শিলিং (Shillong) যা সারা পৃথিবীর কাছে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড হিসাবে পরিচিত। মেঘালয় (Meghalaya) রাজ্যের রাজধানী শিলং ৪৯০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। শিলং শহরের বাইরে ও অভ্যন্তরে প্রচুর দর্শনীয়স্থান রয়েছে, যার প্রতিটি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
নানা সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা আছে শিলংয়ে। শিলং ক্লাবের কাছে কাছারি রোড এর ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কে পাওয়া যাবে বিদেশি মুদ্রা সংক্রান্ত তথ্য। অনেক দোকান ও হোটেলেই ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করার সুবিধে পাওয়া যায়। শিলং শহরে পুলিশের সদর দফতরের ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২২৪৪০০/ ১০০। আরও তথ্য পেতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ‘মেঘালয় পর্যটন দফতরে, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৬২২০। তথ্য পাওয়া যাবে ভারতীয় পর্যটন দফতরেও, ফোন নং: ৯১ ৩৬৪ ২২৫৬৩২।
শিলং এ বেড়ানোর জন্য বর্ষাকালকে বেছে নিতে পারেন। ঘন বর্ষার দুমাস জুলাই-আগস্ট। বর্ষাকে কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য যাবেন এই দুই মাসের যেকোনো সময়। বর্ষায় এখানকার পাহাড় ও ঝর্ণা গুলো পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়।
শিলং এর রেস্টুরেন্টে পর্ক (শুকরের মাংস), চিকেন (মুরগির মাংস) এবং মাছ বেশী। জিঞ্জার আ্যন্ড স্ক্যাই গ্রিল, কেনমোর এবং শিপ আ্যন্ড ডাইন রেস্টুরেন্ট হিসেবে দারুণ। অন্যদিকে শেফ’স মাল্টি কিউজিন রেস্তোঁরা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে দারুণ খাবার পরিবেশন করে। সিসেম তার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রান্না এবং ঐতিহ্যগত উপজাতীয় রান্নার খাবারের জন্য পরিচিত।
পাইন সুইটস হোটেল, হোটেল নাইট ইন্ এবং শিলং ক্লাব গেস্টহাউস বাজেট ট্রাভেলারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। হোটেল সেন্টার পয়েন্ট এবং হোটেল আ্যলপাইন কন্টিনেন্ট্যাল হল শিলং এর বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেলের মধ্যে অন্যতম। হোটেল পোলো টাওয়ারস হল এই অঞ্চলের একমাত্র ফোর স্টার হোটেল।
বউলভার্ড হোটেল (Boulevard Hotel): ভাড়া পড়বে ১৯৮১ রুপী থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০০ রুপী পর্যন্ত। অতিরিক্ত বেড ভাড়া নেয়া যাবে। সেক্ষেত্রে গুনতে হবে ৫১৫ রুপী। যোগাযোগঃ +৯১.৩৬৪.২২২.৯৮২৩ / ৯০৪৪ / ৯০৩৯
দি ই সি হোটেল (The Eee Cee Hotel): ভাড়া পড়বে ১৫০০ রুপী থেকে সর্বোচ্চ ৪৫০০ রুপী পর্যন্ত। যোগাযোগঃ +৯১৩৬৪ ২৫০০১৮৮, ৯২০৬০৪৩৮৮৮
হোটেল ইয়ালানা (Hotel Yalana): ভাড়া পড়বে ১০০০ রুপী থেকে সর্বোচ্চ ৩৬৪৫ রুপী পর্যন্ত। যোগাযোগঃ +৯১ ৩৬৪ ২২১১২৪০ / ২২২৬০৫৯, +৯১ ৮৫৭৫০৪১৪১৫
পুলিশ বাজারের কাছেই জি এস রোডে অবস্থিত হোটেল রেইনবো (Hotel Rainbow), যোগাযোগের জন্যে – +৯১ ৩৬৪ ২২২ ২৫৩৪
এছাড়াও শিলং পুলিশ বাজারে অসংখ্য হোটেল পাবেন।
বিমান মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায়
নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল শিলং বিমানবন্দর (যা উমরোই বিমানবন্দর নামেও পরিচিত) যা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কলকাতা ও গুয়াহাটি থেকে বিভিন্ন যাত্রীবাহী ও চার্টার ফ্লাইট এই বিমানবন্দরে উড়ানের সুবিধা রয়েছে।
