পঞ্চগড় (Panchagarh) হলো বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Kangchenjunga) দেখা যায়, যার তিন দিকেই ভারতের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এর উত্তর দিকেই ভারতের দার্জিলিং জেলা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো আছে। এর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজা এটি নির্মাণ করেছিলেন। ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ একটি পিকনিক স্পট নির্মাণ করেছে। ওই স্থান দুটি পাশাপাশি অবস্থিত হওয়ায় সৌন্দর্যবর্ধনের বেশি ভূমিকা পালন করছে। সৌন্দর্যবর্ধনে এ স্থান দুটির সম্পর্ক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। মহানন্দা নদীর তীরঘেঁষা ভারতের সীমান্তসংলগ্ন (অর্থাৎ নদী পার হলেই ভারত) সুউচ্চ গড়ের ওপর সাধারণ ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পট অবস্থিত। ডাকবাংলোর বারান্দায় দাঁড়ালে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
সাধারনত শীতের মেঘমুক্ত আকাশে তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া রোদে চিকচিক করে ওঠে আর ঠিক তখনই কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করা সম্ভবপর হয়। তেঁতুলিয়ায় আসলে ভালো ভাবে দেখা যাবে হিমালয় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেষ্ট চূড়ার প্রাকৃতিক সুন্দর দৃশ্য যা সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাতের বেলা বিভিন্ন রুপ ধারন করে। পাশাপাশি আপনি উপভোক করতে পারবেন এ জেলার নয়নাভীরাম সৌন্দর্য। প্রকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা এই জেলাকে ঘিড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় অনেক চা বাগান এবং পিকনিক র্কনার। যা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। তাইতো শীত এলেই প্রকৃতি প্রেমিরা ভীর জমায় পঞ্চগড়ে আর উপভোগ করে মনমুগ্ধকর প্রকৃতি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়া বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতুসহ বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খুব সকালে মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত নীল আকাশে খালি চোখেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য। এছাড়া পঞ্চগড়ের ভিতরগর এলাকা থেকে সবচেয়ে স্বষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
সাধারণত অক্টোবর এর মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন আকাশে মেঘ থাকে না আবার কুয়াশাও পড়া শুরু হয় না। শুধুমাত্র তখনই তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।
তেতুলিয়া থেকে ইজিবাইক কিংবা সিএনজি যোগে ভজনপুর যাওয়া যায়। ইজিবাইক ভাড়া ৩০টাকা (জন প্রতি) এবং সিএনজি ভাড়ার হার ২০টাকা (জন প্রতি)।
তেঁতুলিয়া থেকে বছরের সব সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না! সাধারণত অক্টোবর এর মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি পর্যন্ত যখন আকাশে মেঘ থাকে না আবার কুয়াশাও পড়া শুরু হয়নি, শুধুমাত্র তখনই তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায় বরফে ঢাকা ধবল পাহাড়ের চুড়া – কাঞ্চনজঙ্ঘা!
সরাসরি পঞ্চগড় যেতে হলে আপনি হানিফ কিংবা নাবিল পরিবহনে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। বাসগুলোতে যেতে পারেন। এখানকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো। সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা আর মাইক্রো বাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
পঞ্চগড় বাস টার্মিনালের পাশে ধাক্কামারা মোড় থেকে তেতুলিয়ার বাস ছাড়ে সারাদিন, ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ভাগ্য ভালো হলে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে যেতে যেতে দেখতে পাবেন স্বাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় সরাসরি চলাচল করে হানিফ ও বাবুল পরিবহনের বাস, ভাড়া ৫০০ টাকা। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য স্কুটার ভাড়া করাই ভালো।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে – শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০৫৩ (স্নিগ্ধা), প্রথম বার্থ ১৯৪২ টাকা।
তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার – 01751026225 বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।
এছাড়াও তেতুলিয়াতে থাকার জন্যে ডিসি বাংলো (0568-60336), সিমান্ত পার (08670-149431), কাজী ব্রাদার্স আবাসিক হোটেল রয়েছে।
পঞ্চগড়ে থাকার জন্য মধ্যম মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এরকম কয়েকটি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক (01720-689075), সিনেমা হল রোডে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, তেতুলিয়ায় চৌরাস্তা হতে বায়ে সীমান্তপাড় হোটেল। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ।
Leave a Comment