সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর

সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল শুরু এবং বন্ধ হয় কখন? সেন্টমার্টিন জাহাজ কতদিন চলে?

প্রতিবছর নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হয় এবং মার্চের শেষে কিংবা এপ্রিলের শুরুতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়। সেন্টমার্টিন এর জাহাজ চলাচল সাধারণত আবহাওয়া এর উপর নির্ভর করে।

জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে কি সেন্টমার্টিন যাওয়া যায় না? সেন্টমার্টিন কি শুধু শীতকালে যাওয়া যায়? জাহাজ ছাড়া সেন্টমার্টিনে যাওয়ার অন্য কোন উপায় আছে কি?

সেন্টমার্টিন জাহাজ ছাড়া স্পিড বোট, ট্রলারে বা মালবাহী বোটে সারা বছর যাওয়া যায়। তবে বর্ষাতে সিগন্যাল থাকলে ছাড়ে না।

ট্রলার, স্পিড বোট বা মালবাহী বোটে কিভাবে যাবো এবং কোথা থেকে ছাড়ে?

টেকনাফ নামারবাজার ব্রিজ বা জেটি ঘাট থেকে ট্রলার, স্পিডবোট ও মালবাহী ছাড়ে। সিজনের সময় জাহাজ ঘাটের পাশ থেকে ও ট্রলার ছাড়ে।

ট্রলারে কতক্ষণ সময় লাগে এবং ভাড়া কতো? ট্রলারে যাওয়া কি খুব বিপদজনক?

সাধারণত ট্রলার ও মালবাহী বোট ১৫০-৩৫০ টাকা নেয়। এটা সিজন ও যাত্রীভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। সময় লাগে ২-৩ ঘন্টা। ট্রলারে যেতে কোন ঝুকি আছে বলে আমার মনে হয় না বরং এডভেঞ্চার মনে হয়। তবে যাদের হার্ট দুর্বল বা পানি রোগ আছে এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে ট্রলারে না যাওয়াই ভালো।

বর্ষাতে বা অফ সিজনে কি সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়? বর্ষাতে সেন্টমার্টিনে যাওয়া কতটুকু নিরাপদ? অফ সিজনে সেন্টমার্টিনে গেলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা কি? হোটেল ও খাবার দোকান কি এভেইলেবল?

অফ সিজনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলে ও ট্রলার বা মালবাহী বোট চলাচল করে। ঐ সময় আবহাওয়া ও সমুদ্র উত্তাল থাকে বলে ট্রলারে বা বোটে যাওয়া নিরাপদ না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া না থাকলে যাওয়া যায়। তবে সত্যিকার অর্থে তখন সেন্টমার্টিন ভ্রমণ খুব আরাম ও আনন্দের হয়। লোকজন কম থাকে, দ্বীপ নির্জন থাকে। হোটেল, কটেজ ও রেষ্টুরেন্ট প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়, মাঝে মাঝে ২-১ টা চালু থাকে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় লোকের সাহায্য নেওয়া যায়।

সেন্টমার্টিনে কি সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়? ভাড়া কত?

সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। প্রতিঘন্টা ৩০-৫০ টাকা ভাড়া।

ছেড়া দ্বীপ কিভাবে যাবো? ছেড়া দ্বীপ যাওয়ার জন্য স্পিড বোট বা ট্রলার কোথায় পাওয়া যায়? ভাড়া কত নেয়?

ছেড়া দ্বীপ সেন্টমার্টিনের একটি অংশ। জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন মুল দ্বীপ থেকে কিছু অংশ আলাদা হয়ে যায় বলে এটার নাম ছেড়া দ্বীপ। ছেড়া দ্বীপ স্পিড বোট, লাইফ বোট বা ড্যানিশ, কাঠের ছোট বোট (ইঞ্জিনচালিত) সাইকেল কিংবা হেটেও যাওয়া যায়।

কাঠের ছোট বোট (ইঞ্জিনচালিত) – ১৫০ টাকা প্রতিজন (৮-১০ জন)
লাইফ বোট বা ড্যানিশ – ২০০ টাকা প্রতিজন (১০-১৫ জন)
স্পিডবোট – ৩০০ টাকা প্রতিজন (৬ জন বসা যায়)

ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন কিভাবে যাওয়া যায়?

