রকস মিউজিয়াম (Rocks Museum) পঞ্চগড় সদরে গড়ে তোলা পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অবস্থিত একমাত্র পাথুরে জাদুঘর। ১৯৯৭ সালে উক্ত কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. নামজুল হক একক প্রচেষ্টায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে গড়ে তোলেন এই রকস মিউজিয়াম। এই জাদুঘরে পঞ্চগড় জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ও লোকজ সংগ্রহ রয়েছে প্রায় ১,০০০ (এক হাজার) সংখ্যক এরও বেশি। রকস মিউজিয়াম এর অভ্যন্তরীণ ও উন্মুক্ত দুই রকমের গ্যালারি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ গ্যালারিতে রয়েছে – বিভিন্ন আকৃতি, রং ও বৈশিষ্ট্যের আগ্নেয়শীলা, পাললিক শীলা ও নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি, খনিজবালি, সাদা মাটি, তরঙ্গায়িত চ্যাপ্টা পাথর, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শীলা। এখানে বহু বছরের পুরনো ইমারতের ইট, পোড়ামাটির মূর্তি দেখা যায়।
রকস মিউজিয়ামটি প্রথমে সরকারি মহিলা কলেজের একটি কক্ষে স্থাপিত হলেও পরে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ২০০৮ সালে সরকার রকস মিউজিয়াম এর জন্য একটি দ্বিতীয়তলা ভবন নির্মাণ করে। তবে বড় বড় পাথরগুলো পড়ে আছে বাইরে, কলেজের আঙিনায় এখানে-সেখানে। দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত পাথর, বালি, এগুলোকে বর্ণনাসহ সাজিয়ে রাখা হয়েছে কক্ষের মধ্যে। বাইরে সাজিয়ে রাখা পাথরগুলো নানা স্থান থেকে সংগৃহীত। পাথরের পাশাপাশি এখানে এ অঞ্চলের আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, হাজার বছরের পুরাতন ইমারতের ইট, পাথরের মূর্তি প্রভৃতি স্থান পেয়েছে। এছাড়াও আছে হাজার বছরের পুরনো দুটি নৌকা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এগুলো ব্যবহার করা হতো বলে গবেষকরা মনে করেন।
হাজার বছরের পুরনো চুক্তিনামা, মোগল সাম্রাজ্য ও ব্রিটিশ শাসনামলের রোপ্য ও তামার মুদ্রা এখানে সংরক্ষিত আছে। ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ব্যবহার্য গৃহস্থালির জিনিসপত্র, চাষাবাদের উপকরণ এবং ধর্মীয় উপাসনার নানাবিদ দ্রব্যাদি এখানে সাজিয়ে রাখা আছে। শুধু তাই নয় পাথরের ওপরে লেখা চীন-নেপালি লিপির মুদ্রণ দেখা যায় এখানে। বার রকমের রঙিন বালু এই মিউজিয়ামকে করেছে সমৃদ্ধ। নানা নদীর তলদেশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে বালু আর মাটি যা কৌতূহলী দর্শকের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে সহায়তা করে। সারা বছরেই দর্শনার্থীরা আসেন এখানে। তবে শীতে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যায়। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে অনেক পর্যটকই শীতের শুরুতে পঞ্চগড়ে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। আর তখন তাঁরা এই জাদুঘরে একবার ঢু মারতে ভুল করেন না।
রকস মিউজিয়াম ছাড়াও পঞ্চগড়ের আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলো হলো – মহারাজার দিঘী, মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ভিতরগড় দুর্গনগরী, গোলকধাম মন্দির, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, বার আউলিয়া মাজার শরীফ, তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো।
সরাসরি পঞ্চগড় যেতে হলে আপনি হানিফ কিংবা নাবিল পরিবহনে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। পঞ্চগড় পৌঁছে শহরের যে কোন স্থান থেকে রিক্সা কিংবা অটোযোগে রকস মিউজিয়ামে যাওয়া যাবে।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে – শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০৫৩ (স্নিগ্ধা), প্রথম বার্থ ১৯৪২ টাকা।
পঞ্চগড়ে থাকার জন্য মধ্যম মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এরকম কয়েকটি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক (01720689075), সিনেমা হল রোডে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, তেতুলিয়ায় চৌরাস্তা হতে বায়ে সীমান্তপাড় হোটেল। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ।
Leave a Comment