বান্দরবান

কির্সতং

কির্সতং (Kirs Taung) এর অবস্থান চিম্বুক রেঞ্জে যার উচ্চতা আনুমানিক ২৯৮৯ ফুট। কির্সতং নামটি আদতে মারমা শব্দ যা এসেছে ‘কির্স’ ও ‘তং’ এর যৌথ মিলন থেকে। কির্স একটি বিলুপ্ত প্রায় পাখির নাম। এই পাখিগুলো কির্সতং এর চূড়াতেই দেখা যায়। আর ‘তং’ অর্থ হচ্ছে পাহাড়। উচ্চতার দিক দিয়ে কির্সতং রুংরাং এর চেয়ে প্রায় ৩০০ ফিট উঁচু। ক্রিসতং এর সামিট থেকে তিন্দু এর পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যায় যদিও সামিটের চারপাশে ঘন গাছপালার কারণে খুব ভাল ওয়াইড ভিউ পাও্য়া যায় না।

চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া হিসেবে পরিচিত এই পাহাড়টি একসময় শত শত মাদারগাছের সংরক্ষিত বন ছিল। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতীর বিলুপ্তপ্রায় পশু-পাখি ও প্রাণী বসবাস করে। মায়াবী এই কির্সতং এর জংগলের বেশীর ভাগ জায়গাতেই সূর্যের আলো পৌছায় না। যেখানে মেঘের সঙ্গে রোদের লুকোচুরি খেলা চলে। বিশাল বিশাল গাছের ছাউনী দিয়ে ঘেরা বনটি এখনও বেশ বুনো রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে বেশ কিছু পাখির ডাক শোনা যায়, যেগুলো এখন বিলুপ্ত প্রায়। ক্রিসতং চূড়া থেকে বহুদূরের উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়।

কির্সতং সামিট / যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে আলীকদম যেতে হবে প্রথমে। আলীকদমের সরাসরি বাসের ভাড়া ৮৫০ টাকা। সরাসরি আলীকদমের বাস না পেলে কক্সবাজারের যেকোনো বাসে উঠে চকোরিয়া নামতে হবে। সেখান থেকে আলীকদম। আলীকদম এসে পানবাজার থেকে গাইড ঠিক করতে হবে। গাইডের খরচ খুব বেশি না। দরদাম করে নিতে হবে যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট ফি নেই। সেখান থেকে বাইক বা চান্দের গাড়ি তে করে ১৩ কিলো যেতে হবে। বাইকে জনপ্রতি ২০০ আর চান্দের গাড়ি ২৫০০-৩০০০ টাকা। ১৩ কিলো নেমে দুসরী বাজার যাবেন। সেখান থেকে ট্রেকিং করে মেনকিউ পাড়া যেতে হবে। সেখান থেকে মেনিয়াংক পাড়া। রাতে মেনিয়াংক পাড়ায় থাকতে হবে। যদি পানবাজার থেকে গাইড না পাওয়া যায় তাহলে নিজেরাই মেনিয়াংক পাড়ায় আসতে হবে।

মেনিয়াংক পাড়া থেকে দেড় ঘন্টা হাঁটলেই রুংরাং তং। আর তারপরেই খেমচং পাড়া। খেমচং পাড়া পার হয়ে কির্সতং সামিট করে চলে যেতে হবে মঙ্গলপাড়া। সেখান থেকে ১৩ কিলো। এরপর আবার আলীকদম হয়ে ঢাকা।

গাইড

কির্সতং যেতে চাইলে গাইড নেয়া বাধ্যতামূলক।

থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা

রাতে আদীবাসী পাড়াতেই থাকা যাবে। এর জন্য পাড়ার কারবারীর সাথে প্রথমেই কথা বলে নিতে হবে। সাধারণত প্রতিটা পাড়ার কারবারীর বাড়িতেই অতিথীদের থাকার ব্যবস্থা হয়।

সতর্কতা এবং প্রস্তুতি

পাহাড়ি রাস্তায় হাটলে, শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। আর সব সময় কাছাকাছি পানির সোর্স নাও থাকরে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সাথে রাখতে হবে। সাথে স্যালাইন, গ্লুকোজ থাকলে ভাল। অতি দূর্গম এরিয়া, তাই খাবার সোর্স কম। আপনি চাইলেই দোকান থেকে খাবার কিনে খেতে পারবেন না, সেই অপশন নেই এখানে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার সাথে করে নিয়ে যাওয়া ভাল। ম্যালেরিয়া প্রবণ এরিয়া, তাই ম্যালেরিয়া এর প্রতিষেধক নিয়ে যেতে হবে। অফ রোডে ট্রেকিং করতে হবে। সেক্ষেত্রে লোকাল গাইড নিয়ে নিতে হবে। পাহাড়ী ট্রেইল ধরে হাটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই একটি ট্রেকিং স্টিক বেশ কাজের জিনিস। রাতে ট্রেক এর জন্য একটি হ্যাডল্যাম্প আদর্শ।

Leave a Comment
Share