নাথাং ভ্যালী

পূর্ব সিকিম এর ছোট্ট একটা গ্রাম নাথাং যা ১৩৫০০ ফিট উচুতে অবস্থিত৷ সর্ব সাকুল্যে ৫০-৬০টি ঘরবাড়ি নিয়ে এর ব্যাপ্তি৷ বাড়িগুলোর টিনের চালে ঝুরো ঝুরো বরফকুচি৷ জলপাইগুড়ি থেকে পূর্ব সিকিম (East Sikkim) এর নাথাং মোট ১৭৫ কিমি। জুলুক থেকে লুংফুং হয়ে লক্ষীচকে কুলুপ যাবার রাস্তার বাঁদিকে গেলেই নাথাং ভ্যালি। একটা কথা প্রচলিত আছে – If you do not like Nathang Valley, you would not like paradise.

তিব্বত থেকে ইয়াক পালকেরা নাথাং উপত্যকায় আসে৷ ইয়াকদের বিস্তীর্ণ চারণভূমি এই সুরম্য উপত্যকাভূমি৷ কিছু ছোটখাটো পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে৷ কিছু আবার ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যায়৷ কাছেই চায়না বর্ডার। তাই নাথাং এর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ‘চাইনিজ মিনি মার্কেট’ সাজানো। জুতো, সোয়েটার, জ্যাকেট কী নেই। এমন গন্ডগ্রামে এত বরফের মাঝে মার্কেটিং সেরে নিতে ভুলিনি। নাথাং থেকে মেমেঞ্চু লেক, ওল্ড বাবা মন্দির, কুলুপ লেক, এলিফেন্ট লেক দেখে অল্পচেনা নাথাং ভ্যালিতে দুটো রাত অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারেন। নাথাং এর সৌন্দর্যে কটা দিন হারিয়ে যেতে পারলে মন ভাল হয়ে যাবেই৷

দর্শনীয়স্থান সমূহ

একটি হিন্দু মন্দির ও একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি রয়েছে নাথাং ভ্যালিতে৷ পতপত করে উড়ছে বৌদ্ধ প্রার্থনাপতাকা৷ গাছপালাহীন আদিগন্ত বরফশোভিত এই উপত্যকায় গান ও ছন্দ উৎসব যেন৷ কেমন বুঁদ হয়ে যেতে হয় এই শহুরে বাহুল্যবর্জিত বরফ এলাকাটিতে৷ এই সিকিমেরই ছাঙ্গু, ইয়ুমথাং-এ তুষার দর্শনের জন্য পর্যটকমহলের যে ভিড় থাকে, তার ছিটেফোঁটাও নাথাং এ নেই৷

আরও মাইল পাঁচেক উত্তরে বিখ্যাত ঈগল নেস্ট বাঙ্কার থেকে ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্যপটে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা, পশ্চিম ভুটান, পশ্চিমবাংলার কিছুটা অংশও চিন ও তিব্বত৷ ব্রহ্মপুত্র নদটিও দিগন্তে মিশে গিয়েছে যেন৷

মেঘেদের একরাশ আলস্য নিয়ে রয়েছে আরেকটি গ্রাম৷ নাম লুংথাং৷ এই গাঁওটি নাথাং উপত্যকা থেকে মিনিট কুড়ি দূরের যাত্রাপথে৷ মাঝেমাঝেই মেঘ এসে ঢেকে দেয় পর্যটকদের যাত্রাপথ৷ আবার চকিতে আকাশ একদম ঝকঝকে৷ ভয়ংকর সুন্দর অনুভূতি এ সব পথে-প্রান্তরে৷ গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে মাঝে মাঝেই লুটিয়ে পড়ছে মেঘের আঁচল৷ গাড়ি থামিয়ে সটান নেমে পড়তে পারলে সারা গায়ে মেঘের চাদর জড়িয়ে নেওয়া যাবে৷ গাড়ি থেকে নেমে না দেখলে চারপাশের সৌন্দর্য না-দেখার অসম্পূর্ণতা থেকে যায়৷ নিচে ছোট ছোট গ্রাম৷ কখনও কুয়াশা, এসে ঢেকে দিচ্ছে নীচের দৃশ্যাবলি৷ পরক্ষণেই একটু রোদ্দুরের কৃপাদৃষ্টি পেয়েই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ছবির মতো চরাচর৷

এইখান থেকে প্রায় ১৪,৪০০ ফুট উচ্চতায় নাথুলা থেকে ইন্দো-চিনের সীমান্তের প্রবেশদ্বার দু’টিও দেখে নেওয়া যায়৷

কিভাবে যাবেন

শিয়ালদা বা হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউজলপাইগুড়ি৷ সেখান থেকে গাড়ি বুক করে সিকিম এর নাথাং যাওয়া যেতে পারে৷ গ্যাংটক থেকে নাথাংয়ের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার৷ বিমানে গেলে কলকাতা থেকে পাকিয়ং বিমানবন্দরে নেমে গাড়ি বুক করে নিন৷ শেয়ারে যাওয়ার জন্যও গাড়ির ব্যবস্থা থাকে৷

কোথায় থাকবেন

অনেকেই নাথাং এ রাত্রিযাপন করে থাকেন৷ এক রাত থেকে দেখে নেওয়া যায় জোড়পোখরি, গ্রিন লেক, ছাঙ্গু লেক এবং মেমেনচো লেক৷ নাথাং (Nathang) এ থাকার জায়গা ডাফটার বাংলো ও পিনাশা হোমস্টে।

এখানে তো হোটেল-রেস্তোরাঁ বলে তেমন কিছুই নেই৷ তাই রেশম পথের কিছু কিছু অঞ্চলে হোম স্টের উপরই ভরসা৷ সেখানে সিকিমিজ মালকিনের হাতে তৈরি তাওয়া রুটি, টম্যাটো-পেঁয়াজ-রসুন দেওয়া ডিমের ঝোল অথবা মুরগির কারি, চা-কফি-মোমো, পুরি-সবজি সবই পাওয়া যাবে৷ খাবার-দাবার বলুন কিংবা মাথা গুজরানের মতো থাকা অতি সাধারণ মানের হলেও এদের আন্তরিকতা কিন্তু আজীবন ঋণী রাখে৷ দূরপ্রবাসে বেড়াতে এসে সেটাই যথেষ্ট মনে হয় তখন৷

Leave a Comment
Share