টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘোরাঘুরি – কিভাবে যাবেন? খরচ কেমন?

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলি আর মামুন এন্টারপ্রাইজের বাস সকাল থেকেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রাত ১১:৪৫ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া উত্তরা থেকে রওনা হলে এনা পরিবহনের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ আসতে পারেন। শ্যামলির একটি নাইট কোচ এসি সেবা দিয়ে থাকে, এছাড়া মামুন এন্টারপ্রাইজের সকল সার্ভিস নন-এসি। বাস সিলেকশনের ক্ষেত্রে এনা সব থেকে আরামদায়ক হবে, এরপর শ্যামলি আর মামুন এন্টারপ্রাইজ প্রায় কাছাকাছি মানের।

রাতের ( ১১:৩০ ) বাসে যাত্রা শুরু করলে ভোর ৫/৬ টার মধ্যেই আপনি সুনামগঞ্জ পৌছে যাবেন। অতিরিক্ত ক্লান্তি থাকলে ৪/৫ ঘন্টার জন্য আসেপাশের কোনো হোটেলে আলোচনার মাধ্যমে বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন। আমরা হোটেল রোজ গার্ডেনে ৪ ঘন্টা বিশ্রাম নিয়েছিলাম, ৪০০ টাকার বিনিময়ে। মনে রাখবেন সুনামগঞ্জে ভাল হোটেলের সংখ্যা খুবই কম।

অথবা আপনি চাইলে বাস থেকে নেমে পুরান বাসষ্ট্যান্ড থেকে সকালের নাস্তা সেরে সরাসরি টাঙ্গুয়ার হাওড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। ট্যুর প্লান আপনার অবস্থান আর সাময়িক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার জন্য সুরমা ব্রিজ পাড়ি দিয়ে লেগুনা/বাইকে করে তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান। ট্যুর মেম্বার বেশী হলে লেগুনা দিয়ে গেলে খরচ কম পড়বে।

সুরমা নদীর ওপার থেকে লেগুনা দিয়ে তাহিরপুর যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে। তাহিরপুর পৌছানোর পর তাহিরপুর বাজারঘাট থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা ট্রলার পরেরদিন সকাল পর্যন্ত ভাড়া করুন। বড় নৌকাগুলো ভাড়া করলে রাতে ঘুমানো এবং টয়লেটের বিষয়ে একটু বেশী সুবিধা পাবেন। চাইলে মাঝিদের সাথে আলাপ করে দুপুর / রাতের খাবার নৌকাতে রান্না করার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে তাহিরপুর বাজার থেকেই বাজার করে নিতে হবে। তবে মাঝিদের রান্না করা খাবারের মান সুবিধাজনক না হওয়ার গুঞ্জন থাকায় আমরা ওই ঝামেলায় যাইনি। কেননা আপনি দুপুরের খাবার তাহিরপুর বাজার থেকে খেয়ে উঠলে অথবা সকালে একটু ভাড়ি নাস্তা করে উঠলে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওড়ে ঘুরার পর রাতের খাবার অনায়েসেই টেকেরঘাট বাজারে খেতে পারবেন। কেননা রাতে আপনয়াকে টেকেরঘাতেই থাকতে হবে ।

সুতরাং খাবার নিয়ে অতিরিক্ত দু:শ্চিন্তা করার কোন কারন নেই। টয়লেটের বিষয়ে নৌকাতে যে সুবিধা রয়েছে তাতে করে কিছুটা কষ্ট হলেও কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। সুতরাং টয়লেট আর খাবারের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার কোন দরকার নেই।

দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মন ভরে টাঙ্গুয়ার হাওড় ঘুরে দেখুন। যদি পারেন প্রথম দিন সন্ধ্যায় অথবা পরের দিন সকালে টেকেরঘাটে অবস্থিত কেয়ারি – লাইমস্টোন লেক যাকে অনেকে নীলাদ্রি বলে চিনে ও লাখমাছড়া ঝর্ণা ঘুরে আসুন।

