বর্ষায় পাহাড়ি স্বর্গ – বগা লেক, কেওক্রাডং

অনেকদিন থেকে প্লান করছিলাম কোথাও ঘুরতে যাব।দূরে কোথাও। কিন্তু কাউকে সে ভাবে পাচ্ছিলাম না যাওয়ার মত। তখনই আচমকা একদিন দীপ্ত বলল চল বান্দরবান যাই। আমাকে আর আটকায় কে? জুন মাসের ২৯ তারিখ আমরা বগা লেক (Boga Lake) আর কেওক্রাডং (Keokradong) যাচ্ছি ফাইনাল হলো। আমরা নয় জনের মত ছিলাম। তার মাঝে আমি শুধু দিপ্তকে চিনতাম। বাকি সাতজনই আমার অপরিচিত। কিন্তু সবাই চুয়েটের তাই আর কোন সমস্যা ছিলো না।

২৯ তারিখ সকাল ৬টায় আমরা চারজন পাহাড়তলিতে একসাথে হই। আমাদের বাকি ৫জন বহদ্দরহাট থেকে আমাদের সাথে জয়েন করবে। তারা সবাই আগে থেকেই পরিচিত ছিল, আমি নতুন তাই সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম। পাহারতলি থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সেখান থেকে বহদ্দরহাট। বহদ্দরহাট থেকে বান্দরবান এর জন্য সরাসরি বাস পাওয়া যায়। সেখান থেকেই টিকিট করলাম। বহদ্দরহাট থেকে বান্দরবানের অনেক বাস পাওয়া যায়। পছন্দ এবং সময় হিসেব করে যে কোন একটা বাসে উঠলেই চলবে। আগের রাতে তেমন ঘুম হয় নাই তাই পথের প্রায় সবকিছু মিস করে ঘুমকেই সঙ্গি করলাম বান্দরবান পর্যন্ত।

বান্দরবান শহরটা ছোটখাট। চারপাশেই পাহাড় আছে। যারা পাহাড় পছন্দ করি তারা শহরটার প্রেমে পড়তে বাধ্য। বাস থেকে থেমে অটো নিয়ে চলে গেলাম রুমা বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকে এক ঘন্টা পরপর বাস ছেড়ে যায়। আমরা ১০ মিনিটের জন্য একটা বাস মিস করেছিলাম, তাই ৫০ মিনিটের মত বসে থাকতে হয়েছিলো। রুমা যাওয়ার জন্য চাঁদের গাড়িও পাওয়া যাবে কিন্তু তাতে খরচটা একটু বেশি পড়বে। আর হ্যা, এখানে খোলা পানি খাওয়া ঠিক হবে না। তাই পানি নিয়ে যাওয়া ভাল।

রুমা রোড

বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার পথটা পুরটাই পাহাড়ের ঢাল দিয়ে গিয়েছে। বাস ছাড়ার কিছু সময় পরই সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠবে। দূরে পাহাড়, পাশে পাহাড়ি খাঁদ। দেখার মত চোখ থাকলে আসলেই অভিভূত হওয়ার মত অনেক কিছু আছে। এভাবে চলতে চলতে রুমা বাজার চলে আসবে ঘণ্টা তিনেক পর। রুমা বাজার আসার পথে আর্মি ক্যাম্পে একবার নামতে হবে চেকিং এর জন্য, আরেকবার যাত্রা বিরতি ১০ মিনিট। রুমা বাজার থেকে আমরা দুপুরের খাবার আর বারবিকিউএর জন্য যা যা লাগে তা কিনে নিয়েছিলাম (কাঠ লাগবে না, বগা লেকেই কিনতে পাওয়া যায়)। আমাদের গাইডও আমাদের সাথে রুমা বাজার থেকেই ছিলো। আর্মি ক্যাম্পে আবার সাইন করে আমরা বগা লেকের জন্য চাঁদের গাড়িতে উঠি। আমারা ৯ জন ছিলাম তাই আমরা আরেকটা টিমের সাথে এড হই। তারা ৭ জন ছিলো। চাঁদের গাড়িতে নরমালি ১৫-১৬ জনের মত যেতে পারে। টিম মেম্বার কম থাকলে অন্য একটা টিমের সাথে চাঁদের গাড়িতে শেয়ারে উঠলে খরচ কিছুটা কমে। রুমা বাজার থেকেই আসল এডভেঞ্চার শুরু। প্রথমেই অনেকটা খাড়া চড়াই পার হতে হয়। প্রথমবার একটু ভয় লাগলেও কিছু সময় পর আর ভয় লাগবে না। কারন একটু পরপরই রাস্তা ৫০ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রীর কোণে উপরে উঠে আবার নিচে নামে। আর এই ঢাল গুলাও অনেকটা সময় লাগে পাড় হতে। প্রথমবার মনে হতে পারে এর চেয়ে ভয়ংকর সুন্দর আর কি আছে? কিন্তু কিছু সময় পর এতোই বেশি যোশ লাগে ব্যাপারগুলো যে অনেকেই চাঁদের গাড়ীর ছাঁদে উঠে যায়। তখন ভয়ংকর সুন্দর হয়ে যায় অতিরিক্ত সুন্দরের চেয়েও বেশি কিছু। আমাদের জন্য বোনাস ছিলো সিজনটা। দুরের আকাশে প্রায়ই দেখতে পাচ্ছিলাম মেঘ জমে গিয়েছে। পাহাড়ের চুড়ায় যে পরিমান মেঘ জমছিলো, মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের চূড়ায় তুষার জমেছে। এক ঘণ্টা বার তার চেয়ে কিছু সময় বেশি লেগেছিলো হয়তো বগা লেক পৌঁছাতে।

