chele la pass
জীবনে প্রথমবারের জন্য বিদেশের স্বাদ নিতে বেছে নিলাম ‘The land of Thunder Dragon’ খ্যাত ভুটানকে। আগামী গরমের ছুটিতে আপনারাও এই ভুটানকে ভ্রমণের তালিকায় রাখতেই পারেন। হিমাচল, সিকিম, লে-লাদাখ এমন কি সিকিম পুরো ঘুরতে যা খরচা হয় তার থেকেও কম খরচে ভুটান ঘোরা যায়। ইন্টারনেট ঘেটে অনেক ইনফরমেশন নিয়ে নিজেই প্ল্যান করি ভুটান যাত্রার, ৬ রাত ৭ দিনের একটা ভুটান যাত্রার প্ল্যান।
সুউচ্চ পাহাড় আর গৌতম বুদ্ধের পাদদেশে অবস্থিত একটা শান্ত সুন্দর দেশ ভুটান। এখানের পাহাড়,প্রকৃতি,মাখনের মতো রাস্তা, মানুষের ব্যবহার, এখানের নিয়ম শৃখলা আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। মানুষের ব্যবহার, বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ, রাস্তায় তাদের আচরণ এত Eye Shooting কি বলবো আপনাকে!! ফুঁন্টসলিং পা রেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেছি।
চার মাস আগে থেকে kanchankanya Express এর টিকিট কাটা, অপেক্ষা শুধু নির্দিষ্ট দিনের। হোলি আমি কয়েক বছর ধরে পাহাড়কে নিয়েই কাটাচ্ছি, এবারেও তার ব্যাতিক্রম নয়। হোলির একদিন আগেই যাত্রা শুরু। তবে শুরুতেই বিপত্তি, তবে এটা কোনো বড় ব্যাপার নয়। Indian Railways আমাদের এরকম অভিজ্ঞতা বার বার দিয়ে থাকে। যথারীতি ট্রেন ২.৫ ঘন্টা লেইট, ১১ টায় হাসিমারা। সেই জায়গায় পৌঁছালো ১টা ৩০মিনিটে।
যদিও আমাদের ড্রাইভার আগেই স্টেশনে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, আপনারা ভুটান গেলে একদম হাসিমারা থেকে হাসিমারা প্ল্যান করবেন। অনেক ট্যুর অপারেটর ফুঁটসলিং থেকে ফুঁটসলিং প্ল্যান করে দেয়। সেটাতে আপনার সাথে ফ্যামিলি গেলে একটু অসুবিধা আর ঝামেলাও। আমি যাকে ঠিক করেছিলাম তিনি আমাদের হাসিমারা থেকে হাসিমারা প্ল্যান করে দিয়েছিলেন। তাই একদম ট্রেন থেকে নেমেই গাড়িতে উঠে পড়লাম। কোনো বার্গগেইন নেই, কোনো সময় নষ্ট করার ব্যাপার নেই। একদম সোজা গিয়ে পৌঁছালাম হাসিমারা। তখন ভুটানের সময় দুপুর ২ টা বেজে ৩০ মিনিট। হাসিমারা থেকে ফুঁটসলিং যেতে সময় লাগে ৩০মিনিট কিন্তু ভুটানের সময় যে ৩০মিনিট এগিয়ে। সুতরাং প্রথম কাজ দুপুরের খাবার খেয়ে ইমিগ্রেশন। ৪টায় ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে কিছু জরুরী কথা বলা দরকার, ভুটানে ইমিগ্রেশন করতে কোনো অসুবিধা হয় না। দুপুরের