ভুটান ভ্রমণ – বজ্র ড্রাগনের দেশে (শেষ পর্ব)

ভুটান ভ্রমণ – বজ্র ড্রাগনের দেশে (প্রথম পর্ব)

জায়গাটা কিছুটা টাইম স্কয়ার টাইপের

থিম্পু পৌছে মোটামুটি সাধারণ একটা হোটেলেই উঠলাম। এখানে একটা জিনিস ভাল ছিল, রুমে গন্ধ ছিল না আর ভাড়া ৩০০ রুপীর মধ্যেই ছিল। আরেকটা জিনিস দেখে খুব ভাল লেগেছে, থিম্পুর হোটেলগুলোর সিড়ি ঘরে প্রতি তলায় একটি বাক্সে ফ্রি কনডম রাখা আছে। সরকারীভাবে দেয়া সম্ভবত। খুব অবাক হলাম, এমন আত্মকেন্দ্রিক একটি দেশ অথচ এইডস প্রতিরোধে কত সচেতন! হ্যাটস অফ টু ভুটান সরকার, আরেকবার! 😉 😀

সেদিন আর কোথাও যাই নি। টাইম স্কয়ার টাইপের একটা জায়গা আছে, একটা স্তম্ভের মাথায় চারিদিকে ঘড়ি, তার চারপাশে খোলা জায়গা এবং বসার বেঞ্চ। সেদিন ছুটির দিন থাকায় অনেক পরিবারকে দেখা গেল বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে এসেছে। আমরাও একটি বেঞ্চে গা এলিয়ে অলস বসে রইলাম আর বাচ্চাদের খেলাধুলা দেখতে লাগলাম। তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রির নীচেই হবে, তাই খুবই আরামদায়ক আবহাওয়া।

টাকিন

পরদিন থিম্পু ভ্রমণে বের হলাম। প্রথমেই ড্রাইভার কাম গাইড আমাদের নিয়ে গেল চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানায় একটি মাত্র প্রাণি, নাম টাকিন, এটা ভুটানের জাতীয় প্রাণিও বটে! প্রাণিটি আসলে গরু এবং ছাগলের একটি শংকর, মুখটা ছাগলের মত আর শরীর গরুর মত। কিন্তু এই প্রাণির ব্যাপারেও দেখলাম পৌরাণিক কাহিনী আছে, যেটা বিশাল বিলবোর্ডে লেখা আছে! বলা বাহুল্য এটি বিপন্ন প্রজাতির একটি প্রাণি। যাইহোক, টাকিন দেখে ঘুরতে ঘুরতে এমন এক জায়গায় গেলাম, যেখান থেকে পুরো থিম্পু উপত্যকা তথা শহর দেখা যায়, কিছু ছবি তুললাম।

পাখির চোখে থিম্পু

দূর থেকে রাজার প্রাসাদ দেখাল ড্রাইভার, কিন্তু এতই গাছপালায় ঘেরা যে কিছুই দেখা গেল না! পথে দূর থেকেই থিম্পু জং দেখা গেল, খুব সুন্দর এবং বড় একটি জং। পাহাড় বেয়ে নেমে আমরা জং এর সামনেও গিয়েছিলাম, কিন্তু যেহেতু ওখানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত তাই ভেতরে যাওয়া গেল না। এটা ওদের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কেন্দ্র।

থিম্পু জং

ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম একটা যাদুঘরে। বেশ সমৃদ্ধই মনে হল। জং এর প্রোটোটাইপ তৈরী করা আছে। অনেক বই পুস্তক, কিছু বই পেলাম যেখানে ভুটানের সুন্দর সুন্দর জায়গার ছবিও দেয়া আছে।

দিনের বাকীটা সময় থিম্পুর দোকান পাট আর এদিক সেদিক ঘুরেই কাটালাম। আড়ং জাতীয় দোকানে ঢুকে মাথাই নষ্ট! কল্কি টাইপের কি এক জিনিসের দাম দেখি ২৫০০০ রুপী! কাপড় চোপড়ের যা দাম, হাত দেয়াই মুশকিল! এমনকি আপেলের কেজিও ৬০ রুপি/কেজি যেটা পারোর হাট থেকে মাত্র ২০ রুপী/কেজিতে কিনেছিলাম! 🙁

সকালে ঘুরতে বেরোবার আগেই ইমিগ্রেশন অফিসে পুনাখা যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন এবং পাসপোর্ট জমা দিয়ে গিয়েছিলাম। সম্ভবত পাসপোর্টের ফটোকপি এবং ছবি লাগে। বিকেলে গিয়ে পাসপোর্ট আর অনুমতির কাগজ নিয়ে এলাম। শেয়ারড জীপে করে পুনাখার দিকে রওনা হলাম। পুনাখা যাওয়ার পথে দোচুলা পাস পড়ে যেখান থেকে সম্ভবত একটা ৩৬০ ডিগ্রী ভিউ পাওয়া যায়। কিন্তু চারিদিক মেঘে ঢাকা থাকায় কিছুই দেখা গেল না। 🙁

দোচুলা পাস

পুনাখা বাস স্ট্যান্ডে নেমে কিছুদূর হাটলেই পুনাখা জং! পুনাখা নদীর কোল ঘেষে তৈরী করা হয়েছে। এই জং এ প্রবেশে কোন বাধা নেই। ঘুরে বেড়ালাম। এখানে জেলা প্রশাসন, কোর্ট কাচারী সাথে আবার মন্দির। কিন্তু মন্দির আমার কাছে বেশ অপরিচ্ছন্ন মনে হল। যাইহোক, জায়গাটা খুব সুন্দর। পুনাখাতে আর তেমন কিছু দেখার নেই, সন্ধ্যার আগেই থিম্পু ফিরে এলাম।

পুনাখা জং

ভুটানে আরো বেশ কিছু জায়গায় ঘোরার অনুমতি পাওয়া যায় যদ্দূর জানি। কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম থাকাতে আর কোথাও যাওয়া হয় নি। পাচ দিন ছিলাম, তবে যতটুকুই দেখেছি, ভাল লেগেছে, শান্তির দেশ মনে হয়েছে… 🙂

Leave a Comment
Share