পেনাং

‘প্রাচ্যের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত মালয়েশিয়ার পেনাং এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীপ গন্তব্যের অন্যতম যেখানে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জাকজমকপূর্ণ ঐতিহ্য, মহান আতিথেয়তা এবং প্রাচুর্য। এটা সব পর্যটকদের জন্য একটা ওয়ান স্টপ গন্তব্য যেখানে রয়েছে প্রচুর রেস্তোরাঁ, রাস্তার পাশের ক্যাফে, ডিস্কোথেক, নিশি মার্কেট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরস এবং অকৃত্রিম সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়ভাবে পুলাউ পিনাং নামে পরিচিত পেনাং একটা কচ্ছপাকৃতির দ্বীপ দ্বারা গঠিত যার আয়তন ২৮৫ বর্গ কি.মি. এবং সেবেরাং প্রাই লম্ব ভূমির প্রস্থ ৪৮ কি.মি.।

চায়ামাংকালারাম

এটা একটা বৌদ্ধ মন্দির যা ৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে। চায়ামাংকালারাম পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হেলানো বুদ্ধ মুর্তি। এখানে বুদ্ধ মুর্তির পিছনে প্রচুর কুলুঙ্গি রয়েছে যার মধ্যে পরিবারের সদস্য ও আত্বীয়-স্বজনের দেহভস্মসহ প্রচুর ভস্মাধার রয়েছে। ওয়াত চায়ামাংকালারাম এ মালয়েশিয়ার সর্ববৃহত প্যাগোডা রয়েছে যা নয় তলা উঁচু এবং মাপে ১৬৫ ফুট। এখানকার সারা কমপ্লেক্স জুড়ে রহস্যময় নাগা সর্প মুর্তি রয়েছে যেগুলি স্বর্গ ও মর্তের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরী করেছে। এখানে অবাধে প্রবেশ করা যায় কিন্তু প্রধান মন্দিরের মধ্যে ছবি তোলা নিষিদ্ধ।

রাষ্ট্রীয় মসজিদ

পেনাং এর রাষ্ট্রীয় মসজিদ গ্রীনলেন উপশহরে ৪.৫ একর জুড়ে বিস্তৃত। এটা মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জমকালো মসজিদ হিসেবে চিহ্নিত। মসজিদে প্রার্থনা হলে একটি ঝাড়বাতি রয়েছে যার মাপ বিশ ফিট বাই ষোল ফিট। মসজিদ ভ্রমণ করতে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এখানে পরিদর্শনে আসতে বিশেষ ধরনের পোষাকও পরিধান করতে হয় সুতরাং আসার আগে অবশ্যই পোষাক সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন।

পেনাং রাষ্ট্রীয় যাদুঘর

এই যাদুঘরে চিত্রাংকনের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে যার মধ্যে ক্যাপ্টেন রবার্ট স্মীথের দশটি মূল চিত্রাংকনের আটটিই রয়েছে। এখানে আরও রয়েছে বাবা নিওনিয়ার চীনা মাটির বাসন-কোসন, জুয়েলারী, পোষাক এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সামগ্রী যেগুলির সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অতুলনীয়।

চিওঙ ফাট ত্‍জী ম্যানসন

এই ম্যানসন অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকের স্মৃতিবাহী এবং চীনের বাইরে তিনটি টিকে যাওয়া ভবনের অন্যতম। এর প্রাচীন টাইল করা ছাদ, নুড়ি বিছানো প্রাঙ্গণ, কপিল ইটের প্রাচীর এবং স্টীলের বাঁকানো সিঁড়ি, চীনা মাটির দুর্লভ সংগ্রহ, ভাষ্কর্য, খোদাই শিল্প, চিত্রিত কাপড়, নকশা করা কাপড়, ল্যাকার, ব্রোঞ্জের তৈরী সামগ্রী ও অন্যান্য অ্যান্টিক সামগ্রী যে কাউকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।

ফোর্ট কর্ণওয়ালিস এবং রাজা এডওয়ার্ড সার্কাস ক্লক টাওয়ার

৬০ ফুট দীর্ঘ ক্লক টাওয়ারের জন্য বিখ্যাত এই দুর্গের প্রবেশ পথে নির্মিত এই টাওয়ার ১৮৯৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার হীরকজয়ন্তীতে তাঁকে উপহার প্রদান করা হয়। এর প্রতি ফুট রানীর প্রতি বছর শাসনকালের স্মরণে করা হয়। এই কাঠামো মূলতঃ কাঠের তৈরী এবং কামান দ্বারা বেষ্টিত যেগুলি বৃটিশরা অধিকার করেছিল। প্রধান কামানটির নাম সেরি র্যামবো যা ১৬১৩ সালের। স্থানীয় বিশ¦াস মতে, নারীগন যদি বিশেষ প্রার্থনা করেন ও এই কামানের চোঙায় ফুল দেন তাহলে সন্তান ধারনে সক্ষম হবেন।

