বান্দরবান জেলা সদর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরি (Niligiri) এর অবস্থান। মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে যেতে হবে বান্দরবানের নীলগিরি। এখানে মেঘ নিজে এসে ধরা দেবে আপনার হাতে। মাথার উপর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা খেলা করে নীলগিরির পাহাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্য্যের এক নীলাভূমি এই নীলগিরি যেন প্রকৃতির এক অনন্য দান। নীলগিরির চূড়া থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, প্রাকৃতিক আশ্চর্য বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আলো-আঁধারি বাতি এবং চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সারিও দেখতে পাওয়া যায়।
নীলগিরির কাছাকাছি রয়েছে বেশ কয়েকটি ম্রো উপজাতীয় গ্রাম। এর একদম কাছে কাপ্রু পাড়া যেখান থেকে আপনি সহজেই ম্রো আদিবাসী সম্পর্কে জানতে পারবেন। নীলগিরি যাওয়ার পথে আপনি দেখে যেতে পারেন বান্দরবানের অপার সৌন্দর্যময় শৈলপ্রপাত। এখানে আদিবাসী বম তরুণীরা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখান থেকে কিনে নিতে পারেন আদিবাসীদের হাতের তৈরি নানা পণ্য।
নীলগিরিতে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ফলে এখানে নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। আপনার যে কোন প্রয়োজনে সেনা সদস্যরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্টও। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে নীলগিরিতে পৌঁছেই রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খাওয়া যায়।
শীতকাল এবং বর্ষাকাল দুই ঋতুতেই এইখানে ভ্রমণে অনেক বেশি আনন্দ। তবে বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশী মজা পাওয়া যায়। কারণ এই সময়ে মেঘের অপরূপ নৃত্য দেখতে দেখতেই দিন বয়ে যায়।
প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।
পর্যটকদের নীলগিরি যেতে হলে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপষ্টেশন থেকে থানছিগামী জীপ অথবা বাসে করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া যায়। বান্দরবন জীপ ষ্টেশন থেকে জীপ, ল্যান্ড রোভার, ল্যান্ড ক্রুজারসহ অন্যান্য হালকা গাড়ী ভাড়ায় পাওয়া যায়। নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। বান্দরবান জেলা সদর থেকে সাধারণত বিকেল ৫ টার পর নীলগিরির উদ্দেশে কোন গাড়ী যেতে দেয়া হয় না।
বাদশা ড্রাইভার – (৫ সিটের ল্যান্ড ক্রুজার ড্রাইভার) ফোন:-০১৫৫০৬০১৬৩৫,০১৯২৫৮৭০০২৭। এই ড্রাইভারের মাধ্যমে (নীলগিরি + চিম্বুক + শৈলপ্রপাত + স্বর্ণ মন্দির) এই চারটি সাইট দেখতে পারবেন মাত্র ২৮০০ টাকায়। ইচ্ছে করলে স্থানীয় ড্রাইভার বাদশার সহযোগীতা নিতে পারেন।
চান্দের গাড়ির ভাড়া
সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরি আসা-যাওয়া-ছোট জীপঃ (৫সিট) ২৩০০ টাকা এবং বড় জীপ (৮সিট) ২৮০০ টাকা।
ঘুরে বেড়াতে পর্যটকদের জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং গাড়ির জন্য আলাদা ৩০০ টাকা অতিরিক্ত ফি নেয়ার নিয়ম চালু রয়েছে।
সেনানিয়ন্ত্রিত নীলগিরি রিসোর্টে ছয়টি কটেজ রয়েছে। নামগুলো হচ্ছে আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাঙ্গনা, হেতকরা রাইচা এবং মারমারাইচা। কটেজগুলো থাকতে হলে পর্যটকদের গুণতে হবে ৪ হাজার থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অফিসার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার রেফারেন্স অবশ্যই লাগবে। রেফারেন্স ছাড়া কোনো বুকিং নেয়ার নিয়ম নেই নীলগিরি রিসোর্টে।
পেট্রো এভিয়েশন
৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা।
ওয়েবসাইটঃ http://nilgiriresort.com
ইমেইলঃ info@nilgiriresort.com
যোগাযোগঃ ০১৭৬৯২৯৯৯৯৯
খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধার জন্যে যোগাযোগঃ ক্যাম্প কমান্ডার (০১১৯০৮১১৩২২)
বান্দরবান জেলা সদর থেকে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন। বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেখানে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
Leave a Comment