ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ টিপস

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা আর বালি দুইটাই অনেক সুন্দর জায়গা। বালি তো অসাধারন। মাশা-আল্লাহ। ইন্দোনেশিয়া ট্যুর নিয়ে অনলাইনে খুব কমই হেল্প পোস্ট পাওয়া যায়। যারা একেবারে প্রথম ট্রাভেল করবে আশাকরি তাদের অনেক কাজে লাগবে এটি। ১টি অনুরোধ – ১৩ নম্বর প্যারাটি মনোযোগ দিয়ে পরবেন।

যা যা থাকবে

১. জাকার্তা কিভাবে যাবেন
২. ফ্রি ভিসা ইনফরমেশন
৩. ডকুমেন্টস কি কি নিতে হবে?
৪. এয়ারপোর্ট ইনফরমেশন
৫. ট্যাক্সি ইনফরমেশন(জাকার্তা+বালি)
৬. হোটেল ইনফরমেশন(জাকার্তা+বালি)
৭. খাওয়া-দাওয়া (জাকার্তা+বালি)
৮. জাকার্তা টু বালি (ডোমেস্টিক ফ্লাইট ইনফরমেশন)
৯. লাগেজ/ব্যাগেজ এর ওজনের ইনফরমেশন
১০. লোকাল ট্রান্সপোর্ট ইনফরমেশন (জাকার্তা+বালি)
১১. ডলার-কে রূপিয়া-তে কনভারশন
১২. কেনাকাটায় দামাদামি করার বিষয়
১৩. চিটিং থেকে বাচার উপায়(ডলার-কে রূপিয়া-তে কনভারশন এর সময়)

১. জাকার্তা কিভাবে যাবেন

উত্তরঃ আপনি যেকোনো ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আপনার পছন্দের এয়ারওয়েস-এর টিকিট কেটে নিতে পারেন। আমরা মালিন্দো এয়ারওয়েস-এর টিকিট কেটেছিলাম জাকার্তা পর্যন্ত। মালয়শিয়াতে ট্রান্সিট ছিল কয়েক ঘণ্টার। ঢাকা-মালয়শিয়া-জাকার্তা। আপনি চাইলে ডিরেক্ট ঢাকা টু বালি যেতে পারেন। কোন সমস্যা নাই। 🙂

২. ফ্রি ভিসা ইনফরমেশন

উত্তরঃ ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফ্রি। সো নো টেনশন। 😀 কোন ফি-ও লাগবেনা। তবে এয়ারপোর্ট-এ জিজ্ঞাসা করতে পারে যে ভিসা নাই কেন? সোজা বলে দিবেন, ইন্দোনেশিয়ার ভিসা ফ্রি, আর আমি ৩০ দিনের বেশি থাকবোনা। আপনার পাসপোর্টে অন্য ২-১ টা ভিসা থাকলে আর সমস্যা করবে না। আর ইন্দোনেশিয়ায় কিছু জিজ্ঞাস করলে বলবেন ফ্রি ভিসায় এসেছি।

৩. ডকুমেন্টস কি কি নিতে হবে

উত্তরঃ আসলে তেমন কিছু প্রয়োজন নেই। টিকিট এর কপি নিয়ে নিন। পাসপোর্টে ডলার এন্ডোরসড করে নিন। হোটেলের বুকিং এর কপিটা প্রিন্ট করে নিতে পারেন (ট্যাক্সি ওয়ালাকে এড্রেস দেখাতেও কাজে লাগবে এটা, আর হোটেলেও শো করতে পারেন। মোবাইলে ছবি থাকলেও হবে, সমস্যা নাই)। কোন ইনভাইটেশন থাকলে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। পাসপোর্টের কপিও রাখতে পারেন ২-১ টা।

৪. এয়ারপোর্ট ইনফরমেশন

উত্তরঃ সাথে দামী কোন Perfume/Body Spray Carry করবেন না। Hand Bag-এ, ১০০ মিঃলিঃ এর উপরে হলে এয়ারপোর্ট থেকেই তা ফেলে দিবে। সকল এয়ারপোর্টে ফ্রি wifi পাবেন। কিন্তু একটু কষ্ট করে খুঁজে/সার্চ করে connect করে নিতে হবে। এছাড়া এই লিংক থেকে আগে থেকেই free wifi ID & Password নিয়ে রাখতে পারেন।

জাকার্তা নেমে ১০০-২০০ ডলার ভাঙ্গিয়ে নিন। এয়ারপোর্টে ডলার এর প্রাইস একটু কম পাবেন। ট্যাক্সি আর হোটেল ভাড়া তো দিতে হবে।

৫. ট্যাক্সি ইনফরমেশন(জাকার্তা+বালি)

