সেন্ট পিটার্সবার্গ

রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী সেন্ট পিটার্সবার্গকে (Saint Petersburg) ২০১৬ সালের ইউরোপের শ্রেষ্ঠ পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যাওয়ার্ডস’। হারমিটেইজ মিউজিয়াম, কিরভ থিয়েটারসহ বহু দর্শনীয়স্থান এর এই শহরকে তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য আর আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থাপনার জন্য এই সন্মানে ভূষিত করা হয়।

সেন্ট পিটার্সবার্গ এর কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান

হারমিটেজ মিউজিয়াম

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন জাদুঘরগুলোর একটি হল হারমিটেইজ। ১৭৬৪ সালে নির্মিত জাদুঘরটিতে প্রায় ১১টি সুবিশাল সংগ্রহালয়ে মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ব থেকে শুরু করে সুইডিশ শিল্পকর্মসহ অজস্র নিদর্শন রাখা আছে। জাদুঘরটি আয়তনে এত বড় যে পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে পুরো একটি সপ্তাহ লেগে যাবে।

পিটার আন্ড পল ফোর্টেস

জল, স্থল, আকাশ.. যেখান থেকেই দেখুন না কেন, এই দূর্গটি আপনার নজর কাড়বেই। ১৭০৩ সালে পিটার দ্য গ্রেট নির্মিত স্থাপনাটি কখনও দূর্গ, কখনও কারাগার, কখনও জাদুঘর, আবার কখনও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়ার বহু বিখ্যাত রাজনৈতিক বন্দীর স্মৃতিবিজড়িত কারাগার তথা দূর্গটি দেখতে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এখানে।

সামার গার্ডেন

সম্রাট পিটারের নির্দেশে ১৭০৪ সালে এই অপরূপ উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নানা প্রজাতির গাছ ছাড়াও বহু নান্দনিক ভাস্কর্যে মোড়া এই উদ্যানটি। তবে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে মূল ভাস্কর্যগুলোর পরিবর্তে এগুলোর অবিকল প্রতিরূপ রাখা আছে এখানে। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সামার গার্ডেনে ছুটে আসেন এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

দ্য স্টেট রাশিয়ান মিউজিয়াম

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় এই জাদুঘরটি দেশটির অন্যান্য জাদুঘর থেকে বয়সে তুলনামূলক নবীন। তবে ভবনগুলো প্রাচীন এবং এককালে রাজপরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। ১৮৯৫ সালে এটিকে শিল্পকলার বিশাল সম্ভারের সংগ্রহশালা হিসেবে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

দ্য ক্যাথেরিন প্যালেস

রাণী প্রথম ক্যাথেরিনের গ্রীষ্মকালীন বাসভবন হিসেবে নির্মিত এই প্রাসাদটিকে বিভিন্ন সময় ব্যাপক সংস্কার আর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রায় পুরো ভবনটিকেই পুনঃনির্মাণ করতে হয়েছিল। বর্তমানে এখানে বড় পরিসরে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আয়োজন হয়ে থাকে।

পিটারহফ

এটি মূলত সেন্ট পিটারসবার্গের একটি ছোট্ট উপশহর। চমৎকার একটি প্রাসাদ, অসংখ্য বাগান আর ফোয়ারা, কয়েকটি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ ঘুরে দেখার মত অনেক কিছু রয়েছে পিটারহফে।

ম্যারিনস্কি থিয়েটার

যারা অপেরা আর ব্যালে ভালবাসেন, সেন্ট পিটারসবার্গে এলে ম্যারিনস্কি থিয়েটার তাদের জন্য অবশ্য দ্রষ্টব্য। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত থিয়েটারটি রুশ সাংস্কৃতিক জগতে আজও এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম। বিশ্বের বহু প্রবাদপ্রতিম অপেরা গায়ক আর ব্যালে নৃত্যশিল্পীর জন্ম দিয়েছে এই ম্যারিনস্কি থিয়েটার।

সেন্ট আইজ্যাক’স ক্যাথিড্রাল

অভিজাত এই ক্যাথিড্রালটি নির্মাণে ৪০ বছর লেগে গিয়েছিল। ১৮৫৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া স্থাপনাটি স্থানীয় ক্যাথিড্রালগুলোর মধ্যে চতুর্থ। এর গম্বুজটি দেখতে অনেকটা ভ্যাটিকানের গম্বুজের মত। ধর্মীয় উপাসনার জন্য নির্মিত হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটির এক অংশ প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত রেখে বাকিটুকু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

চার্চ অফ সেইভিয়ার অন দ্য স্প্লিট ব্লাড

রাজা তৃতীয় আলেকজান্ডার তার প্রয়াত পিতার স্মরণে এই ব্যাতিক্রমী গীর্জাটি নির্মাণ করেন। কারুকার্য, নকশা, রঙ.. সবদিক থেকেই এটি রাশিয়ার অন্যতম নয়নাভিরাম গীর্জা। মাঝে আধুনিকায়নের জন্য অনেকদিন বন্ধ থাকার পর ১৯৯৭ সালে এটিকে পুনরায় উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে শিল্পকর্ম প্রদর্শনের কেন্দ্র হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ petersburgrussiasaint