ঝুম বর্ষায় বগা লেক

বগা লেক এসে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম!! আমরা আসলে ছবিতে যা দেখি বা রিভিউতে যা পড়ি তার চেয়ে হাজারগুনে বেশি সুন্দর বগা লেক। কেউ কখনই লিখে প্রকাশ করতে পারবে না যায়গাটা কেমন। যারা ভ্রমন প্রিয় মানুষ তাদের অবশ্যই একবার বর্ষা কালে বগা লেকে আসা উচিত। আমরা যখন বগা লেকে পৌছালাম তখন থেকেই একটু একটু বৃষ্টি পড়ছিলো। বৃষ্টির জন্য বগা লেকের পানির সবুজ রংটা যেমন একটু বেশিই সবুজ লাগছিলো, তেমনি সাদা সাদা মেঘ পাহাড়গুলোর সবুজ রঙটাকেও আসতে আসতে ঢেকে দিচ্ছিলো। আসলে কোন ভাষাতেই সেই রূপ বর্ণনা করা যাবে না। আর্মি ক্যাম্পে সাইন করে আমরা আমাদের কটেজে ব্যাগ গুলো রেখেই বের হয়ে গেলাম। আমাদের কটেজ ছিলো একদম লেকের পাশেই। বারিন্দা থেকে যে ভিউ পাচ্ছিলাম তা রেখে বাইরের বৃষ্টিতে যেতে ইচ্ছা করছিলো না। পুরো লেকটাই দেখতে পাচ্ছিলাম সাথে ছিলো সামনের পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা মেঘরাশি। কিন্তু বৃষ্টিটাকে মিস করতে চাইনি কেউ।

বগা লেকে গোসল করবো তা আগে থেকেই প্লান ছিলো, যদিও লেকে নামা পুরপুরি নিষেধ। আমরা যখন কটেজ থেকে বের হলাম তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো। বাংলাদেশের বৃষ্টি আর তাও পাহাড়ে। বাকিটা কল্পনা করে নিলেই সবচেয়ে ভাল হয়। লেকের পাশের উঁচু পাহারটা তখন মেঘে ছেয়ে গেছে। যদিও ইচ্ছা ছিল না লেক থেকে উঠে যাই তারপরও উঠে এলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায়। লেকের পানি হালকা গরম থাকে , তাই বৃষ্টির সময় অন্য রকম একটা অনুভূতি পাওয়া যায়। কনকনে ঠাণ্ডা বৃষ্টির পানি আর লেকের উষ্ণ ছোঁয়া।

সন্ধ্যায়ও বৃষ্টি ছিল তাই কটেজেই থাকতে হয়। সন্ধ্যার রঙ সাথে আঝোর ধারার বৃষ্টি। সামনে লেক আর মেঘে ঢাকা আকাশ। স্থব্ধ একটা পরিবেশ। বৃষ্টি হলে তেমন কিছু করার থাকে না কটেজে। নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না এখানে তেমন একটা। রাতের আধার নেমেছিলো সে দিন ভাল ভাবেই। বারিন্দায় বসে থাকতে থাকতে ক্লান্তিও নেমে এসেছিলো চোখ জুড়ে। মিনিট ৪৫ এর মত ঘুমিয়েছিলাম হয়তো। বৃষ্টি থেমে গিয়েছিলো নাকি আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরপরই। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকায় লেক দেখা যাচ্ছিলো না। রাতে ছিলো আমাদের আড্ডা আর গলা ছেড়ে গান গাওয়া ।অসাধারন মুহূর্ত ছিলো কিছু। ১১টা পর্যন্ত ছিলাম। কটেজে এসে বেশি সময় আর চোখ খুলে রাখতে পারি নাই। পরের দিনটা যে অনেক লম্বা। ছিলো আসল এডভেঞ্চা্রের অপেক্ষা।