উত্তরঃ জাকার্তা নেমে অন্য কোন ট্যাক্সি নিবেননা। একটু খুঁজে BLUE BIRD ট্যাক্সির স্ট্যান্ডে চলে যান। এক কথায় trusted বলা যায়। কোথায় যাবেন তাকে জানিয়ে দিন। সে নিয়ে যাবে। মিটার অনুযায়ী ভাড়া দিয়ে দিন (টোল গুলো আপনাকেই দিতে হবে)। আর বালিতে এয়ারপোর্ট-এ নেমে BLUE ট্যাক্সি না পেলে লোকাল ট্যাক্সি ভাড়া ঠিক করে নিন। ট্যাক্সিওয়ালা যা চাবে তার অর্ধেকের কম বলুন। লাইনে চলে আসবে আশা করি। 😀

৬. হোটেল ইনফরমেশন(জাকার্তা+বালি)

উত্তরঃ www.booking.com থেকে হোটেল বুকিং দিতে পারেন (জাকার্তা এবং বালি)। বুকিং-এ credit card এর প্রয়োজন নেই। কোন সমস্যা হবার কথা নয়। ওখানে আপনি বাংলাদেশের চেয়ে কম খরচে 4 star এর সুবিধা সহ হোটেল বুকিং দিতে পারবেন। অনেক অনেক টাকা বেঁচে যাবে। লোকেশন বোঝার জন্য গুগোল ম্যাপের চেয়ে বিকল্প আর কিছু নাই। আমরা জাকার্তায় উঠেছিলাম ParagonBiz/ ZEN Rooms Hotel Lippo Karawaci-তে, আর বালি-তে উঠেছিলাম Savvoya Resort Hotel Seminyak-এ। ব্যাবহার আর সার্ভিস অসম্ভব ভালো। আপনারা যদি Couple হয়ে থাকেন তাহলে ডিনারে সমুদ্রের সাথে অসাধারন লাইটিং আর অসম্ভব সুন্দর পরিবেশের Breeze at The Samaya Seminyak এ না যাওয়ার চেয়ে আফসোসের আর কিছু নাই। ঘাবড়াবেন না (যদি আমার মতো একটু হিসেবি হয়ে থাকেন আরকি), এটার রুম ভাড়া অনেক বেশি (বাংলাদেশি টাকার ৪৮ হাজার টাকার উপরে প্রতিদিন), বাট ডিনার তো করতেই পারেন, তাইনা? যদিও ডিনারের জন্য বুকিং দিয়ে রাখতে হয় আগে থেকেই। কিন্তু মনে রাখবেন, ডিনারে ড্রেস কোড আছে। মেয়েদের না, ছেলেদের অবশ্যই হাফ হাতা গেঞ্জি বা শার্ট পরতে হবে। দাম? বাংলাদেশের 5 star এর তুলনায় কিছুই না। 😀

৭. খাওয়া-দাওয়া (জাকার্তা+বালি)

উত্তরঃ জাকার্তাতে মুসলিম মানে হালাল খাবার পাবেন। আমি যেই লোকেশনে ছিলাম সেখানে বাংলা কোন খাবার ছিলোনা। তাই সকালে থেকে রাত পাওরুটি, কলা, চিকেন ফ্রাই, আর 1st food এর উপরে ছিলাম। KFC, Burger king, A&W তে বেশি খেয়েছি। আর বালিতে লোকাল ফুড পাওয়া যাবে। খেতে পারলে ভালো (আমি লোকাল ফুড খেয়েছি 😀 , অনেক সস্তা পরবে), আর না পারলে KFC, Pizza Hut, Burger king এর উপরে থাকতে হবে। 😀

৮. জাকার্তা টু বালি (ডোমেস্টিক ফ্লাইট ইনফরমেশন)

উত্তরঃ জাকার্তা টু বালি ডোমেস্টিক ফ্লাইট এর মধ্যে Air Asia Best. বলতে গেলে ১০ মিনিটও ফ্লাইট ডিলে করেনি। আমরা এয়ারপোর্ট-এ নেমেই Air Asia থেকে জাকার্তা টু বালি ডোমেস্টিক টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। তবে আমি suggest করবো যে Air Asia ওয়েব সাইট থেকে credit card দিয়ে টিকিট কেটে নিন (যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে)। আমিও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিনে নিতাম, কিন্ত একটা সমস্যার কারনে পারিনি। অনেক টাকা বেঁচে যাবে। Air Asia ওয়েব সাইট থেকে credit card দিয়ে টিকিট কাটাটা Secured. সমস্যা নাই।

