বান্দরবান

আমিয়াখুম জলপ্রপাত

আমিয়াখুম (Amiakhum) বান্দরবানের অসাধারণ একটি জলপ্রপাত যা বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত। পাথর আর সবুজে ঘেরা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসছে জলধারা। দুধসাদা রঙের ফেনা ছড়িয়ে তা বয়ে চলেছে পাথরের গা বেয়ে। নিমেষেই ভিজিয়ে দিচ্ছে পাশের পাথুরে চাতাল। সঙ্গে অবিরাম চলছে জলধারার পতন আর প্রবাহের শব্দতরঙ্গ। লোকালয় ছেড়ে গহিন পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্য—একবার দেখলে মনের গভীরে গেঁথে থাকবে আজীবন। প্রকৃতি এমন অপার সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে বসে আছে আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলায় – বান্দরবানে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পাশে আমিয়াখুম জলপ্রপাতকে দেখা হচ্ছে বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে। অনেকের মতেই এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত।

বাংলাদেশে এমন ঐশ্বর্যের অবস্থান যারাই দেখে তারাই বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। পাথুরে পাহাড়ের মাঝে এমন দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই যেন কথা হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় শতকষ্ট স্বীকার করে এখানে আসার সব ক্লান্তি, অবসাদ। বর্ষায় টগবগে যৌবন ফিরে পায় আমিয়াখুম। সুবিশাল জলধারা প্রবল গতিতে নেমে যায়। পাথর কেটে তীব্র বেগে ছুটে চলে নিচের দিকে।

আমিয়াখুম যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বান্দরবান

প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের নন-এসি বাস যায়। এসব বাস প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ১১০-২২০ টাকা ভাড়া রাখা হয়।

বান্দরবান থেকে আমিয়াখুম

নাফাখুম হয়ে আমিয়াখুম যাওয়ার রুট

থানচি -> রেমাক্রি -> নাফাখুম -> জিন্নাহ পাড়া -> থুইসাপাড়া -> দেবতাপাহাড় -> আমিয়াখুম।

বান্দরবান থেকে বাস বা জীপে সোজা চলে যাবেন থানচিতে। থানচি যেতে প্রায় ৪/৫ ঘন্টার মতো লাগে। থানচি নেমে প্রধান কাজ হলো একজন গাইড ঠিক করা। এবার থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজারে চলে যান, থানচি থেকে রোমাক্রি প্রতিজন ২০০ টাকা করে তবে টুরিষ্টদের দেখলে রিজার্ভ ৩০০০/৪০০০ হয়ে যায়। যদি থানচি থেকে সকাল সকাল রওয়ানা দেন তাহলে রোমাক্রি নেমে হাটা ধরুন নাফাখুম ঝর্ণার উদ্দেশ্য। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা হাটলে আপনারা পেয়ে যাবেন নাফাখুম এর দেখা। এখানে কিছুক্ষন ছবি তুলে, বিশ্রাম নিয়ে এবার সাজাই পাড়ার দিকে রওনা হয়ে যান।

নাফাখুম ঝর্ণা থেকে হাটা শুরু করলে ৩/৪ টা ঘন্টার মধ্যেই আপনারা পৌছে যাবেন সাজিয়াপাড়া। সাজিয়াপাড়াতে রাতটুকু কাটিয়ে পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়ুন এবং সাজিয়াপাড়া থেকে একজন গাইড নিয়ে রওয়ানা হয়ে যান আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে গাইডকে ৫০০ টাকার মত দিতে হবে।

প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনঘন্টা অসাধারণ সব রাস্তা দিয়ে হাটলেই পেয়ে যাবেন আমিয়াখুম ঝর্ণা। আমিয়াখুম দেখে আবার ফিরে চলুন সাজিয়াপাড়া, রাতটুকু সাজিয়াপাড়া কাটিয়ে সকালে আবার আগের রাস্তায় ফিরে আসতে পারেন থানচিতে।

পদ্মমুখ/পদ্মঝিরি দিয়ে আমিয়াখুম যাওয়ার রুট

বান্দরবান – বলিপাড়া – থানচি – পদ্মমুখ/পদ্মঝিরি – হরিশ্চন্দ্র পাড়া – নতুন পারা – থুইসা পাড়া – দেবতা পাহাড় – আমিয়াখুম – সাতভাইখুম – ভেলাখুম – থুইসা পাড়া – জিন্নাহপাড়া – নাফাখুম – রেমাক্রি ফলস – বড় পাথর – থানচি – বান্দরবন। তবে রেমাক্রি দিয়ে আমিয়াখুম রুটটা একটু কষ্টকর হলেও আপনাকে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ট্রেকিং কম করতে হবে।