দিকে একদম কম লোক থাকে। সঙ্গে সঙ্গে গেলেই হয়ে যায়। আপনার পাসপোর্ট বা ভোটার কার্ড থাকলেই হবে সাথে একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি। আপনাকে থিম্পু বা পারোর কোনো হোটেল বুকিং স্লিপ দেখতে হবে। আমাদের সব থেকে ভালো ব্যাপার ছিল, আমাদের ড্রাইভার দাদা ইমিগ্রেশন ফর্ম সাথে হোটেল বুকিং ডিটেলস সবই রেডি করে রেখেছিল। গ্রুপের সবাইকে সাথে শুধু যেতে হলো কারণ চোখের রেটিনা এবং আঙ্গুলের ছাপ নিলো। ৫ মিনিটে ইমিগ্রেশন শেষ। যাবার আগে এত কিছু ভাবছিলাম, আমি তো ৫টা পাসপোর্টের জেরক্স কপি, ৫টা ছবি নিয়ে গেছিলাম। কিছুই লাগলো না। শুধু একটাতেই কাজ হয়ে গেল। দুর্নিতি না থাকলে যা হয় আর কি। প্রথম দিনের রাতটা ফুন্টসেলিং এ কাটিয়ে পরের দিন থিম্পু যাত্রা।
ফুন্টসেলিং তো শুধু ট্রাইলার ছিল, পুরো মুভিতো এখন বাকি। সত্যি ওখানের মানুষের যেমন কথা সেরকম কাজ। ড্রাইভার দাদা বলেছিল সাড়ে ৯ টায় আসবে তো একদিক ৯ঃ৩০ টায় তার গাড়ি নিয়ে হাজির। আমরা তখনও নাস্তা করি নি। কি করা যাবে, নিজেরই খুব খারাপ লাগছিলো। আমরা আমাদের দেশের কি উদাহরণ রাখছি ওনার সামনে। প্রাতরাশ সেরে শুরু হলো রাজধানী শহরের দিকে যাত্রা। কাঁচের মতো সুন্দর ব্ল্যাক টপের উপর দিয়ে আমাদের Ertiga চললো থিম্পুর পথে। পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে আমাদের সোনাম ভাইয়া চললো থিম্পু। এত শার্প টার্ণ তাও কোনো হর্নের ব্যাপারই নেই। কি করে যে ওনারা নিজেদের এভাবে তৈরি করেছেন কে জানে। আমাদের তো মনে হচ্ছে কখন কি হয়ে যায়। কিন্তু সত্যি বলছি সোনাম ভাইয়ার এত ভালো হাত, এত Attentive যে কোনোদিন মনেই হয়নি যে ও একজন ড্রাইভার।
ওখানের রাস্তা এত সুন্দর যে সব জায়গায় যেন দাঁড়াতে মন যায়। যেখানে বলেছি সেখানে দাঁড়িয়েছে, যে জায়গায় বলেছি ছবি তুলবো সেই জায়গায় নিয়ে গেছে। উঠে, বসে, দাঁড়িয়ে ৬ ঘন্টার একটু বেশি সময়ে আমরা থিম্পু পৌঁছালাম। সবার প্রথম কাজ, পুনখা, চেলে লা যাবার পাস তৈরি করা। সোনাম ভাইয়া বললো আপনার গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফটোশুট করুন, আমি ৫ মিনিটে আসছি। যেমন কথা সেরকম কাজ। এখানেও কোনো মাথাব্যাথা নেই। এত স্মুথ জার্নি আশাও করি নি। এবারে দুপুরের খাবার শেষ করে আমাদের প্রথম কাজ একবার বুদ্ধের শরণাপন্ন হওয়া। প্রথম গেলাম National Memorial Chorten তারপর Buddha Point.