৯. লাগেজ/ব্যাগেজ এর ওজনের ইনফরমেশন

উত্তরঃ ইন্টারন্যাশনালি আপনি লাগেজ ২৫-৩০ কেজি নিতে পারবেন। আর নিয়মানুসারে ডোমেস্টিক ফ্লাইট-এ প্রতিজন ১৫ কেজি নিতে পারবেন ফ্রি। আর সাথে ক্যারিও করতে পারবেন ইন্টারন্যাশনাল/ডোমেস্টিক-এ। সহজভাবে বলতে গেলে সাথে ক্যারির ব্যাগে যদি আপনি ১৫-২০ কেজিও নেন তাতেও সমস্যা নাই ডোমেস্টিক-এও। ছোট লাগেজ ট্রলী গুলোও সাথে ক্যারি করতে পারবেন।

১০. লোকাল ট্রান্সপোর্ট ইনফরমেশন (জাকার্তা+বালি)

উত্তরঃ লোকাল ট্রান্সপোর্ট হিসেবে স্কুটী জাকার্তা বা বালি ২ জায়গাতেই পাবেন। তবে জাকার্তায় আমাদের দেশের হাই-এইস গাড়ির মতো লোকাল মাইক্রো পাবেন। সস্তায় রুট অনুসারে মুভ করতে পারবেন। রুটটা আপনাকে চিনে নিতে হবে। আমি রুট চিনে নিয়েছিলাম ১ম দিনই। তাই অনেক টাকা বাচাতে পেরেছি এর জন্য। 😀 এছাড়া ট্যাক্সি আথবা স্কুটীতে মুভ করতে হবে আপনাকে। আর বালিতে দিন হিসেবেও স্কুটী ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি ২-৩ দিন হিসেবে স্কুটী ভাড়া নিতে পারবেন। এরপর আপনি স্কুটিতে করে যেখানে খুশি সেখানে মুভ করতে পারবেন বালিতে। তেল আপনাকে কিনতে হবে। এটাই (স্কুটী) সবচেয়ে বেস্ট। 😀

১১. ডলারকে রূপিয়াতে কনভারশন

উত্তরঃ জাকার্তা নেমে ১০০-২০০ ডলার ভাঙ্গিয়ে নিন। এয়ারপোর্টে ডলার এর প্রাইস একটু কম পাবেন। এরপর বাহিরে আপনার সুবিধা অনুযায়ী ডলার ভাঙ্গিয়ে নিন। বিভিন্ন মার্কেটে মানি এক্সচেঞ্জ পাবেন জাকার্তায়। জাকার্তা থেকে বালিতে ডলার এর প্রাইস একটু বেশি। কিন্তু সাবধান, “লোভে পড়বেননা”… বিস্তারিত এই বিষয়ে পরে লিখছি। ১৩ নম্বর পয়েন্টটি মনোযোগ সহকারে পরুন।

১২. কেনাকাটায় দামাদামি করার বিষয়

উত্তরঃ জাকার্তা থেকে বালিতে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেশি। সহজ ভাবে বলতে গেলে বালিতে আগুন দাম। আর বালিতে ওরা ১টা জিনিসের দাম ৭-৮ গুন বেশি চাইবে আপনার কাছে। সো, লজ্জা করে লাভ নাই, নির্লজ্জের মতো ৭-৮ গুন কম দাম বলুন(ব্র্যান্ডের শো রুম ছাড়া)। 😀 এমনকি সী-বিচেও যে বেড ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিবেন ওইটাও দামাদামি করুন। আমি দামাদামি করে ২০,০০০ রুপি বাচিয়েছি। দামাদামি করুন, ওই টাকা দিয়ে প্রয়োজনে প্রিয়জনদের জন্য গিফট কিনে আনুন, ভালো হবে। 😀

১৩. চিটিং থেকে বাচার উপায় (ডলারকে রূপিয়াতে কনভারশন এর সময়)