আগের দিনের জার্নিতে অনেকেই টায়ার্ড ছিলাম তাই ইচ্ছা থাকার পরও সূর্যদয় দেখতে পারি নাই। আগের রাতে কটেজের মালিকের বাসায় খেয়েছিলাম। খাওয়া প্যাকেজ সিস্টেম। আমরা নিয়েছিলাম ডিম ভাজি, আলু ভর্তা, পেয়াজ আর মরিচ ভর্তা, একটা ভাজি ( আসলে চিংড়ি মাছ, আলু দিয়ে বানানো একটা আইটেম) আর ডাল। সকাল বেলায় ছিলো খিচুড়ি আর ডিম ভাজি। যারা ঝাল একটু কম খান তাদের জন্য রাতের খাবারটা তেমন সুবিধার হবে না তবে সকালেরটায় কারো কোন সমস্যা হবে না।

বগা লেক থেকে পানি, হালকা খাবার আর বাঁশ নিয়ে সকাল ৯.৩০ এ আমাদের জার্নি শুরু করেছিলাম কেক্রাডং এর উদেশ্যে। ১০-১৫ মিনিট পীচ ঢালা রাস্তায় হাটার পরই জঙ্গলের রাস্তা শুরু হয়। এখন বর্ষা কাল তাই জোঁকের উপদ্রব খুবই বেশি ছিল। তাই একটু সাবধানে পথ চলতে হচ্ছিলো। প্রথম ৩০ মিনিটের মত একটু কষ্ট হয়, কিন্তু আসতে আসতে উপরে উঠতে থাকলে তেমন কষ্ট হয় না। স্যালাইন প্রথমে লাগবে না মনে হবে কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পরে যে কারো শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে এই সময়টায়। তাই সেলাইন সাথে থাকলে ভাল। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা ছোট ঝর্না পাওয়া যাবে। এখান থেকে পানি খাওয়া যায় কিন্তু এখানের পানি না খাওয়াই ভাল। ঘণ্টা খানেক পরেই চিংড়ি ঝর্না চলে আসলাম। ঝর্নাটা একটু উঁচু। আমি সবার থেকে একটু এগিয়ে থাকায় একাএকাই ঝর্নায় উঠেছিলাম। কিন্তু এটা কোন ভাল ডিসিশন ছিলো না। খাঁড়া জায়গা বা এইসব ঝর্নায় কয়েকজন একসাথে ওঠাই ভাল। আগের রাতের ভারি বৃষ্টির জন্য ঝর্নায় ভালই পানি ছিলো। ঝর্নাটা ফেলে আসার পরই একদম কড়া পাহাড়ি রাস্তা শুরু হয়। মাঝে মাঝে খুবই খাড়া আবার মাঝে মাঝেই ঢালু। দার্জিলিং পাড়ার একটু আগেই একটা খাড়া জায়গা পাওয়া যায়। এখানে মাঝে মাঝে আম,কলা নিয়ে পাহাড়িরা বসে থাকেন। শুকনো খাবার না নিয়ে থাকলে এখান থেকেও নেয়া যেতে পারে। ট্র্যাকিঙে আমাদের এই জায়গাটাতেই উঠতে সবচেয়ে কষ্ট হয়েছিলো। অনেকটা উঁচু আর খাঁড়া রাস্তাটার পরেই আসে সেই অসাধারণ ভিউ। রুমা বাজার থেকে বগা লেক যাওয়ার পথে অনেকগুলো ভিউ পয়েন্ট আছে। তবে কেওক্রাডং এর পর এই জায়গাটার ভিউই সব চেয়ে সুন্দর। এখান থেকে সামনের পাহাড়গুলোকে এতো সুন্দর দেখা যায়!! আমাদের মাঝে তো একজন এটার নামও দিয়ে দিয়েছে সুজারল্যান্ড পয়েন্ট। তারপর অল্প দূরেই দার্জিলিং পাড়া। এখানে আনারস,আম, বিস্কিট পাওয়া যায় কিন্তু দাম একটু বেশি। দার্জিলিং পাড়া থেকে পানি নিয়ে আবার হাটা শুরু করি। পরের রাস্তাটাও যথেষ্ট খাড়া ছিলো।