ঢাকা থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে আপনাকে সন্ধ্যা ৭টার গাড়িতে চড়ে বস্তে হবে যা সরাসরি টেকনাফ জেটী ঘাট পর্যন্ত যাবে। সকাল ৬- ৭ টার মধ্য দমদমিয়া জাহাজ ঘাট বা টেকনাফ শহরে নেমে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন যেতে পারেন। তবে লম্বা বন্ধ থাকলে ঢাকা- চিটাগাং রোড়ে যানজট বেশি হওয়ার কারণে অনেকের পৌছাতে দেরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে জাহাজ মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ সব জাহাজ ৯:৩০ টায় ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ট্রলারে করে যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে যেসব বাস সরাসরি টেকনাফ যায়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – শ্যামলি, সেন্টমার্টিন পরিবহন (এসি, নন এসি), এস আলম, মডার্ণ, ঈগল, সৌদিয়া রিল্যাক্স।

ভাড়া : নন এসি ৯০০ টাকা, এসি ১৫০০-২০০০ টাকা।

এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে বা বাসে সরাসরি কক্সবাজার কিংবা চট্টগ্রাম এসে টেকনাফ এর বাসে করে টেকনাফ যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে ক্ষবাজার এবং চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্লেন সার্ভিস চালু আছে। এছাড়া ঢাকা থেকে চাইলে ট্রেনেও চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের সরাসরি কোন বাস আছে? থাকলে ছাড়ে কোথা থেকে এবং কখন?

চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম ও সৌদিয়া বাস সরাসরি টেকনাফে যায়। তাছাড়া গরিবুল্লাহ শাহ মাজার থেকেও যাওয়া যায়।
বাসের নাম: এস আলম, সৌদিয়া
ছাড়ার সময় : রাত ১২-২ টা
ছাড়ার স্থান : সিনেমা প্যালেস ও জিইসি গরিবুল্লাহ শাহ এর মাজার
ভাড়া : ৪০০ টাকা।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার উপায় কি? কোন বাস যায়? কোথা থেকে এবং কখন ছাড়ে?

বাসের নাম : স্পেশাল সার্ভিস (২ ধরণের বাস আছে একটা ক্লোজ ডোর, আর একটা হ্নীলাতে বিরতি দেয়।
ছাড়ার সময়: ভোর ৫:৩০ থেকে ছাড়ে লালদিঘীর পাড় থেকে।
বাস ছাড়ার স্থান : লাল দিঘীর পাড় ও বাস টার্মিনাল
ভাড়া : ১৪০-১৫০ টাকা ( এজেন্ট এর মাধ্যমে গেলে ২০০ নিবে)

সেন্টমার্টিনে যাওয়ার কোন কোন জাহাজ চলে? কম সময়ে সেন্টমার্টিন পৌছে কোন জাহাজ?

বর্তমানে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলে কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন, বেক্রুজ, এম ভি টিপু ৭, গ্রীন লাইন, পারিজাত ও কুতুবদিয়া। দ্রুত সময়ে যাওয়ার জন্য গ্রীন লাইন, বেক্রুজ ও এম ভি টিপু ৭ এ যেতে পারেন। দ্রুত ও আরামদায়ক ভ্রমণ চাইলে বেক্রুজে যেতে পারেন (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত), সময় লাগে ১ঘন্টা ৩০ মিনিট।

সেন্টমার্টিনের জাহাজ টেকনাফ থেকে কয়টায় ছেড়ে যায়? সেন্টমার্টিন থেকে কয়টায় ছাড়ে? টিকেট এ কি শুধু যাওয়ার ভাড়া নেয় না যাওয়া আসার ভাড়া একসাথে?

টেকনাফ থেকে জাহাজ ছাড়ে ৯:৩০, রিপোর্টিং টাইম ৯:০০, সেন্টমার্টিন থেকে ছাড়ে ৩:০০, রিপোর্টিং টাইম ২:৩০। সব জাহাজ একই সময় ছাড়ে আবার একই সময় ফিরে আসে। জাহাজের ভাড়া যাওয়া আসা একসাথে নিয়ে নেয়। আপনি টিকেট করার সময় যাওয়া এবং আসার তারিখ উল্লেখ করে দিবেন।

জাহাজে যেদিন যাব ঐদিন কি ফিরে আসতে হবে? যদি ১ দিন বা ২ দিন পরে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসি সেক্ষেত্রে কি আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে?

