প্রথমেই বলে রাখি আমার ভিসা করা ছিল BY ROAD CATEGORY চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে, সুতরাং আমি শিলিগুড়ি থেকেই যাত্রার বর্ননা শুরু করব। কেননা ১ম পর্ব – ঢাকা টু দার্জিলিং বর্ননায় শিলিগুড়ি পর্যন্ত কিভাবে আসবেন সেটা বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে। (দার্জিলিং থেকে ফিরেই আমি শিলিগুড়ি থেকে দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম )
যাত্রাঃ আপনি শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন এবং প্লেন এই দুই বাহনেই দিল্লী যেতে পারবেন। মনে রাখবেন শিলিগুড়ি থেকে দিল্লীতে কোন বাস সার্ভিস নেই।
ট্রেনঃ শিলিগুড়ি থেকে ৫০ টাকায় ট্যাক্সি করে সোজা নিউ জলপাইগুড়ি স্ট্যাশন এ চলে যান। ট্রেনে যেতে হলে আগে থেকেই টিকেট বুক করে রাখতে হয়। ট্রেনের টিকেট পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য আর ভাল ট্রেন ( রাজধানি এক্সপ্রেস ) এর টিকেট পাওয়া অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে আপনি যদি নিউ জলপাইগুড়ি ষ্ট্যাশন এ গিয়ে TOURISM DEPARTMENT এর সাথে যোগাযোগ করলে বিদেশী কোটায় আপনার কপাল সুপ্রশন্ন থাকলে টিকেট মিলেও যেতে পারে। এছাড়া টাটকাল ( ইমার্জেন্সী অথবা কারেণ্ট রিজার্ভেশন ) এর মাধ্যমে একদিন আগে বেশী দাম ( প্রতি টিকিটে প্রায় ৮০০-১০০০ টাকা বেশী ) দিয়েও টিকেট কাটতে পারেন। সবথেকে ভাল ট্রেন রাজধানী এক্সপ্রেস ( ফুল এসি , ২২৫০ রুপি ) দিয়ে দিল্লী যেতে মোট সময় লাগবে ২২ ঘন্টা , এর পরে যেটা ভাল সেটাতে ( নর্থ- ওয়েষ্ট এক্সপ্রেস , নন – এসি ভাড়া ৮০০ রুপি , এসি ১৩০০ রুপি ) সময় বলবে ২৬ ঘন্টা কিন্তু লাগবে ৩৪ ঘণ্টা , বাকিগুলার কথা আর বলতেই চাচ্ছি না। আমরা নর্থ ওয়েষ্ট এ গিয়েছিলাম , বিকাল ৬ টায় ট্রেন যাত্রা শুরু করে পরেরদিন রাত ২টায় দিল্লীর আনন্দবিহার ষ্ট্যাশন এ গিয়ে পৌছায়।
আমার পরামর্শ হলো রাজধানি এক্সপ্রেস এর টিকেট না পেলে প্লেন এ যাবার প্লান করুন।
বাই এয়ারঃ প্লেন এ যাওয়ার জন্য আপনাকে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট এ যেতে হবে। সেখান থেকে দুই ঘন্টায় চলে যান দিল্লী 🙂 ব্যস হয়ে গেল। VISTARA AIRLINES এ টিকেট করতে পারেন, এদের সার্ভিস ভাল। ( ৪০০০ রুপি / টিকেট )
ডুয়েল কারেন্সির ক্রেডিট কার্ড থাকলে আপনি ঘরে বসেই সমস্ত ট্রেন , বাস, আর এয়ার এর টিকেট অনায়াসেই কাটতে পারবেন। অন্যথায় ট্রাভেল এজেন্সি গুলোতে কিছু টাকা বেশী দিয়ে টিকেট কাটতে হবে।
কোথায় থাকবেনঃ দিল্লীতে কম খরচে থাকার জন্য ষ্ট্যাশন থেকে একটু দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এছাড়া চাঁদনী চক এর তামান্না গেষ্ট হাউস ভাল হবে। মুসলিম এলাকায় থাকতে চাইলে দিল্লী জামে মসজিদের পাশে চলে যেতে পারেন।
টাকা পরিবর্তনঃ রামকৃষ্ণ আশ্রম অথবা দিল্লী জামে মসজিদের ( ভাল দাম পাবেন ) সামনে থেকে আপনি অনায়াসেই আপনার টাকা অথবা ডলার রুপিতে পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
কিভাবে ঘুরবেনঃ বলে রাখি যে , দিল্লীতে ঘুরার জন্য মেট্রো রেল হচ্ছে সেরা বাহন এবং খরচও কম। মেট্রো ষ্ট্যাশন থেকে একটি মেট্রো কার্ড করিয়ে নিন আর দিব্বি ঘুরতে থাকুন।