সারারাত জোছনা বিলাস করার পর পরের দিন সকালে নৌকা ছেড়ে দিন আর সকালের নাস্তা টেকেরঘাটেই সেরে নিন। তারপর বারেকের টিলা আর যাদুকাটা নদীর উদ্দেশ্যে রওনা দিন। বারেক টিলা আর যাদুকাটা নদী একই জায়গায় অবস্থিত। সকাল ৮ টায় রওনা দিলে ৯ টার মধ্যেই বারেক টিলায় পৌছে যাবেন।

বারেক টিলা আর যাদুকাটা নদী আপনি ৩/৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘুরে শেষ করতে পারবেন। সুতারাং ঢাকা ফেরার তাড়া থাকলে দুপুর ২ঃ৩০ এর বাসের টিকেট কেটে রাখতে পারেন। অথবা সারা বিকেল আরামে ঘুরে রাত ১০ টার বাসে ঢাকা ফিরতে পারেন। বিষয়টা সম্পূর্ন আপনার উপর নির্ভর করে।

বারেক টিলা ঘুরার পর আপনাকে নৌকাযোগে যাদুকাটা নদী পাড়ি দিতে হবে। যাদুকাটা নদী পাড়ি দেয়ার পর লাউরের ঘড় বাজার থেকে বাইক যোগে আপনাকে সুনামগঞ্জ সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। সুনামগঞ্জ সদরে যেতে যেতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লেগে যাবে, ২৬ কি: মি: প্রায়।

হাতে সময় থাকলে হাসন রাজা মিউজিয়ামটা ঘুরে আসুন, বেশি সময় লাগবেনা। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০-২০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে সাহেব বাড়ির ঘাটে চলে যান। ওখানেই হাসন রাজার জাদুঘর পেয়ে যাবেন। হাছন রাজা মিউজিয়াম দেখা শেষ হলে সেখান থেকে পায়ে হেটেই পুরান বাসস্ট্যান্ড চলে আসুন আর সেখান থেকেই প্রিয় শহর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা শুরু করে দিন।

কোথায় ঘুরবেনঃ

১. টাজ্ঞুয়ার হাওরে মন উজার করে ঘুরুন। অসাধারন ভালো লাগা কাজ করবে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো হাওড় এলাকা দেখার চেষ্টা করুন। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ারের নিচে স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতে পারেন।

*** রাতের বেলায় নৌকায় শুয়ে শুয়ে হাওড়ি জোছনা উপভোগ করুন, বিশ্বাস করুন সমস্ত দু:খগুলো নিশ্চিত শুভ্রতায় পরিনত হবে। রাতে থাকাটা যথেষ্ঠ নিরাপদ, সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই।

২. কেয়ারি – লাইমস্টোন লেকে ও লাখমা ছড়া ঝর্নায় গোসল করতে পারেন।

৩. বারেকের টিলা থেকে যাদুকাটা নদী আর ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড় গুলোর রূপ উপভোগ করুন। এখান থেকে যাদুকাটা নদীর অপর প্রান্তের লাল বালির বিস্তির্ন এলাকার সাথে নদী আর পাহাড়ের মিলে থাকার রসায়ন দেখলে কি যে ভালো লাগবে চিন্তাও করতে পারবেন না। অদ্ভুত সুন্দর!! অবশ্যই যাদুকাটা নদীতে গোসল করতে ভুলবেন না। এতো সুন্দর আর স্বচ্ছ পানি, আল্লহু আকবর !!!