Time needed: 3 days

এই রুটে বান্দরবানে মূল ট্রেকিং এর সময়টা লাগবে ৩ দিন।

  1. বান্দরবান – থানচি – পদ্মমুখ- থুইসাপাড়া

    বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে থানচি পৌছে যাবেন। থানচি পৌছে ট্রলার ঘাট থেকে ইঞ্জিন বোটে পদ্মমুখ। পদ্মমুখ থেকে ট্রেকিং করে থুইসাপাড়া। থুইসাপাড়ায় স্থানীয়দের বাসায় রাত্রিযাপন।

  2. থুইসাপাড়া – ভেলাখুম – আমিয়াখুম – সাতভাইখুম – থুইসাপাড়া

    পরদিন সকালের নাস্তা শেষ করে দেবতা পাহাড় এর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। দেবতাপাহাড় পাড়ি দিয়ে ভেলামুখ, আমিয়াখুম ও সাতভাইখুম ঘুরে রাতে আবার থুইসাপাড়ায় ফিরে আসুন।

  3. থুইসাপাড়া – নাফাখুম – রেমাক্রি – থানচি – বান্দরবান

    আজ ট্রেকিং এর শেষ দিন। সকালে থুইসাপাড়া থেকে ঝিরিপথ ধরে হেঁটে নাফাখুম ও রেমাক্রি ভ্রমণ। এর পরে রেমাক্রি থেকে ইঞ্জিন বোটে বড়পাথর, তিন্দু হয়ে আবার থানচি প্রত্যাবর্তন। বান্দরবান থেকে রাত ১০:৩০ টার ফিরতি বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পরদিন ভোর ৬:০০ টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছানো।

থাকার ব্যবস্থা

আমিয়াখুম থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি সাজিয়াপাড়া ও জিন্নাহপাড়া অবস্থিত। রাত কাটানোর জন্যে সাজিয়াপাড়ার অথবা জিন্নাহপাড়ার কোন এক বাসায় আশ্রয় নিতে হবে। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা তারাই করে দিবে। প্রতিরাতে আপনাকে ১৫০ টাকা খরচ গুনতে হবে এক্ষেত্রে। গাইডই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।

আমিয়াখুম ভ্রমণ খরচ

প্রথমেই একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, ভ্রমণের ব্যাপারটা আপেক্ষিক। আপনি যেভাবে খরচ করবেন, সেভাবে এই খরচ বাড়বে অথবা কমবে। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো – এখানে উল্লেখিত খরচগুলো একটা ধারনা মাত্র। বর্তমান মূল্যস্ফিতির সাথে সাথে এটি কিছুটা কম বেশী হতে পারে। এখানে উল্লেখিত খরচ গুলো একাবা ছোট দলের জন্যে নয়, দলগত ভাব গেলে এই খরচের হিসেব থেকে ভালো একটা ধারনা পেতে পারেন। আমিয়াখুম ট্যুর প্ল্যান করলে সাথে নাফাখুম, ভেলাখুম, সাতভাইখুম প্রভৃতিও সাথে রাখলে ভালো। একই খরচে আপনি এইগুলো জায়গা কভার করতে পারবেন।

  • ঢাকা থেকে নন-এসি বাসে বান্দরবান – ৬২০ টাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে নন এসি বাসে বান্দরবান – ১১০ টাকা
  • সম্পূর্ণ ট্যুরের জন্যে গাইড, লোকাল গাইড এবং ভেলা খরচ – ৪৫০০-৫০০০ টাকা
  • বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত চান্দের গাড়ির যাওয়া আসার ভাড়া – ২০০০ + ২০০০ টাকা
  • থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত বোট ভাড়া যাওয়া-আসা (সর্বোচ্চ ৫ জন) – ৪৫০০ + ৪৫০০ টাকা
  • প্রতি রাত থাকা – ১৫০ টাকা
  • প্রতিদিনের জন্যে লাইফ জ্যাকেট ভাড়া – ৫০ টাকা
  • গাইডের থাকা খাওয়ার খরচ আপনাদের
  • খাওয়াটা নিজেদের উপর নিজেরা যেমন পছন্দ করেন।

গাইড

সাজিয়াপাড়া অথবা জিনাপাড়া থেকে গাইড ভাড়া নিবে ৫০০ টাকা। রাফায়েল দাদার নাম্বার – 01866650914

Leave a Comment
Share