কোথায় ঘুরবেনঃ ঘুরার জন্য আপনি লাল কিল্লা , দিল্লী জামে মসজিদ , কুতুব মিনার , লোটাস টেম্পল , ইন্ডীয়া গেট ( রাতে বেশী ভাল লাগবে ) যেতে পারেন। এক দিনেই সবগুলো স্পট কভার করা সম্ভব।
কোথায় খাবেনঃ দিল্লীর স্ট্রিট ফুড বেশ ভাল , মন ভরে খাবেন। অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য একবার ম্যাকডোনাল্ডস এ যেতে পারেন। দিল্লীর লাড্ডু খেতে হালদি রামস এ যেতে পারেন ( চাঁদনী চক )। তবে পেট ভরে বিরিয়ানি (গরু কিন্তু দিল্লীতে ব্যান ) আর কাবাব খেতে দিল্লী জামে মসজিদের সামনে চলে যান। লোকাল রেষ্টুরেন্ট গুলোর পাশাপাশি চাইলে কারিমস এও একবার ঢূ মারতে পারেন। দিল্লী মসজিদের সামনে, রাস্তার পাশের একটি দোকান থেকে কেসার পিস্তা অবশ্যই খাবেন। ( এখনো মুখে লেগে আছে )
কেনাকাটা কোথায় করবেনঃ কেনাকাটা করার জন্য মেট্রোতে করে সোজা কারোলবাগ চলে যান, তবে মাথায় রাখবেন কারোলবাগ এর ফুটপাত আমাদের গুলিস্তানের চাইতেও বেশী বাটপারে ভরপুর। ব্র্যান্ডের দোকান থেকে নিশ্চিন্তে কেনাকাটা করুন আর ফুটপাত হতে বুঝেশুনে দরদাম করে কিনুন। এছাড়া পাঞ্জাবি আর বোরখা কিনতে দিল্লী জামে মসজিদের সামনে চলে যান।
দিল্লি টু আগ্রা ( তাজমহল ) : দিল্লী থেকে আগ্রা ( তাজমহল ) আপনি এক দিনেই ঘুরে আসতে পারবেন। সকাল ৬ টার ভুপাল শতাব্দীতে ( আগে থেকেই অনলাইন এ টিকেট কনফার্ম করুন , সাথে সাথে সন্ধ্যার ফিরতি টিকেট টাও কেটে রাখুন ) চেপে বসুন সকাল ঠিক ৭টা ৪০ মিনিটে আপনাকে আগ্রা পৌছে দিবে, সেখান থেকে ২০ রুপী ভাড়াতে রিক্সা অথবা ট্যাক্সিতে করে তাজমহল এর গেটে চলে যান। চাতুরতা ( দেশের সম্মান রক্ষার্তে ) বর্জন করে একজন বাংলাদেশি হিসেবে ৫৩০ রুপী দিয়েই তাজমহলে প্রবেশ করার টিকেট কেটে ফেলুন।
কখন যাবেনঃ শুক্রবার ব্যতিত যেকোন দিন, গরমের সময় তাজমহল না যাওয়াটাই ভাল। বসন্ত সময় আর পূর্নিমা রাতে যেতে পাড়লে অসাধারন হবে। মনে রাখবেন তাজমহলের মূল সৌন্দর্য হচ্ছে, সূর্যের আলোর সাথে সাথে তাল মিলিয়ে ইহার রং পরিবর্তন করার মাঝে। এছাড়া পূর্নিমা রাত হচ্ছে তাজমহলে সময় কাটানোর জন্য সবচেয়ে সেরা সময়।
কোথায় ঘুরবেনঃ তাজমহল, আগ্রা কিল্লা ( তাজমহল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) এই দুইটা অবশ্যই যাবেন, আর সাথে গাইড নিতে ভুল করবেন না। সময় হাতে রাখার চেষ্টা করুন তাহলে ফাতেহপুর শিকড়িটাও ঘুরতে পারবেন।
কেনাকাটা কোথায় করবেনঃ কেনাকাটা করারই দরকার নাই এখানে, HAND-LOOM PRODUCT এর একটা বিশাল দালাল চক্র ( রিক্সাআলা আর ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার গুলাসহ ) এখানে সক্রিয় , সুতরাং এড়িয়ে চলুন।
কোথায় খাবেনঃ রাস্তার পাশের হোটেল গুলোতে অল্পতে খেয়ে নিতে পারবেন অন্যথা ষ্ট্যাশন এর ভিতরেও একটু বেশী দাম দিয়ে খেতে পারবেন।
শিলিগুড়ি (NJP) টু দিল্লি ট্রেন এ গেলে ২২৫০ রুপী ( রাজধানী এক্সপ্রেস ) / অথবা এয়ার এ গেল ৪০০০ রুপি। ( ONE WAY TICKET )
হোটেল খরচ : ৫০০ রুপি ( প্রতিজন / প্রতিদিন )
খাবার খরচ : ৫০০ রুপি ( প্রতিজন / প্রতিদিন )
দিল্লী টু আগ্রা ( যাওয়া আসা ১১০০ রুপী )
পুরো দিল্লী শহর মেট্রোতে করে সারাদিন ঘুরলেও ১৫০ রুপির বেশি লাগবে না।
তাজমহল এর টিকেট ফি ৫৩০ রুপি আর আগ্রা কিল্লার টিকেট ফি ১৫০ রুপি।
বাকি কি থাকল? বাকি থাকল আপনার প্লান, প্লানটা করে ফেলুন আর দলবল সহ যাত্রা শুরু করে দিন।
Leave a Comment