বান্দরবান

দেবতাখুম

দেবতাখুম (Debotakhum), বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। নৈসর্গীক বান্দরবানকে বলা হয় খুমের স্বর্গরাজ্য আর এই রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিঃসন্দেহে দেবতাখুম এর কাছেই যাবে। স্থানীয়দের মতে প্রায় ৫০-৭০ ফুট গভীর এই খুমের দৈর্ঘ্য ৬০০ ফুট যা ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশী বন্য। দেবতাখুম যেতে হলে আপনাকে প্রথমে রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্প যেয়ে অনুমতি নিয়ে ট্রেক করে শীলবাঁধা পাড়া (লিরাগাঁও) যেতে হবে। অবশ্যই শীলবাঁধা পাড়া থেকে বাঁশের মজবুত ভ্যালা বানিয়ে নিতে হবে। শীলবাঁধা গিয়ে প্রথমে পং সু আং খুম পার হতে হবে। পং সু আং খুম পার হওয়ার পর দেবতাখুমের শুরু। স্থানীয়দের কাছে এটা হল সোনাখুম। অনেকে আবার মারমা ভাষায় থংচিখুম নামেও ডাকেন।

দেবতাখুম এর ট্রেইল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। বর্ষায় গেলে ট্রেইলের ঝিরি/পাহাড়ের রূপে যেমন আপনার চোখ আটকাবে তেমনি পিচ্ছিল পাথুরে পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কাও থাকে পদে পদে। কোন কোলাহল নেই, নেটওয়ার্কের বাহিরে। চারিপাশে নিস্তব্ধ সুনসান নিরাবতা, যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ। ফোটা ফোটা পানির শব্দে আরো ভূতুড়ে মনে হবে পরিবেশটা। বিশাল দুটি পাহাড়ের মাঝ দিয়েই চলে গেছে পথ যা ভেলায় করে পারি দিতে হবে। প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে উপভোগ করতে পারবেন এখানটায়। যেন মিশে যাবেন প্রকৃতির সাথে। যাওয়ার পথই আপনাকে বলে দিবে – স্বর্গের পথ কতটা সুন্দর হতে পারে।

অসম্ভব রকমের এডভেঞ্চার, একেবারে মনকে ভয়ার্ত করে দেয়ার জন্যে পারফেক্ট দেবতাখুম। ট্রেকিং, এডভেঞ্চার, রিস্ক, ভেলার কায়াকিং সবকিছুর একটি কম্বো প্যাকেজ এই দেবতাখুম। একেবারে নেটওয়ার্ক এর বাইরে, ভিন্ন এক পরিবেশ। আশেপাশের সব সুনসান। শব্দ হিসেবে থাকবে উপর থেকে পানির ফোটা পরার শব্দ, নিজেদের ভেলার আওয়াজ এবং আপনার কথারই প্রতিধ্বনি! আশেপাশের পরিবেশটা এত ভুতুড়ে আর নিরবতার যে এটা আপনাকে সত্যি সত্যিই রিয়্যল এডভেঞ্চারের ফিল এন দিবে। বড় বড় দুই পাহাড়ের মাঝখানের এই খুম (গর্ত/যেখানে পানি জমে) ভিতরের দিকে একদমই অন্ধকার। সূর্যের আলো খুবই সংকীর্ণ।

দেবতাখুমের রুট প্ল্যান: বান্দরবান > রোয়াংছড়ি বাজার > কচ্ছপতলী > শীলবাধা পাড়া > দেবতাখুম