কোন কারণে ১ দিন আগে বা পরে আসতে চাইলেও আসতে পারবেন। তবে সেক্ষত্রে আপনার সিট বা আসন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, দাঁড়িয়ে আসতে হবে। ১ দিন আগে বা পরে আসার জন্য কোন অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। কোন কারণে যদি আপনি জাহাজ মিস করেন তাহলে কোম্পানি টাকা রিটার্ণ করবে না। সেক্ষেত্রে ট্রলারে আসতে হবে।

সেন্টমার্টিন যাওয়ার জাহাজের ভাড়া কত? জাহাজের টিকেট অগ্রিম বুকিং দেবো কিভাবে?

কেয়ারি সিন্দাবাদ
ভাড়া : মেইন ডেক-৫৫০, ওপেন ডেক-৭০০, ব্রিজ ডেক -৮০০ টাকা

কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন
ভাড়া : এক্সক্লুসিভ লঞ্জ -১০০০, কোরাল লঞ্জ-১০০০, পিয়ারল লঞ্জ -১৪০০ টাকা

বে ক্রুজ
ভাড়া: রজনীগন্ধা (গ্রিন জোন) ১৩০০, হাসনা হেনা (ব্লু জোন) ১৪০০, কৃষ্ণচূড়া (রেড় জোন) ১৬০০ টাকা

এম. ভি. টিপু ৭
ভাড়া: মেইন ডেকঃ ৬৫০, ওপেন ডেকঃ ৮৫০, বিজনেস ক্লাসঃ ৯৫০ টাকা

এলসিটি কুতুবদিয়া
ভাড়া: ইকোনমি ৫৫০, ওপেন ডেক ৭০০, রয়েল ডেক (এসি) ৯০০, ভি আই পি ১২০০ টাকা

এম ভি পারিজাত
ভাড়া: ইকোনমি – ৫৫০, ওপেন ডেক – ৭০০ টাকা

এম ভি গ্রীন লাইন
ভাড়া: ইকোনমি -১৩০০, বিজনেস ক্লাস -১৭০০ টাকা

কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের অফিসের ঠিকানা কোথায় পাওয়া যাবে?

ক. ঢাকা অফিস: কেয়ারি প্লাজা (৬ষ্ঠ তলা), ৮৩ সাতমসজিদ রোড়, ৮/এ ধানমন্ডি, ঢাকা। ০২-৯১৩৫৪৫৯
খ. চিটাগাং অফিস: কেয়ারি ইলিশিয়াম (৪র্থ তলা), প্যারেড কর্ণার, চকবাজার। ০৩১-২৮৫১৩৫৮
গ. কক্সবাজার ও টেকনাফ অফিস : উর্মি গেস্ট হাউস (নীচতলা) কলাতলি রোড়, কক্সবাজার। ০৩৪১-৬২৮১০

এলসিটি কুতুবদিয়া জাহাজের অফিসের ঠিকানা কোথায়?

ঢাকা অফিস : চৌধুরী ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস, লেভেল-১৪, নোয়াখালী টাওয়ার, পুরানা পল্টন। যোগাযোগ : 02-7111197, 7113555, 01744-136145, 01714-634762
কক্সবাজার অফিস: 01744-136148, 01717259114

এম ভি গ্রীন লাইন জাহাজের বুকিং অফিস কোথায়?

ঢাকা অফিস: ৯/২, আউটার সার্কুলার রোড়, মোমেন বেগ, বাজারবাগ, ঢাকা।
গ্রীন লাইন বাসের যে কোন অফিস থেকে বুকিং দেয়া যাবে তবে ওদের অনলাইন বুকিং এভেইলএবল থাকলেই পারবেন।

আশা করি সেন্টমার্টিন সম্পর্কিত সব প্রশ্ন চলে আসছে।

Leave a Comment
Share