বাটাম দ্বীপ

সিঙ্গাপুর থেকে নৌপথে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বাটাম, এতটাই কাছে যে সিঙ্গাপুরের সাগরপাড়ের উঁচু ভবন থেকে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলোর দিকে তাকালে সহজেই চোখে পড়ে যায় রৌদ্রস্নাত বাটাম। দক্ষিণ চীন সাগরের সুমাত্রা থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে গোল হয়ে বেকে আনামবাস দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা দু’হাজার চারশরও বেশি দ্বীপ নিয়ে রিয়াও রাজ্যেটি। তারই একটি দ্বীপ বাটাম, স্থানীয় নাম কোটামাড্যা। বালি আর জাকার্তার পর ইন্দোনেশিয়ার তৃতীয় ব্যস্ততম প্রবেশদ্বার এবং অষ্টম বৃহত্তম শহর। আয়তন সিঙ্গাপুরের সমান, ১ হাজার ৫৯৫ বর্গকিলোমিটার।  ৬টি দ্বীপাঞ্চলে ১৪টি জেলা।  জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ।

পাঁচটি আলাদা শহর নিয়ে মূল বাটাম এলাকা – বাটাম সেন্টার, নাগোয়া, ওয়াটারফ্রন্ট সিটি, সেকুপাং ও তেলাগা পাঙ্গুর। সোজা পথে বাটামের এ-মাথা থেকে ও-মাথার সর্বোচ্চ দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। তাই বাটামের পুরোটা ঘুরে দেখা সম্ভব এক দিনেই। যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সির পাশাপাশি মিনিবাস ও বাস আছে। বাটামে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় বেয়ারল্যাং ব্রিজ এলাকা। এর দক্ষিণ উপকূলে কয়েকটি ঝুলন্ত সেতু আছে, সব কটিকে একসঙ্গে বয়াল্যাং ব্রিজ ডাকা হয়। এখানে একসঙ্গে ধরা পড়বে সৈকত, সবুজ আর ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য। সূর্যাস্ত ঘিরে একটা বিকেল এখানে কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসেই। সকালে বের হয়ে দুপুরের আগে দেখা যেতে পারে বাটাম সিটি সেন্টারসংলগ্ন বিখ্যাত স্থাপনা জাব্যাল আরাফা মসজিদ, মসজিদ রায়া, মহাবিহার দুতা বৌদ্ধমন্দির, টুয়া প্যাং কং বৌদ্ধবিহার ও নাগোয়া এলাকা। দুপুরে খেয়ে নিতে পারেন সামুদ্রিক মাছের কোনো রেস্তোরাঁয়। আর সেটা যদি হয় বেংকং এলাকার গোল্ডেন প্রন সি ফুড রেস্তোরাঁ, তাহলে তো কথাই নেই। এটা বাটামের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের জায়গা। এই রেস্তোরাঁর আশপাশের মিনিয়েচার পার্ক এলাকা ঘুরেই চলে যাবে অনেকটা সময়। বাটামে বৈচিত্র্যময় খাবার পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত মসলার জন্যই সম্ভবত এখানকার খাবার অসাধারণ।

কেনাকাটার স্বর্গরাজ্য এটি

বাটাম (Batam Island) পর্যটকদের কাছে বেশি প্রিয় কেনাকাটা আর খাবারের জন্য। এটি পুরোটাই শুল্কমুক্ত এলাকা। এখানকার বিরাট বিপণিবিতানগুলোয় তাই বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে কাপড়চোপড়—সবকিছুর দামই এখানে তুলনামূলক কম। সিঙ্গাপুর গেলে অন্তত কেনাকাটা করার জন্য হলেও এক দিনে বাটাম ঘুরে আসা যেতে পারে। আপনি যদি বাটাম সেন্টার এলাকায় থাকেন, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো মেগা মল শপিং সেন্টার। কাছাকাছি আছে কেপরি মল। বাটামের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান নাগোয়া হিল মলে যেতে হবে ট্যাক্সি বা বাসে করে। আমরা মল তিনটি ঘুরে শেষ করতে পারিনি। তবে বাটামে আরও আছে হারবার বে মল, প্লাজা টপ, ডায়মন্ড সিটি ও প্যানবিল মলের মতো অনেক বিপণিবিতান। এই মলগুলোর মধ্যেই আছে মাতাহারি ও হাইপারমার্টেল মতো সুপার মার্কেট। এসব সুবিশাল সুপার মার্কেটে হরেক জিনিস পাওয়া যায়, দামেও যথেষ্ট সাশ্রয়ী। সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভ্রমণ পরিকল্পনায় বাটাম থাকলে কেনাকাটার বেশির ভাগ এখানেই করা ভালো। চকলেট, ইলেক্ট্রনিকস পণ্য, উপহারসামগ্রী, পোশাক, প্যাকেটজাত খাবার, জুতা, ব্যাগ, মসলা ইত্যাদি পছন্দসই সদাই করতে পারেন বেশ সাশ্রয়ে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়াতে চলে যান। সেখান থেকে ফেরিতে বাটাম, সবচেয়ে সহজ ও সাশ্র্রয়ী। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার জোহর বাহরু থেকে প্রচুর ফেরি আছে। আগে থেকে টিকিট কাটার দরকার নেই। সিঙ্গাপুরে ফেরি ছাড়ে হারবারফ্রন্ট থেকে। এমআরটি, বাস বা ট্যাক্সিতে করে হারবারফ্রন্ট স্টেশনে এলেই হবে। চমৎকার ও নিরাপদ এসব ফেরিতে অভিবাসন শুল্কসহ প্রতিজনের যাওয়া-আসায় খরচ পড়বে বাংলাদেশি টাকায় তিন হাজার টাকারও কম। এজন্য অবশ্যই সিঙ্গাপুরের ডাবল এন্ট্রি ভিসা থাকতে হবে। দু’দেশের ইমিগ্রেশনের সময় বাংলাদেশ ফেরার বিমান টিকেট, হোটেল বুকিং স্লিপ, পর্যাপ্ত ডলারসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে।

ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমান, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ও টাইগার এয়ারের নিয়মিত ফ্লাইট আছে। এর মধ্যে বিমানটিকেট, হোটেল, টান্সফারসহ রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সাশ্রয়ী প্যাকেজ আছে সিঙ্গাপুরের জন্য।

কোথায় থাকবেন

বাটামে হোটেল-রিসোর্টের ছড়াছড়ি। সাশ্রয়ী হোটেল ভাড়াও। দাম সিঙ্গাপুরের অর্ধেক। তিন হাজার টাকায় পাঁচতারকা হোটেলে থাকা সম্ভব। একেবারে সাগড় পাড়ে অসংখ্য হোটেল ও রিসোর্ট আছে। ট্রিপ অ্যাডভাইজার (www.tripadvisor.com) থেকে দেখে-শুনে আগে থেকে অনলাইনে হোটেল বুক করে রাখলে ভালো হয়। বাটামে ফেরি থেকে নেমেই প্রথম চমকটা আসবে ট্যাক্সিভাড়া শুনে। হোটেল যদি শহরের ওপারে হয়, তাহলে ট্যাক্সিভাড়া চাইবে হয়তো এক লাখ রুপি। ভয় পাবেন না। বাংলাদেশি টাকায় এটি ৭০০ টাকারও কম। এমন সাশ্রয়ে খেয়েদেয়ে লাখ লাখ রুপি ওড়ানোর সুযোগ জীবনে বেশি নাও আসতে পারে।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ batamdwipindonesiaisland