দেবতাখুম যাওয়ার উপায়

  • যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি বাজার যাওয়ার উপায় বাস/সিএনজি। বাসের ক্ষেত্রে, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রোয়াংছড়ি’র বাস ছাড়ে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ডে যেতে সিএনজি/অটো পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ১০/১৫টাকা নিবে।
  • বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি বাস জনপ্রতি ৬০টাকা। সময় লাগবে ১ঘন্টার মতন।
  • আর সিএনজি’র ক্ষেত্রে বান্দরবান থেকে সরাসরি একদম রোয়াংছড়ি বাজারের সিএনজি পাবেন৷ সিএনজি রিজার্ভ ৫০০টাকার মতন নিবে।
  • দেবতাখুমে যেতে হলে আপনাকে গাইড নিতে হবে আর গাইড রোয়াংছড়ি বাজার থেকেই নিতে হবে। কারণ এখানে পুলিশ এন্ট্রি আছে এবং পরে আবার কচ্ছপতলী’তে আর্মি চেকপোস্টে এন্ট্রি আছে। আর আপনার গাইড’ই সব ব্যাবস্থা করবে।
  • রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী যেতে হবে সিএনজি’তে। সময় লাগবে ৩০/৩৫মিনিটের মতন।
  • কচ্ছপতলীতে এন্ট্রি করার পর তারপর হাঁটা পথ এবং পাহাড় ট্রেকিং করে শীলবাধা পাড়া৷ কচ্ছপতলী বাজারের পর আর দোকান পাবেন না তাই পানি, খাবার কিনতে চাইলে এখান থেকেই কিনতে হবে। কচ্ছপতলী থেকে শীলবাধা পাড়ায় যেতে সমগ লাগবে ৩০/৪০মিনিটের মতন।
  • শীলবাধা পাড়া থেকে তারপর ১০ মিনিটের মতন পথ হাঁটলেই দেবতাখুম। তারপর ভেলা নিয়ে খুমের রাজ্যে, ফেরার পথও এক রুট।

খরচপাতি

  • ঢাকা থেকে বান্দরবান এর বাস ভাড়া – ৬২০ টাকা জনপ্রতি (নন এসি বাস)। মনে রাখবেন বাসের ভাড়া পরিবর্তনশীল।
  • বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি বাস ভাড়া – ৬০ টাকা জনপ্রতি।
  • বান্দরবান থেকে কচ্ছপতলী চান্দের গাড়ি ভাড়া সারাদিনের জন্য ২০০০-২৫০০ টাকা
  • রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী সিএনজি ভাড়া আনুমানিক ১৫০-২০০ টাকা।
  • নৌকা পারাপার, লাইফ জ্যাকেট এবং ভেলা ভাড়া – ১৫০ টাকা।
  • গাইডের খরচ মোট – ১০০০ টাকা।

গাইড

খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়ে

  • কচ্ছপতলীতে গিয়ে গাইডসহ আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের/পাসপোর্ট এর দু কপি ফটোকপি রাখা আবশ্যক!
  • দেবতাখুমে ঘোরার জন্য ভেলার ব্যাপারে গাইডকে আগেই বলে রাখা উত্তম।
  • নেটওয়ার্ক এ সমস্যা হবে!! কচ্ছপতলী তে শুধু রবি/এয়ারটেল এর নেটওয়ার্ক পাবেন!! কিন্তু সেখান থেকে খুম পর্যন্ত যাওয়া আসার পথে আপনি পুরোটাই নেট ওয়ার্কের বাইরে থাকবেন।
  • ট্রেকিং সু সাথে না থাকলে কিনে নেবেন। ১২০-১৪০ টাকা পড়বে। বান্দরবানেই পাবেন।
  • দেবতাখুম যাওয়ার পথে শীলবান্ধা ঝর্না নামে একটা ঝর্না পাবেন। যাওয়ার পথে ঝর্নাটা দেখে যেতে ভুলবেন না।
  • বর্ষাকালেই খুমের আসল সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে শীলবান্ধা ঝর্নার পরের ট্রেকিংটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে কারন ঝিরিপথ খুবই পিচ্ছিল থাকে। তাই এই ব্যাপারে আগে থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা ভালো।
  • নতুন ট্রেকারদের বর্ষাকাল এড়িয়ে যাওয়াই ভালো কারন বর্ষায় এর ট্রেইলের রুপ ভয়ংকর হতে পারে আপনার জন্য।
  • অবশ্যই মনে রাখবেন রোয়াংছড়ি বাজার থেকে বান্দরবানের শেষ বাস বিকাল ৫টায়। এরপর আর বাস নাই। তবে সিএনজি সবসময় পাবেন।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Bandarbandebotakhumrowangchhari