তুরতুক

তুরতুক (Turtuk) বিধাতার বিশেষ আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভারতের সীমানার শেষ গ্রাম যা সমুদ্র সীমা থেকে ৯৮৪৬ ফিট (৩০০১ মিটার) উচুতে অবস্থিত। অদ্ভুত সুন্দর তুরতুক গ্রামটি সায়ক ভ্যালীতে অবস্থিত যা নুব্রা ভ্যালী এর অংশ বিশেষ। লেহ শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার এবং নুব্রা ভ্যালীর ডিস্কিট শহর থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ৩০০০ এর চেয়ে কিছু বেশি লোকের বসবাস আছে এই গ্রামে। ২০১০ সালে ট্যুরিস্টদের জন্যে এই গ্রামকে খুলে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত তুরতুক পাকিস্তানের বালতিস্তান এর অংশ ছিলো।

এই গ্রামের চারপাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। যেসব পাহাড়ে কোথাও নেই কোনো গাছ, ঘাস বা সবুজের এতটুকু ছোঁয়া। চারপাশের পাহাড়গুলো কোনোটা পাথুরে, কোনোটা মাটির, কোনোটা বরফের, কোনোটা ইস্পাতের মতো কঠোর কিছুর, কিন্তু বিন্দুমাত্র সবুজের ছোঁয়া নেই কোথাও। কিন্তু এই গ্রামের সবটুকু সবুজে মোড়ানো। এখানে ধান থেকে শুরু করে গম, জব, আলু, কপিসহ অন্যান্য তরকারি, আপেলসহ নানা রকম ফলমূল হয় নিয়মিত। নানা রকম ফুল, পাথুরে বাড়ি, ঝরনার বিশুদ্ধ পানি সবই আছে এখানে। আছে উত্তাল, খরস্রোতা সায়ক নদী। গায়ে গায়ে লেপটে থাকা পাহাড়ের সারি, পাহাড় থেকে বয়ে চলা ঝরনা, ঝিরি ও নদী। এই গ্রামের বাইরের পাহাড়গুলো যখন বরফে বরফে মোড়ানো থাকে, তখনো এখানে বরফ পড়লেও সেটা খুব বেশি নয়, যাতে করে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বরফ পড়ে ঠিকই, কিন্তু একটু রোদের পরশ পেলেই সেই বরফ দ্রুত গলে গিয়ে পাশের সায়ক নদীতে গিয়ে পতিত হয়।

তুরতুক এর সব ঘর বাড়িই একদম নিখাদ পাথরের তৈরি। শুধু পার্থক্য এই যে, যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভালো, তারা পাথর সাইজ মতো করে কেটে নিয়ে কিছু সিমেন্টের ব্যবহার করে সাজানো বাড়ি বানাতে পারে। আর যাদের সেই অবস্থা নেই তারা নিজেদের মতো করে পাথর সংগ্রহ করে একটার পর একটা বসিয়ে দেয়, কখনো নদীর কাদার সাহায্যে বা শুধু পাথরের স্তূপ সাজিয়েই বানিয়ে ফেলে বসবাসের জন্য আস্ত ঘর বা বাড়ি। এখানে আছে বিদ্যুৎ, টিভি, ডিশের সংযোগসহ আর নানা রকম সুযোগ সুবিধা। এমনকি আছে মোবাইলও। এই গ্রামের যারা একটু অবস্থা সম্পন্ন বা যাদের নিজেদের থাকার ঘর ছাড়াও আছে দু-একটি বেশি বা তার চেয়ে বেশি রুম, সেগুলো ওরা টুরিস্টদের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে। যেখানে একদম কোলাহলমুক্ত একটি দিন বা রাত কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে নিশ্চিন্তে। তুরতুকের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে, ওদের সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে। তুরতুকে থাকার পাশাপাশি টুরিস্টদের জন্য আছে কিছু খাবার হোটেলও, যেখানে বেশ সহনীয় মূল্যে পাবেন নানা রকম পছন্দের খাবার।

