদিনে মানুষগুলোর প্রতি কেমন জানি মায়া পড়ে গেছে। ঘরের কর্তা থেকে শুরু করে সবাই আমাদের বিদায় জানাতে বাইরে এসে গেছে। এদের মন খুব সহজ সরল। বাইরের দুনিয়া থেকে এরা বিচ্ছিন্ন হয়ে বোধহয় সুখেই আছে। জিন্না পাড়া থেকে নেমেই প্রথমে কিছু পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। এরপর খাল পাড়ি আবার। বলে রাখি আমাদের এই খাল কয়েকবার পাড়ি দিতে হয়েছিল। কোথায় কোমড় অব্দি পানি কোথাও গলা অব্দি। ব্যাগ পলিথিনের ভিতর ভরে টাইট করে বেঁধে সেটা ধরে সাঁতরে খাল পার হওয়া। এই রাস্তা টা সহজ। পানির পাশ দিয়ে দিয়ে হেঁটে যাওয়া। আড়াই ঘন্টা হাঁটার পর আমরা পোঁছালাম নাফাখুমে। এরি মধ্যে চোখের পলকে মেঘ জড়ো হয়ে বৃষ্টি নেমে গেছে। নাফাখুমের তখন ভীষন গর্জন। অনেক দূর থেকে এর গর্জন শোনা যায়। সুন্দর নাফাখুমে ছবি তুলে কয়েক জন পানিতে নেমে আবার হাঁটা পথ ধরলাম। বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা খারাপ।উপায় না দেখে অর্ধেক পথ থেকে আবার নৌকা ঠিক করে রেমাক্রী ঝিরিতে এসে পোঁছালাম। অথচ গত শীতে আমরা পুরাটা রাস্তা হেঁটে এসেছি। যেসব জায়গায় বিশাল বিশাল পাথর ছিল সব ডুবে এখন নৌকা চলাচলে উপযোগী হয়ে গেছে। রেমাক্রী ঝিরি এখন পূর্ণ যৌবন। প্রচুর পানি। তবে বসার মত যথেষ্ট জায়গা আছে। ইচ্ছেমত এবার সবাই দাপাদাপি করে নদীর এপাশে পার হয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। এবার আমাদের থানচির উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে। এদিকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। সত্যি বলতে কি আমি প্রচুর ভয় পাচ্ছি। আমি দেখছি কিভাবে সাংগুর স্রোত বাড়তেই আছে। গত শীতে এসছিলাম তখন পায়ের গোড়ালিতে পানি ছিল তখনই আঁচ করেছিলাম সাংগুর ভয়াবহতা। আর এখন তো পানি অনেক বেশী। বাতাস বাড়ছে। টোটাল ১১ জনের মধ্যে ৫ জন সাথে ডেবিড দা এক বোটে। আর আমরা ৬ জন আরেক বোটে উঠে বসলাম….

এভাবেই রেমাক্রী ঝিরি দিয়ে নৌকা তুলে।আমাদের কয়েকজন ওদের সাহায্য করছে।

আমার এই ভ্রমণ কাহিনী লিখার একটাই কারণ ছিল এত এত বাধার পর আমার ফিরে আসা। তো বাকিটুকু শেষ করি…

রেমাক্রী থেকে আমরা ৬ জন নৌকায় উঠে বসলাম। সবার সামনে সহকারী চালক, এরপর পাশাপাশি ঢাকার দুজন। এরপর আরো দুজন। বামে অভি, ডানে আরেক ভাই।

