হায়দ্রাবাদ

মুসি নদীর তিরে তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদ। ১৫৯১ খ্রিষ্টাব্দে গোলকন্ডার পঞ্চম নৃপতি কুতুব শাহ এই শহরটি পত্তন করেন। এর অতীতে নাম ছিল ভাগ্যনগরী। হায়দ্রাবাদের যমজ শহর সেকেন্দ্রাবাদ। হুসেন সাগর এই দুই শহরকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের (National Geographic) ভ্রমণ সাময়িকী ‘ট্রাভেলার’-এর বিবেচনায় ২০১৫ সালে বিশ্ব ভ্রমণে বের হলে দেখার মতো দ্বিতীয় সেরা স্থান হবে ভারতের হায়দ্রাবাদ শহর।

হায়দ্রাবাদ এর দর্শনীয়স্থান সমূহ

চার মিনার

শহরের কেন্দ্রস্থলে বিস্ময়কর এক খিলান রয়েছে যার নাম চরমিনার এটা তৈরী হয়েছিল মুহাম্মদ কুলি কুতুবের সময়ে ১৫৯১ সালে। এই বিশাল কাঠামো নির্মানের পিছনে যে কারনটি ছিল শাসক মনে করেছিলেন এটা প্লেগ হওয়ার খারাপ শক্তিকে প্রতিরোধ করবে। ৫৬ মিটার উঁচু খিলান চারটি মিনারসহ মনোলোভা চৌকোনা তোরণে পরিণত হয়েছে এবং এতে আরও সৌন্দর্য যুক্ত হয় যখন প্রতি সন্ধ্যায় একে বাতি সজ্জিত করা হয়।

মক্কা মসজিদ

চরমিনারের কাছাকাছি দশ হাজার মুসল্লীর ধারনক্ষমতা সম্বলিত বিশাল মক্কা মসজিদ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত মসজিদ। মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ এর সময়ে ১৬১৪ সালে এটা নির্মনের পরিকল্পনা করা হলেও এটা সম্পূর্ণ হয় ১৬৮৭ সালে যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব গোলকু্‍ন্ডাকে সাম্রাজ্যভূক্ত করেন। এটা পর্যটকদের জন্য অবশ্য দর্শনীয় স্থান।

রামোজী ফিল্ম সিটি

রামোজী ফিল্ম সিটি, সবচেয়ে বৃহত্তম ফিল্ম সিটি ভবনের জন্য গীনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রশংসাপত্রসহ পুরষ্কৃত হয়েছে, শ্রেষ্ঠত্ব ও উদ্ভাবনীর জন্য গোল্ডেন পোনি পুরষ্কার (২০০৭) এবং শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ডিপার্টম্যান্ট অফ ট্যুরিস্ম পুরষ্কার (২০১৩) অর্জন করে। তেলুগু, তামিল, হিন্দি, মালায়লম, কন্নড, মারাঠি, বাংলা এবং আন্তর্জাতিক ছায়াছবির চলচ্চিত্র রামোজী ফিল্ম সিটিতে প্রযোজিত হয়েছে।

সালার জং যাদুঘর

নগরীর অন্য একটি আকর্ষণ কেন্দ্র হলো সালার জং যাদুঘর যা পৃথিবীর একক বৃহত্তম সংগ্রহশালা যেখানে ৩৫টি রুমে ৩৫,০০০ সংগ্রহ স্থান পেয়েছে। মীর ইউসুফ আলি খান সালার জং তৃতীয়, নিজামের মূখ্যমন্ত্রি এর প্রতিষ্ঠাতা। এই যাদুঘরে দুর্লভ সংগ্রহ রয়েছে যেমন, জেড পাথর, মার্বেল প্রতিমা, দুর্লভ পান্ডুলিপি, পারস্য ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রাংকন এবং চীনা পোর্সলিন।