থিম্পু শহরের সব থেকে আকর্ষণীয় এই বুদ্ধা পয়েন্ট। শহরের অনেক জায়গা থেকেই ওনাকে দেখা যায়। ওখানে পৌঁছে যেন মনে হচ্ছে সব কিছু জমে যাবার জোগাড়। এত হাওয়ার জোর, এত ঠান্ডা যে বেশিক্ষন থাকার উপায় নেই। একদিকে থিম্পু ভ্যালি, অন্য দিকে বরফাবৃত্ত পাহাড় চূড়া যেন বুদ্ধাদেবকে আরো মোহময়ী করে তোলে। ছবি তুলে যেন আশ মেতে না, আর সেই সময়েই শুরু বৃষ্টি। ঠিক যেন মন ভরলো না। মনে মনে ভাবলাম আবার একবার এখানে আসা যেতেই পারে আগামীকাল। এবারে বুদ্ধ আর বৃষ্টি দুজনকেই বিদায় দিয়ে থিম্পু শহরে রাত্রিবাসের দিকে রওনা দিলাম। ভেবেছিলাম রাত্রে একবার থিম্পু ম্যাল রোড দিয়ে ঘুরে আসবো, সে আর হলো না বৃষ্টির জন্য। তাই বেগতিক হোটেলের ব্যালকনি থেকে রাতের থিম্পু শহরকে enjoy করা ছাড়া আর উপায় নেই।
থিম্পু শহরে আমাদের দ্বিতীয় দিনটা শুরু হলো ঘন কুয়াশায় ভরা মেঘলা মুখগোমরা করে। তাপমাত্রা তখন গুগল কাকিমার মতে ৬ ডিগ্রী। ২টো মোটা কম্বল যেন কম পড়ছে। তবে তার মধ্যেই গোসল সেরে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হলাম থিম্পু শহর ঘুরে দেখার জন্য। ততক্ষনে সূয্যি মামা আমাদের উপরে সহায় হয়েছেন। হিমেল হাওয়া আর মিষ্টি রোদ যেন মন খুশ করে দেয়। সেদিনে আমাদের প্রথম গন্তব্য Simply Bhutan. ৩০০ টাকা টিকিট আমরা বিদেশী বলে, যদিও না ভিতরে গেলে হয়তো অনেক কিছু মিস করতাম। ভুটানের কালচার, তাদের রাজার গল্প, তাদের রাজাদের ব্যবহিত জিনিস অনেক কিছুই অবশ্য দ্রষ্টব্য এখানে।
এরপর গাড়ি চললো শহরের ঝাঁ চকচকে রাস্তা দিয়ে Takin Zoo, তারপর Thimpu Valley View point, Thimpu Dzong, Thimpu Textile Museum, Thimpu Vegetable Market, Thimpu Football Ground as well as Archary Ground. সব শেষে আবার ইচ্ছাপূরণ করতে Bhuddha Point. এবারে সত্যি মন ভরলো, অসংখ্য ছবি তুলেছি একদম মন ভরে। এবারে আবার ফিরে এলাম হোটেলে। আজ আর কোনো বৃষ্টি নেই তাই সন্ধ্যেটা কাটালাম থিম্পু City Centre বা Mall বলা যায়। সব থেকে নতুন জিনিস চাক্ষুস করলাম Manual Traffic System. মন ভোরে কিছুক্ষণ শুধু ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। They r doing just a fabulous job.
পুনাখা নামটা শুনলে সব থেকে যেটা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে সেটা হলো দোচুলা পাস আর পুনখা dzong। থিম্পুতে ২ রাত্রি কাটিয়ে এবারে আমাদের ঠিকানা পুনাখা। আর পুনখা যাবার পথে সবার মতো আমাদেরও প্রথম স্টপ ‘The Iconic Dochula Pass’. ১০৮টি স্তূপার সন্মিলিত দোচুলা পাস ১০,০০০ ফুট উঁচুতে আর এখানে থেকে ভাগ্যের সহায় হলে দেখতে পাওয়া যায় হিমালয়ের অন্যতম শৃঙ্গগুলি। তাদের মধ্যে একটি (জমুনারী পিক) আমরা পারোতে দেখতে পেয়েছিলাম। থিম্পু থেকে দোচুলা পাস হয়ে আমরা এসে পৌঁছালাম পুনাখা শহর। এখানে শহরে আন বান শান বলতে পুনখা Dzong। শহর জুড়ে বয়ে চলেছে পারো চু এবং মো চু, আর দুই নদীর সংগমস্থলে পুনখা Dzong। যা দুর থেকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ভুটানের ২১টি রাজ্যেই একটা করে Dzong আছে, যেগুলো এক সময় যুদ্ধের কাজে ব্যবহিত হতো আজ সেগুলো সরকারি অফিস। অফিস শেষ হলে বিকেল ৫ টার পর এখানে পর্যটকদের ৩০০ টাকা দিয়ে প্রবেশের অনুমতি মেলে। শনি এবং রবিবার সারাদিন অনুমতি পাওয়া যায়। সঙ্গে গাইড ফ্রি। গাইডের সাথে সাথে Dzong এর ইতিহাস শুনতে শুনতে কখন যে সন্ধ্যে গড়িয়ে যায় বোঝার উপায় নেই। এতটাই Picturesque জায়গা যে ক্যামেরাকে অবসর দেবার কোনো সুযোগই নেই। Dzong থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলাম সব থেকে আকর্ষণীয় জায়গাটায়। Punakha Suspension Bridge. ৮০০ মিটার বা ১ কিলোমিটার হবে ব্রিজটার দৈর্ঘ, হাওয়ার সাথে সেও দোদুল্যমান। নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পারো চু আর বাতাসে Prayer Flag এর রং। চতুর্দিকে পাহাড় সম্মিলিত এক অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ এই Suspension Bridge… এদিকে সূয্যি মামা তখন পটে চলেছেন, চারিদিকে পাখিদের ঘরে ফেরার ডাক, আমাদেরও এবারে হোটেলে ফেরার পালা। তাও যাবার যাবার পথে নদীর ধারে কিছু সময় কাটিয়ে তারপর ফিরে গেলাম হোটেলের দিকে।
পুনখা থেকে এবারে আমাদের পরবর্তি গন্তব্য পারো। আমার মনে হয় ভুটানের সব থেকে Picture Perfect রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি। পুনখা থেকে বেরিয়ে আবার সেই দোচুলা পাস হয়ে যেতে হয় পারো। ৩ ঘন্টার এই যাত্রায় আবার এসে দাড়ালাম দোচুলা পাসের কাছে। এবারে সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা রূপ তার। চারিদিকে মেঘ যেন স্তূপা গুলোকে আলিঙ্গন করে আছে। একে অপরকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বটে, তবে যেন হিমেল হাওয়ার তান্ডব নৃত্য চলছে। বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে আমরা চললাম পারোর পথে। মাঝে কয়েকবার টি ব্রেক নিয়ে এসে পৌঁছালাম পারো এয়ারপোর্টের কাছে যেটা দুনিয়ার ১০ টি High Risk এয়ারপোর্টের মধ্যে একটি। দূর থেকে ক্যামেরা বন্দি করে রাখলাম এক চিরস্মরণীয় ল্যান্ডস্কেপ। এরপর দুপুরের খাবার শেষ করে আবার গাড়ি ছুটলো বাকি দ্রষ্টব্য গুলোর দিকে। তাদের মধ্যে আছে – Kichu Lakhang, National Museum of Bhutan, Ta Dzong, Rinpung Dzong। সব শেষে পারো মার্কেট ঘুরে ফিরলাম হোটেলে। আর হোটেলে ফিরে জানালা থেকে যেন চোখ ফেরানো যায় না। রাতের পারো শহর যেন অপরুপা।
ভুটানের শেষ দিন, মন খারাপ করাটা তো খুবই স্বাভাবিক। আর সব থেকে মন খারাপ লাগছে এই দেশে এসে যে সব মানুষগুলোর সাথে মিশেছি, ছোট ছোট মোলাকাত গুলো যেন বার বার মনে পরে যাচ্ছে। সব থেকে বেশি মন খারাপ লাগছে সোনাম ভাইয়ার জন্য। ওর মতো ড্রাইভার মতো আর হয়তো কোথাও পাবো না। এত মন খারাপের উপর আবার শুরু হয়েছে মেঘের কান্না। আজ তো অনেক বড় প্ল্যান, Tiger Monastry Trekking। ৪ মাস ধরে অনেক কসরত করেছি এই ট্রেকিংটার জন্য, আর এটাই যেতে পারবো না!!!
