এডামস পিক

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশের রত্নাপুরা জেলায় এডামস পিক অবস্থিত যা ২২৪৩ মিটার বা ৭ হাজার ৩৫৮ ফুট উঁচু এবং আকৃতিতে কোণের মত দেখতে। শুধু মুসলিম নন, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ – এই তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র এই চূড়াটি বা পাহাড়টি। সকলের ধারনা আদম পাহাড়েই আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে সরাসরি আগমণ বা পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারদিকে সবুজের বিপুল সমারোহ, মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা। পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছো্ট নদী এবং পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী নয়নাভিরাম দৃশ্য।

এডামস পিক (Adam’s Peak) এ রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন যা আদম (আঃ) এর পায়ের যে চিহ্ন বলে বিশ্বাস করা হয়। পদচিহ্ন এর পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্ম মতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে শত শত পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেছেন তারা এর চতুর্দিকে পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেছেন আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন। শুধু শ্রীলংকাবাসী নয়, বাহিরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আঃ) কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলঙ্কার ওই পাহাড়ে। এজন্যই মুসলমানরা সেই পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে আদম’স পিক বা এডাম’স পিক (Adam’s Peak) বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন।

এছাড়াও দেখার জন্যে আছে পবিত্র পায়ের পদচিহ্ন, ভাগাভা কেভ, ওয়ার্ল্ড পিস প্যাগোডা এবং অপার্থিব সূর্যোদয়।

এ্যাডামস পিক এ আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চূড়ায় পৌঁছতে হলে যে পথ তা চলে গেছে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। আছে বিষধর কীটপতঙ্গ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৫০০০ ধাপ এর মত। এর প্রতিটি ধাপ নিরাপদ নয়। তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষে যেতে হলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। জটিল এক আবহাওয়ার এক অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব হয়ে ওঠে। কারণ, কাব্যিক অর্থে বলা যায় এ পাহাড় তখন মেঘের ভিতর লুকিয়ে যায়। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে।

কখন যাবেন

ডিসেম্বরের ফুল মুন বা ভরা পূর্ণিমা থেকে এপ্রিলের ফুল মুন পর্যন্ত তীর্থযাত্রীদের জন্যে পিক সময়। এছাড়া ছুটির দিন এবং পূর্ণিমার এর সময় ভীড় সবসময় বেশি থাকে। অনেকেই রাতে যাত্রা বা হাইকিং শুরু করে থাকেন যাতে সকালে যেয়ে সূর্যোদয় দেখতে পারেন। আপনি চাইলে দিনেও হাইকিং করে পারেন, রাতে ওখানে গুহাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। স্লিপিং ব্যাগ ও খাবার নিয়ে যাবেন। সূর্যোদয় দেখে পরদিন সকাল বেলা ব্যাক করবেন। তবে সবসময় বৃষ্টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। কারন এতে যাত্রা যেমন ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে তেমনি আশেপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য মিস করবেন। উপরে ওঠার পথে অন্তত ১৩ টি ঝর্নার দেখা মিলবে।

কিভাবে যাবেন

আপনি কলম্বো বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস নিতে পারেন অথবা ক্যান্ডি শহরের পোস্ট অফিস এর কাছে অবস্থিত গুড শেড বাস ডিপার্টমেন্ট থেকে বাসে চড়তে পারেন। ট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে কলম্বো – ক্যান্ডি – নুওয়ারা এলিয়া লাইনের ট্রেনে করে হ্যাটটন নামতে হবে। হ্যাটটন থেকে একাধিক প্রাইভেট বাস পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়, যে পথের দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। সাহসী ভ্রমণকারীরা হ্যাটটন পথটি উপরে উঠার জন্যে এবং রত্নপুরু পথটি নিচে নামার জন্যে ব্যবহার করেন। এই দ্বিতীয় পথটি শুধুমাত্র ট্র্যাকিং এর জন্যে ব্যবহৃত হয়। এই পথে কয়েকটি খাদ্য স্টল আছে যাতে জল এবং খাবার পাওয়া যায়।

ট্রেনে হ্যাটটন পৌঁছে বাসে কিংবা টুকটুক এ করে ডালহৌসি পৌছানো যায়। বাসে পৌছাতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মত আর টুকটুকে সময় লাগে এক ঘন্টা। বাসে ভাড়া ০.৬৫ ডলার এবং টুকটুক এ পড়বে ৭-১১ ডলার।

কোথায় থাকবেন

রত্নাপুরা জেলার ডালহৌসি শহর হলো এডামস পিকের সবথেকে কাছের জায়গা। এই শহরের মেইন রোডের কাছে সব ধরনের হোটেল পাওয়া যায়। বাজেট ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে –

  • White House [$25 USD/night] দারুন লোকেশন এবং ঝকঝকে রুম।
  • Grand Adams Peak [$25 USD/night] – এডামস পিক থেকে মাত্র ৩৫০ ফিট দূরে। প্রত্যেক রুমের সাথে ব্যালকনি আছে।

এছাড়া মিড রেঞ্জের ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে –

  • White Elephant Hotel [$46 USD] দারুন লোকেশন। রুমের বারান্দা থেকে পিক দেখা যায়।
  • Punsisi Rest [$57 USD] দারুন লোকেশন এবং সেই সাথে দারুন ভিউ।

লাক্সারি ট্রাভেলার্সদের জন্যে আছে Mandira Craig Appin Bungalow [$225 USD]

নোটঃ যাবার সময় অবশ্যই গরম কাপড়, রাতের জন্যে খাবার ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে যাবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ adamspeaksrilanka