কেওক্রাডং

অল্প সময় পরই চূড়ায় চলে আসি। চূড়ায় কি দেখেছি বা কেমন ছিলো তা পরে বলছি। চূড়ায় খাবারের অবস্থা তেমন ভাল না। গোসলের জন্য প্রতি বালতি পানির দাম ৫০ টাকা। নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যায় না। আমাদের মোট চার ঘন্টার মত লেগেছিলো চূড়ায় উঠতে।প্রায় সবাই থেমে থেমে ছবি তুলছিলো ,তাই সময়টা একটু বেশি লেগেছিলো । নইলে ৩ ঘন্টার মত লাগে। চূড়ায় উঠে সবাই এতো বেশি টায়ার্ড ছিলাম যে হ্যালিপ্যাড বা গোল ঘরে প্রথমেই যেতে পারি নি। গোল ঘরটা একটু উপরে , সেখানে উঠার জন্য আবার সিঁড়ি বেয়ে উঠা লাগে। গোল ঘরটা সবার উঁচুতে।গোসল, খাওয়া শেষ করে যখন গোল ঘরে উঠলাম, সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। কিন্তু সূর্যের আলো আমাদের কাছে আসার আগেই রাশি রাশি মেঘের কাছে বাধা পাচ্ছিলো। আমাদের চারপাশে কেবল মেঘ, মেঘ আর মেঘ। মনে হচ্ছিলো যেন মেঘের স্বর্গে চলে এসেছি। বেশি সময় থাকতে পারি নাই বৃষ্টির বাধার কারনে। কটেজে ফিরে আসতে হলো। আমাদের কটেজটা একদম পাহাড়ের কিনারায় ছিল। তাই কিছু অসাধারণ দৃশ্যের জন্য শুধু জানালাটা খুলা রাখলেই হচ্ছিলো।

কেওক্রাডং, বান্দরবান

বৃষ্টির পর যখন আবার বের হলাম তখন আকাশ জুড়ে কেবল সাদা মেঘের ছড়ানো ছিটানো আস্তরন। সন্ধ্যাটা যখন ঘনিয়ে আসছিলো তখন আকাশের রূপও যেন বারে বারে বদলে যাচ্ছিলো। কখনো দুরের আকাশে মেঘের ছুটছুটি আবার কিছু সময় পরই তা পাহাড়ের গায়ে আটকে যাওয়া। ছয়টার পর হ্যালিপ্যাডে থাকা নিষেধ। তাই আমাদের নেমে আসতে হলো। রাতের খাবার খেয়ে যখন আবার গোল ঘরে গেলাম তখন জমে যাওয়ার মত অবস্থা ।প্রচুর বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডা। কিন্তু তাও আমরা ঘণ্টাখানেক ছিলাম।রাত ১০টায় নেমে আসা লাগে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও থাকতে পারলাম না। অনেকে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। আমি আর আরেকজন আরো কিছু সময় তারা গুনায় ব্যাস্ত ছিলাম। আশেপাশে কোন আলো নেই। দুরের একদুইটা গ্রামে মিটমিট করে আলো জ্বলছিল । কিন্তু তাতে তারা গুলো মলিন হওয়ার কোন কারনই ছিলো না।

ইচ্ছা ছিলো পরদিন সূর্যদয় দেখবো। বগালেকে মিস করলেও এখানে মিস করবো না। কিন্তু পরদিন সকালে উঠে দেখি আমাদের ঘিরে রেখেছে সাদা সাদা মেঘ। আশাহত হলাম কিন্তু মনে উঁকি দিয়ে উঠলো এডভেঞ্চার। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিলো তাই রাস্তায় কাঁদা জমে গিয়েছিলো। আমাদের কটেজ থেকে খাওয়ার ঘর পর্যন্ত রাস্তাটাও পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিলো। আর আমাদের জার্নি তো তখনো পুরটাই বাকি।