গোলকুন্ডা দুর্গ

শহর থেকে কিছু দুরে দেশের মধ্যে তৈরী সবচেয়ে সুন্দর গোরকুন্ডা দুর্গ অবস্থিত। দুর্গটি কুতুব শাহী রাজত্বের সময়ে তৈরী বলে মনে করা হলেও এটা আসলে যাদব অথবা কাকাত্যিয় শাসকদের সময়ে তৈরী। ১২০ মিটার উঁচু পাহাড়ের উপরে অবস্থিত দুর্গটির চারিদিকে গোলা নিক্ষেপের জন্য ফোকরসহ সুরক্ষিত দেয়াল এবং আক্রমণকারী বাহিনীর হাতির আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য লোহার কীলকসহ শক্তিশালী প্রবেশদ্বার রয়েছে। দুর্গের শব্দ পরিকল্পনা অত্যন্ত উন্নত কেননা প্রবেশদ্বারে কেউ হাততালি দিলে সেটা পাহাড়ের মাথা থেকে শোনা সম্ভব। দুর্গ নির্মানে এই সব পরিকল্পনা আশ্চর্যজনক প্রকৌশল বিদ্যার পরিচয় বহন করে। দুর্গের বহির্দেয়ালের ঠিক পাশেই সুন্দর বাগানে রয়েছে কুতুব শাহী শাসকদের রাজকীয় সমাধি।

নেহরু জুওলজিক্যাল পার্ক

এই পার্কটি দেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানাগুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রচুর জীব-জানোয়ার ও পাখি রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী বিভাগ, খেলনা ট্রেন, সিংহের সাফারী হলো এখানকার উল্লেখযোগ্য ফিচার।

বিড়লা মন্দির

সম্পূর্ণ সাদা মার্বেল পাথরে তৈরী বিড়লা মন্দির মনোলোভা পর্যটন কেন্দ্র। একটি পাহাড়ের মাথায় দাড়িয়ে আছে এই মন্দির যেখান থেকে দেখা যায় হুসেন সাগর যা এক অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা করে।

হুসেন সাগর লেক

হায়দ্রাবাদ আর সেকেন্দ্রাবাদ শহরের মাঝখানে হুসেন সাগর লেক। রাতের আলোকমালা লেকের পরিবেশকে মোহময় করে তোলে। সন্ধ্যে বেলা ভ্রমণের জন্যে আদর্শ পরিবেশ। লেকের ঠিক মাঝখানে বুদ্ধের মনোলিথিক স্ট্যাচু। লেকের বুকে বোটিং করা যায়। হুসেন সাগর এর পাশেই লুম্বিনী পার্ক।

ভ্রমণের সেরা সময়

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির ঠান্ডার মাসগুলি হল হায়দ্রাবাদ ভ্রমণের জন্যে সেরা সময়।

কিভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে সরাসরি সেকেন্দ্রাবাদ যায় ১২৭০৩ ফলকনামা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সকাল ৭.২৫ পৌঁছায় পরদিন সকাল ৯.৩৫), ১৮৬৪৫ ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ১১.৪৫ পৌঁছায় পরদিন সন্ধ্যা ৬.৩০)। এছাড়া ভাইজাগ ভ্রমণ শেষ করে হায়দ্রাবাদ যাওয়া যেতে পারে, ভাইজাগ থেকে সেকেন্দ্রাবাদ যায় ২২২০৩ দুরন্ত এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ১০.৩০ পৌঁছায় সকাল ৮ টা), ১১০২০ কোনার্ক এক্সপ্রেস (ছাড়ে রাত ১০.৪৫ পৌঁছায় পরদিন সকাল ১১.৩৫)।

নিকটবর্তী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল রাজীব গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

কোথায় থাকবেন

হায়দ্রাবাদ (Hyderabad) এ থাকার সেরা জায়গা তেলেঙ্গানা পর্যটনের হোটেল তারামাটি, সাধারণ দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৪০০ টাকা, এসি দ্বিশয্যা ২০০০ টাকা, এসি স্যুইট ২৫৫০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০২৩৫২১৮৮৪। এছাড়া হোটেল রাজমাতা, ভাড়া ১০০০-১৪০০ টাকা, যোগাযোগ – ০৪০৬৬৬৬৫৫৫৫। হোটেল ইম্পিরিয়াল, ভাড়া ৭০০-১২০০ টাকা, যোগাযোগ– ০৯৮৩০১৩৩৫১১। হোটেল রয়্যাল, ভাড়া ৫০০-১২০০ টাকা, যোগাযোগ- ০৪০-২৩২০৪১১১। হোটেল রাজধানী, ভাড়া ১২০০-২১০০ টাকা, যোগাযোগ– ০৯৮০৪৯৭৯৪১৪। রেলের রিটায়ারিং রুম আছে হায়দ্রাবাদে ও সেকেন্দ্রাবাদে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ hyderabadindia