সড়ক মাধ্যমে পৌঁছানোর উপায়
মেঘালয়ে কোনও রেলপথ নেই। সুতরাং, রেলের মাধ্যমে ভ্রমণার্থীরা গৌহাটি পর্যন্তই পৌঁছাতে পারবেন। সেখান থেকে, শিলং-এ যাওয়ার জন্য একটি ক্যাব ভাড়া করতে পারেন। এই দুটি শহরের মধ্যে যাতায়াতকারী ভাড়াটে ক্যাবগুলির এখানে বেশ প্রকোপ আছে। এছাড়াও গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে শিলং পর্যন্ত প্রচুর বাসও যাতায়াত করে। গৌহাটি থেকে গাড়ির মাধ্যমে এই শহরে পৌঁছাতে মোটামুটি সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে।
ঢাকা থেকে সরাসরি বিআরটিসি-শ্যামলী বাসে শিলং যেতে পারেন। ঢাকা থেকে এই বাস ছেড়ে যায় প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এবং ফিরতি বাস সোমবার রাত ১০টায়। এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। বাসভাড়া ৪,৫০০ টাকা (রিটার্ন টিকিটসহ)। এছাড়াও ভিসা ফি ৬০০ টাকা + সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা মিলিয়ে ১১০০টাকা। এই মোট ৫,৬০০ টাকা শ্যামলী পরিবহনে জমা দিয়ে ১-৬ মাসের জন্যে ভারতীয় ভিসা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে ই-টোকেন নিতে হবেনা। তবে ৫ কর্মদিবস সময় লাগবে ভিসা পেতে। এছাড়া আপনার যদি আগে থেকেই ভারতের ভিসা থেকে থাকে ডাউকি (বহির্গমন) হয়ে, তাহলে আপনার শুধু বাসের টিকিট ৪০০০ টাকায় সংগ্রহ করতে হবে। মনে রাখবেন ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা দিতে হবে।
যোগাযোগ: ০১৭৪৯৯৩৭৫৪৫ (শ্যামলী পরিবহন কমলাপুর আন্তর্জাতিক টার্মিনাল)
বিস্তারিত এখানে দেখতে পারেন।
এছাড়া ঢাকা-সিলেট বাসে সরাসরি সিলেট। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে পারেন। সিলেট থেকে বাসে কিংবা সিএনজি করে তামাবিল। এরপর ইমিগ্রেশন শেষ করে ডাউকি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি শিলং যেতে পারেন।
শিলং এ কেনাকাটা করার জন্যে সবথেকে ভালো জায়গা হলো পুলিশ বাজার। এছাড়া চেরাপুঞ্জির যাওয়ার পথে পড়বে সোহরাবাজার। এখানে কিনতে পাওয়া যাবে কমলালেবুর মধু, দারচিনি আর চেরি ব্র্যান্ডি। শীতের মৌসুমে পাওয়া যাবে কমলালেবু।
সব কিছুর দাম বেড়ে চলেছে তাতে খরচ সম্পর্কে একটা আইডিয়া দেয়া যায় মাত্র! খরচ কমিয়ে চলতে পারলে ৮/৯ হাজার প্রতিজনে ঢাকা-শিলং-চেরাপুঞ্জি-ঢাকা ট্যুর দিয়ে আসতে পারবেন। আর বিলাসিতা করতে গেলে আপনার যত ইচ্ছা ততই খরচ করতে পারেন।
খরচ কমাতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেট যাবেন ট্রেনে। সেখান থেকে তামাবিল যাবেন বাসে, কষ্ট মনে হলে সিএনজিতে। সেখান থেকে শিলং যেতে ট্যাক্সি ছাড়া উপায় নেই। শিলং এবং চেরাপুঞ্জি ঘুরতে ট্যাক্সি ব্যবহার করলে খরচ পড়বে বেশি। শিলং এর জন্য ১৫০০ রুপি, এবং চেরাপুঞ্জির জন্য ১০০০ রুপি। এটা কামাতে পারেন বাস ব্যবহার করে। ভারত সরকারের ট্যুরিষ্ট বাস আছে, যেটা আগের দিন বিকালে ব্যুকিং করতে হয়। ভাড়া শিলং এবং চেরাপুঞ্জির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ৩০০ রুপির আশেপাশে হবে। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন খাওয়া এবং হোটেলে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়। পেট পুরেই খান তবে দামী হোটেলে যাবেন না। আর মধ্যম কোয়ালিটি হোটেলে থাকুন। অনেক খরচ কমাতে পারবেন।
কিছু দরকারী তথ্য
Leave a Comment