কেওক্রাডং
কেওক্রাডং (Keokradong) বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ যা বাংলাদেশের বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং এর উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। এক সময় এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ছিল। যদিও আধুনিক গবেষণায় এই তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সাকাহাফং বা মদক তুং। সাদা মেঘে ঢাকা থাকায় দূর থেকে কেওক্রাডংয়ের চূড়াকে ধোয়াটে মনে হয়। বাতাসের ঝাপটায় দাঁড়ানো দায়। বৃষ্টি–বাতাস-মেঘ সময় সময় দখল নেয় চূড়ার আশপাশ।
কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।
বান্দরবান শহর থেকে ১৫ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে রুমা বাজার যাওয়ার বাসস্ট্যান্ড। প্রথম বাস সকাল ৮ টায়। প্রথম বাসটাই ধরার চেষ্টা করবেন। ভাড়া ১১০ টাকা। সময় লাগবে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা। রুমা বাজার নেমে গাইডের সাথে আর্মি ক্যাম্পে সব দরকারি কাগজপত্রের কাজ শেষ করবেন। আর্মি ক্যাম্পের কাজ শেষে ল্যান্ডক্রুজার জিপ/চান্দের গাড়ি নিয়ে বগালেক যেতে হবে। ল্যান্ড ক্রুজারে ধারন ক্ষমতা ৭/৮ জন। ভাড়া ১৮০০ টাকা। চান্দের গাড়ির ভাড়া ২০০০ টাকা, ১৪/১৫ জনের মত যেতে পারবেন।
বগালেকে আর্মি ক্যাম্পে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিয়ে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। স্যালাইন, শুকনা খাবার, পানি নিয়ে নিবেন। প্রায় ৮/৯ কিমি হাইক এবং বগালেক থেকে কেওক্রাডং এর এলিভেশন ডিফারেন্স প্রায় ২০০০ ফিট। হাটার উপর ডিপেন্ড করে ৪ ঘন্টার আশেপাশে সময় লাগবে কেওক্রাডং পৌছাতে।
Time needed: 3 days
রাতের বাসে ঢাকা থেকে বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।
সকালে বান্দরবান নেমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিন। নাস্তা শেষ করে জীপ নিয়ে বান্দরবান থেকে রূমা বাজার এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। রুমা বাজার পৌঁছে গাইডের সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চান্দের গাড়ি করে বগালেক চলে যাবেন। এদিন মূলত বগা লেকে রিলাক্স করে কাটিয়ে দিন।
খুব সকালে উঠে নাস্তা সেরে ৭ টার মধ্যে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। এইদিন মূলত ৪-৫ ঘন্টা পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হবে। পথ চলতে চিংড়ি ঝর্ণা এবং ঝিরি পথ এর দেখা মিলবে। উঁচু নিচু পাহাড় পারি দিয়ে দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাবেন কেওক্রাডং। এদিন কেওক্রাডং এ রিলাক্স করে কাটিয়ে দিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিন। দার্জেলিং পাড়ায় পৌঁছে সকালের নাস্তা সেরে বগা লেক চলে যান। বগালেকে যাত্রা বিরতি দিয়ে রুমা পৌঁছে লাঞ্চ সেরে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিন। রাতের বাসে বান্দরবান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন।
কেওক্রাডং পাহাড়ে রাতে থাকার জন্যে কটেজ আছে। এছাড়াও কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দার্জিলিং পাড়াতেও রাত্রি যাপনের জন্যে কটেজ রয়েছে। নিচে কেওক্রাডং এর কটেজের ভাড়ার তালিকা এবং ফোন নাম্বার দেয়া হলো –
এছাড়া যারা কেওক্রাডং এ রাত্রি যাপন করতে চান না তাঁরা বিকেলে ফিরে বগা লেক এ রাত্রি যাপন করতে পাবেন। এছাড়া গাইডই আপনার জন্য কটেজ ঠিক করে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বিভিন্ন কটেজ আছে এখানে একতলা দু তলা। তবে সিয়াম দিদির কটেজের ভালো নাম ডাক আছে।
আপনি যে কটেজে থাকবেন সেখানেই খেতে পারেন। অথবা গাইডকে বললে মুরগীর ব্যবস্থা করে দিবে চাইলে নিজেরাও রান্না করতে পারেন। খাবার জনপ্রতি তারা নেই ১০০-১২০ টাকা। বগালেক ছাড়াও আপনি কেওক্রাডং এ দুপুরে খেতে পারবেন খাবারের নিয়ম মান দাম একই বগালেকের মত। এছাড়া বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাবার পথে কয়েকটা পাড়া পাবেন সেখানেও কিছু খাবারের দোকান পাবেন যেমন চা , কলা, রুটি ও পাহাড়ি ফল পেপে, কমলা খেতে পারবেন।
কেওক্রাডং এর পাদদেশে দার্জিলিং পাড়ায় পোছাতে প্রায় বিকাল হয় সেখানে আইরিন দিদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। অসাধারন রান্না আর আতিথেয়তা পাবেন। কি খাবেন তা গাইডকে আগে থেকে বলে রাখবেন, গাইড দিদির সাথে কথা বলে সব ঠিক করে রাখবে।
★ ঢাকা থেকে বান্দরবন, নন এসি বাস = ৬২০ টাকা
১ম দিন:(বান্দরবন থেকে রুমা থেকে বগালেক যাবার দিন)
২য় দিন:(বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাবার দিন)
৩য় দিন: (কেওক্রাডং থেকে ফেরার পথে)
★ বান্দরবন থেকে ঢাকা = ৬২০ টাকা
এছাড়া বান্দরবান থেকে চান্দের গাড়িতে সরাসরি বগালেক যাওয়া আসা, মাঝে একদিন বিরতিতে আপনাকে গুনতে হবে ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা।
গাইড খরচ বগালেক পর্যন্ত ১৫০০ টাকা, কেওক্রাডং পর্যন্ত ২৬০০ টাকা। সাথে তাদের থাকা খাওয়ার খরচ আপনাকে দিতে হবে। বগালেক একরাত আর কেওক্রাডং একরাত গাইডের খাওয়া বাদে ২৬০০ টাকা দেওয়া লাগবে।
কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে অনুমতি নিতে হবে ৫ জায়গা থেকে –
তবে চিন্তার কিছু নেই। এ সকল কাজগুলো আপনার গাইড করবে। আপনি শুধু নিজের নাম, ফোন নাম্বার আর সাক্ষর দিবেন।
দেশের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া গুলোর মধ্যে কেওক্রাডং এখনো পর্যটকদের আকর্ষনের শীর্ষে রয়েছে এর কিছু ব্যাতিক্রমি বৈশিষ্টের জন্যঃ
Leave a Comment