কিভাবে যাবেন

তুরতুক এ যেতে হলে আপনাকে বেশ রোমাঞ্চপ্রিয় হতে হবে। কারণ সরাসরি প্লেনে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, পরিবেশগত কারনে। ঢাকা থেকে প্লেনে যেতে পারেন দিল্লি, ভাড়া পড়বে ১২-১৬ হাজার টাকা। দিল্লি থেকে লেহ প্লেনে ভাড়া পরবে ৩৫০০-৬০০০ টাকা, নির্ভর করবে কত আগে আপনি প্লেনের টিকেট কাটবেন সেটার ওপরে।

এ ছাড়া যেতে পারেন ঢাকা থেকে কলকাতা বাসে ১০০০-২০০০ টাকা, কলকাতা থেকে ট্রেনে দিল্লি ১৫০০-৩০০০ টাকা। দিল্লি থেকে শ্রীনগর বা মানালি (Manali) হয়ে বাসে বা রিজার্ভ জিপে করে লেহ শহরে (গ্রুপ হলে)। দিল্লি থেকে বাই রোডে লেহ যেতে সময় লাগবে অন্তত তিনদিন। দুই জায়গায় রাতে থাকতে হবে, শ্রীনগর (Srinagar) বা মানালিতে এক রাত আর লেহ যেতে পথে আর এক রাত। রাতের থাকার খরচ নির্ভর করবে রুচি আর মানসিকতার ওপরে ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত পাবেন, মানালি বা শ্রীনগর থাকতে। তবে এই রাস্তায় যেতে হলে বেশ কিছু ঝুকির ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে।

যেমন অধিক উচ্চতা জনিত সমস্যা, শ্বাস কষ্ট, নির্ঘুমতা, মাথাব্যাথা, বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া, বিষণ্ণ লাগা, এমন নানা রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সেজন্য দরকারি ওষুধ পত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। তবে হ্যাঁ এই পথে যদি লেহ শহর পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারেন, সেটা হবে সারা জিবনের এক অর্জন সবার জন্যই। যেটা শুধু গেলেই বুঝতে পারবেন। পৃথিবী কত ভয়ানক সুন্দর।

লেহ (Leh) শহরে পৌঁছে একদিন অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে লম্বা জার্নির ধকল সামলে নিতে। এরপর নিতে হবে নুব্রা ভ্যালি (Nubra Valley) হয়ে তুরতুক যাওয়ার বিশেষ অনুমোদন, জনপ্রতি ৪২০ রুপি করে লাগবে অনুমোদন নিতে। সঙ্গে দিতে হবে মূল পাসপোর্ট। এরপর গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে নুব্রা ভ্যালি হয়ে তুরতুক ২০৫ কিলোমিটার, সময় লাগবে ৮-৯ ঘণ্টা কিন্তু ডিস্কিট শহর থেকে যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা। নুব্রাতে গিয়ে পুলিশ স্টেশনে অনুমোদন দেখিয়ে নিতে হবে নতুন অনুমোদন সঙ্গে দিতে হবে পাসপোর্টের ফটোকপি, জানাতে হবে কোথায় রাতে থাকবেন। এরপর যেতে পারবেন তুরতুক।

কোথায় থাকবেন

তুরতুকে থাকার খরচ খুব বেশি না, ৫০০-২০০০ টাকায় থাকতে পারবেন আপনার পছন্দ আর সাধ্য আর রুচি অনুযায়ী। খেতে পারবেন ১৫০-২৫০ টাকায় প্রতি বেলায়। বেশীর ভাগ

খরচ

সবকিছু মিলে বাই রোড আর ট্রেনে করে তুরতুক ঘুরে আসতে খরচ পড়বে ২০ থেকে ২৫ হাজার হাজার টাকা। আর প্লেনে লেহ পর্যন্ত গিয়ে আবার লেহ থেকে প্লেনেই ফিরে আসতে খরচ পড়বে ৪০ হাজার হাজার টাকার মতো জনপ্রতি।

তুরতুক ভ্রমণের জন্যে আপনাকে অবশ্যই লেহ থেকে Inner Line Permit (ILP) নিতে হবে এবং ৪২০ রুপী করে লাগবে এই অনুমোদন নিতে।

Leave a Comment
Share