নর্থ সিকিম ভ্রমণ

স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন না পাওয়া – আমার ভ্রমণ কাহিনীর শেষটা ঠিক এরকমই ছিল। এই একটা ট্যুরে সবরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কাহিনীটা হলো ২০১৮ এর এপ্রিল মাসের শেষের সময়ের। টিকিট কাটার ১ ঘন্টা আগেও আমি জানতাম না কোথায় যাবো। যখন তৎকালীন টিকিট কাটতে গেলাম, তখন এত গরম ছিল কলকাতাতে মনে হলো ঠান্ডা হলে খুব মজা হবে। তখনই দার্জিলিং মেইল এ Tatkal টিকিট এ ক্লিক করলাম। কপাল ভালো ছিল টিকিট গেলাম।

তখন ঠিক করলাম যেখানে বরফ পাব সেখানে যাবো। এমনিতেও আমি এর আগে কোনোদিন North East এ যাইনি। প্রথমবার বলে অনেক উৎসাহিত ছিলাম। একদিনে এর মধ্যে সব শীতের পোষাক গুছিয়ে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। হোটেল পরিচিত ছিল বলে ফোন করে বুক করে নিয়েছিলাম। এরপর দার্জিলিং মেইলে করে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম সকাল বেলা নাস্তা করে শেয়ার ক্যাব নিয়ে গ্যাংটকের এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তাই ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু প্রথম পাহাড়ি রাস্তায় অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে ঘুম পালিয়ে গেছে।

নর্থ সিকিমের কোন এক জায়গায়

গ্যাংটক পৌঁছাতে বেলা হয়ে গিয়েছিলো তাই রাস্তার মাঝে লাঞ্চ সেরে নিয়েছিলাম। তারপর হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যে বেলায় MG MARG ভালো ভাবে ঘুরে দেখলাম। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো। আকাশ মেঘলা ছিলো, বৃষ্টিও হলো। একে ঠান্ডা, তার উপর বৃষ্টি। এক অন্য রকম অনুভূতি। আমরা হোটেল ঢুকে আমাদের সব ডকুমেন্ট দিয়ে দিয়েছিলাম নর্থ সিকিমের পারমিট বের করার জন্য।

৩ দিনের প্যাকেজে আমরা শেয়ার গাড়িতে তিনদিনের জন্য পরের দিন সকাল বেলা বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য ছিল লাচুং। রাস্তা খারাপ থাকার জন্য রাস্তায় কিছু কষ্ট হয়েছিল কিন্তু ওই প্রাকৃতিক দৃশ্যে এর কাছে সব দূর হয়ে গেলো। লাচুং যাওয়ার পথে অনেক ঝর্ণা দেখলাম। খাদের পাশ দিয়ে গাড়ি গুলো যখন যাচ্ছিলো তখন একটু ভয় করছিলো। যদিও কিছুক্ষণ যেতে যেতে ভয় কেটে গেলো। লাচুং পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমদের বিকাল হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি হচ্ছিলো আর তাপমাত্রা তখন ২ ডিগ্রি। কলকাতার ৪২ ডিগ্রী থেকে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই অনেক ঠান্ডা মনে হবে।

লাচুং

লাচুং আসার পথে পাহাড় এর চূড়ায় প্রথম বরফ দেখলাম। তারপর রাতে আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম কারন পরের দিন অনেক ভোরে আমদের বেরোনোর কথা ছিল Yumthang, এবং Zero point এ যাওয়ার জন্যে। ভোর ৪টায় উঠে গেলাম। তখন সবে সূর্যের আলো পাহাড় এর উপর এসে পড়েছে দেখলাম। আমাদের হোটেল এর সামনে এক বিশাল পাহাড় পুরো বরফে ঢেকে আছে। কিছুক্ষণ পর আমরা গাড়িতে চেপে Yumthang Valley গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে নাস্তা সারলাম। ওখান থেকেই বরফে হাটার জন্যে শু ভাড়া করে জিরো পয়েন্ট গেলাম। যাওয়ার পথে রাস্তায় অনেক পাহাড়ি ফুলের দেখা পেলাম। WINE ফুলও দেখলাম।

ইয়মথাং ভ্যালী

যতো জিরো পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলাম তাতো বরফের পরিমান বাড়ছে। জিরো পয়েন্টে অনেকের প্রবলেম হচ্ছিলো অক্সিজেন এর স্বল্পতার জন্য। জিরো পয়েন্ট তখন পুরো বরফে ঢাকা। অনেক খেলা করলাম বরফ নিয়ে। দিনটা ভালো ছিলো কারন কিছুক্ষণ পরই Snowfall শুরু হয়ে গেলো। জীবনে প্রথম স্নোফল দেখলাম, খুব ভালো লাগলো। এত ভালো লাগলো যে বলে বোঝানো সম্ভব না।

তারপর আমরা Lachung ফিরে লাঞ্চ করে লাচেন এর জন্য বেরিয়ে গেলাম। লাচেন খুব সুন্দর একটি গ্রাম। পায়ে হেঁটে পরের দিন সকাল বেলা ঘুরে দেখলাম। পুরো দিন ওখানে থেকে পরের দিন Gangtok এ ফেরার জন্য রওনা হলাম। এবার ঘটলো বিপত্তি! ধ্বসে এর জন্য রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। পরপর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৬ ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। ডাইনামাইট দিয়ে পাথর ভেঙ্গে রাস্তা ক্লিয়ার করে একটা একটা করে গাড়ি গেলো। একজনের কথা না বললেই না। আমদের যে ড্রাইভার ছিল সে খুবই ভালো ছিল, খুব ফ্রেন্ডলি। রাতে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও সব উনি করে দিয়েছিলো।

লাচেন

আমরা রাত ১টায় হোটেলে ফিরেছিলাম। পরেরদিন সকালে কিছু শপিং করে NJP ব্যাক করলাম। সেখানেও ঘটলো বিপত্তি। পুরো রাস্তায় জ্যাম। দুপুর ১২টায় বেরিয়েও NJP ঢুকতে রাত ৮টা বেজে গেল। সিকিম বর্ডার থেকে পর পর গাড়ি দাঁড়িয়ে শিলিগুড়ি অবধি। রাস্তায় খুব টেনশন হচ্ছিলো যদি ট্রেন মিস হয়ে যায়? ঘটলোও তাই। ২ মিনিটের জন্য দার্জিলিং মেইল মিস করলাম। ট্রেন ঠিক সময়েই ছেড়ে গেছে। পিক সিজন চলছিল তাই Tatkal টিকিট ও পাচ্ছিলাম না। সব ট্রেন ফুল যাচ্ছে। ঐ রাত একটা হোটেলে কাটিয়ে সকালে নরমাল টিকেট কেটে ফাইন দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে শিয়ালদাহ ফিরলাম।

Leave a Comment
Share