ঊনবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন ব্রুকলিন ব্রিজ। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত এই সেতুটি শহরটির সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনাগুলোর একটি। ১৮৬৯ সালে শুরু হয়ে মোট ১৪ বছর লেগেছিল এর নির্মাণকাজ শেষ করতে। ইস্ট নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজটি ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনকে যুক্ত করেছে। ব্রুকলিন ব্রিজ মূলত একটি ঝুলন্ত সেতু। দু’টি বিশালাকার টাওয়ার অসংখ্য ক্যাবল দিয়ে ধরে রেখেছে পুরো সেতুটিকে। টাওয়ার দু’টির মাঝের দূরত্ব ৪৮৬ মিটার (১৫৯৫.৫ ফুট)। আর সব মিলিয়ে সেতুটি ১.৮ কিলোমিটার (৫৯৮৯ ফুট) দীর্ঘ। বড় টাওয়ারটির উচ্চতা ৮৪ মিটার (২৭৬ ফুট)। এর উপরের অংশটি গোথিক শৈলীতে নির্মিত। ব্রিজটি যখন নির্মাণ করা হয়, এটিই ছিল নিউ ইয়র্কের (New York) সবচেয়ে উঁচু হাতেগোনা কয়েকটি স্থাপনার একটি।
যানবাহন চলাচলের ব্রুকলিন সেতুটি (Brooklyn Bridge) যাতে মানুষও পায়ে হেঁটে পারাপার হতে পারে, একই সাথে সেতুটি থেকে দু’পাশে ব্রুকলিন আর ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী ভবনগুলোর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সেতুটির রাস্তার ঠিক ওপরে একটি পায়ে হাঁটার পথ তৈরি করা হয়েছে। শুধু এই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ঈস্ট নদী আর উপশহর দু’টিকে দেখতে প্রতিবছর লক্ষাধিক লোক এখানে জড়ো হন।
ব্রুকলিন ব্রিজের স্থপতি, জার্মান বংশোদ্ভূত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জন রোয়েবলিং একবার মন্তব্য করেছিলেন, শুধু টাওয়ার দু’টোর জন্যই এই ব্রিজটি একদিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় স্থান পাবে। তার স্বপ্নকে সত্যি করে ব্রুকলিন ব্রিজকে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হিস্টরিক ল্যান্ডমার্ক’ এবং ১৯৭২ সালে ‘ন্যাশনাল হিস্টরিক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যান্ডমার্ক’ ঘোষণা করা হয়।
এই ব্রিজটির একটি অংশকে ঘিরে বহু বছর ধরে একটি মজার চর্চা চালু রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে যেমন দেখা যায়, তেমনি নিউ ইয়র্কের যুগলরাও সেতুটির একদিকের রেলিংয়ে নিজেদের নাম, তারিখ লিখে তালা ঝুলিয়ে চাবি ছুড়ে দেয় ঈস্ট নদীতে। তাদের সম্পর্কও আজীবন এভাবে অটুট থাকবে, এই বিশ্বাসেই প্রতিদিন হাজার হাজার জুটি এভাবে তালা ঝুলিয়ে যায় এই ব্রিজটিতে।
ব্রুকলিন ব্রিজের সৌন্দর্য্য বহুবার উঠে এসেছে টিভি, সিনেমার পর্দাতেও। ‘গডজিলা’, ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেজ’, ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’, ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’, ‘ইট হ্যাপেনড ইন ব্রুকলিন’, ‘কেট অ্যান্ড লিওপড’, ‘গ্যাংস অব নিউ ইয়র্ক’, ‘অ্যানি হল’ প্রভৃতি বহু ছবির শুটিং হয়েছে এই ব্রিজে। ‘সিএসওয়াই নিউ ইয়র্ক’ সহ অনেক টেলিভিশন সিরিজেও বারবার এসেছে ব্রুকলিন ব্রিজের দৃশ্য।
নিউ ইয়র্ক সিটির জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখার জন্যে হপ অন এবং হপ অফ বাস সার্ভিস আছে। আপনি চাইলে Hop-On, Hop-Off Bus Service নিয়ে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন, কারন সকল বাসই ব্রুকলিন ব্রিজ এর দুই প্রবেশদ্বারে থামে। এছাড়া আছে সাবওয়ে ট্রেন। ম্যানহাটন থেকে ব্রুকলিন ব্রিজ যেতে চাইলে আপনাকে ৪, ৫ ও ৬ ট্রেন এ চড়ে ব্রুকলিন ব্রিজ কিংবা সিটি হল স্টপে নামতে হবে।
Leave a Comment