পেনাং পাহাড়

পেনাং পাহাড় স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয় মিলনস্থান । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৩০ মিটার উচ্চ এই পাহাড়ে তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত নেমে আসে এবং এখান থেকে জর্জ টাউনের সুন্দর চলমান দৃশ্য ও মালয় উপদ্বীপের উপকুলভূমির দৃশ্য দেখা যায়।

বন চিত্তবিনোদন পার্ক

পেনাঙ এর উত্তর-পূর্ব অংশে ১০০ হেক্টর জমি নিয়ে এই সুন্দর পার্কটি অবস্থিত। এখানে কয়েকটি স্বচ্ছ পানির পুল, ফুটপাথ, বিশ্রাম ঘর, শিশুদের খেলার মাঠ এবং বন যাদুঘর আছে যেখানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় কাষ্ঠ সামগ্রী এবং সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পোকা রয়েছে।

উদ্ভিদ উদ্যান

এই ধরনের উদ্ভিদ উদ্যান মালয়েশিয়ায় মাত্র একটিই রয়েছে। এর আয়তন ৩০ হেক্টর এবং এটা জঙ্গলপূর্ণ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। এখানে বিশাল ক্রান্তীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংগ্রহ রয়েছে। এখানে পেনাং ব্রীজের রেপ্লিকা, একটা পাঠাগার এবং রয়েছে প্রচুর রেসাস বানর।

কিভাবে যাবেন

পেনাং দ্বীপে যাওয়া খুবই সহজ। ১৯৮৫ সালে পেনাং মালয় উপদ্বীপের মূলভূমির সাথে পেনাং ব্রীজ দ্বারা যুক্ত হয় যা প্রথিবীর অন্যতম বৃহত একটি সেতু। রেন্ট এ কার, মোটরবাইক অথবা ট্যাক্সি করে সহজেই এখানে আসা সম্ভব। আপনি যদি ট্যাক্সিতে যেতে চান তবে অবশ্যই রেট জেনে তারপর ভাড়া করবেন নতুবা আপনাকে পেনাং যেতে অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হতে পারে। বাজেটের সমস্যা থাকলে বাসে করেও কম ভাড়ায় পেনাং যাওয়া সম্ভব। মালয়েশিয়ান রেলওয়ের যেসব ট্রেন সিঙ্গাপুর ও কুয়ালা লামপুরের মধ্যে চলাচল করে পেনাং এ সেগুলির স্টপেজ রয়েছে।

নৌপথে

পেনাং এ যাওয়ার জন্য বেশ কিছু ফেরী চলাচল করে নিয়মিত। ফেরীতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে যা আপনাকে পেনাং এর মনোলোভা সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করবে।

আকাশ পথে

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য বিমান সংস্থা নিয়মিত পেনাং এ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। কিছু এয়ারলাইন্স ছুটির সময়ে আলাদা প্যাকেজ প্রদান করে থাকে, এবিষয়ে আপনার ট্রাভেল এজেন্সীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন আগেভাগে।

কোথায় থাকবেন

পেনাং (Penang Island) এ শত শত হোটেল আর পর্যটক নিবাস রয়েছে। পেনাং এর সবচেয়ে ভাল কিছু হোটেল আর পর্যটক নিবাস হলো দি কপথর্ণ অর্কিড পেনাং, ফেরিঙ্গি মুতিয়ারা এপার্টমেন্ট, হলিডে ইন পেনাং, বেইয়ান লেপাস এর নিকট হোটেল ইকুয়াটোরিয়াল পেনাং, লোন পাইন হোটেল পেনাং, ইডেন ফেয়ারওয়ে কনডোমোনিয়াম পেনাং, পারসিয়ান গারনি হোটেল পেনাং, সেরি মালয়েশিয়া হোটেল, শাংগ্রী-লা’স রাসা সাইয়াঙ রিজোর্ট অথবা শাংগ্রী-লা’স গোল্ডেন স্যান্ডস রিজোর্ট পেনাং।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ islandmalaysiapenang