উত্তরঃ এই পার্টটি মনোযোগ দিয়ে পরতে পারেন। কারন, ঘটনা ঘটার আগে এই অনুভিতি আপনি উপভোগ করতে পারবেননা। জাকার্তাতে প্রতি ডলার প্রাইস ১২,২০০ রুপি থেকে ১২,৬০০ রুপি। বালিতে ১২,৬০০ থেকে ১২,৯০০ রুপি। মনে রাখবেন, এরা সাধারনত ১ লাখ (১০০,০০০) এর নোট বেশি দিবে। কিন্তু অনেক মহামানব/মানি এক্সচেঞ্জ আছে যারা আপনার আরও ভালো চায়। তারা আপনাকে ১৩,০০০ থেকে ১৩,৮০০ রুপিও দিবে (অফার করবে)। বড় বড় করে বোর্ডে প্রাইস দিয়ে রাখবে। ব্যাবহার অসম্ভব ভালো। প্লিজ, ভুলেও লোভে পড়বেননা। ঘটনা বলছি। আপনি কোথায় উঠেছেন, কেমন আছেন, কবে যাবেন এসব বিষয়ে কথা বলবে। মনে রাখবেন, তারা আপনাকে সবগুলো নোট ৫০ হাজারের (৫০,০০০) দিবে। আপনার বিশ্বাস যোগাতে ৫০ হাজারের বিশটি করে নোট (১০ লাখ/১ মিলিয়ন) করে আপনাকে গুনতে দিবে। মনে করেন, আপনি ৩০০ ডলার ভাঙ্গালেন, ৪০ লাখ/৪ মিলিয়ন এর উপরে রুপি পাবেন আপনি। সো সে আপনার বিশ্বাস যোগাতে ৫০ হাজারের বিশটি করে নোট (১০ লাখ/১ মিলিয়ন) করে আপনাকে গুনতে দিবে। আপনি ১টি ১টি করে মানে ২০ টির করে গুনবেন, সে সেই নোট আপনার সামনেই রাখবে। ২০ টির করে চারটি বান্ডেল আপনার সামনেই রাখবে। আপনিও দেখছেন সব ঠিক। কারন আপনি নিজেই তো গুনেছেন। সে আপনাকে চারটি বান্ডেল আর বাকি রুপি গুলো একসাথে আপনার চোখের সামনে আপনার হাতে তুলে দিবে। আপনিও তো খুশি, কই ১২,২০০ রুপি আর কই ১৩,৮০০ রুপি প্রতি ডলারে। মজাই মজা। কথা হচ্ছে এখন, আপনি যদি অনেক হিসেবি হন তাহলে আপনি দিন শেষে রাতে হয়তো বা পরে ফ্রি কোন সময়ে আপনার রুপির হিসেব নিয়ে বসবেন। যদি সঠিকভাবে হিসেব করতে পারেন, তাহলে আপনি কখনই ১০ লাখ রুপির, মানে ৫০ হাজারের ২০ টি নোটের হিসেব কখনই খুঁজে পাবেন না। নিজে মানতেও পারবেননা যে কিভাবে কি হওয়া সম্ভব? কারন আপনিতো নিজে টাকা গুলোর প্রত্যেকটা নোট গুনেছেন, আর সেও আপনাকে সেই নোট গুলোই দিয়েছে, আপনি পকেটে ঢুকিয়েছেন। কাহিনী এখানেই, জানেন তো “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু”… ভাইরে এটাই ম্যাজিক। আপনি তাকিয়ে থাকলেও এই ম্যাজিক হয়তো ধরতে পারবেননা। চোখের পলোকে তারা এই কাজ করতে পারে। ঐ যে, যেই টাইমে সে আপনার নিজের হাতে গুণা চারটি নোটের বান্ডেল এক করে আপনাকে দিয়েছে, ওই টাইমেই জাস্ট চোখের ১টা পলকের সাথে সাথে সে সেই কাজটি করে ফেলে। পুরো ৫০ হাজারের গুণা ২০ টি নোটের ১ টি বান্ডেল নাই করে দেয়। এটা অনুমান করা কথা না। এটা বুঝতে আমি আবারো আরেক জায়গায় গিয়েছি পরেরদিন, তখন সব মিলিয়েছি দেখে দেখে। একই কথা, একই ভাব, একই প্রসেস, একই নিয়মে টাকা দেয়া, একই নিয়মে গুনতে দেয়া, একই নিয়মে টাকার বান্ডেল রাখা্‌, একই নিয়মে আমাকে নোট গুলো দেয়া। যাই হোক, আমি আর ভাঙ্গাইনি ওখানে। রেপুটেড মানি এক্সচেঞ্জ-এ ভাঙ্গিয়েছি একটু কম রুপিতে। যারা জানে তারা আসলে তাই করে। লোভে পরে না। আল্লাহ্‌ আমাকে বাঁচিয়েছে। আমি কোন বারই ধরা খাইনি। সে অনেক কথা। জানিয়ে রাখা দরকার আমি মনে করি, তাই শেয়ার করলাম। সাজেশন এটাই, লোভে পড়বেন না। অনেক রেপুটেড মানি এক্সচেঞ্জ আছে। রুপি কম দিবে। ১২,৭০০-১২,৯০০ কিন্তু এভাবে টাকা মেরে দিবেনা। ভাঙ্গালেই বুঝবেন।

আপনার ভ্রমণ সুন্দর ও নিরাপদ হোক। ধন্যবাদ।

Leave a Comment
Share