সবার পিছনে বামে ঢাকার এক ভাই আর ডানে আমি। অর্থাৎ ১২২২ আর শেষে চালক। মোট আটজন। শুরু থেকেই সাংগুর প্রচন্ড স্রোত। এরি মাঝে চালক ভুল করতে শুরু করল। নৌকা দুলছে প্রচন্ড। আমাদের আরেক নৌকা অল্প অল্প করে চোখের সীমানার বাইরে চলে গেল। আমি বাদে বাকিরা কথা বলছে ছবি তুলছে। মজা করছে কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না। আমি ভয় পেয়ে বসে আছি। প্রায় ট্রাভেলারস গ্রুপ গুলোতে পড়ে থাকার সুবিধার্থে সাংগুর রুপ সম্পর্কে জানি। একবার শীতে এসে ঘুরেও গিয়েছিলাম। তখন এর শক্তি আন্দাজ করে গিয়েছিলাম। এরি মধ্যে সাংগু নদীর স্রোত আমাদের গায়ে এসে পড়ছে। আমি চট করে আমার ব্যাগ মোবাইল সব বড় পলিথিনের ভিতর ঢুকিয়ে ইয়ার টাইট করে ধরে বসে আছি। যদি খারাপ কিছু হয় আমি এটাকে নিয়ে ভাসতে পারব। স্রোতের অনুকূলে আধ ঘন্টার কম সময়ে আমরা বড় পাথর এলাকায় এসে পৌঁছালাম। বড় পাথর এখানে এটাকে সবাই সম্মান করে। সব চেয়ে বড় কথা সবচেয়ে এখানে বেশি মানুষ মারা যায়। এখানে চারপাশে সব পাথর।উত্তাল সাংগু নদী আমাদের নৌকাকে একবার এই পাথর আরেকবার ওই পাথরে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সামনের সহকারী চালক হাতের ইশারা দিতে বুঝাচ্ছে কোন দিকে যেতে হবে।

প্রধান চালক বুঝতে পারি নি সে কোন্দিকে বলেছে। বড় পাথর পার করে নৌকা সজরে গিয়ে এক পাথরে ধাক্কা মারে। আর তাতেই আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই নৌকা উলটে গেল। সেই চালক বাদে ক্রমানয়ের ১২২২ প্রথম ১২ মানে সহকারী চালক আর ঢাকার ২ জন মোট ৩জন নেমে গিয়ে নৌকার দড়ি টেনে ধরে রাখল। এরপর ছিল বামে অভি ডানে এক ভাই। নৌকা বামের দিকে উল্টালেও অভি কেমনে কেমনে নৌকা ডুবতে ডুবতে নৌকার ডান পাশের কাট ধরে উপরেই ভেসে ছিল। তবে অভির ডানে থাকা সেই ভাই সোজা পানির নিচে। উনি ভিডিও করছিলেন আর তখনই ধাক্কা মারে। মোবাইল নিয়ে উনি তখন পানির নিচে। আর সবার পিছনে আমি আর এক ভাই। যেহেতু নৌকা বামে উল্টিয়েছে সেহেতু আমার পাশের ভাই চোখের নিমিষেই হারিয়ে গেল। বাকি রইলাম আমি। আমি এক হাতে আমার ব্যাগ ধরে আছি আরেক হাতে নৌকার পাশের অংশ।আমিও নৌকার ডুববার এই ছোট্ট সময়টার মধ্যেই নৌকার আরেকপাশ ধরে ভেসে রইলাম। আর আমার নিচে একটা পাথর ছিল। আমি ওইটার উপর দাঁড়িয়ে। পেট দিয়ে নৌকা সাথে আটকে আছি। আমার পাশে অভি আমার মতই অবস্থা। চালক ও তখন পানির নিচে।