সাড়ে আটাটার দিকে আমরা বের হলাম। আমরা উপরে কেবল আগের দিন দুপুরের লাঞ্চ আর রাতের খাবার খেয়েছি। পরের দিন সকালের খাবার খাব নিচে, দার্জিলিং পাড়ায়। এমনটাই প্লান ছিলো। চূড়ার খাবারের চেয়ে দার্জিলিং পাড়ার খাবারের মান যথেষ্ট ভাল। সকালের খাবার আগের দিনই অর্ডার করতে হয়। খাবার খেয়ে আবার সেই ঢালু পথ বেয়ে নেমে চললাম। আমরা যখন অর্ধেকের একটু কম রাস্তা চেলে এসেছি তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। পাহাড়ি রাস্তা, তার উপর বৃষ্টি। রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গেল আগের চেয়েও বেশি। আমার জুতার নিচে একদম কোন গ্রিপই ছিলো না। হাঁটতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিলো। যাদের জুতায় ভাল গ্রিপ ছিলো তাদেরও প্রব্লেম হচ্ছিলো। বারবার পিছলে যাচ্ছিলাম সবাই। কিছু কিছু যায়গা খুবই সরু। এক ফুটও হবে না। মাঝে মাঝে এমন ছিল যে শুধু একটা পা রাখা যাবে। আর নিচে ১০০-২০০ ফুট গভীর খাঁদ। চিংড়ি ঝর্নার আগের রাস্তাটা সবচেয়ে ভয়ানক ছিলো। ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো। গাছের ডালে ধরে ধরে নামতে হয়েছিলো। সবচেয়ে সমস্যা করছিলো পাথরগুলো। বৃষ্টির জন্য পাথরের উপরে কাঁদা জমে গিয়েছিল, আর যদি কেউ পরের যায় তাহলে পড়বে এই পাথর গুলোর উপর। প্রচুর রিস্কি ছিলো এগুলা। আমরা যখন বগা লেকে ফিরে এলাম তখন এক একজন বিধ্বস্ত। শুধু পাহাড়ি পথ হলে কোন সমস্যাই ছিলো না। কিন্তু ঝামেলা করলো বৃষ্টি। কিন্তু রিস্ক থাকলেও বর্ষাকালের জন্য আমাদের জার্নিটা বলতে গেলে অসাধারনই ছিলো।

মেঘাচ্ছন্ন কেওক্রাডং

রুমা থেকে বান্দরবানের সব শেষ গাড়ি ৩.৩০ এ আর বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামের শেষ গাড়ি ৬.৩০ এ ছাড়ে। তাই একটু সময় মত সব যায়গায় গেলে ভাল হয়। আমরা ৩.৩০ আর ৬.৩০ এর বাস গুলায় এসেছি। একটু দেড়ি হলেই আমরা বাস মিস করতাম।

বগা লেকে ফিরে এসে ক্যাম্পে সাইন আর লেকে গোসল করে চাঁদের গাড়িতে চরে বসলাম। গাড়িতে করে আসার সময় পেছনে ফেলে আসতে লাগলাম উঁচু উঁচু সব পাহাড় আর রাশি রাশি মেঘ। আমরা পেছনে তাকিয়ে রইলাম বিশাল সেই পাহারগুলোর দিকে। অসাধারণ কিছু মুহূর্ত বন্দি করে ফিরে এলাম চুয়েটে।

খরচ

  • চট্টগ্রাম-বান্দারবানঃ ১৩০/- (জন প্রতি)
  • বান্দারবান- রুমা বাস স্ট্যান্ডঃ ১৩০/- ( ৯ জনের একসাথে)
  • রুমা বাস স্ট্যান্ড- রুমা বাজারঃ ১১০/- ( জন প্রতি)
  • চাঁদের গাড়িঃ ১১২৫/-
  • বগা লেকে থাকা + রাতের খাবারঃ ৪০০০/-
  • সকালের খাবারঃ ২৮০/-
  • কেওক্রাডং থাকা + দুইবেলা খাওয়াঃ ৪০০০/-
  • দার্জিলিং পাড়ায় সকালের খাবারঃ ১৪০০/-
  • বগালেক-রুমাবাজারঃ ১৩২০/-
  • রুমা বাজার- বান্দারবানঃ ১০০০/-
  • বাস স্ট্যান্ড পর্যন্তঃ ১৩৫/-
  • বান্দারবান-চট্টগ্রামঃ ১০০০/-
  • গাইডঃ ২০০০/-

ট্রেকিং এর সময় হালকা নাস্তা আর টুকটাক খরচ মিলিয়ে তিন দিন আর দুই রাতে জন প্রতি খরচ হয়েছে ২৭০০/-

পাহাড়টা আমাদের আর আমাদেরই উচিত তা পরিস্কার রাখা। ময়লা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা আছে। প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ সব কিছু যত্রতত্র না ফেলে নির্ধারিত স্থানে ফেলি।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Bandarbanboga lakekeokradong