মেঘালয় ট্যুর প্ল্যানের খসড়া

জীবনের এক ঘেয়ামি মুহূর্ত গুলোকে আড়াল করতে ঘুরে আসতে পারেন মেঘ, পাহাড়-পর্বত এবং ঝর্ণা ও জলপ্রপাতের রাজ্য ভারতের স্কটল্যান্ড খ্যাত মেঘালয়ের (Meghalaya) শিলং ও পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের এলাকা চেরাপুঞ্জি থেকে। অনেকেই মেঘালয় ঘুরতে যেতে চান কিন্তু প্ল্যান সাজাতে পারছেন না। কিভাবে যাবেন, কিভাবে ঘুরবেন, কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, খরচ কেমন হবে এসব প্রশ্ন নিয়ে মাথায় জ্যাম লেগে যায়। নিম্নে একটা ধারনা দেয়া হলো, আপনি চাইলে এই প্ল্যানটাও কাজে লাগাতে পারেন নয়ত নিজের মত করে এই প্ল্যান মডিফাই করে নিজের প্ল্যান বানাতে পারেন।

প্রথমেই ভিসাঃ ভারতের ভিসা ফি ৬০০ টাকা। ভিসা প্রসেসিং ফি কিংবা ই-টোকেনের জন্য আলাদা কোন খরচ নেই যদি আপনি বিআরটিসি-শ্যামলী এর বাসে যান। তখন ভিসার দ্বায়িত্ত ওদের। এখানে বিস্তারিত দেখতে পারেন। আর যদি তাদের সাথে না যেতে চান সেক্ষেত্রে নিজেি ভিসা ম্যানেজ করে ফেলুন। ট্রাভেল ট্যাক্স আছে ৫০০ টাকা।

শিলং ট্যুর প্ল্যান

১ম দিনঃ ঢাকা-ডাউকি

রাত ১০.৩০ টায় ঢাকা থেকে তামাবিল-ডাউকি বর্ডারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে পারেন। অথবা রাতের ট্রেনে সিলেট চলে যান। তারপর জাফলং এর বাসে কিংবা সিএনজি নিয়ে তামাবিল বলে যান।

২য় দিনঃ ডাউকি বর্ডার – শিলং

ডাউকি বর্ডারে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলুন। যদি বাসে যান তাহলে বাসে উঠে পড়ুন, শিলং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। আর যদি ট্যাক্সি কিংবা টাটা সুমোতে করে যাওয়ার প্ল্যান থাকে তাহলে একটু পায়ে হেঁটে ডাউকি বাজারে চলে যান। ওখান থেকে দরাদরি করে ট্যাক্সি নিয়ে নেন। তবে আগেই বলে নিবেন যে আপনি এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিংনং (Mawlynnong) এবং Living Root Bridge ঘুরে তারপর শিলং (Shillong) যাবেন। মাওলিননং ঘোরা শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে শিলং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করুন। প্রায় ২ ঘন্টা যাত্রা শেষে শিলং পৌছে হোটেলে চেক-ইন করে নিন এবং হালকা বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে শহরের মধ্যেই ঘুরে বেড়ান। বিখ্যাত পুলিশ বাজারে শপিং করে নিতে পারেন কিংবা মুভি দেখতে পারেন। যদিও সিনেমা হলটা আহামরি তেমন কিছু না। পুলিশ বাজারের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ট্যাক্সিভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে। এখান থেকে কালকের জন্যে ট্যাক্সি বুক দিয়ে রাখতে পারেন। রাতে হোটেলে খাওয়া শেষে ভালো একটা ঘুম দিন।

৩য় দিনঃ শিলং ঘোরাঘুরি

সকালের নাস্তা শেষ করে বারাপানি সাইটসিয়িং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিন। এই দিন শিলং পিক, এলিফেন্ট ফলস, বিশপ বিডন ফলস, ক্যাথিড্রাল চার্চলেডি হায়দারী পার্ক, গলফ কোর্স, ওয়ার্ডস লেক এবং বারাপানি লেক ঘুরে দেখুন। রাতে শিলং হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুম দেন। কালকের জন্যে তৈরী হতে হবে না? 😉

৪র্থ দিনঃ চেরাপুঞ্জি ঘোরাঘুরি

সকালের নাস্তা শেষে চেরাপুঞ্জির (Cherrapunji) উদ্দেশ্যে রওনা করুন। ঝামেলা এড়াতে আগের দিনই ট্যাক্সি বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন। অথবা আগেরদিন মেঘালয় পর্যটন দপ্তর আয়োজিত কন্ডাক্টেড ট্যুরের টিকেট কেটে নিতে পারেন। এই দিন মুয়েসমাই গুহা, নুকায়কালী ফলস, মাউকডক ভ্যালি, ইকো পার্ক, সেভেন সিস্টার ফলস, রামকৃষ্ণ মিশন এবং থাংখারাং পার্ক ঘুরে দেখুন। রাতে শিলং এ ফিরে হোটেলে খাবার শেষে বিশ্রাম ও রাত্রি যাপন।

৫ম দিনঃ শিলং-ঢাকা

সকালে নাস্তা শেষে শিলং থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা করুন। ডাউকি বর্ডারে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে রাতে সিলেটের পানসী / পাচভাই রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষ করে বাসে/ট্রেনে ঢাকা ফিরে চলুন।

খাওয়া দাওয়া

সকালের নাস্তা হিসেবে চা, পুরি, সবজি, ডিম / পাউরুটি, মাখন, আলু পরটা, ঘানি, চা। দুপুর ও রাতের খাবারের মেন্যুতে ভাত, ডাল, সবজি, ভর্তা, মুরগি/মাছ, সালাদ রাখতে পারেন। ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে কিন্তু আমাদের দেশের মাছ ওখানে যেয়ে বেশি দাম দিয়ে খাওয়ার কোন মানে নয় না তার উপর আবার অনেক দিনের ফ্রিজিং করা।

শিলং এর রেস্টুরেন্টে পর্ক (শুকরের মাংস), চিকেন (মুরগির মাংস) এবং মাছ বেশী। জিঞ্জার আ্যন্ড স্ক্যাই গ্রিল, কেনমোর এবং শিপ আ্যন্ড ডাইন রেস্টুরেন্ট হিসেবে দারুণ। অন্যদিকে শেফ’স মাল্টি কিউজিন রেস্তোঁরা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে দারুণ খাবার পরিবেশন করে। সিসেম তার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় রান্না এবং ঐতিহ্যগত উপজাতীয় রান্নার খাবারের জন্য পরিচিত।

কোথায় থাকবেন

পাইন সুইটস হোটেল, হোটেল নাইট ইন্ এবং শিলং ক্লাব গেস্টহাউস বাজেট ট্রাভেলারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। হোটেল সেন্টার পয়েন্ট এবং হোটেল আ্যলপাইন কন্টিনেন্ট্যাল হল শিলং এর বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেলের মধ্যে অন্যতম। হোটেল পোলো টাওয়ারস হল এই অঞ্চলের একমাত্র ফোর স্টার হোটেল।

এছাড়া শিলং পুলিশ বাজারে অসংখ্য হোটেল পাবেন।

খরচ

৬-৮ জনের দল হলে আনুমানিক ১২-১৫০০০ হাজার টাকায় রিলাক্স ট্যুর দিয়ে আসতে পারবেন।

Leave a Comment
Share