আমিয়াখুম

যেই ভাই আমার পাশে ছিল তিনি পানির নিচে গিয়ে নৌকার ফ্যান ধরে ছিলেন। পরে চালক তাকে পানির নিচ থেকে তুলে আরো সামনে এক পাথরে উপর বসিয়ে দিয়ে আমাদের কাছে ফেরত আসে। এদিকে সেই ক্রমান্বয়ের ১১১ সেফ। আমি আর অভি একদম সেফ ততক্ষন যতক্ষন ক্রমান্বয়ের প্রথম ১১১ নৌকার দড়ি টেনে ধরে আছে। বলে রাখি এখানে স্রোত কোনভাবেই নৌকা স্থির থাকতে দিচ্ছে না। ৩ জনের শক্তির কাছে স্রোত হেসে খেলে জিতে যাচ্ছে। আমাদের নৌকা যে পাথরে ধাক্কা খেয়েছে নৌকা উলটে সেই পাথরে আটকে আছে। আমাদের কারো কোন লাইফ জ্যাকেট নেই। আমরা সবাই সাঁতার পারতাম। এবার ৮ জনের মধ্যে ৭ জনের ঠিক থাকলেও অভির পাশে থাকা সেই ভাইয়ের কোন খবর নাই। অভি চিল্লাইতেছে ওই ভাইয়ের নাম ধরে। অবশেষে আমি আমার ব্যাগ আমাদের সামনে পাথরের উপর রেখে এক হাতে অভিকে আরেক হাতে পেট দিয়ে কোন ভাবে নৌকা ধরে আছি। ক্রমান্বয়ের ১১১ মানে সেই ৩ জনকে শুধু বলছিলাম যা কিছু হবে হোক দড়ি ছাড়বেন না। কারণ ওরা যদি দড়ি ছাড়ে নৌকা স্রোতের টানে আমাদের সহ নিয়ে পাথরে আছড়ে ফেলবে। অভি তার অন্য হাত দিয়ে ওইভাইয়ের গেঞ্জি ধরে তাকে টেনে তুলে পানির নিচ থেকে। ওই ভাইয়ের মোবাইল(ওয়াটারপ্রুফ) হাতে ছিল। ওইটা নিয়ে আমি পাথরের উপর রেখে ধরে ধরে ৩ জনে সাঁতরে পারে আসলাম।

এরি মধ্যে পানির মধ্যে থাকা ভাইয়ের ব্যাগ ভেসে গেছে। এবার ক্রমান্বয়ের ১২ এরপর আমি অভি আর সেই ডুবে যাওয়া ভাই সহ ৬ জন মিলে নৌকার দড়ি টেনে ধরলাম। ওইপাশে নৌকার চালক নৌকা সোজা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে নৌকা টেনে ধরেছি। নৌকা কোনভাবেই আগাতে পারে না স্রোতের কারণে।দড়ি নৌকার একটা কাটের মধ্যে কয়েক রাউন্ড পেচানো ছিল। আমাদের শক্তির কাছে স্রোত এতই বেশি ছিল যে হঠাৎ দড়ির এক পেঁজ এক পেঁজ খুলতে আরম্ভ করে। ইতিমধ্যে উপরে পাড়া থেকে ৩ জন মহিলা ও ২ জন পুরুষ আরো ছোট কিছু বাচ্চা এসে আমাদের সাথে নৌকা টেনে ধরতে লাগল। বিশ্বাস করেন ১০/১১ জন মানুষ কোনভাবেই নৌকাকে সামনে আনতেই পারছি না স্রোতের কারণে। আমাদের সবার হাতের অবস্থা খারাপ। দড়ির টানে হাত লাল হয়ে আছে। যে ভাই পানিতে ডুবেছিল তিনি সমানে কান্না করে যাচ্ছিলেন। আর চিৎকার করে করে আল্লাহকে ডাকছিলেন। এত বড় বিপদ থেকে উদ্বার পেয়েছেন আর সবাই বেঁচে আছি এই কারণে। অবশেষে নৌকার চালক নৌকার ইঞ্জিন খুলে ফেলে পানির নিচে গিয়েই। সেটা খুলে পাথরে তুলে ফেলা হল।

ওইটা খুলে ফেলাতে নৌকা হালকা হল। এরি মধ্যে কয়েকটি নৌকা আমাদের পার করে যাওয়ার সময় আমাদের অবস্থা দেখেছে। আমরা তাদের বলেছি আমাদের সামনের নৌকাকে যেন জানায়। আমাদের আরেক নৌকা সামনে থাকার কথা ছিল কুমারী ঝর্নায়। ওরা যখন জানতে পারে এই অবস্থা আমাদের, গাইড ডেভিড ভাই আর কিচ্ছু চিন্তা না করেই দৌড় দিল। এই উত্তাল সাংগু নদী সাঁতরে পার করে আমাদের সাথে এসে যোগ দিলেন। কুমারী ঝর্না মূলত পাড়ের অন্য দিকে ছিল। এই গাইড মানুষটার প্রতি ভালবাসা জন্মায় গেছে। আমাদের বিপদের কথা শুনে তিনি যেভাবে দৌড় দিল পরে শুনলাম। বেশি ভাল ভাই। সবাই মিলে অবশেষে নৌকা সোজা করলাম।