তাও দেখি চেষ্টা করে, চেষ্টা করলাম ও, কিন্তু প্রকৃতিকে হার মানায় এ সাধ্য কার আছে! এত বৃষ্টির জোর যে গাড়ি থেকে বেরোতেই পারলাম না। মনাসট্রির নিচে এসে গাড়িতে বসেই সময় কেটে গেল ৩ ঘন্টা। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষন দেখলাম না।। ধৈর্যের পারদ প্রতি মিনিটে উর্ধমুখী কিন্তু বৃষ্টির পারদ নিম্নমুখী হবার কোনো লক্ষন নেই। আবেগের রং যেন বেরঙ্গীন হতে হতে সাদা শুরু করলো, বুকে পাথর চাপা দিয়েই নিরুপায় হয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। যেন মনে হচ্ছে দীর্ঘশ্বাসটা কেমন দাপাদাপি করছে, মন যেন কিছুতেই ফিরতে রাজি নয়। মনে হচ্ছে ভুটান আসাই যেন ভুল ছিল। হঠাৎ সেই সময় সোনাম ভাইয়্যাকে বললাম, তাহলে চেলে লা পাস চলো। সবাই তো সেই শুনে কথায় তাল মেলালো। আর আমাদের দেখে কে! যেমন কথা তেমন কাজ। আর কি বলবো, বাকিটা স্বপ্নের পাতায় সারাজীবন রঙ্গিন কলমে লেখা হয়ে গেল।😊
বৃষ্টি তখনও থামেনি, সোনাম ভাইয়া বলছে ওটা তো ১৩,০০০ ফুট উঁচুতে। ওখানে তো আরও বৃষ্টি হবে। আমরা তাও এত তাড়াতাড়ি হার মানতে রাজি নই। আঘাত তো দিনের শুরু থেকেই পেয়ে চলেছি, এবারে সহ্য হয়ে গেছে। সবারই তো মন খারাপ আর খারাপ হবার মতো কি বা আছে! যাই হয়ে যাক তুমি চলো ভাইয়া। বৃষ্টি হলেও যাবো, বৃষ্টি পড়লে গাড়িতে বসে থাকবো ওখানে গিয়েও।
এখানে হিমালয় যে তার দ্বিতীয় সত্তা নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষারত তা কি আর জানতাম!!যত উপরে উঠেছি বৃষ্টি তত বেড়েছে, উচ্চতার জন্য বৃষ্টি তুষারে পরিণত হয়েছে, বৃষ্টিপাত তুষারপাতে পরিণত হয়েছে। তখন আর আমাদের আনন্দ ধরে না। সে যেন এক বিষন্ন পথিক তৃষ্ণা নিবারণের জল পেয়ে যেমন খুশি, আমাদেরও তখন সেরকম অবস্থা। সবাইকে এত খুশি দেখে যেন মনে হলো ভুটান আসার সিদ্ধান্তটা তাহলে ঠিকই ছিল।☺সবাইকে এত খুশি দেখে মনে হচ্ছিল এ যেন এক রোমান্টিক দুপুরের প্রেমকাহিনী। এত বরফ পেয়ে, এরকম একটা পরিবেশ পেয়ে মনে হচ্ছিল জীবনের সব কষ্টগুলো যেন আজ শরতের কাশ ফুল। এক অবিস্মরণীয় দিনের সাক্ষী হয়ে আমরা ফিরে চলেছি পারো, আমাদের শেষ রাত্রি উদযাপন করতে।
রক্ত মাংসের শরীরে মায়া মমতা থাকাটা তো খুবই স্বাভাবিক। কারোর মায়া কাটাতে দেরি হয় আবার কেউ খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবে ফিরে আসতে পারে। আমার একটু দেরিই হয়। টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি মুঠোবন্দি করে আবার ফিরে চলেছি নিজের মাতৃভূমি। গাড়ির জানলা থেকে ভুটানের পাহাড় গুলো, মানুষ গুলো, রাস্তা গুলো যেন আমাদের শুভ যাত্রা কামনা করছে। আর যত দূরে সরে চলেছি তত মনের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। শুধু ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে এটা আমার নিজের জায়গা নয়, ফিরে তোকে যেতেই হবে। ফিরে গেলে তবেই তো আবার কোথাও ভুটানকে খুঁজে পাবি, আবার কোথাও সোনাম ভাইয়ার মতো কেউ তোকে স্বাগত করবে- ‘দাদা আবার আমাদের কাছে এসো। ফিরে গিয়ে যেন যোগাযোগ রেখ। আপনারা আমাদের কাছে ফ্যামিলি, আমাদের কে ভুলে যাবেন না।’
হাসিমারা স্টেশন থেকে যেন সোনাম ভাইয়াকে বিদায় দিতে মন চাইছে না, কারণ চোখের সামনে এখন ভুটান বলতে একমাত্র সে। তোমাকে এখন ও খুব মিস করি। ভুটানকে এরকম চোখে দেখতে পারতাম না যদি তুমি আমাদের সাথে না থাকতে। অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে।
Sonam Dendrup– +97517331031. ভুটানি নম্বর তাই কল চার্জ বেশি, what’s app করতে পারেন।
Leave a Comment