তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো (Tetulia Dak Banglaw) আদতে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় অবস্থিত একটি রেস্ট হাউজ যা তাঁর ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ডাকবাংলোর বারান্দা, ছাদ থেকে কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার অসাধারন ভিউ এর জন্যে খ্যাতি লাভ করেছে। ঐতিহাসিক এই ডাক বাংলোর নির্মাণ কৌশল অনেকটা ভিক্টোরিয়ান ধাচের। জানা যায়, এটি নির্মাণ করেছিলেন কুচবিহারের রাজা। তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলোর পাশাপাশি এখানে নির্মান করা হয়েছে পিকনিক কর্ণার। সেখান থেকে উপভোগ করা যায় হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজংঘার সৌন্দর্য।
ডাকবাংলোর পাশেই বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অনেকগুলো ভিউ পয়েন্ট থাকলেও এখান থেকেই সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালোভাবে দেখা যায়। যদিও এর পুরাটাই আবহাওয়া এবং ভাগ্যের উপর ডিপেন্ড করে। কাঞ্চনজংঘা দেখার ভালো সময় সাধারণত সূর্যোদয়ের পর থেকে সকাল ১১/১২টা পর্যন্ত। আলো বাড়ার সাথে সাথে এর রুপ চেঞ্জ হতে থাকে। বেশ কয়েকটি রুপে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। যদিও খুব কাছের ভিউ পেতে হলে আপনাকে বাইনোকুলার নিয়ে যেতে হবে। ডাক বাংলোর পাশেই গড়ে তোলা পিকনিক স্পটেও সময় কাটাতে পারেন চাইলে। তাছাড়া মহানন্দা নদীর সৌন্দর্যেও আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
সরাসরি পঞ্চগড় যেতে হলে আপনি হানিফ কিংবা নাবিল পরিবহনে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। বাসগুলোতে যেতে পারেন। এখানকার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো। সারা দিনের জন্য এসব জায়গা ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা আর মাইক্রো বাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় বাসস্টেশন এবং শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যাবে।
পঞ্চগড় বাস টার্মিনালের পাশে ধাক্কামারা মোড় থেকে তেতুলিয়ার বাস ছাড়ে সারাদিন, ভাড়া পড়বে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ভাগ্য ভালো হলে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে যেতে যেতে দেখতে পাবেন স্বাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেতুলিয়া থেকে অটো ভ্যান ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন ডাকবাংলো।
ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়ায় সরাসরি চলাচল করে হানিফ ও বাবুল পরিবহনের বাস, ভাড়া ৫০০ টাকা। তেঁতুলিয়ায় নেমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, চা বাগান বা আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরির জন্য স্কুটার ভাড়া করাই ভালো।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে – শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১০৫৩ (স্নিগ্ধা), প্রথম বার্থ ১৯৪২ টাকা।
তেঁতুলিয়ায় মহানন্দা নদী তীরের ডাকবাংলোতে থাকার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দুই বেডের প্রতি কক্ষের ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার – 01751026225। বন বিভাগের রেস্টহাউসে থাকার জন্য জেলা সদর অথবা তেঁতুলিয়ায় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরেও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো আছে, এখানে থাকার অনুমতি নিতে হবে পঞ্চগড় থেকে। এখানে প্রতি কক্ষের ভাড়া ২০০ টাকা।
এছাড়াও তেতুলিয়াতে থাকার জন্যে ডিসি বাংলো (0568-60336), সিমান্ত পার (08670-149431), কাজী ব্রাদার্স আবাসিক হোটেল রয়েছে।
পঞ্চগড়ে থাকার জন্য মধ্যম মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এরকম কয়েকটি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক (01720-689075), সিনেমা হল রোডে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, তেতুলিয়ায় চৌরাস্তা হতে বায়ে সীমান্তপাড় হোটেল। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এক হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন এসি কক্ষ।
Leave a Comment