নাফাখুম

এতক্ষন আমার কোন খবর ছিল না। আমি ভাবতেই পারছিলাম না এ আরেকটু হলে আমি নাই হয়ে যেতাম। যদিও আমি অনেক সেফ ছিলাম।তারপরেও। শেষে পাশের এক পাথরের উপর শুয়ে বিশাল পাহাড় দেখছি। মার কথা মনে পড়চ্ছিল খুব। বন্ধু বান্ধব আড্ডা ছোটবেলার কথা সব ভেসে উঠছিল হঠাৎ করেই। অঝোরে চোখে জল এসে গেল। ওই দিকে আর না যায়।

আমরা আরেক নৌকার খবর দিয়ে দিয়েছি ইতিমধ্যে। আরেক নৌকা এসে তিন্দুতে একটু থামলাম এরপর ওখান থেকে থানচি। যেই ভাই পানিতে ডুবেছিলেন তিনি পায়ে পাথরে বারি খেয়েছেন ভালই। তাছাড়া তার আরেকটি মোবাইল সাইড ব্যাগ থেকে পড়ে যায়। আর কাধ ব্যাগটি আমাদের অন্য টিম ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করে। আর হ্যাঁ ভিডিও সমেত উনার হাতে থাকা মোবাইল ও ভাল ছিল।

খাওয়া দাওয়া করে থানচি থেকে সন্ধ্যায় ৬ টায় চান্দের গাড়ি করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বান্দরবনের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। এখানেও চান্দের গাড়ি টাকা বেশি চাইতেছিল। ডেবিড দা বলে কয়ে অনুরোধ করে টাকা অনেক কমিয়ে এনেছে। চান্দের গাড়ি সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে। মেঘ ভেসে বেরাচ্ছে পাহাড়ের গায়ে। নীলগিরি পার হবার পর আমরা জাস্ট হারিয়ে গেলাম মেঘের ভিতর। সামনের রাস্তা কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না মেঘের জন্য। আধা ঘন্টা মেঘের ভিতর ছিলাম। এক স্বর্গীয় অনুভূতি সে এক। সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় বান্দরবন শহরে এসে সবার থেকে বিদেয় নিয়ে আমি আর অভি চট্টগ্রামের গাড়ি ধরলাম। বাসায় পৌঁছালাম সাড়ে ১১ টা। খাই দাই সোজা ঘুম।

এই এক ট্যুরে আমাকে পাহাড়ের সব রুপ দেখিয়েছে। আমি দেখেছি পাহাড়ের মানুষ শত কষ্ট করেও,ওদের কোন কিছু না থেকেও কি সুন্দর মুখে হাসি নিয়ে বেঁচে আছে।এতই সহজ সরল তারা। ওদের থেকে আমি বাঁচার অনুপ্রেরণা পাই। কষ্ট জয় করার সাহস পাই।

আমি স্বপ্ন দেখি এই নষ্ট শহর ছেড়ে পালিয়ে যেতে। চার দেয়ালের মাঝখান থেকে দৌড় দিয়ে টুপ করে সেই পাহাড়ে হারিয়ে যেতে। আমি আবার যাব-সেই বজ্রপাত দেখতে, সাংগু নদী জয় করতে, ভোর বেলায় সেই মেঘে আমি আবার হারিয়ে যাব। সন্ধ্যা বেলায় চায়ের কাপে আমি মাচার উপর বসে বৃষ্টি শেষে জোৎস্না দেখব। দেখব কিভাবে রাতের তারারা দূরে সরে যাচ্ছে একে অন্যের থেকে।আমি কড়া রোদে হেঁটে হেঁটে আবার ঝিরিপথে গলা ভিজাব। গলা অব্দি পানিতে ব্যাগ ভাসিয়ে আবার সাঁতরে বেরাবো। আমি আবার পাহাড়ে যাব। তোমাদের এই নষ্ট শহর ছেড়ে আমি আবার না বলে কয়ে বেরিয়ে পড়বো। একদিন ঠিক হারিয়ে যাব ওই পাহাড়েই….

Leave a Comment
Share