৪. যাদুকাটা নদী পাড়ি দেবার সময় পুনরায় লাল বালির বিস্তীর্ন এলাকার সাথে নদী আর পাহাড়ের মিলে থাকার রসায়ন দেখতে পাবেন। বারেকের টিলা আর যাদুকাটা নদী থেকে দুই রকমের রূপ দর্শন করতে পারবেন। দুটি দৃশ্যের প্রকৃতি সম্পূর্ন আলাদা।

৫. লোক সংগীতের সাধক হাসন রাজা মিউজিয়াম ঘুরে আসতে পারেন, ভালো লাগবে।

কখন যাবেনঃ

অবশ্যই বর্ষাকালে এবং জোছনা রাতে। এছাড়া অতিথী পাখি দেখতে চাইলে শীতকাল উপযুক্ত সময়।

কত খরচ পড়বেঃ

ঢাকা – সুনামগঞ্জ ( নন – এসি ৫৫০ টাকা , এসি – ৮০০ টাকা )
পুরান বাসষ্ট্যান্ড থেকে সুরমা ব্রীজ পাড়ি দিন ( ১০ টাকা/ প্রতিজন )
সেখান থেকে ১০০ টাকা প্রতিজনে লেগুনা ভাড়া করে তাহিরপুর।
তাহিরপুর থেকে ২৫০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে মাঝারি অথবা বড় আকারের ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা ট্রলার ভাড়া করে নিন পরের দিন সকাল পর্যন্ত।
টেকেরঘট থেকে বারেকের টিলায় বাইকে ৭৫ টাকা প্রতিজন।
বারেকের টিলা থেকে ৫ টাকার বিনিময়ে যাদুকাটা নদী পাড়ি দিয়ে লাউড়ের ঘরে আস…
সেখান থেকে বাইকে ১২৫ টাকা প্রতিজনে সুরমা ব্রীজের প্রান্তে চলে আসুন।
এরপর হাসন রাজা মিউজিয়াম এ যেতে ৫০/৭০ টাকায় লেগুনা ভাড়া করে নিন।
১০ টাকার বিনিময়ে হাসন রাজা যাদুঘর ঘুরে দেখার পর – পায়ে হেটে বাসষ্ট্যান্ড চলে আসুন।
খাবার খরচ ৪৫০ টাকা প্রতিজন/প্রতিদিন।

যা করবেন নাঃ

হাওড়ে, পাহাড়ে অথবা নদীতে কোনক্রমেই চিপস, সিগারেট, বিস্কিটের প্যকেট অথবা অন্য যে কোন ধরনের ময়লা ফেলবেন না। ময়লা রাখার জন্য নিজেদরর কাছে একটি পলিব্যাগ রাখুন, পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট কোন ডাষ্টবিনে ময়লা ফেলুন। অনেকেই সেখানে নেশা করে এবং সে বোতলগুলো পানিতে নিক্ষেপ করে বিষয়টা প্রচন্ড দু:খজনক। দয়া করে এই ধরনের জঘন্য অপকর্ম হতে নিজে বিরত থাকবেন এবং অন্যকেও সচেতন করার চেষ্টা করবেন। সীমান্তের পাশ দিয়ে সাবধানে চলাচল করবেন, ভারত সীমান্ত থেকে একটু দূরে থেকে চলাচল করার চেষ্টা করুন।

তাহিরপুর , টেকেরঘাট এবং বারেকের টিলার মানুষ গুলো যথেষ্ঠ সহজ – সরল। এদের সাথে দয়া করে ছল-চাতুরি করবেন না।

প্রয়োজনীয় ফোন নাম্বার সমুহঃ

শ্যামলি পরিবহন – ০১৭১৮২৮৩০২১
মামুন এন্টারপ্রাইজ – ০১৭৮৩৮৭৭৫৬১
ট্রলার এবং বারেকের টিলা যেতে বাইকের জন্য মুহাদ্দিস( বেশ ভাল মাঝি ) – ০১৭১৫৯৬০১০২
বারেকের টিলায় থাকা – খাওয়া অথবা যেকোন ধরনের সহযোগিতার জন্য – ০১৯১৮৭৭০০৪৮(আশিক)
লাউড়ের ঘড় থেকে সুনামগঞ্জ সদর আসার বাইকের জন্য – ০১৭২১৯৫৪২২ ( নজরুল )
হাসন রাজা মিউজিয়াম – ০১৭৪৯৭১১৭৭৫

Leave a Comment
Share