বোদেশ্বরী মন্দির (Bodeshshori Mondir) পঞ্চগড় জেলার প্রাচীন প্রত্নতত্ত্বগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক একটি মন্দির। প্রাচীন এ মন্দিরটির অবস্থান পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী গ্রামে। পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত বোদেশ্বরী মন্দিরটি দূর থেকে মসজিদ বলে ভুল হতে পারে যে কারুরই। ৩৫ ফুট দীর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রস্থের এ মন্দিরটি ইংরেজ আমলে কোচবিহারের এক মহারাজা নির্মাণ করেন। বদেশ্বরী মন্দিরটির পাশে দুটি গড়ের সন্ধান পাওয়া গেছে যা ভিতর গড় ও বাহিরগড় নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।
বোদেশ্বরী মন্দির সর্ম্পকে প্রচলিত এক মতবাদে জানা যায়, হিন্দু ধর্মের ১৮টি পুরাণের মধ্যে স্কন্দ পুরাণ একটি। সেই স্কন্দ পুরাণে কাশির উল্লেখ্য রয়েছে। রাজা দক্ষ একটি যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন। ভোলানাথ শিব রাজা দক্ষের জামাই ছিলেন। রাজা দক্ষ কখনোই শিবকে জামাই হিসেবে মেনে নেননি। কারণ মহাবীর শিব সর্বদাই ছিলেন উদাসীন এবং নেশা ও ধ্যানগ্রস্ত। উক্ত যজ্ঞানুষ্ঠানে মুনি-ঋষিগণ ও অন্যান্য দেবতাগণ নিমন্ত্রিত হলেও রাজা দক্ষ জামাই তথা দেবী দুর্গার স্বামী ভোলানাথ শিব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এ কথা শিবের সহধর্মিনী জানা মাত্রই ক্ষোভে দেহ ত্যাগ করেন। শিব তার সহধর্মিনীর মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে উন্মাদ হয়ে শব দেহটি কাঁধে নিয়ে পৃথিবীর সর্বস্তরে উন্মাদের ন্যায় ঘুরতে থাকেন এবং প্রলয়ের সৃষ্টি করেন। সে মুহূর্তে স্বর্গের রাজা বিষ্ণুদেব তা সহ্য করতে না পেরে স্বর্গ হতে একটি সুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করেন। চক্রের স্পর্শে শব দেহটি ৫২টি খণ্ডে বিভক্ত হয়। শবের ৫২টি খণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশে পড়ে দুইটি খণ্ড। একটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আরেকটি পঞ্চগড়ের বোদেশ্বরীতে। মহামায়ার খণ্ডিত অংশ যে স্থানে পড়েছে তাকে পীঠস্থান বলা হয়। বোদেশ্বরী মহাপীঠ এরই একটি। বোদেশ্বরী মন্দিরে সতীর দেহের গোড়ালি অংশ পড়ে হয় বলে প্রচলিত আছে। সে কারণে হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে এ স্থানটি পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মিনাজ-ই- সিরাজী রচিত তরকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থের বর্নণা অনুযায়ী, বখতিয়ার খলজি তিব্বত অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তনকালে এ মন্দির চত্বরে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
বাসে যেতে চাইলে
ঢাকার শ্যামলী, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মিরপুর থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইস, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল বাসে চেপে বাই রোডে পঞ্চগড় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে পঞ্চগড় নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাস ভাড়া ৮০০-১৬০০ টাকা। বাসে গেলে বোদা উপজেলায় নেমে যেতে পারেন। সেখান থেকে রিক্সা কিংবা অটোযোগে বোদেশ্বরী মন্দির পৌঁছাতে পারবেন।
ট্রেনে যেতে চাইলে
ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে – শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০৫৩ (স্নিগ্ধা), প্রথম বার্থ ১৯৪২ টাকা।
পঞ্চগড় পৌঁছে সিএনজি বা অটোরিক্সা নিয়ে বোদেশ্বরী মন্দির পৌঁছাতে পারবেন।
পঞ্চগড় সার্কিট হাউজ, ডিসি কটেজ, পঞ্চগড়, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। রয়েছে চিনিকল রেস্ট হাউজ, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, বাংলাবান্ধা ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণার, দেবীগঞ্জ কৃষি ফার্ম গেস্ট হাউজ, বোদা ডাকবাংলো, রেশম প্রকল্প রেস্ট হাউজ ইত্যাদি।
Leave a Comment